আমরা অনেক সময়ে লক্ষ্য করিনা যে দৈনন্দিন জীবনের আপাত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা ছোট শিশুর মনের ভিতর চাপ ফেলে, যা তার পরবর্তি জীবনে শিশুর বেড়ে উঠা ও পরিপুর্ন মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলে। শিশুর পরিপুর্ন বিকাশ ও বৃদ্ধিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়ঃ শারীরিক ও মস্তিষ্কের বিকাশ ও বৃদ্ধি, সামাজিক, ভাষার বিকাশ এবং আবেগিয় প্রকাশ ও নিয়ন্ত্রণ। পরিবেশগত নানারকম ঘটনা ও উদ্দীপক বস্তুর প্রতি শিশুর সহজাত আচরণকে প্রভাবিত করে যা শিশুর ব্যাক্তিত্ব ও বুদ্ধির বিকাশে তা গভীর প্রভাব ফেলে। বাবা মা, পরিবার পরিজন, শিক্ষক শিশুর বৃদ্ধি ও পরিপক্কতায় সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করেন। শিশুর ভাব প্রকাশ এবং তার অন্তর্গত দ্বন্দ্ব, বিভ্রান্তি, উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ও বিপর্যয় থেকে বের করে নিয়ে এসে শিশুকে তার আবেগ প্রকাশ ও নিয়ন্ত্রনের কৌশল শিখাতে পারেন, যা শিশুকে তার আবেগ প্রকাশ ও বিভিন্ন উদ্দীপক বস্তু বা ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখানর ক্ষেত্রে কিছুটা সময় পায় যা তাকে আত্মনিয়ন্ত্রনে সাহায্য করতে পারে।এবং এভাবে শিশুর আবেগিয় বুদ্ধুমত্তার বিকাশ ঘটে। শিশুদের ভাষাগত বিকাশ সম্পন্ন হতে অনেকটাই দীর্ঘ সময় লাগে। অনেক ক্ষেত্রে শিশু তার মানসিক চাপ উৎপাদনকারী উদ্দীপক সম্বন্ধে তেমন করে ব্যখ্যা করতে পারেনা। ফলে সে কান্না, খেয়ালিপানা, ক্রোধ ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করে। প্রতিটি আবেগিয় প্রকাশের ক্ষেত্রে সেই আবেগটির (যেমনঃ রাগ, দুঃখ, হাসি, হতাশা, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি) নামটি শিক্ষা দেয়া শিশুকে তার আবেগের প্রকাশটি বুঝতে সাহায্য করে।
সহজ কিছু যোগ ব্যায়াম, সাধারন কিছু কৌশল যেমন; শিশুকে কোন কিছু বলবার আগে তার আবেগ নিয়ন্ত্রনের জন্য কিছুটা সময় দেয়া, স্থির করে বাসান, পানি খেতে দেয়া, সংখ্যা গণনা করা, শিশু যখন নিজেকে সংযত করে নিয়ে আসে তখন তার সাথে আলোচনা এমনভাবে যেন হয় শিশু নিজেই যেন নির্ধারণ করতে পারে, তার কি করা উচিৎ, কি করা যায়, পরবর্তিতে কাছাকাছি ধরনের ঘটনায় সে কি করতে পারে, বা করবে। অনেক সময় শিশু যদি ব্যাখ্যা না করতে পারে তার কথার সাথে কথাসুত্র যোগ করা যা শিশুর বাক্য গঠন ও শব্দ ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে। এর ফলে শিশু নিজেই তার পরিস্থিতিকে তার নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে পারে যা তাকে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
এছাড়া পরিবেশগত বিভিন্ন উদ্দীপক বা নিয়ন্ত্রক যেমন অপর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মের ব্যঘাত, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, খাবারের ধরন, ক্লান্তি, অপর্যাপ্ত খেলাধুলা বা শারীরিক শ্রমের অভাব, শারীরিক অস্বস্তি, অতিরিক্ত টিভি দেখা, বা অতিরিক্ত ইলেক্ট্রনিক গেম নিয়ে খেলা শিশুর স্বাভাবিক আচরনে প্রভাব ফেলে। শিশু যদি অতরিক্ত উত্তেজিত বা ক্লান্ত কিংবা মেজাজী আচরন প্রদর্শন করলে সে ক্ষেত্রে শিশুর সাথে নেতিবাচক বা শাস্তিমূলক আচরণ না করে কেন তা করছে বা তার পেছনের কারনগুলো বের করাটা জরুরী। শিশু যদি অতিরিক্ত উত্তেজিত আচরণ করে সে ক্ষেত্রে শিশুর সাথে শারীরিক খেলাধুলা করার সুযোগ বের করা যেন শিশু ক্লান্ত হতে পারে, আকাআকি করতে দেয়া যাতে শিশু ধীরস্থির হয়ে উঠে। শিশু ক্লান্ত হলে তার বিশ্রামের ব্যবস্থা করা শিশুটিকে শান্ত হতে সাহায্য করে। শিশুর আবেগিয় বুদ্ধিমত্তা বিকাশে পরিবেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন।
(ছবি:-wicm.ca)
[asa]0974320625[/asa]