Law Everyday-আইন প্রতিদিন নামক বাংলাদেশের একটি অনলাইন সাইটের জন্য নিম্নলিখিত লেখাটি লেখা। তারা আমাকে নর্থ আমেরিকান তথা কানাডিয়ান সমাজের সোসিও-লিগাল আসপেক্ট সমন্ধে কিছু লেখার অনুরোধ জানিয়েছিল। আমি আইনের লোক না তারপরেও ছোট একটি কানাডিয়ান ঘটনার উল্লেখ করে বিষয়টি লেখার চেষ্টা করেছি, হয়তো কারো কারো ভালো লাগতে পারে তাই সেটা এখানে পোস্ট করছি।

Image result for respect the laws images

এই সাইটে এটি আমার প্রথম লেখা যদিও সাইটটি বেশ কয়দিন ধরে লক্ষ করে আসছি। এতো সুন্দর এবং কার্যকরী একটি সাইটের উদ্ভাবনের জন্য এর উদ্যোক্তাদের আন্তরিক অভিনন্দন। আমি বাংলা ফন্ট এ নতুন লেখা শিখছি তাই বাংলা লেখায় খুব excited বোধ করছি। বহু বছর ধরে এই ভাষায় লিখতে পারিনি। যাহোক ভুল হলে ক্ষমাপ্রাথী।

আমি বেক্তিগত ভাবে আইনজ্ঞ নোই তবে বাবা আইন প্রোয়গকারী সংস্থার লোক থাকায়, এবং আত্মীয় স্বজন এ পেশায় নিয়োজিত থাকায় এ ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ আমার, তাই দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় এখানকার এই বিষয়ের অনেক দৈনন্দিন ঘটনা জানতে ভালো লাগে। যাহোক এখন শিরোনামের কথায় আসি।

আমার সাধারণ বুদ্ধিমতে যা বুঝি তা হলো আমরা, আম জনতা জন-প্রতিনিধি নির্বাচিত করি, তারা পার্লিয়ামেন্টে যান, বিচারক, আইনজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে আইন প্রনয়ণ করেন এবং সেই আইনের প্রয়গের জন্য আইন প্রোয়গকারী সংস্থাও  তৈরী করেন সরকার।  এখন এই আইনের সঠিক প্রয়োগ বা রক্ষা শুধুমাত্র বিচারক, আইনজ্ঞ বা আইন প্রোয়গকারী সংস্থা করতে পারবে না যদিও সাম্প্রতিক কালে আমাদের দেশের অবস্থা দেখলে মনে হয় আইনের সঠিক প্রয়োগ বা রক্ষা শুধুমাত্র এদেরই কাজ। আমাদের বা সাধারণ মানুষের কোনো দায়িত্ব নেই। আমাদের প্রত্যেকের যদি আইনের প্রতি অন্তরকি শ্রদ্ধা না থাকে তাহলে যত কঠিন আইনই হোক বা যত বেশি পুলিশ/আর্মি/বিডিআর থাকুক না কেন সেই আইন প্রয়গ সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে মূল্যবোধের বেপারটি চলে আসে, এবং সেটিকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার যেমন মনে রাখতে হবে তেমনি আমাদেরও মনে রাখতে হবে।

আমি দুটি ছোট উদাহরণ দেই। সিঙ্গাপুরে উঠতে বসতে ফাইন, আর সে জন্য শহরটি পরিষ্কার পরিছন্ন, আবার কানাডা বা স্ক্যান্ডিনেভিয়া পরিষ্কার পরিছন্ন কিন্তু উঠতে বসতে ফাইন নেই তবে আছে সাধারণ মানুষের বেক্তিগত মূল্যবোধ, আর সেই মূল্যবোধের জায়গাথেকেই তারা শহরের ছোট খাটো নিয়মগুলিকে মেনে চলে। শহরের এই বেপারগুলির নিয়ম কানুন পরিচালিত হয় এখানকার “city by law” দ্বারা। নিয়ম যে মাঝে মধ্যে কেউ অমান্য করে না তা নয় তবে কেউ সেটা করলে তাকে সেটার জবাবদিহি যেমন করেত হবে তেমনি কাউকে যদি অকারণে দোষী সাবস্ত করা হয় তাহলে সেটা প্রমান হলে তাকে যেমন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তেমন যে তাকে অযথা দোষী করে তার সময় এবং মান সম্মান নষ্ট করেছে তার উপযোক্ত সাজা পেতে হবে। ওহ একটা কথা বলে নেই, হয়তো এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনেকেই জানেন তার পরও বলি, এখানে আইনজীবীদের কিন্তু প্রচন্ড দাপট এবং একজন আইনজীবী হতে এখানে সব থেকে বেশি খরচ হয় এবং অনেক কসরত কিন্তু খুব prestegious এবং ভালো বেতন।

আবারো সেই মূল্যবোধের বেপারটিতে আসি।  আইনের প্রয়গ এবং শ্রদ্ধার জন্য আমাদেরকে সমাজে অনেক ছোট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং সে দায়িত্ব বাবা মা, শিক্ষক শিক্ষিকা, গুরুজন সবারই। আমরা কতটা পরিবারে বা স্কুলে আইন নিয়ে কথা বলি অথচ এই জিনিসটি হতে পারে আমাদের পরিবারের টেবিল টকের অংশ। আমি অবশ্য এই আলোচনাকে আইনের কঠিন jargon নিয়ে আলোচনার কথা বলছি না।

যেমন আমি সেদিন রাস্তা পার হওয়ার সময় আমার ৭ বছরের ভাগ্নে রাজকে জিজ্ঞেস করলাম আমরা লাল লাইটে কেন দাঁড়ালাম, সে বললো ” না দারালি একসিডেন কব্বনে”. আমি বললাম এটা তোমাকে কে বলেছে, সে বলেছে সে স্কুল থেকে জেনেছে আর “মনি মা বলেছে” .আমি বললাম এখন তো কোনো গাড়ি আসছে না তাহলে আমরা পার হয়ে যাই, সে বললো “তালি পুলিশ দইরে নেযাবেনে” .

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো সে প্রথমে বলেছে এক্সিডেন্টের এর কথা অর্থ্যাৎ sfaety, পুলিশের কথা নয়, এবং এই লাল লাইটে রাস্তা পার হওয়ার যে আইন বা নিয়ম সে সেটা তার “মনি মা ” এবং স্কুল থেকে শুনেছে এবং সেটাকে শুধু সে শ্রদ্ধা করছে না বরং সে আমাকে তার যথাযত বর্ণনা দিয়েছে মাত্র ৭ বছর বয়সে। এখন আমি যদি ফাঁকা রাস্তা দেখে ওকে নিয়ে পার হয়ে যেতাম তাহলে সে মনে করতো স্কুল বা তার মনি মা যা বলেছে তা হয়তো ঠিক না এবং পরবর্তীতে সে সেটা অনুসরণ করতো না। আবার যদি ধরা খেলে পুলিশে টিকেট দিলে কিছু টাকা খরচের মাধ্যমে পার পেয়ে যেত তাহলে সে ওই কাজ বার বার করতো। বলে নেই, সে যদি আমার বর্তমানে লাল লাইটএ রাস্তা পার হতো আর আমরা ধরা খেতাম তাহলে টিকেট আমিই পেতাম কারণ সে আন্ডারএজ। এভাবে আমাদেরকে ছোট থেকে একেবারে গ্রাস রুট পর্যায় থেকে আইন এবং আইন মান্ন করার বা আইনকে নিজের স্বার্থে বেবহার না করার শিক্ষা নিতে হবে যাতে করে জিনিসটি আমাদের মনে প্রাণে এবং মাথায় সব সময় বিরাজ করে।

আমার ফিনল্যান্ডে একটি গবেষণা পেপার লেখার সময় বাংলাদেশের শ্রম আইন এবং কনস্টিটিউশন এর কিছু বেপারে এক প্রফেসর এর সাথে আলাপ হয়েছিল, উনি আমাদের ওই বিষয়ের আইনগুলি দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন এবং আমাদের আইন প্রণেতাদের অনেক সাধুবাদ দিয়েছিলেন, এতে প্রমাণিত হয় যে আমাদের খুব ভালো আইন আছে কিন্তু আমরা সবাই সেটা সমন্ধে খুব বেশি অবগত না, আবার অবগত হলেও সেটার প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা নেই। এই যে দেখুন গতবার দেশে গিয়ে বসুন্ধরা মলে নামাজ পড়তে গিয়ে ওযু করার জায়গাতে লেখা দেখলাম পা উঠিয়ে সিঙ্কের মধ্যে পা ধুবেন না কিন্তু মানুষ অবলীলায় সেই কাজটি করে যাচ্ছেন যদিও সেখানে ওযু করার খুব ভালো বেবস্থা আছে। এই ছোট ছোট জিনিসগুলি মান্ন করতে কোনো পয়সা খরচ নেই বা কোনো বড়ো ফান্ডিং এর দরকার হয় না, দরকার আত্ম সচেতনতা এবং মূল্যবোধ। প্রতিবার দেশে যাই এবং অনেক কিছুর উন্নতি দেখি কিন্তু এই সচেতনতাবোধ বা মূল্যবোধের উন্নতি খুব একটা চোখে পড়ে না। জানিনা আর কতদিন লাগবে, না কি আমরা এটিকে অবহেলা করে বড়ো বড়ো শপিং মল, ব্রিজ, বড়ো বড়ো বাড়ি আর ডিজিটাল বাংলাদেশ করে এগিয়ে যাবো, তাতে কি আসলে আগানো যাবে।

আইনের সঠিক পপ্রয়োগের জন্য দরকার মনের ভিতরের পুলিশকে জাগ্রত করা তাহলে সত্যিকারের পুলিশের কম দরকার হবে এবং মানুষ নিজে থেকেই আইন পালন করবে। এ বিষয়ে ছোট একটি উদাহরণ দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি। আমরা একবার এখানকার সামারে পুরা পরিবার ক্যাম্পিং এ গেছি। টরন্টো শহর থেকে প্রায় ৩০০ কিঃ পশ্চিমে একটি পাইন বৃক্ষ সমৃদ্ধ বনে। বিকালের দিকে ক্যাম্প থেকে আমরা ১০কিঃ দূরে লেক হিউরোনের পাড়ে সূর্যাস্ত দেখতে গেছি। ফেরার পথে রাস্তার পাশে একটি কাঠের দোকান দেখে থামলাম, মনে করলাম কিছু শুকনা কাঠ কিনে নেই রাতে ক্যাম্প ফায়ারের জন্য। নেমে দেখি কাঠ ঠিকই আছে এবং ছোট ছোট বস্তায় সুন্দর করে সাজানো কিন্তু আসে পাশে কোনো লোকজন নেই এবং খুবই নির্জন এলাকা, আসে পাশে কোনো বাড়ি ঘরও নেই। হটাৎ আমাদের টিম মেম্বার একজন বলে বসলো টাকা কাকে দিবো কেউ নেইতো, ধুর নিয়ে যাই ছোট এক বস্তা, এতে ওদের কিছু হবে না; তাছাড়া কোনো লোক নেই কেন। এই কথাবার্তার মধ্যে আমার ভাবীজি বললেন এই দাড়া, পড়ে দেখ কি লেখা ওখানে। দেখি ছোট একটি সাইন বোর্ডে লেখা “

IF YOU STEAL ONLY YOU AND GOD WILL KNOW”

হটাৎ আমাদের হাত পা খানিকের জন্য থেমে গেলো এবং দেখলাম পাশে একটি ছোট বাক্সর উপর লেখা $৫ এই বাক্সে রেখে একটি ব্যাগ নিয়ে যাও। উল্লেখ ওই পাওয়ারফুল লেখার কারণে আমরা একটা না ৩/৪ ব্যাগ কাঠ নিয়েছিলাম এবং ওই বাক্সে টাকা রেখে এসেছি।  ওই জায়গায় আরো কয় একবার গেছি এবং ওভাবেই দেখেছি, এবং দেখেছি অন্নান্ন কানাডিয়ানরাও ওখানে টাকা রেখে কাঠের ব্যাগ নিয়ে জাস্ছে।

এটিই হলো মনের পুলিশকে জাগ্রত করা এবং প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হলে এই মন মানসিকতার খুব প্রয়োজন। আমি নিশ্চিত আপনি এমন কিছু আমাদের দেশে বা এই ধরণের অনেক দেশে মসজিদ, মন্দির বা গির্জার পাশে কিছুক্ষন কিছু রেখে আসুন দেখবেন মাল নেই এবং বাক্সে টাকাও নেই। আর সে জন্যইতো জেল খানায় মানুষ হত্যা, খোদ থানা লুট, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা লুট হয়ে থাকে যদিও এ সমস্ত জায়গা এক ধরণের সেফ জায়গা হওয়া উচিত।

আসুন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি, আস্তে আস্তে; তাহলে ঠিকিই আমরা লক্ষে পৌঁছতে পারবো। আমি বা আপনি একা কিছু না করতে পারলেও শুরুটা করা যেতে পারে, নিজের থেকে, নিজের পরিবার থেকে, নিজের আশ পাশ থেকে। যেমনটি মাদার তেরেসা বলেছেন, “I alone cannot change the world, but I can cast a stone across the waters to create many ripples.” তাই আমি আশাবাদী আমাদের প্রত্যেকের ছোট ছোট প্রচেষ্টা একদিন এনে দিবে অনেক বড়ো তাপপর্যপূর্ণ পরিবর্তন, আর ‘ আইন প্রতিদিন” মনে করি সেই প্রচেষ্টারই একটি শুভ পদক্ষেপ।

সবাই ভালো থাকবেন, Know your rights, know your responsibilities and respect the laws.

 

বি. মুকুল

টরন্টো ৪ মার্চ, ২০১৭

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন