আমার বড় মেয়ে ইদানিং এমন কিছু কথা বলে, যা শুনলে মনে হয় ও এটা কিভাবে জানলো? কয়েকদিন আগে বল ধরাধরি খেলা খেলছি। সে আমাকে দূর থেকে বল দেয়, আমাকে ধরতে হবে, আর আমি তাকে বল ছুড়ে দিবো, তাকেও ধরতে হবে। এভাবে আমি একবার বল ধরতে মিস করায় আমার মেয়ে বলে” Daddy! practice makes perfect” You need more practice. অনেক ভাবলাম, সে এটা কিভাবে জানলো?, এখনও জানিনা সে এটা কিভাবে জানে। হয়তোবা টিভি দেখে।
দুইদিন আগে, রং নিয়ে কথা হচ্ছে, তখন সে বলছে girls like red. আমার একটু ভাল লাগলো শুনে। কারন অন্তত সে girls like pink সেটা বলেনি। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, what about boys?. সে বলল ” boys like black”. আমার ভালো লাগার কারন, ওদের জন্মের পর থেকে চেষ্টা ছিল, ওদেরকে আমি মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবো, মেয়ে হিসাবে নয়। তাই আমি চাইতাম না, কোন নিদিষ্ট রঙ এর প্রতি তাদের আগ্রহ হোক। কানাডাতে আসার পর বেশি খেয়াল করছি জিনিসটা, পিঙ্ক হলেই সেই জিনিস আর ছেলে বাচ্চা ধরবেনা। সেটা ২/৩ বছর থেকেই শুরু। গতবারের জন্মদিনে সে চেয়েছিল, লাল রঙের ড্রেস ও লাল রঙের বেলুন। এর আগের বার, সে চেয়েছিল, নীল রঙের জামা। আবার সাইকেল পিঙ্ক কিনে দিয়েছিলাম, প্রথমে তার পছন্দ হয়নি, অনেক বোঝানোর পর গ্রহন করেছে। সে চাচ্ছিল, নীল রঙের সাইকেল। আমি তার ছোটবেলা থেকেই এমন খেলনা কিনতাম, যেটা মেয়েদের বা পিঙ্ক হতে হবে তা না, যেটা তার মানসিক বিকাশে সহায়তা করে এই ধরনের খেলা বা খেলনা।
আসলে আমার এই বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামানোর কারন, তাদের বিকাশ নিয়ে। প্রথমে একজন মনোবিজ্ঞানী, তারপর এখন একজন সমাজকর্মী, আমার কাছে এক সময় মনে হত, আমরা বিশেষ করে মায়েরা যদি ইচ্ছা করি, তাহলে সমাজে ধর্ষণ ও নির্যাতন এর মত ঘটনা দূর করা সম্ভব না হলেও কমানো সম্ভব। কিভাবে আপনি যদি আপনার ছেলে মেয়েকে একজন “মানুষ” হিসাবে গড়ে তুলেন। আমি দেখেছি আমরা আমাদের ছেলেদের বলি” ছেলেরা এমন করেনা, ছেলেদের কান্না করতে নাই, ছেলেদেরকে একটু সাহসী হতে হয় বা সাহসী কাজ করতে হয়। পক্ষান্তরে মেয়েরা এমন করেনা, মেয়েরা নমনীয় হয়, মেয়েদের অনেক সময় মেনে নিতে হয়, ছেলেরা বা সমাজ কিছু বললে তা মানিয়ে নিতে হয়, ব্লা ব্লা ব্লা এভাবেই চলতেই থাকে। ছেলে যখন কোন সাহসী(!) কাজ করে তখন আমরা অনেকেই তাদের বাহবা দেই।
আপনি নিজে ভাবেন, যারা এই সব শুনে শুনে বড় হবে, তাদের কি অবস্থা হবে। তাই যখন কোন ছেলে কোন মেয়েকে ধর্ষণ করে, তখন হয়তোবা সে নিজেকে পুরুষ হিসাবে ভাবে, মানুষ হিসাবে নয়। তবে মায়েরাই সচেতন হলে হবেনা, কারন আমাদের এই পরুষ শাসিত, সমাজে মায়েরা বা মেয়েরা সবকিছু ইচ্ছা করলেই করতে পারে না। আপনি দেখবেন, অনেক মেয়েরা বা মায়েরা তাদের এই হীন কাজ কর্মকে আবার সাপোর্টও করবে? আপনি অবাক হচ্ছেন। এরা কারা? এরা হল ওই ছেলেদের মা, চাচী, খালা এবং বোনেরা। তারা বলবে এখানে মেয়েদেরও দোষ আছে বা মেয়েদের অনুমতি ছিল, ব্লা ব্লা ব্লা। আবার আমাদের মধ্যে অনেকেই ওদের কোথায় ভুল/পরিবারে কোন সমস্যা ছিল কিনা?, সেটা নিয়ে চেঁচামেচি করবো, ওদের ধরিয়ে দিন অমুক জুয়েলাস বয়কট করুন বলে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে আবার কোন মেয়েকে নির্যাতন বা ধর্ষণ করবো (যেমন কাজের মেয়েকে, রাস্তায় মেয়ে দেখলে অন্যভাবে তাকাবো), কিন্তু নিজে বা নিজের ছেলে মেয়েদের “মানুষ” হওয়ার জন্য কোন কাজ করবোনা। কারন মানুষের ভুল ধরা অনেক সহজ নিজে শুধরানোর চেয়ে।
আমি বলছিনা, আমরা এইসব করববা, অবশ্যই দরকার, সাথে সাথে দরকার আমাদের গোঁড়ায় কোন গলদ আছে কিনা? তা খুঁজে বের করা এবং তার জন্য মিনিমাম কিছু কাজ করা, যার ফলে আপনার পরিবারের কেউ যেন এই ধরনের ঘৃণিত কাজ ভবিষ্যৎ না করে। এর মাধ্যমে হয়তো পুরাপুরি দূর করা যাবেনা, তবে কমানো যাবে বলে মনে করি। কারন আজকে হয়তো আপন জুয়েলাসের ছেলে ধরা পরবে, আবার কিছুদিন পরে ছাড়াও পেয়ে যাবে এবং ২/৩ মাস পর আবারও এরকম কোন বিখ্যাত ব্যক্তির ছেলে মেয়ে খবরের শিরোনাম হবেন, মন্দ কোন কারনে। আবার হাজারও নির্যাতন ও ধর্ষণ অপ্রকাশিতই থেকেই যায়। তাই আসুন ওদের ধরিয়ে দিতে এবং শাস্তি পেতে আপনার যেমন ভুমিকা থাকা দরকার, ঠিক তেমনি আপনি খেয়াল করুন আপনি এমন কি একটা ছোট কাজ করতে পারেন, এই সমাজের মানসিকতা পরিবর্তনে। সেটা কিন্তু করতে হবে, আজকে এবং এখন থেকেই…। সবাই ভাল থাকবেন…।