উপরোক্ত বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ওবামা কিছু সংখক বিপদগামী লোকের সন্ত্রাসী কর্ম কাণ্ডের জন্য কোনো একটি পুরা জাতি বা গোষ্ঠীকে দায়ী করা বা ওই জাতি বা গোষ্ঠীর নামে সন্ত্রাসীদের নাম করা থেকে বিরত থাকা সম্মন্ধে যা বলেছেন তা আমরা প্রায় শুনে থাকি কিন্তু তার মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির মুখ থেকে একথাগুলি বের হওয়া বেশ তাপপর্য বহন করে। তার জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বিষয়ে পলিসির ব্যাপারে সম্পূর্ণ এক মত না হলেও সে যে একজন ভালো বক্তা এবং লেকখ সেটা তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই উপলোদ্ধি করেছি। তার এই দৃঢ় বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
এবার আসি জেনারালাইজেশন বা সবাইকে এক কাতারে ফেলার ছোটো বর্ণনায়। যেমন হিটলার ক্যাথলিক খ্রিস্টানের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছিল এবং জার্মান ছিলেন এবং সে ইতিহাসের নিকৃস্ট কাজ করেছেন, অনেক মানুষ মেরেছেন কিন্তু তাই বলে আমরা বলি না যে সব জার্মান তার মতো নিকৃষ্ট বা কেউ বলি না জার্মান খুনি হিটলার, আবার কিছু সংখক হিন্দু উগ্রবাদী বাবরি মসজিদ ভেঙ্গেছিলো তাই বলে সমস্ত হিন্দুদের আমরা উগ্রবাদী বলি না বা একটি মার্কিন ছেলে একটি স্কুলে ঢুকে অসংখ ছাত্র ছাত্রীদের হত্যা করেছিল তাই বলে সব মার্কিন বা সব খ্রিস্টানদের আমরা সন্ত্রাসী বলি না, তাই কিছু বিপদগামী লোক যারা মুসলমানদের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছিলো এবং তারা মুসলমানের মূল শিক্ষা থেকে বের হয়ে গিয়ে নিজেদের ফতোয়া অনুযায়ী নিরপরাধ মানুষ খুন করলে সমস্ত মুসলমানদেরকে আমরা দায়ী করতে পারি না। হিটলার তার Mein Kampf, বইতে লিখেছিলেন “By defending myself against the Jew, I am fighting for the work of the Lord.” তিনি কেথলিকের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তার খুনি কর্মকান্ডকে ঈশ্বরের কাজ বলে বর্ণনা করেছিলেন ঠিক যেমনটি গুলশান হামলার জঙ্গিরা বলেছিলো তারা ইসলামের কাজ করেছে। তাই বলে আমরা সমস্ত ক্যাথলিকদের হিটলারের কাতারে ফেলতে পারি না বরং আমার মতে সে একজন খৃষ্টানই ছিল না যেমন কিনা ইসলামি বা হিন্দু জঙ্গিরাও কোনো ধর্মের হতে পারে না যদিও তারা কোনো একটি ধর্মীয় পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিল।
আবার বাড়িতে কাজের লোক রাখলে , হয়তো কোনো সময় কেউ কেউ টুকি টাকি চুরি করলে সমস্ত কাজের লোকদেরকে চোর হিসাবে ধরা ঠিক হবে না। যাহোক যদি আমরা এভাবে কোন একজন বা কোনো এক দল লোকের কর্ম কাণ্ডের জন্য পুরা একটি জাতি বা গোষ্ঠীকে দায়ী করি বা তাদেরকে একটি লেভেলে ফেলি তাহলে এটাকে মোটামুটি জেনারালাইজেশন, স্টিগমাটাইজড বা stereotyping বলা যেতে পারে। এটা খুবই সাধারণ সংগা।
আমি কমিউনিটি এবং হেলথ কেয়ার সেক্টরে কাজ করি বিশেষভাবে মেন্টাল হেলথ কেয়ারএ। আমার এ বিষয়ের অদিকাংশ পড়াশুনা ইউরোপ অথবা উত্তর আমেরিকা থেকে, অর্থাৎ পশ্চীমাদের থেকে। এরাই প্রতি পদে পদে উঃসাহিত করছে সমাজ থেকে stigma, stereotyping বা generalization দূর করার জন্য। ঠিক আজকেও একটি ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করে আসলাম, সেখানেও এই stigma এবং generalization নিয়ে কথা হলো এবং আমাদের প্রাকটিস এর ক্ষেত্রে এগুলিকে বর্জন করার জন্য, কিন্তু এই পশ্চিমাদের মুখ থেকে যখন ইসলামিক সন্ত্রাসী বা ইসলাম ধর্মীয় সমস্ত লোককে সন্ত্রাসী বলে আক্ষায়িত অথবা এই কিছু সংখক সন্ত্রাসীকে অসংখ সাধারণ মুসলমানদের থেকে আলাদা না করতে পারা তখন ওই সমস্ত পোশ্চিমাদেরকে কি অজ্ঞ, অশিক্ষিত না ভন্ড বলবো। উল্লেখ আমি এখানে ওই সমস্ত পশ্চিমাদের কথা বলছি যারা কিছু লোকের কর্ম কাণ্ডের জন পুরা জাতিকে দায়ী করে। আমাদের নিজেদের মধ্যেও এরকম লোক আছে তাই তাদেরকে বলার সাথে সাথে আমাদের নিজেদেরকেও সংশোধন করতে হবে। যেমন সেদিন এক ভাবীর মুখ থেকে শুনছিলাম উনি ছেলেদের নিয়ে টরোন্টোর পূর্ব দিকের একটি কালো অধ্যুষিত এলাকাতে move করে এসেছেন , এবং তার বক্তব্য আগে তার ছোট ছেলে সাদাদের মধ্যে ছিল তাই খারাপ হয়ে জাসছিলো কারণ সাদারা হলো খারাপ । হয়তোবা কিছু সাদার সমস্যা ছিল কিন্তু উনি একথা বলতে পারেন না যে সব সাদারা খারাপ , আর যদি তাই হতো তাহলে কিছু কিছু বাঙালি রাজাকারের জন্য আমরা সব বাঙালিকে রাজাকার বলতাম।
যাহোক micro লেভেল এ বা অতি ক্ষুদ্র পরিসরে আমাদেরকে সুযোগ পেলে ওবামার মতো এদেরকে বুঝতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় অনেক সাধারণ ভালো মানুষ বর্ণবাদী শেতাঙ্গ সরকারের মিথ্যা সন্ত্রাসী অপবাদের কারণে এক সময় তারা ANC তে যোগ দিয়ে তাদেরকে যে মিথ্যা অপরাধে দোষী করা হয়েছিল তারা সেই অপরাধই করা শুরু করেছিল। catch a fire মুভিটি দেখলে এ বিষয়ে ভালো ধারণা হবে। তাই এরা বা আমরা যদি জঙ্গিবাদ দমনে এদের থেকে সাধাণ লোকদের তফাৎ না করতে পারি , এবং সাধারণ লোকের সাহায্য নিয়ে কাজ না করতে পারি তাহলে হাজার হাজার বোমা মারলেও কিছু হবে না, সমস্যা বরং বেড়েই চলবে।
আসুন আমরা ওবামার সাথে সুর মিলিয়ে সমাজ এবং আমাদের মন থেকে ওই জিনিষগুলি দূর করে ফেলি এবং যে দোষী শুধু তাকেই দোষী বলি তার সারা গ্রামকে দোষী না করি।
ধন্যবাদ।
মুকুল
টরন্টো , সেপ্টেম্বর ২০১৬