আখ্যান  ১:11223812_10206448913931986_5674303730539247794_n 11196317_10206448914331996_2466474599705755324_n 11072048_10206448914892010_6212567688513077254_n

“প্রিয় বন্ধু,
অসংখ্য ধন্যবাদ।ধন্যবাদ তোমাকে এই ছবিগুলোর জন্য।
তুমি কি জানো,আজ আমার জন্য অত্যন্ত কঠিন একটা দিন।
‘রোজ’-এর মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।সে ‘রোজ’ কে নিয়ে আমার থেকে ৫০০ কিমি দুরে চলে গেছে।
আমি জানি না কিভাবে এখন আমি আমার মেয়ে কে দেখবো।আমার উকিল ও ছুটিতে আছে।
আমার জন্য দোয়া কোরো বন্ধু।
ইতি ফার্নান্দো।”

কিছুদিন আগে যখন আমরা প্যারীসে গিয়েছিলাম তখন আইফেল টাওয়ার এর সামনে এই ভদ্রলোক আর তার ৩ বছর বয়সী কন্যার সাথে পরিচয়।বাবা আর মেয়ের প্রথম একসাথে ভ্রমণ।মেয়েকে আইফেল দেখাতে নিয়ে এসেছেন ফার্নান্দো।উনি প্যারীস থেকে একটু দুরে থাকেন।আমি ও আমার স্ত্রী ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে একযায়গায় বিশ্রামের জন্য বসলে পাশেই দেখি মধ্যবয়স্ক বাবা আর তার কন্যা একটি আইসক্রীম দুজনে ভাগ করে খাচ্ছেন।কন্যাটি কোনের নীচের অংশ ( যে অংশটুকুতে চকলেটযুক্ত বিস্কুট থাকে ) আগে খেতে চায়।বাবা বলছে, না আগে উপরের টুকু খাও,পরে ওটা খেও।দৃশ্যটি আমরা খুব উপভোগের সাথে দেখছিলাম।বাবা ও কন্যার এমন ভালবাসা দেখে নিজেকে আটকাতে পারিনি।সেধে গিয়ে বললাম তোমাদের দুইজনের ছবি তুলতে পারি?ভদ্রলোক রাজি হলেন।পরে আস্তে আস্তে অনেক কথাই হল।যেহেতু বাবুটাকে দেয়ার মত কিছুই ছিল না, আমার স্ত্রী বাবুটার কপালে একটা টিপ পরিয়ে দেয়।ভদ্রলোক কে বললাম তোমাদের বাবা মেয়ের প্রথম ভ্রমণের অংশ হতে পেরে আমরা গবর্িত।ছবি গুলো আমি তোমাকে মেইল করে দিব।উনি কৃতজ্ঞতায় নুইয়ে পরলেন।
গতকাল রাতে আমি ওই ছবি গুলো ফার্নান্দোকে মেইল করি।আজ সকালে মেইল টা পেলাম।
একজন পিতার কন্যা হারানোর আশঙ্কা তে চোখের পানি আটকাতে পারলাম না।একজন অজানা মানুষের কাছে ফার্নান্দোর কষ্ট প্রকাশ সন্তানের প্রতি তার গভীর প্রেম বর্ণনা করে। বলশালী পুরুষ সন্তানের বেলায় কেবল নির্বল হয়ে যায়।

আখ্যান ২:

IMG_1701

প্রথমেই সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী এইধরনের একটি ছবির জন্য কিন্তু এই মূর্তিটি সম্পর্কে কিছু বলবার লোভ সামলাতে পারলাম না।মিশরীয় সভ্যতা নিয়ে আমাদের অনেকেরই কৌতুহল আছে।
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সবথেকে শক্তিশালী দেবতা ছিলেন ‘এমন (Amon)’।তাকে মিশরীয় দেবতাদের রাজা বলা হতো।বিভিন্ন নামে উনাকে ডাকা হতো যেমন- আমন,আমেন,আমুন,এম্মন,এমাউন প্রভৃতি।তাকে বলা হতো ‘অদৃশ্য বায়ুর দেবতা’।হয়তো অনেকেই আপনারা তাকে নানা রূপে দেখেছেন।উনার ৫ টি রূপের মাঝে সব থেকে বিখ্যাত হল একটি স্তম্ভের উপর বসা মানব-সিংহ
যেহেতু উনি বায়ুর দেবতা তাই কিছু কিছু মানুষ তাকে ‘নিশ্বাসের নিয়ন্তা’ (মানে উনি সকলের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রন করেন) বলে ভাবতেন।তাই দিন দিন তার উপাসনাকারী অনুচরের সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছিল।অনেক বিখ্যাত ফারাও রাজাগণ ‘এমন (Amon)’ সাহবের অনুচর ছিলেন যেমন তুতেখামন ( Tutankhamen ),আখেনামন (Akhenamon)।এমনকি গ্রীক সভ্যতার অনেকেই তাকে গ্রীক দেবতা ‘জীউস’ ভেবে ভুল করতেন।খ্রীস্টপূর্ব ১২০০ সালের দিকে তার আরাধনা হওয়া আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়।


লু্যভ জাদুঘরের মিশরীয় অংশে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ খুব ছোট্ট এই মূর্তিতে (৫ সেমি) আমার চোখ আটকে যায়।ভাল করে তাকিয়ে দেখি এটি ‘এমন’ সাহেব।এ এক বিচিত্র রূপ।এমন ভাবে দেবতা ‘এমন’ কে মনে হয় না কেউ কোথাও দেখেছে ।
‘অতি আশ্চর্য উদ্ভাবক।
আরত্ত আশ্চর্য উদ্ভাবন।।’

3 মন্তব্য

    • ধন্যবাদ হাফিজুর রহমান ভাই।আমাদেরও আশা ও দোয়া বাবার কোলে তার কন্যা ফিরে আসুক।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন