unnamedলেটার টু মাই আনবর্ন চাইল্ড – আমার অজাত শিশুর প্রতি চিঠি, শিল্পী আসমা সুলতানার (www.asmasultana.co) সাম্প্রতিক আঠাশটি শিল্পকর্ম নিয়ে এই একক প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে কানাডার টরোন্টোর প্রখ্যাত আর্ট গ্যালারী, গ্যালারী ফিফটি (http://www.gallery50.ca/p/blog-page_13.html)। এই প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ২৩ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর অবধি। আসমা সুলতানা ক্রমশ দুর্লভ হয়ে ওঠা সেই শিল্পীদের একজন, যার শিল্পকর্মের মূলভাবনা আত্মজৈবনিক। শিল্পী হিসাবে বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক-ভৌগলিক পরিবেশে নিজের পরিচয় খুঁজে নেবার সংগ্রাম, মানুষ হিসাবে মাথা উঁচু করে দাড়াবার নিরন্তর যুদ্ধ, অপমান, বঞ্চনা আর আত্মত্যাগের নানা আখ্যান প্রতীকি রুপ খুঁজে পেয়েছে তার ক্যানভাস, প্রিন্ট এবং স্থাপনা শিল্পে। চলমান জীবনের সবটুকু নিংড়ে দিয়েছেন তিনি তার শিল্পে, নিজের জীবনটাকেই একান্ত নিজের করে নিয়ে সৃষ্টিতে আত্মমগ্ন হয়েছেন, যেখানে নিজের অস্তিত্ব মানচিত্রে জায়গা পেয়েছে শিল্পীর যাপিত জীবনের অসংখ্য অভিজ্ঞতার স্মারক। নিজের আত্মপরিচয় খোঁজার প্রত্যয়ে তার শরীরেরই অনন্য অংশ, যেমন তুলিকে প্রতিস্থাপিত করেছে আঙ্গুলের ছাপ, মাথার চুল জায়গা নিয়েছে সুতার প্রতিকীরুপে আর বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে শিল্পীর জীবনের কোলাজে। অবশ্যই এই মহাকাব্য এখনও পরিণতি পায়নি, শিল্পী মনে করিয়ে দেন; আর তার সেই মহাকাব্যকে বুঝতে আমাদের সচেতন স্মৃতিতে ধরে রাখতে হবে মহাকাব্যের সূচনাটিকে। আর অতীত, অতীত হবার কারণে আমাদের কাছে যা অস্পৃশ্য রয়ে যায় চিরকালই – সময়ের ধ্বংসলীলায় টিকে থাকা অবশিষ্টাংশগুলোই কেবল টিকে থাকে সময়ের সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে পুনঃসৃষ্টি করার জন্য আর স্মৃতির সেই কথোপকথনের অনুরণন শিল্পীর সৃষ্টিতে প্রাণ খুঁজে পায়।

unnamed (2)

শিল্পীর অজাত শিশু শিল্পীরই শিল্পকর্ম, মায়ের জরায়ুতে যেমন করে মায়ের পুষ্টি নিয়ে বেড়ে ওঠে ভ্রূণ, শিল্পী মনের স্বপ্নে আর আশায় পুষ্ট হয় তার শিল্পকর্ম, যেন শরীরের বাইরে জন্ম নেয়া শিশু। যে শিশু শিল্পী গর্ভে ধারণ করেননি, সেটি আসলে তারই মনের সৃষ্টি, আর সেটাই বাস্তব রুপ পায় তার নিজের হাতে বানানো শিশুর জামায়, কাপড়ে তোলা নক্সী কিংবা আঙ্গুলের ছাপে আঁকা ড্রইং এ। আরো বিস্ময় অপেক্ষা করে যখন দেখি শিল্পী পরম মমতায় সংগ্রহ করা নিজেরই মাথার পরিত্যক্ত চুলকে তার শিল্পকলার অংশ করে নিয়েছেন। আর এই ঝরে পড়া আর কিংবা শিকড়চ্যুত চুল প্রতীকী তাৎপর্যে অর্থবহ উঠে শিল্পী জীবনের অভিজ্ঞতার নানা স্তরে। তার সেলাইয়ের কাজে সুতোকে প্রতিস্থাপিত করেছে চুল, আর এই চুল সংগ্রহ,পরিষ্কার ও তাদের সংরক্ষণ, সব কিছুই তার কাছে খুব সতর্কতার সাথে পরিকল্পিত ধারাবাহিক কোনো কাজের মতই, যেন কোনো শিশুর প্রতিপালন। এভাবেই শিল্পী নিজের সাথে নিজের একটি সম্পর্ক গড়ে তোলেন, রূপান্তরিত হন তার নিজেরই জননী এবং সন্তানে।

শিল্পীর কথোপকথনের শব্দহীন অভিব্যক্তিগুলো কখনো রুপ পায় ছাদ থেকে মেঘের মত ভেসে থাকা বারোটি সাদা জামা, কিংবা ছাদ থেকে মাটি স্পর্শ করা জরায়ুর দুটি হাতের রক্তাক্ত প্রতীকি ছাপসহ দীর্ঘ একটি জামা, যন্ত্রণার অস্বস্তিকর চুলসহ নক্সীকাজের হৃদপিণ্ড, জরায়ুর বেশ কটি রুপ, ভ্রূণ, কাপড়ের খামে প্রজাপতির ভাঙ্গা ডানা, কিংবা শুকনো বীজের একটি ডাল, সিল্কের ফিতায় চুল দিয়ে সেলাই করা সময়ের স্বাক্ষী হয়ে তাকিয়ে থাকা অষ্টআশিটি নক্ষত্রপুঞ্জ, কিংবা কাগজে হাতের আঙ্গুলে ছাপে আকা অনুপস্থিত শিশুর জামায়।

3

লেটার টু মাই আনবর্ণ চাইল্ড কল্পনার একটি প্রবেশ আর প্রস্থান বিন্দু, ম্যাধাকর্ষণমূক্ত বিষন্নতার সাথে একটি ক্ষতকে ব্যাখ্যা করা প্রয়াস। সেলাই করে নক্সী কাজকে নতুন করে উপস্থাপন করা, যাকে শিল্পী বিনির্মাণ করেছেন গল্প বলার এর গোপন শক্তিটির সম্ভাবতা যাচাই করার জন্য, সচেতন স্তরে সেটি শনাক্ত করার আগেই প্রথাগত উপস্থাপনায় সামাজিক মনস্তত্ত্ব আর আড়ষ্ট নিয়ম প্রায়শই যেখানে শুষে নেয় এর গল্প বলার আর স্বাধীন অভিব্যক্তি প্রকাশের ক্ষমতা। আমার অজাত শিশুর প্রতি চিঠির কাজগুলো শিল্পীর যে যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতার প্রতিনিধিত্ব করছে, সেই জীবনে প্রবেশ করার দরজাটি সংবেদী কোনো দর্শকের মনে হতে পারে একটি ক্ষতচিহ্ন, যেখানে প্রবেশ আর বের হয়ে আসার পথেই শিল্পীর যন্ত্রণাময় শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতাটি প্রতিস্থাপিত হয় নন্দনতাত্ত্বিক সমীকরণের উভয় পাশেই। বিষন্নতার নির্ভার সেই অনুভূতিগুলো আরো নিকটবর্তী করে শিল্পীকে আমাদের নিজেদের স্বীকৃতিহীন অনুভূতিগুলোর দুঃসহ বিলাপে।

unnamed (1)

লেটার টু মাই আনবর্ন চাইল্ড
শিল্পী আসমা সুলতানার একক শিল্পকলা প্রদর্শনী
(নভেম্বর ২৩ থেকে ডিসেম্বর ৪, ২০১৬)
গ্যালারী ফিফটি, ৫০ গ্ল্যাডস্টোন অ্যাভেনিউ, টরোন্টো
গ্যালারীর সময় বুধবার থেকে রোববার ( দুপুর ১ থেকে বিকাল ৫ )
উদ্বোধন: ২৬ নভেম্বর, শনিবার (দুপুর ২ থেকে সন্ধ্যা ৬)

 

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন