নিচের যুগান্তরের আর্টিকেলটি মিস রোজি অপার সংগ্রহ থেকে নেওয়া। আর্টিকেলটি হটাৎ করে একটু ফানিই মনে হবে। তবে ভালো করে চিন্তা করলে এটি কিন্তু আশাহতের হাত ছানির মতো। স্বপ্নের পদ্মা সেতু যেমন আমাদের আশার ঝান্ডা উড়াচ্ছে, তেমনি ১ কেজি নাপা প্রেসক্রিপশনও আশাহতের হাতছানির নমুনা।
তবে শুরুথেকেই বলে নিচ্ছি যে আমি এই লেখা দিয়ে যেমন ডাক্তারদের বাশ দিতে বসি নাই, তেমনি আবার ডাক্তারদের চাফাই গাইতেও বসি নাই। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি দেশের অনেক উন্নতি এবং ডিজিটালাইজেশনের পরেও যে আমাদের মাথার উপর থেকে হতভাগ্যের কালো মেঘ এখনো সরেনি নি।
আমি নিজে ডাক্তার না হলেও এখানে হেলথ প্রফেশনে কাজ করার সুবাদে প্রায়ই ডাক্তারদের সাথে মিটিং-সিটিং করা বা যোগাযোগ হয়ে থাকে। আর দেশে থাকা অবস্থায়, বিশেষ করে আমার প্রয়াত একটি ছোট বোনের অসুস্থতায় হাসপাতাল, ডাক্তার বা বিভিন্ন ক্লিনিকের কাজ কর্ম কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাই কিছুটা হলেও মোটামুটি একটি তুলনামূলক ধারণা করতে পারি। তবে না আমি কোনো তুলনা করতে যাচ্ছি না। শিরোনামে আমি ইচ্ছা করে ১ কেজি নাপার পরিবর্তে ৩ কেজি বিষ লিখেছি এই কারণে যে, যে দেশে ২ লক্ষ লোকের চিকিৎসার জন্য মাত্র দুই ডাক্তার আর দুই স্টাফ থাকে (বাংলা খবর থেকে )সেখানে ১ কেজি বিষ না লিখে ৩ কেজি নাপা লিখেছেন সেটাই অনেক।
আপনি ডাক্তার হন, শিক্ষক হন, প্রকৌশলী হন ঠিক আছে, কিন্তু আপনি তো একজন মানুষ। আপনার স্ট্রেস, বার্ন-আউট বা frustration থাকতে পারে না। নাকি রোগ বালাই বা স্ট্রেস আমাদের জন্য, কিন্তু ডক্তারদের জন্য নয়। কেন ? তারা কি প্লাস্টিকের মানুষ। উক্ত আর্টিকেলটিতে সরকারি হাসপাতালের কথা বলা হয়েছে এবং আমি এই সরকারি হাসপাতালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবো। ওখানে রুগীটির অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক যে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা রোগীদেরকে গরু মনে করে। কিন্তু এর পিছনের কারণ ওই রুগী ভদ্র লোকের জানার কথা নয়, তার দরকার যথাযত সেবা পাওয়া। প্রশ্ন হলো কে চালাচ্ছে এই ক্ষণ-ভঙ্কুর সিস্টেম, তারা কেন এইভাবে দিনের পর দিন চলতে দিচ্ছেন !!!
আপনি খোঁজ নিয়ে দেখুন। অনেক অনেক জায়গায় একেবারে অযোগ্য লোক বসানো, অথচ যোগ্য লোকের কোনো অভাব নেই। এসব দেশেও অনেক যোগ্য লোক আছে এদেরকে সেবা দিচ্ছে কিন্তু দেশে তাদের জায়গা নেই। দেশের যারা এই পদ্ধতি টিকিয়ে রাখছেন তাদের চোখে এই যোগ্য লোকগুলি চোখে পড়ে না। আর সে কারণেই ওই “খেলা রাম খেলে যা” চলছে।
আমি গতবার দেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এলাকার একটি রেজিস্ট্রি অফিসে যাই একটি ডকুমেন্ট সইয়ের জন্য। সেখানে বলতে গেলে সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকে, ঠিক ওই রেজিস্ট্রি সাহেবের অফিসের পাশের উম্মুক্ত, অপরিষ্কার এবং দুর্গন্ধ যুক্ত মূত্রখানার বাতাস আর ধুলাবালি খেয়ে ঠান্ডায় এবং এলার্জিতে ধরাশায়ী হয়েছিলাম। কিন্তু ঠিকমতো রেস্ট নেওয়ার সময় ছিল না তাই পরের দিনই বোনকে দেখতে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্দালয়ের একটি সেমিনারে কথা বলার জন্য চলে যাই।
যাহোক একদিন পর ভাগ্নেকে বললাম চলো ডাক্তারের কাছে যাই। ও বললো এই সময় প্রাইভেট ক্লিনিকের ডাক্তারদের হয়তো পাবেন না। তাদের পাবেন বিকালে। তবে রাজশাহী মেডিকেল এ গেলে ওখানে ডাক্তার পাবেন। গেলাম সেখানে। আমার সাথে আমার ৯ বছরের ভাগ্নে আর ১৩ বছরের ভাগ্নিও ছিল; একজনের জ্বর আর একজনের টন্সিল ফুলা। লাইন দিয়ে outpatient থেকে টিকেট নিলাম, টাকা দিলাম। তারপর গেলাম ডাক্তারের খোঁজে। লম্ব্বা লাইন দেখে বুঝতেই পারলাম না কোথা থেকে শুরু এবং শেষ কোথায়। এক সময় সমাজবিজ্ঞান পড়তে গিয়ে partcipation observation পড়েছিলাম। ঠিক তেমন না হলেও আমি ওই লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় বিভিন্ন জিনিস লক্ষ করতে থাকলাম। যেমন ধরুন হটাৎ হটাৎ ইচ্ছাকৃত ধাক্কা ধাক্কি, হাত নিচু করে কিছু অর্থ লেনদেন, অমুকের তমুকের কথা বলে আগে ঢুকে যাওয়া বা যাওয়ার চেষ্টা করা, আবার যতটুকু অসুস্থ না তার থেকে বেশি ভান করা যদি দ্রুত ঢুকে যায় ইত্যাদি। যাহোক ঘন্টা-দুই পরে আমাদের ভিতরে ডাক পড়লো। সেখানেও অপেক্ষা। তবে ওই অপেক্ষায় ডাক্তারকে এবং তার রোগী দেখার পদ্ধতি দেখলাম।
এ পর আমার পালা। ডাক্তারের সামনে যেতেই আমার মতো উনার কপালের সামনের তেলতেলা টাক মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম, এবং সেই ঘামের উপর জানালা থেকে রোদ পড়ে প্রতিফলিত হয়ে আমার চোখে পড়তেই এবং ডাক্তারের “জি বলেন” কথা শুনেই সম্বিত ফিরে পেলাম। আমার সমস্যা বুলেট ট্রেনের গতিতে শুনে, রকেটের গতিতে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন। মোটামুটি ছোটোখাটো এক ব্যাগ ঔষধ বলতে পারেন। কৌতূহলবশত জানতে চাইলাম ওর মধ্যে কোনো এন্টিবায়টিক আছে কি না। উনি বললেন, সব গুলিই। আমি অবাক হয়ে বললাম বলেন কি। চিন্তা করেন না একটাতে কাজ হবেই। যাহোক এবিষয়ে বেশি কিছু বলছি না কারণ দেশে এন্টিবায়োটিক যেমন ভাত মাছের মতো হয়ে গেছে তেমনি এটি কিনতে ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপটিশন লাগে না। তাই উনারা ২/৩/৪/৫টি লিখেন।
এর পর উঠে আসার আগে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি কিভাবে সামলান। আর তাছাড়া এই “আসেন, বসেন, ঠিক আছে এই ঔষধগুলি কিনে নিবেন” এই ঝটিকা গতির এসেসমেন্টটে আপনি কি ভাবে কি করেন এবং আপনার নিজের মাথাটা বা কিভাবে ঠিক থাকে। এইতো চলছে, উনি বললেন। আমি উনার সামনে জাপানিদের মতো একটু মাথা নিচু করে সালাম দিয়ে বিদায় নিলাম। আর ভাবতে থাকলাম এখানকার ডাক্তারদের কথা। ঐরকম ভাবে ২০/২৫ ডাক্তারের চাপ এক ডাক্তারে সামলান আবার বেতনও তেমন না, অতএব অনেকেই বেঁচে নেন অন্য অনেক পেশার লোকের মতো দুর্নীতি নামক আর একটি pessha। এখন আপনারা বলেন ওই বেক্তি ১টি নাপাড় জায়গায় ১ কেজি লিখবে না তো কি লিখবে ? আর একথাও সত্য যে এর মধ্যে দিয়ে কিছু কিছু অসৎ বা সুযোগসন্ধানী ডাক্তার আছেন যারা নিজেরাই চান এই পদ্ধতি বেঁচে থাক। তাতে তাদেরই সুবিধা।
এইসব দেশেও যে কোনো পেশায় ২/৪টি দুই নাম্বার লোক আছে, তবে তারা আকাম করে বেশিদিন টিকতে পারে না। আর তা থেকেই ওই একিই কাজ করা থেকে অনেকেই বিরত থাকে। তফাৎটা ঠিক ওই জায়াগায়। ওখানে বরং আকাম না করে টিকে থাকাটা কঠিন। what a system !!শেষ করছি সেই সমস্ত নিবেদিত প্রাণ ডাক্তারদের প্রতি সম্মান রেখে যারা জীবনের চাহিদাকে দমিয়ে রেখে, তুলনায় দিয়ে যাচ্ছেন অনেক বেশি, হোক না তারা গুটি কয়েক।
ভালো থাকেন সবাই। এবং ওই রুগী ভদ্রলোকের মতো প্রেসক্রিশনটি একটু ভালো করে চেক করে দেখুন। https://www.jugantor.com/capital/167725/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A7%80%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A7%A9-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE-%E0%A6%96%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A7%8E%E0%A6%B8%E0%A6%95?fbclid=IwAR20CSV5qbcINTCeYU9dCjeUpfLvqmo5zche8fxnd2F4Xz_c3bPadqTM5C