“Life wouldn’t be worth living if I worried over the future as well as the present. When things are at their worst, I find something always happens.”  ― W. Somerset Maugham, Of Human Bondage

আজ এবং আগামীর জন্য বেশি চিন্তা করলে, বেঁচে থাকাটা অতটা মূল্যবান হতো না। যখন সবকিছু শেষ বা হতাশায় নিমজ্জিত তখনও কিছু না কিছু ঘটে যা কিনা বেঁচে থাকার আশা যোগায়, বেঁচে থাকা যায়।

উপরের কথাগুলি ঠিক আমার নয়, তবে আমার খুব প্রিয়, এবং কথাগুলি আমাকে আমার জীবনের অত্যান্ত চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটের (Crisis) সময় আমাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।

Somerset Maugham এর Of Human Bondage বইটির নাম আমি অনেক আগে শুনলেও পড়া হয়েছে একটু দেরিতে। বইটি পড়া হয় আমার জীবনের সবথেকে বড়ো চ্যালেন্জিং এবং সংকটময় মুহূর্তে। আমার জীবনের ওই সময়গুলিতে Suicidal Thoughts পর্যন্ত এসেছিলো কিন্তু সেই Thoughts শুধু চিন্তার মধ্যেই সীমিত ছিল, পরিকল্পনা বা কার্যে পরিনিত করা পর্যন্ত পৌঁছায়নি। আর পরিস্থিতি ওই পর্যায়ে না পৌঁছাতে তৎকালীন সময়ে (প্রায় ১৭ বছর আগে) সাহায্য করেছিল জাস্ট কিছু শুভাকাঙ্খী মানুষ, কিছু বই, পবিত্র কোরানের ৪ নাম্বার সূরার ২৯ নাম্বার আয়াত (And do not kill yourselves [or one another]. Indeed, Allah is to you ever Merciful.). Somerset Maugham এর Of Human Bondage বইটি ছিল তার মধ্যে অন্যতম। এর পরে ওই বইটি প্রায় ৮/৯ বার পড়া হয়েছে। এখনো মাঝে মাঝে হাতে নিয়ে মার্কিং করা ২/৪টী পাতা উল্টে দেখি। উপরোক্ত জিনিসগুলির সাথে বইটি তখন মরফিনের মতো কাজ করেছিল।

বইটির প্রধান চরিত্র বা protagonist ফিলিপের এর জন্ম হয়েছিল কিছুটা ডিফেক্ট পা নিয়ে এবং তার জন্ম দিতে গিয়ে তার মায়ের মৃত্যু হয়। বাবাও ছিল না, তাই তাকে মানুষ হতে হয়েছিল ক্যাথলিক চার্চের হুজুর তার খালু এবং খালার ঘরে। তার জীবনের ২/১টি পর্যায়ে নয়, প্রায় পদে পদে তাকে সংকটের মধ্যে দিয়ে পার হতে হয়েছে, সে সম্পর্ক, চাকরি পেশা ইত্যাদি সব বিষয় নিয়েই। এতো কিছুর পরে, অনেক কিছু হারিয়েও ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় নিয়ে অবশেষে সে তার লক্ষ্যে পৌঁছেছিল। ফিলিপের সংকটময় জীবন কাহিনী এবং তার থেকে শেষমেশ উত্তরণ আমার জন্য খুবই Inspiring ছিল।

বইটির অনেক কথাই মূল্যবান Quote এর মতো আমার মনে গেথে আছে। বর্তমানে আমরা যে সময় পার করছি তাতে কমবেশি আমাদের সকলের জীবনও এখন ফিলিপের মতো সংকটপূর্ণ। আমি নিজেও এর মধ্যে, এবং সাম্প্রতিক দেশের একটি ব্যাপার নিয়ে বেশ tensed ছিলাম এবং অনেকটা Hectic সময় পার করছিলাম। সময় যত Hectic বা Tensed হোক না কেন, জীবন তো আর থেমে থাকবে না, খাওয়া-দাওয়া, চাকরি-বাকরি, রান্না-বান্না বাজার ঘাট সবইতো অপরিহার্য বিষয় এবং চালাতে হবে। এই পরিস্থিতিতে মনের মধ্যে অনিশ্চিয়তা বা হতাশা ভর করার অনেক সম্ভাবনা থাকে। আর ঠিক এই সময়টাতে আমি দেখেছি বড়ো-সড়ো কিছু নয়, অনেক অতি সাধারণ এবং ছোটখাটো জিনিষই সাহস, আশা-ভরসা বা অনুপ্রেরণা যোগায়। সেই সমস্ত ছোটোখাটো জিনিস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কিছুটা শক্তি আল্লাহতালা দিয়েছেন। লাখ শুকরিয়া তার দরবারে।

ইদানিং আমাদের কমিউনিটিতে হতাশা বা বিষন্নতা (Depression) করোনা প্যানডেমিকের মত না হলেও তার থেকে কোনো অংশে কম নয়, সে আমরা স্বীকার করি বা না করি। সাম্প্রতিক BIES এর একটি গবেষণা, পত্রপতিকার খবর এবং আমাদের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে সেটি খুব লক্ষণীয়। কিন্তু আমরা যেহেতু বাঙালি তাই সেই ফেলে আশা বাংলাদেশের মত আমরা কোনো কিছু ঘটলে তাৎক্ষণিক চিল্লাচেল্লি করে গলা ফাটিয়ে, গলা বসিয়ে আস্তে আস্তে ভুলে যাই। অপেক্ষা করি নতুন কিছু ঘটার। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের কোনো চেষ্টা বা চিন্তা তেমন করি না, এবং এই সমাজে যতটুকু রিসোর্স আছে সেটুকুও সহজে গ্রহণ করি না, ফলে ইদানিং প্রায়ই লোমহর্ষক এবং মর্মান্তিক ঘটনার অবতারণা ঘটছে।

কিছু জিনিস আমাদের খুব দরকার এই মুহূর্তে, তা হলো: এটা মেনে নেওয়া যে জীবন সব সময় এক রকম যাবে না বা সবার জীবনে এক নয়, এবং বিপদে বা সংকটে আমি একা নোই। তারপর শত ঝামেলার পরেও সাধারণ বা ছোটোখাটো জিনিস থেকে জীবনকে Meaningful করার কৌশল নিজেকে যেমন জানতে হবে তেমনি ছেলেমেয়েদেরকেও শেখাতে হবে, ছোটবেলা থেকে। আর এই সমস্ত ছোটোখাটো জিনিসের জন্য সবসময় অর্থ খরচের প্রয়োজন নেই, প্রকৃতির মাজেই আছে অফুরন্ত। Just need to pay little more attention, এবং আমি যখন attention বলছি তখন এটি হতে হবে Undivided Attention, তাহলেই খুঁজে পাবেন উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং আনন্দ যাকিনা আপনার জীবনকে করে তুলতে পারে Meaningful. আর হাঁ, আপনার সন্তানদেরকে দিতে হবে Decent Time, not just time!! দুঃখজনক আমাদের এখানকার অনেক বাবা-মাই বাচ্চাদেরকে এই Decent Time দেন না। আর এই Decent Time খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। শত ব্যস্ততার মধ্যেও ইচ্ছা থাকলে বের করে নেওয়া যায়।

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে বাচ্চাদের এই Decent Time দেওয়া বা ছোট ছোট জিনিস থেকে আনন্দ পাওয়া, তাদের মাঝে মধ্যে প্রকীর্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, ইত্যাদি করে থাকেন। আবার কেউ কেউ

Mir Shahriar Ahmed ভাইয়ের মতো ফাঁক পেলেই ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন উদ্দেশ্যহীনভাবে যাওয়ার উদ্দেশ্যে, আর হটাৎ হটাৎ তার ক্যামেরা বন্ধি করেন Simple but very beautiful stuffs . আমি উনার এই হটাৎ হটাৎ বৌ-পোলাপান নিয়ে বেরিয়ে পড়ায় খুব অনুপ্রেরণা বোধ করি। জীবনটা আর কতদিনের। আমি জাস্ট উনার উদাহরণ দিলাম, এরকম আরও অনেক আছে। যেমন আমার এক হতদরিদ্র ক্লায়েন্টকে আমি এগুলি বলেছিলাম। তারপর সে আস্তে আস্তে এগুলিকে তার অভ্যাসে পরিণত করে এবং অবশেষে সে তার বিষন্নতাকে (Depression) অনেকটাই নিয়ন্ত্রন আনেন এবং স্বাভাবিক কর্মকান্ডে ফিরে আসেন।

ঠিক কয়দিন আগে সকালে বাতাসসহ তাপমাত্রা ছিল – ১২ ডিগ্রি। খুব শীত। সকালে আমি একজন ক্লায়েন্ট ভিজিটে ব্রাম্পটনে একটি পার্কিং লটে গাড়িটা থামিয়েছি। ঠিক সামনে দেখি ছোট কিছু ঝাউ গাছের পাতার মাঝে ছোট্ট একটি চড়ুই পাখি তার শরীরের চারিদিকে পাখনাগুলি ফুলিয়ে বসে বসে রোদ পোহাচ্ছে। দৃশ্যটি খুবই ভালো লাগছিলো এবং মনটা অনেঁক ভালো হয়ে গেলো। সাথে সাথে ফোন বের করে একটি ছবি তুলে ফেললাম, আর সেই ছবিটিই নিচে আপনাদের জন্য দিলাম। এইতো দেখেন Somerset Maugham এর মতো সেই When things are at their worst, I find something always happens.”

তাই আপনারাও শত ঝামেলা, শত সংকট বা শত দুঃখ কষ্টের মাঝেও হটাৎ করে কোথাও কোথাও কিছুক্ষনের জন্য থমকে দাঁড়ান, Robert Frost এর stopping in the woods on a snowy evening!!!!! দেখবেন ভালো লাগার মতো অনেক কিছু পাবেন।

ভালো থাকুন, আর আপনি যে ধর্মের বিশ্বাসী হউন না কেন জীবনে স্পিরিচুয়ালিটির জন্য কিছুটা জায়গা রাখবেন, কাজে লাগবে।

আসুন সবাই সবার জন্য দোয়া করি। আমিন!!

মুকুল।

টরন্টো।

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন