আমরা ছয়জন বাংলাদেশী যারা কানাডায় দীর্ঘদিন মেন্টালহেল্থ, হোমলেস সেক্টরে কাজ করছি, Raising the Hope Community Services নামে ২০২২ সালে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করি যার লক্ষ্য হলো কানাডায় বাংলাদেশীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা, এ বিষয়ে আলোচনায় উৎসাহিত করা, ব্যক্তিগত সাপোর্ট দেয়া যাতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারে ।

দুবছর আগে হোমলেস নিয়ে বাংলায় একটি উপন্যাস লিখেছিলাম। নিজের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কাল্পনিক চরিত্র তৈরী করে ভিনদেশে ইমিগ্রান্টদের অনেক চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে যেয়ে কিভাবে মানুষজন হোমলেস হয়ে থাকেন তার বাস্তব কিছু দৃশ্যপট তৈরী করে আমার সেই উপন্যাসে বর্ণনা করেছিলাম। কাজের যায়গায়  দুএকজন বাংলাদেশিকে সেল্টারে দেখেছি, কথা বলেছি। মেন্টাল হেলথ ইস্যু নিয়ে আমি এবং আমার সংস্থার টিম অনেক বাংলাদেশিদের সাথে কাউন্সেলিং করেছি। তাইবলে, সত্যিই যে এদেশে বাংলাদেশী কেউ একেবারে রাস্তায় হোমলেস হয়ে আছেন তা এখন পর্যন্ত দেখিনি। আজ এরকম একজন বাংলাদেশী হোমলেসের কথা বলবো।

এক বড়ো ভাইয়ের ফোনের উপর ভিত্তি করে ড্রাইভ করে ছুটে চলেছি একটি স্থানীয় টিমহর্টনের দিকে। সেখানে একজন বাংলাদেশী ভদ্রলোক ফোন করে আমাকে জানিয়েছেন তিনি আজ কয়েক দিন ধরে তার বিল্ডিঙের আশেপাশে এক বাংলাদেশী হোমলেস ব্যাক্তিকে দেখছেন। এমুহুর্তে তিনি নাইট শিফট কাজ করে টিমহর্টনে কফি খেতে যেতেই সেই ব্যক্তিকে দেখেছেন । তিনি ঐ ব্যক্তিকে কফি খাইয়ে কথা বলে আমার জন্যে আটকে রেখেছেন। আমি দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি । ইতিমধ্যে, আমাদের ভলান্টিয়ার সংস্থার প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে মোটামুটি একটি সার্ভিস প্ল্যান ঠিক করে ফেলেছি ।

পৌছামাত্র, যিনি আমাকে ফোন করেছিলেন উনি এগিয়ে এসে সেই লোকটির সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। দশ বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রফেশনে কাজ করে এই প্রথম প্রবাসে একজন বাংলাদেশী স্ট্রিট হোমলেস দেখলাম। কনফিডেন্সিয়ালগত কারণে আমি ওনার নাম-ধাম গোপন রাখলাম । ভদ্রলোকের মাথা ভর্তি এলোমেলো  কাঁচা পাকা চুল, বেশ কিছুদিন দাড়ি গোফ সেভ না করায় কিছুটা বেড়ে উঠেছে। অনেকদিন গোসল না করায় হাইজিন ইস্যু দৃশ্যমান। আমি বাংলায় কথা বলতেই উনি পরিষ্কার বাংলায় নিজের নাম, দেশে নিজ জেলার নাম, মহল্লার নাম গটগট করে বললেন। তিনি আরো জানালেন প্রায় ৩০/৪০ বছর ধরে এদেশে আছেন। দেশ থেকে আসার পর থেকেই কাজ করতেন। এখন বয়স হয়েছে, বিধায় সিনিয়র সিটিজেনশিপ ভাতা নিয়ে চলেন। লাস্ট যেখানে সরকারি আশ্রয়ে থাকতেন সেখানকার ঠিকানা জানা নেই। আমি ওনার কথা/বার্তায় কিছু অসঙ্গতি বুঝতে পেরে 211 নাম্বারে ফোন করে সিটির ক্রাইসিস টিমের সাথে কথা বললাম। পরে, সন্ধ্যায় ক্রাইসিস টিম আসার পরে আমি আবার সেখানে যেয়ে সেই টিমের সাথে কথা বললাম। সেই টিমের সদস্যরা সেন্ট্রাল ইনটেক লাইনে ফোন করে ওনাকে সেল্টারের ব্যাবস্থা করছেন দেখে আমি চলে আসার প্রস্তুতি নিলাম। চলে আসার আগে আমাদের সংস্থার  নাম, ফোন নাম্বার কাগজে লিখে ওনাকে দিলাম, কিছু হালকা টিমহর্টনের স্ন্যাক্স কিনে দিয়ে চলে আসতেই উনি জুল জুল করে আমার প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আমি তাকিয়ে থাকলাম ওনার একটি স্টেবল চমৎকার ভবিষ্যতের দিকে। এটিই হচ্ছে ‘HOPE ‘ । আমরা এই যে মেন্টাল হেলথ ও হোমলেস সেক্টরে কাজ করি এখানে ‘HOPE’ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বি.দ্রষ্টব্য:   আমি ও আমার সংস্থা এখনো সেই ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ রেখেছি এবং আমাদের সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি। ‘Raising the Hope’ organizes “Community Conversation Circle” periodically. And, currently looking for youth age between 12-29 years for volunteers who will be trained by the agency professionals. Interested youth can inbox or call at 647-784-2203, please.

———-

জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার , টরেন্ট

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালচাল : তৃতীয় বিশ্বের রাজনৈতিক খসড়া
পরবর্তী নিবন্ধহালচাল : আমাদের যুগে স্কুলে ছাত্র/শিক্ষক সম্পর্ক কেমন ছিল ?
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন