পৃথিবীতে কতশত ধরণের নেশা আছে। এর মধ্যে ভালো নেশা এবং খারাপ নেশা দুটোই আছে। যেই নেশাটি আপনার, আপনার পরিবার, প্রিয়জন বা আপনার কমুনিটির জন্য ক্ষতিকারক নয় সেটি বরং আপনার জন্য ভালো হতে পারে। যেমন ধরুন কারো বই পড়া, রান্না করা, বাগান করা, ঘুরে বেড়ানো, বাইকিং, নৌকা ভ্রমণ, মাছ ধরা, প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা অথবা আমার মতো সুযোগ পেলে প্রকৃতির দিকে কেটে পড়া, অথবা আমাদের মীর শাহরিয়ার ভাই বা ইকবাল ভাইয়ের মত সাধারণের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অসাধারণকে ক্যামেরা বন্ধি বা লিপি বদ্ধ করে আমাদেরকে উপহার দেওয়া ইত্যাদি নেশা থাকতে পারে। এই কাজগুলির প্রতি নেশা থাকা শরীর এবং মন দুইয়ের জন্যই ভালো, শুধু মাত্র খেয়াল রাখতে হবে যেন সীমা অতিক্রম না করে, অর্থাৎ দিন দুনিয়া ছেড়ে শুধু এগুলি নিয়ে পড়া থাকা যাবে না।
উক্ত বিষয়গুলি ছাড়া অনেক ক্ষতিকারক নেশাও আছে, যেগুলি সমন্ধে আপনারা সবাই জানেন তাই বিস্তারিত আর বলছি না। আমি শুধু শিরোনামের নেশা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে Information, Misinformation, Disinformation সবই আমাদের হাতের মুঠোয়, এবং অধিকাংশই কোনো ধরণের সম্পাদনা বা যাচাই বাচাই থাকে না। এখন আপনার যদি কোনো সমস্যা থেকে না থাকে বা আপনার ওই সমস্ত তথ্যের মদ্ধ থেকে ভালোটা বা আপনারা প্রয়োজনীয়টা বেছে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে অসুবিধা নেই, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমরা সেটায় ব্যার্থ হই। যেমন ধরুন বিগত ৩/৪ বছর আমি FB বা অনান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে involved, এবং মাঝে মাঝে কিছু লিখি। সেই কারণে এবং আমার পেশাগত কারণে মাঝে মধ্যে কমুনিটির কিছু মানুষের সাথে জানাশোনা হয়, এনারা মূলত কোনো ধরণের বিষন্নতায় ভুগছেন। আমার চাকরি, পরিবার এবং আনুষাঙ্গিক বিষয় এটেন্ড করার পরে এদের সবার সাথে continuous যোগাযোগ রাখা সম্ভব নয়, তাই যদি আমার আওতার মধ্যে থাকে তাহলে উনাদেরকে কিছু রিসোর্সের কথা বলি বা কোথাও রেফার করে দেই তাতে কারো কাজ হয় আবার কারো কিছুই হয় না।

উনাদের অনেকের মধ্যে একটি জিনিস আমি দেখেছি, যে যেই জিনিসটি শুনলে, দেখলে বা যার সাথে যোগাযোগ করলে তাদের মন খারাপ হয়, মনে রাগ বাড়ে অথবা হতাশ হন সেই জাতীয় জিনিসই উনারা বেশি করে দেখেন বা শুনেন। এবং উনাদের অনেকেই বলেছেন যে এগুলি উনাদের নেশার মতো কাজ করে। তাই বললাম তথ্যের নেশা, এবং এটি অত্যান্ত ভয়ঙ্কর কারণ এভাবে চললে কোনো ঔষধ বা কোনো ধরণের থেরাপিই কাজে আসবে না। মনে রাখতে হবে, আপনার যদি অলরেডি মনের মধ্যে বিষন্নতা বা মন খারাপের element থেকে থাকে তাহলে যেই জিনিস আপনার মনকে Blissful করবে না তা থেকে আপাতত আপনাকে বিরত থাকতে হবে, সে যে ধরণের তথ্যই হোক না কেন। হয়তো একই ধরণের তথ্য আমার বা আর একজনের জন্য ক্ষতিকারক নয় কিন্তু সেটি আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমি আমার বিগত ১২/১৩ বছর কাজের অভিজ্ঞতার থেকে বললাম, কোনো গবেষণা নয়, বলতে পারেন anecdotal. আমার ব্যাক্তিগত ভাবে আল্লার রহমতে কোনো ধরণের বিষন্নতা নেই, হটাৎ করে কোনো কারণে মন খারাপের ব্যাপার হয়তো আছে তবে সেটা Prolonged নয় বা আমার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করার মত নয়, তারপরেও আমি চলমান তথ্যের অনেক কিছুই Ignore করে থাকি যদি সেটি আমার একান্ত প্রয়োজন না থেকে।

যেমন ধরুন আমি প্রায়ই বাংলাদেশের বা বিশ্বের অনেক খবর ২/৪ দিন পরে বাশি হয়ে গেলে শুনি, এবং এতে করে আমি তেমন কিছু হারাই না বা আমার কোনো ক্ষতি হয় না। আমি অবশেষে সেই সমস্ত মানুষদেরকে অনুরোধ করবো, যাদের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনকে থামিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ধরণের বিষন্নতা বা মন খারাপের অবস্থা বিরাজ করছে তার ওই ধরণের তথ্য থেকে নিজেকে দূরে রাখুন, at least for the time being. তা না হলে আগুনের মধ্যে পানি ঢালার পরিবর্তে আগুনিই ঢালা হবে। অবস্থা ভালো হলে অবশ্যই আপনি আপনার ধারণ ক্ষমতামতে যেটা দরকার সেটি গ্রহণ করতে পারবেন।
ধন্যবাদ।
মুকুল।
টরন্টো।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন