আজিজ আধ ঘন্টা দেরিতে বিকেল ৫টা বাজে  শিকাগো  এয়ারপোর্ট পৌঁছে। ফ্লোরা এয়ারপোর্টে  রিসিভ করার জন্য আসার কথা । সে ইমিগ্রেশন কাস্টম ক্লেয়ারেন্সের পর টার্মিনাল থেকে বের হয়ে  দিক সে দিক তাকাচ্ছে  ,ফ্লোরাকে  দেখা যাচ্ছে না। সে তো  না আসার মতো মেয়ে না। ফ্লোরা কি আসে নি ?

না! সে আমাকে বলেছে এয়ারপোর্ট  আসবে । কিন্তু ওকে  দেখা যাচ্ছে না । আজিজ ভাবছে তাহলে ফ্লোরা  কি আমাকে সারপ্রাইস  দিচ্ছে ?

তাই সে টার্মিনাল থেকেই ওকে কল দিয়েছে । কিন্তু রিসিভ করছে না, এনসারিং মেশিনে  যাচ্ছে । আজিজ ভাবলো কি হতে পারে, ঢাকা থেকে আসার পূর্বে আমি ওকে কল দিয়ে  টার্মিনালে পৌঁছার সময় জানিয়েছি । সে বলেছিলো আসবে, কিন্তু সে আসলো না কেন

কিছু সময় এ দিক সে দিক ঘুরাঘুরি করে ওকে না পেয়ে সে একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাসায় চলে আসে। আজিজের  দুই রুমমেট কেউ বাসায় নেই, হয়তো ওরা ক্লাসে রয়েছে বা কাজে গিয়েছে । সে হাত মুখ ধুয়ে ভাবছে ঢাকা আম্মুকে প্রথমেই টেলিফোন করা দরকার । টেলিফোন করে সঙ্গে সঙ্গে লাইন পেয়ে যায় এবং রেনু টেলিফোন উঠিয়েছে । হ্যালো আজিজ, হ্যাঁ ,আমি কেবল বাসায় পৌঁচেছি । টেলিফোন ধরো, মায়ের সঙ্গে কথা বলো, রেবেকা বলে তুই ঠিক সময় পৌঁচেছিস?

না, আম্মু আধা ঘন্টা লেট হয়েছে । ফ্লোরা কি এয়ারপোর্টে গিয়েছিলো?

না, যায় নি । হয়তো ব্যস্ত  সে জন্য যেতে পারে  নি । আচ্ছা, ঠিক আছে আমরা ভালো আছি, পরে কথা বলিস।  টেলিফোন রেখে দিয়ে রেনুকে বলে ফ্লোরা বলেছিলো এয়ারপোর্ট  যাবে। রেনু বলে হয়তো ওর ইউনিভার্সিটি জরুরি ক্লাস বা কিছু ছিল, যেতে পারে নি ।   

আজিজ  লাগেজ  রেখে  তার বাসায় গিয়ে দেখে কেউ নেই । আর একবার টেলিফোন করে দেখে । কিন্তু না,   টেলিফোন উঠাচ্ছে না । সে  সরাসরি ইউনিভার্সিটি গিয়ে ফ্লোরার অর্থনীতি বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখে ইউনিভার্সিটি এসেছে কি না ।  ওর ক্লাসের একজনকে জিজ্ঞেস করে  ফ্লোরা কি আজ ক্লাসে এসেছে ?

তুমি কিছু জানো না ?

না, এই মাত্র আমি দেশ থেকে ছুটি কাটিয়ে আসলাম । 

ফ্লোরা গত পরশু  ক্লাস থেকে বাসায় ফিরার সময়  রাস্তা ক্রসিংয়ে এক গাড়ি ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে যায় । আজিজ হতবাক, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে , কিছু বলতে পারছে না ।

দুঃখিত ! তোমার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি । আজিজ  জিজ্ঞেস করলো  ওর অবস্থা কি

সে হাসপাতালে আছে । সে কোন হাসপাতালে আছে?

দুঃখিত  আমি এর বেশি কিছু জানি না ।  সে কোনো খবর সংগ্রহ করতে না পেরে  পুনরায়  তার রেসিডেন্সে গিয়ে  লি কে পেলো না,সঙ্গে সঙ্গে নিকটতম হাসপাতালে গিয়ে খবর নিয়েছে ।  ওরা বলে ফ্লোরার একটা পা হাত ফ্রাকচার্ড হয়েছে এবং তাকে এখন থেকে অন্য  হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে ।  সে কয়েক ঘন্টা অজ্ঞান ছিল । সে সঙ্গে সঙ্গে  ওই  হাসপাতালে গিয়ে ইমার্জেন্সিতে খবর নিয়েছে তাকে কোথায় পাঠানো হয়েছে । ওরা   ঠিকানা দিলে সে সেখানে গিয়ে  ওর অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলে এবং বলে আমি তোমাকে এয়ারপোর্ট না দেখে ভাবছিলাম একটা কিছু সমস্যা হয়েছে । ফ্লোরা  আস্তে আস্তে চোখ খুলে বলে আমি রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা গাড়ি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে যায় ।  আমি তার পরে আর কিছু বলতে পারিনি  কি ভাবে হাসপাতালে এসেছি। আজিজ  ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারে যে ওর ডান  পা ডান হাত ভেঙে গেছে । যে গাড়ি ধাক্কা দিয়ে চলে গেছে , ওর খবর পয্যন্ত কেউ দিতে পারে নি । লি ফেং এতক্ষন ওর সঙ্গে ছিল, এই মাত্র  চলে গেছে বাসায় । নার্স বলে ফ্লোরার অবস্থা খারাপ তবে ঝুঁকি নেই । ফ্লোরা  বলে লি টেলিফোনে আব্বু আম্মুর সঙ্গে আলাপ করেছে   এবং ওরা ভিসা পাইলে সম্ভবত আগামী সপ্তাহে  আসবে ।    আজিজ বলে এখানে তোমাকে  কি কি খাওয়া দিচ্ছে

ফ্লোরা বলে এখানে আমাকে খাওয়া দাওয়া সবই দেয়া হচ্ছে, এ নিয়ে চিন্তা করবে না । কিন্তু ভয় হয় আমি হয়তো পঙ্গু হয়ে যাবো,আমার ডান পা ডান হাত অপারেশন হবে এবং আমি কি সম্পূর্ণ আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবো

কেন পারবে না

জানিনা, অপেরেশনের কথা শুনলে অনেক ভয় হয় ।  তুমি বাসায় যাও এবং রেস্টে থাকো । আজিজ বলে তোমার অবস্থা দেখে বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না ।  এখানে আমাদের দুই জন রোগীর জন্য এক  জন নার্স আছে , মিনিটে মিনিটে খবর নিচ্ছে । কাজেই তোমার  যখন তখন আসার দরকার নেই । তথাপি তুমি ভিসিটিং  আওয়ার্স   পারলে আসবে । তুমি ডিপার্টমেন্টে  ফোন করে ও যখন তখন খবর নিতে পারবে । তুমি দুই সপ্তাহ ক্লাস করো নি , ছাড়া তোমাকে কাজেও যেতে হবে ।   

আন্টির শরীর কেমন?

আম্মুর অবস্থা ভালো না,কিমো নিচ্ছে, তবে খুব একটা  ইমপ্রুভমেন্ট দেখছি না । ক্যান্সারের কোনো সরাসরি চিকিৎসা নেই । ধীরে সুস্থে, ধর্য  ধরে চিকিৎসা নিতে হবে ।  গিয়ে দেখে আসলে, এখন ভালো লাগবে । 

ফ্লোরা,  তোমার কিছু জিনিস দেশ থেকে আমার কাছে দিয়েছে, আমি এনে তোমাকে দেখাতে  পারি । আমার এখন দেখার দরকার নেই , আপাতত তোমার কাছে রেখে দাও ।  আমার ব্যাগ থেকে  হেলথ কার্ড রেখে,ডেবিট কার্ড কিছু ডলার আছে নিয়ে তোমার কাছে রেখে দাও ।    আজিজ ব্যাগ খুলে ডেবিট কার্ড ৪০০ ডলার গুনে বলে আমি রেখে দেব ।  কিছু ফুড আইটেম   দেশ থেকে এনেছি , ওগুলি  কাল নিয়ে আসবো ।   কি কি  খাবার জিনিস পাঠিয়েছে ?

 কিছু  ঘরের তৈরী  এবং আলাউদ্দিনের মিষ্টি  আন্টি  দিয়েছে ।   গুলি সামান্য আমার জন্য আনিও, বাকি তুমি খাবে । বারে, তোমাকে দিয়েছে, আর আমি খাবো, এটা তো হয় না । এখানে নিয়ে আসবো, তুমি খাবে এবং লি ফেং বা অন্য কাউকে দেবে ।  সামান্য আনবে এবং বাকি তোমার ফ্রীজে  রেখে দিও ।

 আমি ঘুমাবো, আচ্ছা তুমি এখন যাও এবং গিয়ে রেস্ট নাও ।   তা ছাড়া তুমি বাসায় গিয়ে আব্বু-আম্মুকে টেলিফোন করে বলে দিয়ো ধীরে সুস্থে যেন আসে । দেশে ভালো ভালো ডাক্তার আছে, ওরা সব ব্যবস্থা করবে ।  আমাদের  ডিপার্টমেন্ট থেকে   বাংলাদেশি  অনেকে এসে আমাকে দেখে গেছে এবং বাংলাদেশি এসোসিয়েশন থেকে যোগাযোগ করছে, ওরা আব্বু আম্মুকে খবর দিয়েছে ।    

অনেকে  বলেছে তোমার ডান পা ডান হাতে সার্জারি  লাগবে । লাগলে করে নেবো, তবে  ভয় লাগে, ভালো হতে অনেক সময় লাগবে । লাগে লাগুক, তুমি সঠিক স্থানে আছো এবং ভালো চিকিৎসা হবে ।  সময় লাগুক তাতে ক্ষতি কি?

আমার ভয় লাগে, আমি চির দিনের মতো পঙ্গু হয়ে যেতে পারি ।আরে না, নার্স আমাকে বলেছে  সার্জারি করলে তুমি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবে ।আমার জন্য দোআ করো ।অবশ্যই

ঠিক আছে আমি যাই আজকের মতো । আমি রাতে কল দিয়ে খবর নেবো । না, আমাকে ঘুমের ঔষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখবে । তুমি নার্সের কাছ থেকে খবর নিতে পারবে । 

আজিজ বাসায় গিয়ে ফ্লোরার ঢাকার বাসায় টেলিফোন করেছে । ফ্লোরার আম্মু টেলিফোন ধরেই কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে আজিজ ফ্লোরার কি জ্ঞান ফিরে এসেছে? 

হ্যাঁ, আন্টি ওর সঙ্গে আমি অনেক সময় ধরে কথা বলছি । ওর অপারেশন লাগবে,তবে ভালো হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছে । আপনারা ধীরে সুস্থে আসেন । দেখি কবে আসতে পারি, জানাবো ।  

পরের  দিন দেশ  থেকে পাঠানো কিছু মিষ্টি গিফট প্যাকেজ নিয়ে আজিজ হাসপাতালে গিয়ে ফ্লোরাকে দিয়েছে ।  সে দেখে বলে এগুলি তোমার কাছেই রেখে দাও, আর এই মিষ্টি আমি দুই একটা খেতে পারি এবং কয়েকটা লি ফেং কে দিয়ে দিও । ফ্লোরা তুমি কল দিয়ে দেখো যদি লি  বাসায় থাকে ওর দরজায় দিয়ে আসবো । অথবা দেখো সে তোমাকে দেখতে আসবে কি না । যদি আসে আমি এখানে রেখে দেব এবং সে আসলে নিয়ে যাবে । আচ্ছা দেখি কল দিয়ে, হ্যালো লি তুমি কি আজ আমাকে দেখতে আসবে ?

হ্যাঁ, আমি তিনটার দিকে ক্লাস শেষ করে তোমাকে দেখতে আসবো । আসবে তিনটার দিকে তুমি এখানে রেখে দাও । তুমি কি আজ কাজে যাবে?

ক্লাস শেষ করে যাবো । আমি কাল আংকেল আন্টিকে ফোন করে কথা বলেছি এবং তোমার খবর দিয়েছি । আমি বলেছি তাড়া হুড়া না করে ধীরে সুস্থে আসতে ।   

এত জিনিস কেন এখানে নিয়ে এসেছো

তোমাকে দেখানোর জন্য, তাছাড়া তোমার আব্বু-আম্মু তোমাকে মিষ্টি দিয়েছে । তোমাকে খাওয়াতে হবে । ফ্লোরা দুই একটা একটু ভেঙে খেয়ে বলে এগুলি তুমি সব খেয়ে নিও । তুমি বাসায় গিয়ে তৈরী হয়ে কাজে যাও এবং রাত পারলে ঘুমানোর পূর্বে একটু কল দিয়ে খবর নিও । 

আর একটা খবর তোমাকে বলিনি, ডাক্তার ওয়ার্ডে এসেছিলো এবং অনেক ধরণের টেস্ট করিয়ে ডিসিশন নিয়েছে যে দুই দিনের মধ্যে আমার অপারেশন হবে । একটা কাগজ দিয়ে গেছে,কে আমাকে দেখা শুনা করবে

আমি তোমার নাম দিয়েছি যে সে আমার দেখা শুনা করবে । তুমি কাগজটা বাসায় নিয়ে যাও, ভালো করে পড়ে যদি আপত্তি না থাকে, কাল দস্তখত  করে  দিয়ে যেও । না, আমি এখনোও  দিতে পারি । তাহলে দস্তখত করে নার্সের হাতে দিয়ে যাও । আজিজ কাগজ দস্তখত করে নার্সের হাতে দিয়ে বলে আমি ওর দেখা শুনা করবো । ফ্লোরা বলে তোমাকে  অনেক ঝামেলায় ফেললাম । 

ওটা ঝামেলা কিসের?

ঝামেলা তুমি বুঝবে এখন আমাকে বাচ্চার মতো নার্সিং করতে হবে, খাওয়াতে হবে । তাই করবো, ওটা আমার আনন্দ । ফ্লোরা এত ব্যাথার মধ্যে হেসে ফেলে , বলে এখন যাও ।

আজিজ বাসায় গিয়ে সমস্ত মিষ্টি ফ্রীজারে রেখে দিয়ে সামান্য একটু বাহিরে রেখে লি এর জন্য নিয়ে  রেস্টুরেন্টে চলে যায় । লি কে দেখে বলে অনেক দিন পর এসেছি এবং ফ্লোরার দুর্ঘটনার জন্য আমি অনেকটাই ভেঙে পড়েছি । ওর মা বাবা সম্ভবত আগামী সপ্তাহে আসবে । ওদের জন্য  বাসা  দেখতে হবে । লি বলে ফ্লোরা হাসপাতাল থেকে  অপেরেশনের পর সম্ভবত নার্সিং কেয়ার যাবে । ওর মা বাবা আপাতত ওর রুমে থাকতে পারবে । আজিজ বলে এটাও ভালো সিদ্ধান্ত। লি বলে আমি কাল রাত ফ্লোরার মা বাবার সঙ্গে কথা বলেছি । ওদের ভিসা হয়েছে এবং এয়ার বুকিং দিয়েছে । রুট কন্ফার্ম হয় নি, সম্ভবত আগামী সপ্তাহে চলে আসবে । ওর মা বাবা ডাক্তার, ওরা আসলে ফ্লোরার দেখা শুনার জন্য ভালো হবে । 

আজিজ বলে আমার তাই মনে হয়, তবে আমি ওর গার্ডিয়ান হিসাবে কাগজে দস্তখত করে দিয়েছি, যাতে ওদের আসার জন্য অপারেশন দেরি না হয় । ডাক্তার তাদের  সময় মতো কাজ করবে । ওরা ঢাকা থেকে আসবে ওর জন্য বসে থাকা ঠিক হবে না । ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো ।

আজিজ রেস্টুরেন্টের কাজ সেরে বাসায় এসে ঢাকা টেলিফোন করেছে ফ্লোরার বাসায় । ডাক্তার রৌশনারা টেলিফোন উঠিয়ে বলে হ্যাঁ, আজিজ কি খবর

সে সালাম দিয়ে বলে আন্টি আমি হাসপাতালে গিয়েছি, ফ্লোরার সঙ্গে কথা বলেছি । ডাক্তার জানিয়েছে ওকে আগামী দিন  বা পর দিন   সকালে  অপারেশন করবে । আমি লোকাল গার্ডিয়ান হিসাবে ওর কাগজ দস্তখত করে দিয়েছি ।   তোমাদের কোনো আপত্তি আছে কি ?

না,তুমি ভালো করেছো, যা দরকার করে নেবে আমাদের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই । ফ্লোরা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং শুনেছি তুমি কাগজ দস্তখত করে দিয়েছো । আমাদের জন্য ওর  ট্রিটমেন্ট কেন বন্ধ থাকবে?

আমি লি এর সঙ্গে কথা বলেছি, আপনারা আপাতত ফ্লোরার রুমে থাকতে পারবেন । অপেরেশনের পর ওকে সম্ভবত নার্সিং কেয়ার নিয়ে যাবে ।

আজিজ টেলিফোন রেখে দিয়ে ফারজাদ ফাহাদকে বলে তোমাদের জন্য কিছু মিষ্টি এবং গিফট এনেছি, কিন্তু দেয়ার সময় পাই নি । ফাহাদ বলে তোমার ব্যস্ততা, তা ছাড়া তোমার বন্ধু ফ্লোরা যে ভাবে এক্সিডেন্ট করেছে,এটা দুঃখ জনক ।  আমরা দুবার ওকে দেখতে গিয়েছি, সে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে , নতুবা কি হতে পারতো, তা চিন্তা করতে পারছি না । 

ফ্লোরার জন্য কোনো দুর্ঘটনা জনিত আইনজীবী  (Lawyer ) কি দেখেছো

না , আমি সময় পাইলাম কোথায়?

আমরা দুইটা  আইনজীবীর ঠিকানা টেলিফোন নম্বর এনেছি । আমাকে দিতে পারো, তবে  ফ্লোরার বাবা মা আসবে এবং ওরাই  সব নিয়ে চিন্তা করবে । হাসপাতালে ডাক্তার বলেছে  ওদের কাছে ভালো  দায়িত্বপূর্ণ   আইনজীবী আছে এবং আমাকে একটা কার্ড ও  দিয়েছে । ফ্লোরার মা বাবা ডাক্তার, ওরা সব বুঝবে,আমাকে সব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না । 

তোমার আম্মুর শরীর কেমন?

ভালো নেই এবং গত দুই দিনে কোনো টেলিফোন করি নি । শুধু ঠিক ভাবে পৌঁছেছি, এই খবর দিয়েছি । দেশে  ছুটি কাটিয়ে আসার পর আমি অতিরিক্ত ব্যস্ত  হয়ে পড়ছি । তাছাড়া লং ডিস্টেন্সের টেলিফোন বিল কত আসবে, সে ভয়ে টেলিফোন করতে ইচ্ছে করে না ।

 ফ্লোরা আমাকে তার ডেবিট কার্ড কিছু ডলার দিয়েছে এবং বলেছে ওর জন্য যেখানে যা কিছু দরকার খরচ করতে । আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি । ফারজাদ বলে তোমাকে বিশ্বাস করে, তা ছাড়া তোমাকে ভালো বাসে । ফারজাদ ফাহাদ একটু মিসকি হাঁসে । আজিজ বলে আগে তো ফ্লোরা বাঁচুক ।  ফাহাদ বলে সে তোমার জন্যই বেঁচে আছে । তাতো বলতে পারি না, আমরা ওই ধরণের কোনো প্রতিজ্ঞা করি নি । ওটা তোমার ব্যক্তি গত ব্যাপার, তবে   সরল,শান্ত মেয়ে ,তোমাকে অনেক ভালো বাসে, এটুকু বলতে পারি । সে যাই হোক ওকে নরমাল লাইফ ফিরিয়ে আনা দরকার । তাছাড়া ওর পড়াশুনা আপাতত বন্ধ । ওর মা বাবা আসলে সিদ্ধান্ত নেবে এখানে থাকবে কি আপাতত দেশে চলে যাবে । ওরা যেহেতু  ডাক্তার  ভালো বুঝবে । তবে আমি এটুকু বলতে পারি যে ফ্লোরা দেশে যেতে চাইবে না । যারা একবার আমেরিকাতে আসে, তারা আর ফিরে দেশে যেতে চায় না । ফ্লোরার বাবা মা বড়ো লোক, ওদের অনেক টাকা পয়সা আছে । ফারজাদ বলে ওর কোর্স আর কত দিন আছে?

আমার মনে হয় আরো দুই বৎসর আছে । তা ছাড়া যদি পিএইচডি করতে চায়, তা হলে কম পক্ষে বৎসর লাগবে ।

ফ্লোরা খুব  সিরিয়াস স্টুডেন্ট, ওর বেডের পার্শে কয়েকটি  বই লি কে দিয়ে আনিয়েছে । একদিকে ব্যথায় উঃ উঃ করে অন্য দিকে বই পড়ে ওকে পড়া শুনা বাদ দিয়ে  দেশে নিয়ে যাবে আমি তা মনে করি না । তা ছাড়া আমি নিজেও একা হয়ে যাবো ।আমি চাই না আমাকে ছাড়া আর কিছু চিন্তা করুক এই বলে আজিজ হেঁসে উঠে । আমি সব সময় ওর পার্শে থাকতে চাই । তাহলে তুমি বিয়ে করে নাও । অবস্থায় তাকে বিয়ের কথা বলা হাঁসির ব্যাপার ।  

সে যাই হোক আমি রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে এসেছি এবং কিছু কাবাব রুটি এনেছি তোমাদের জন্য । তোমরা বরং খেয়ে নাও । ফাহাদ বলে  আমাদের ক্ষিদে আছে, চলো খেয়ে নেই । তোমরা খাও, আমি খেয়ে এসেছি । 

ফারজাদ ও ফাহাদ খেতেছে, আজিজ ফ্রীজ  থেকে মিষ্টি বের করে ওদের দিয়ে বলে খেয়ে নিও, আমি তোমাদের জন্য দুইটা শার্ট এনেছি পড়ে দেখো । ফারজাদ ও ফাহাদ বলে বাহ্ অনেক কাবাব রুটি  মিষ্টি খাচ্ছি  এবং দুইটা বাংলাদেশি শার্ট ও পেলাম । তোমার মতো এমন ভালো বন্ধু আমাদের দরকার ।

পর দিন সকাল ৬টার মধ্যে আজিজ হাসপাতালে গিয়ে উপস্থিত । ওকে অপারেশন রুমে নিয়ে যাচ্ছে । ফ্লোরা কান্না জড়িত কণ্ঠে  আজিজ ও লি কে জড়িয়ে ধরে বলে এখানে তোমরা ব্যতীত আমার আর কেউ নেই । লি বলে তুমি ভালো হয়ে যাবে, আমরা তোমার জন্য আছি । আজিজ ওকে আদর করে বলে আমরা অপেক্ষা করবো তোমার অপারেশন শেষ না হওয়া পয্যন্ত । আজিজ  লি কে বলে আম্মুকে দেশে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রেখে এসে ফ্লোরাকে এ অবস্থায় দেখতে ভালো লাগছে না । লি বলে ” Life  is a  circle  of  bad   and  good,it  comes one  after  another ।”  ৩ -৪ ঘন্টা অপেরেশনের পর ওকে  ICU  তে  আনা হয়েছে  এবং এখনো জ্ঞান ফিরে আসে নি । লি বলে আজিজ তুমি যাও আমি থাকবো জ্ঞান ফিরে আসা পয্যন্ত । আজিজ বলে লি তুমি যাও একটু রেস্ট নিয়ে এস । কিন্তু দুই জন-ই বসে রইলো ওর জ্ঞান ফিরে আসা পয্যন্ত । ফ্লোরার জ্ঞান ফিরে আসার পর নার্স বলে এখানে কাউকে ওভার নাইট থাকতে দেয়া হবে না ।  অগত্যা দুই জনই বাসায় ফিরে যায় । 

বাসায় গিয়ে আজিজ টেলিফোন করে  বলে  আংকেল ফ্লোরার সাকসেসফুল অপারেশন হয়েছে । ওর জ্ঞান ফিরে এসেছে, ফ্লোরার আব্বু বলে লি ও এই মাত্র টেলিফোন করে জানিয়েছে । তোমরা ছাড়া ওখানে তো ওর কেউ দেখার নেই ।  আমরা বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এ  চেষ্টা করে যাচ্ছি যত তাড়া তাড়ি সম্ভব আসবো । আংকেল আপনি চিন্তা করবেন না এবং ধীরে সুস্থে আসেন ।

পর দিন ফ্লোরার বাবা টেলিফোন  করে জানিয়েছে ওরা আগামী শনিবার বিকেল ৫টার দিকে শিকাগো এয়ারপোর্টে পৌঁছবে । ইমিগ্রেশন সেরে বাসায় পৌঁছতে ওদের ৭টা বা তার ও বেশি সময় লাগতে পারে । ওরা বাসায় পৌঁছে লাগেজ রেখে হয়তো ফ্লোরাকে হাসপাতালে দেখতে  যেতে পারে । এয়ারপোর্ট আজিজ ব্যতীত যাওয়ার আর কেউ নেই । আজিজ লি কে বলেছে সে এয়ারপোর্ট যাবে, তাই কাজে যেতে পারবে না । লি বলে আমি যেহেতু একই রেস্টুরেন্টে কাজ করি, এটুকু ম্যানেজ করতে পারবো ।

লি ফ্লোরার বাবা মায়ের জন্য কিছু খাবার তৈরী করে রেখে গিয়েছে এবং আজিজকে জানিয়েছে । আজিজ বলে অসুবিধা হবে না আমি ওদের তোমাদের বাসায় নিয়ে আসবো  । আজিজ  ৪টার দিকে  এয়ারপোর্ট পৌঁচেছে । ওরা ঠিক ৫টা বাজে ল্যান্ড করে ইমিগ্রেশন ও কাস্টম ক্লিয়ার করে বাহিরে আসতে বেশি দেরি হয় নি । আজিজ এগিয়ে গিয়ে সালাম দিয়ে  বলে  আপনাদের জার্নি কেমন হয়েছে?

ডাক্তার শাহরিয়ার বলে ভালো, লম্বা জার্নি, এ ছাড়া কোনো অসুবিধা হয় নি । 

আজিজ এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সরা সরি বাসায় পৌঁছে বলে আংকেল  আপনারা রেস্ট নিয়ে হাসপাতাল যাবেন । আমি আধ ঘন্টা পরে এসে আপনাদের নিয়ে যাবো ।  লি আপনাদের জন্য খাওয়া তৈরী করে টেবিলে রেখে গিয়েছে । আপনারা ইচ্ছা করলে খেয়ে নিতে পারেন । ডাক্তার শাহরিয়ার ও মা ডাক্তার রৌশনারা বলে আজিজ তুমি না থাকলে আমরা হয়তো কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে এখানে এসে কি করতাম জানি না । বিদেশের বাড়ি পরিচিত লোক না থাকলে, অনেক অসুবিধা হয় । 

আধ ঘন্টা পরে আজিজ এসে বলে আপনারা চলেন হাসপাতালে যাই । আপনাদের জিনিস পত্র রুমে রেখে তালা দিয়ে পাসপোর্ট ও টাকা পয়সা নিজের সঙ্গে নিয়ে চলেন । ৫-৭ মিনিট হাঁটার পরে ওরা সাব ওয়েতে গিয়ে ট্রেনে উঠে হাসপাতালে গিয়ে সিকিউরিটিকে বলে এরা (ফ্লোরা) রোগীর বাবা মা বাংলাদেশ থেকে এই মাত্র এসেছেন   ।  সিকিউরিটি ওদের পারমিশন দিলে ওরা ফ্লোরার রুমে যায় ।  

ফ্লোরা ব্যথায় চটপট করছে, হাই পাওয়ার পেইন কিলার খেয়ে ও কাজ হচ্ছে না । মা বাবা ওকে জড়িয়ে   হাউ মাউ করে কেঁদে অস্থির । মা কেঁদে কেঁদে বলে,” ও আল্লাহ এ কি করলে” আমার মেয়ের এই অবস্থা চোখে দেখতে  সহ্য হয় না । বাবা শাহরিয়ার চোখের পানি মুছে নার্সকে জিজ্ঞেস করে আমি কি আমার মেয়ের এক্সিডেন্ট রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু জানতে পারি ? 

নার্স বলে, কাল সকালে ডাক্তার আসলে তোমাকে বুঝিয়ে সব বলবে । তবে তোমার মেয়ে  সুস্থের দিকে আছে । ওর সময় লাগবে এবং ঠিক হয়ে যাবে এ টুকু বলতে পারি ।  আজিজ ওদের কথা বলার জন্য রেখে বাহিরে গিয়েছে ।

বাবা শাহরিয়ার বলে আমরা কি রাতে কেউ  মেয়ের পার্শে থাকতে পারি?

নার্স বলে, এখানে থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই । তুমি বা তোমরা  ইচ্ছা করলে রিলিজিয়াস মাল্টি ফেইথ রুমে নামাজ  পড়া ও থাকতে পারবে কি না সিকিউরিটিকে  জিজ্ঞেস করবে । আজিজ ঘুরে এসে বলে চলেন আপনাদের বাসায় পৌঁছে দেই । ঠিক আছে চলো । ফ্লোরার মা বলে আমি যাইতে চাই না । আমি আমার মেয়ের কাছে কি থাকতে পারি?

আজিজ বলে আন্টি আপনারা লম্বা জার্নি করে এসেছেন, রেস্টের দরকার । চলেন বাসায় পৌঁছে দেই । কাল সকালে আসবেন এবং ইচ্ছা করলে সারা দিন এখানে থাকতে পারবেন । দিনের বেলা কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই ।   

আজিজ ওদের বাসায় পৌঁছে দিতে গিয়ে দেখে লি বাসায় এসেছে । লি ওদের জড়িয়ে ধরে বলে আন্টি আমি বুঝতে পারি  আপনারা অনেক আঘাত পেয়েছেন ওর এ অবস্থা দেখে । এটা এক্সিডেন্ট, যে কোনও লোকের হতে পারে ।   এটা খোদা বা ভগবান জানে কেন হয় ? 

তবে ডাক্তার বলেছে সে ঠিক হয়ে যাবে, হয়তো একটু সময় লাগবে । আমি আপনাদের জন্য খাওয়া তৈরী করে রেখে গিয়েছি । চলেন হাত মুখ ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে বসেন ততক্ষনে আমি খাওয়া গরম করে দিয়ে দেব ।  আজিজ বলে আংকেল আমি যাই আপনারা রেস্ট নেন । ডাক্তার শাহরিয়ার বলে তুমি কত দূরে থাকো? 

৭-৮ মিনিট হাঁটার রাস্তা । কাল দেখা হবে তবে আমার সকালে ক্লাস আছে । ওরা বলে সকালে আমরা নিজেরা চলে যেতে পারবো । তুমি ক্লাসে চলে যেও, পরে দেখা হবে । লি বলে আজিজ তুমি সকালে আসতে হবে না, আমি আংকেল ও আন্টিকে নিয়ে যাবো ।

ওরা লম্বা জার্নির পর অতিরিক্ত ক্লান্ত, লি বলে আন্টি আমি কাজ সেরে রেস্টুরেন্টে খেয়ে এসেছি । আপনারা আস্তে আস্তে খেয়ে  ঘুমিয়ে পড়েন । আমি খানিকটা ক্লাসের হোম ওয়ার্ক করবো । থালা বাসন আপনারা ধরবেন না, আমি ডিশ ওয়াসারে দিয়ে দেব । আমি  ডিশ ওয়াসার চালিয়ে দেব সব ক্লিন হয়ে থাকবে ।

ওরা দুই জন আস্তে আস্তে খেয়ে গিয়ে  হাত মুখ ধুয়ে ওযু করে  নামাজ পড়বে । নামাজের জায়নামাজ নিয়ে এসেছে, তবে কেবলা কোন দিকে বুঝতে পারছে না । লি এসে বলে আন্টি আমি জানি কেবলা কোন দিকে । ও কেবলা ঠিক করে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায় । ডাক্তার শাহরিয়ার ও রৌশনারা দুইজনে অনেক সময় ধরে নামাজ পড়ে বসে ফ্লোরার জন্য দোআ করে ঘুমাতে যাবে । ওরা বাংলাদেশ থেকে কিছু মিষ্টি এনেছে, রৌশনারা  এক প্যাকেট লি কে দিয়ে বলে এটা তুমি খাবে । লি বলে আন্টি থ্যাংক ইউ, আমি সে বারে ঢাকা গিয়ে অনেক মিষ্টি খেয়েছি । তাছাড়া আজিজ ও মিষ্টি এনেছে । আপনাদের ঢাকার মিষ্টি ভালো, আমি  পছন্দ করি । রৌশনারা   বাকি এক প্যাকেট আজিজ ও ফ্লোরার জন্য ফ্রীজে রেখে দিয়েছে । 

সকালে লি ঘুম থেকে  আগে আগে উঠেছে এবং  আংকেল ও আন্টির জন্য ডিম্ ও রুটি করে টেবিলে দিয়ে বলে আন্টি আপনারা আসেন, নাস্তা করেন, আমি চা করে দিচ্ছি । রৌশনারা বলে লি তোমাকে আমাদের জন্য কিছুই করতে হবে না । আমরা নিজেদের খাওয়া নিজেরা করে নেবো, তুমি বরং আমাদের সঙ্গে খাবে । এ ব্যাপারে তুমি কোনো চিন্তা করবে না । এ বেলা করলে তা ঠিক আছে, তবে দুপুর থেকে আর কিছুই করবে না । আমরা বাহিরে গেলে টুক টাক কিনে নিয়ে আসবো এবং রান্না করতে জানি । তাছাড়া এখানে বেড়ানোর জন্য আসি নি । তুমি এ ব্যাপারে কোনো কিছু দ্বিধা সংকোচ করবে না । তুমি ক্লাস থেকে এসে যদি দেখো আমাদের কিছু রান্না আছে, খেয়ে নেবে । আমরা তোমার রান্না সহ একত্রে করবো, তুমি কিছুই চিন্তা করবে না । 

লি রৌশনারার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে । লি বলে আন্টি তোমাদের পাসপোর্ট ও টাকা পয়সা সব সময় নিজের সঙ্গে রাখবে । এখানে চুরি হতে কখনও দেখিনি, তবে সতর্ক থাকা ভালো । লি কিছু সময় হাসপাতালে ওদের সঙ্গে থেকে বলে আন্টি আমি ক্লাসে যাচ্ছি ,ফ্লোরা তুমি আংকেল ও আন্টির সঙ্গে কথা বলো।

ক্রমশ :   

পূর্ববর্তী নিবন্ধতাম্র যুগ
পরবর্তী নিবন্ধস্বর্গীয় এ প্রেম
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন