আমার ছোট্ট পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল সেই কবে
বাবার পায়ের কাছে মেঝেতে, রিডিং টেবিলের নীচে
কিছু ইটের টুকরা, ছেড়া কাগজ, বড় ভাই থেকে চুরি করা রঙ্গিন মার্বেল
সকলের অগোচরে নির্মাণ হতে থাকলো আমার ছোট্ট পৃথিবীর দেয়াল ।
শৈশব থেকে টুপ্ করে কৈশোর পেরিয়ে যুবকে রূপান্তরিত হলাম
আমার পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ক্রমশঃ বড় হলো,
মস্তিষ্কের নিউরোন সেলগুলিতে পরিবর্তন এলো
সম্পদের অসম বন্টন, রাজাদের শোষণ, নিপীড়ন
বক ধার্মিকদের দৌরাত্বের বিপরীতে রক্তে উঠলো নাচন
মধ্যবিত্তের পারিবারিক কমিটমেন্ট উপেক্ষা করে তীব্র প্রতিপাদ জানালাম ।
ফযর নামাজ শেষে বাবার সুর করে তেলোয়াত
‘ফাবি আইয়ে আলা রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান’,
মুয়াজজিনের সুমিষ্ট আজান, সেজদারত মায়ের ক্রন্দন
আমাকে স্পর্শ করেনি, আমার মুখে তখন অবিরাম সমাজ পাল্টানোর দাওয়াত।
মেঘে মেঘে অনেক বেলা গড়ালো, সমাজে কিছু ভৌতিক পরিবতন এলো
দেশের জিডিপি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লো
এনজিও দের সুদের টাকায় খড়ের চাল ভেঙ্গে মজবুত টিনের চাল হলো
নিতাই মাঝির কপাল পুড়িয়ে, নদীতে ব্রিজ নির্মাণ হলো
মহাসড়কের কন্ট্রাক্টরদের বাসার রান্না ঘরে দামি দামি সব টাইলস বসানো হলো
তবে, সুইপার পাড়ার মাতাল মতিলালের বৌ পেটানো বন্ধ হলো না
যেমন বন্ধ হলো না ভদ্র পাড়ায় ঘুষখোরদের লেনদেন ।
জীবনের মধ্যাহ্নে কি পেলাম অথবা কি হারালাম, এই সমীকরণের জটিলতায়
আমার প্রসারিত পৃথিবীকে আবারো কেটে ছেঁটে ছোট করেছি
মনে মনে সব বাঘা বাঘা নেতাদের কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছি
মনের ক্ষুধা মেটাতে ভুল ভাল ছন্দে কবিতা লিখি, গদ্য লিখি, গল্প লিখি
শ্বেতশুভ্র বরফের এ দেশে লেকের ধারে বসে একা একা আপন মনে কথা বলি
সভ্যতার অসভ্যতা, চারিপাশের সুস্থ লোকদের অসুস্থতা পর্যবেক্ষণ করি
তবে, অপ্টিমিস্টদের সাথে তাল মিলিয়ে উম্মুখ হয়ে বসে থাকি অপেক্ষায়।
একদিন , হ্যামিলনের বংশী বাদকের ডাকে মানবতার জয় হবে
অনেকগুলি ‘আমি’ মিলিয়ে বিশালতা পাবে আমার ছোট্ট পৃথিবী
সম্পদের সুষম বন্টন হবে, শোষক-শোষিতদের পালা বদল হবে
যত্রতত্র উপচে পড়া সুখে নেচে উঠবে রোগ-শোকহীন এই ধরিত্রী
কোনো এক রাখাল বালক আকাশ পানে চেয়ে গলা উঁচিয়ে বলবে
ওরে দেখ, এই সুখ, এই সাফল্য, এই শোষণহীন রাজত্বের পিছনে রয়েছে
আমার পূর্বপুরুষের এক অখ্যাত প্রবাসী বাবার ছোট্ট পৃথিবী’ ।
—————
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীনউদ্দিন.
রেজিস্টার্ড সোস্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার, টরেন্টো, কানাডা, আগস্ট ২২, ২০২০