সন্ধ্যা হতে আর বোধহয় বেশি অবশিষ্ট নেই। পশ্চিম আকাশ রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। অশেষ বেশকিছু সময় ধরে টি.এস.সি’র মোরের রাস্তার পাশে বসে রয়েছেন। অশেষের মতো আরো অসংখ্য মানুষ এখানে জড়ো হয়েছেন। মহান মে দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান চলছে। কত কত কথা বলছেন বক্তারা! চে’র স্বপ্নের কথা। লেনিনের সংগ্রামী জীবনের কথা। সারা দুনিয়ার শ্রমিক ভাই-বোনদের আট ঘন্টা কাজের দাবীতে শিকাগো শহরের সংগ্রামরত শ্রমিক ভাইদের আত্নত্যাগের কথা; কতো ভাবে বর্ণনা করছেন!

পরিবহন সহ বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রমিক ভাই-বোনেরা মাথায় লাল কাপড় বেঁধে সারী বদ্ধ ভাবে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো বক্তাদের শ্রুতিমধুর বক্তিতা শুনছেন।এতো এতো ঘটা করে পালন করা হচ্ছে মে দিবসের আয়োজন। কিন্তু এর কোন কার্যকরী ফলাফল কি শ্রমিক ভাই-বোনেরা ভোগ করতে পারছেন? খেঁটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষের ভাগ্যের কি এতোটুকুনও উন্নয়ন বা পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে? হয়নি। অশেষ ভেবে পায়না, তাহলে এতো ঘটা করে কেন এতো আয়োজন! অযথা সময়ক্ষেপন করা আর কি!

খেঁটে মানুষের জীবন এখন পুঁজিপতিদের পাতানো ফাঁদে আটকে পিষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোনোমতে বেঁচে থাকতে পারাটাই এখন প্রান্তিক জনগণের নিয়তি বৈকি। পুঁজিপতিরা দেশের প্রচলিত আইন-কানুনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে পাশ কাঁটিয়ে, নিজেদের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে তাঁদের মনগড়া আইন তৈরি করে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করছেন। পুড়ে যাওয়া খাঁখাঁ উদরের চাহিদার যোগান দিতে না পারলে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিত মরে যেতে হবে। ক্ষুধার জ্বালা বড় কঠিণ জ্বালা! এর কাছে সব কিছুই মূল্যহীন। মালিক শ্রেণীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে কর্মহীন হয়ে অনাহারে নিশ্চিত মরে যাওয়া। আর কর্মহীন হওয়া মানেইতো, ক্ষুধা, দারিদ্র, অনাচার স্বেচ্ছায় বরণ করে নেওয়া। এছাড়া আর উপায় কি! উপায়হীন খেঁটে খাওয়া কংকালসার অর্ধমৃত মানুষগুলোর জীবন এখন লোভাতুর পুঁজিপতিদের হিংস্র থাবায় বন্দী। এই বন্দি খাঁচা থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই।

অশেষের ইচ্ছে হচ্ছে, যেখানে দাঁড়িয়ে বক্তারা মে দিবসের জয়গান গাইছেন। তাঁদের উদ্দ্যেশে একটি শক্তিশালী ডিনামাইট নিক্ষেপ করে সমস্ত মিথ্যাচার এবং অনাচার ধ্বংস করে দিতে।মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করেছে। ব্যাথায় টনটন করছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,
-শোন মে দিবস, তুমি মূল্যহীন এক দিবস। তোমাকে নিয়ে এঁরা মিথ্যা তামাসায় লিপ্ত হয়েছেন।এর সব কিছুই শুভঙ্করের ফাঁকি। রাষ্ট্রযন্ত্রকে খুশি করার জন্যই এই মেকী মিথ্যাচার। তুমি মিথ্যা এক দিবস।তোমার কোন মূল্য নেই। কোন মূল্য নেই।

অশেষ উঠে দাঁড়ালো। ভিড় ঠেলে একটি রিক্সা নিয়ে বাসায় ফেরার জন্য চলতে শুরু করলো।

(চলবে)

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন