বগুড়ার মহাস্থান গড়ের পাশেই জাদুঘরের কাছে একটি গাছের নিচে খালি গা হয়ে বিব্রতকর অবস্থায় শম্পার জন্য অপেক্ষা করছি। নিজেকে কেমন যেন আহাম্মকের মতো মনে হচ্ছে। সত্যই কী শম্পা আসবে!!
হারামজাদা নান্টু আমার সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমাকে বললো, ‘দোস্ত হিসি লাগছে, এটাতো পীর ফকিরের এলাকা, এসব এলাকাতে যেখানে সেখানে ঝেড়ে দেওয়া যায় না, আমি মিউজিয়ামের ভিতরের বাথ রুমে যাবো আর আসবো’, এই বলে নান্টু ওই যে গেল প্রায় পনেরো বিশ মিনিট হয়ে যাচ্ছে নান্টুর পাত্তা নাই। এরই মধ্যে কত কান্ড হয়ে গেল।
শম্পার আসার কথা সকাল সাড়ে এগারোটায়, এখন বাজে সোয়া এগারোটা। কিছুতেই সময় যেতে চাচ্ছে না। আইনস্টাইনের প্রতি গভীর আপেক্ষিকবাদ তত্ত্বের প্রতি বিশ্বাস ক্রমশঃ হারিয়ে ফেলছি। বুক পকেটে রাখা গোল্ডলিফ সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট বের করে ধরাতে যাবো এমন সময় দেখি লাইটার নাই, লাইটার নান্টু সাথে করে নিয়ে গেছে। এদিকে নেশা মাথায় উঠে গেছে। অগত্যা সিগারেট নিয়ে বড় রাস্তায় আগুনের জন্য অপেক্ষা করতেই দেখি এক চাচা বয়সী লোক সাইকেল চালিয়ে সিগারেট খেতে খেতে খেতে যাচ্ছিলেন। আমি হাত বাড়িয়ে থামার ইশারা করে আগুন চাইতেই উনি হাজারটা প্রশ্ন, কোথায় থাকি, এখানে কি করছি, বাবার নাম কী, কোথায় পড়ি, এই বয়সে সিগারেট খাই কেন, ইত্যাদি হাজারটি প্রশ্ন। শেষে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। সিগারেটের আশা বাদ দিয়ে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়ার জন্য হতাশ হয়ে হাঁটা দিলাম।
বট গাছের নিচ দিয়ে যেতেই এক রসিক কাক আমার ইস্ত্রি করা গোলাপি শার্টের উপর প্রাতঃকর্ম সেড়ে ফেললো। রাগে দুঃখে আমার চোখে প্রায় পানি এসে যাচ্ছে, একটু পরেই শম্পা এসে দেখবে আমার শার্টের ঘাড়ের জায়গার দিক থেকে কাকের বিষ্ঠা গোলে গোলে পড়ছে। ভাগ্য ভালো, আমার সাথে একটি পানির বোতল ছিল। আমি শার্ট খুলে ভালো করে দ্রুত ধুয়ে ফেললাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কিছুটা দাগ এখনও আছে, আর হাত থেকে গন্ধটা কিছুতেই যাচ্ছে না, এই অবস্থায় শম্পার সাথে কিভাবে প্রেমালাপ করবো এই ভেবে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিছু করার নেই। অগত্যা খালি গা হয়ে ভেজা শার্ট শুকানোর আশায় বাতাসে মেলিয়ে ধরে বসে আছি।
শম্পার সাথে জাস্ট গতকালই ঢাকা থেকে বগুড়ায় আসার পথে ফুড ভিলেজে পরিচয় হয়েছিল। শম্পা তার বাবা মায়ের সাথে হাছনা এন্টারপ্রাইজের এ সি বসে বগুড়ায় আসছিলো। আমি ড্রাইভারের বামদিকের দরজার কাছের সিটে বসেছি আর এই অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়েটিকে মাঝে মাঝে আরোচোখে দেখছি। দুই একবার চোখাচোখি হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, চোখাচোখি হওয়ার সময় মেয়েটি দৃষ্টি না ফিরিয়ে তীক্ষ্ন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, পাছে ওর বাবা মা দেখে ফেলে, এই ভয়ে আমিই বরং দৃষ্টি ফিরে নিয়েছি। কিন্তু মনের মধ্যে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। আমার একেবারে ‘চোখের আলোয় দেখে ছিলেম চোখের বাহিরে’ এরকম অবস্থা।
সারা রাস্তা মেয়েটার কথাই ভাবছি, তবে কী আজ আল্লাহ চোখ ফিরে তাকালেন !! আশায় আশায় আছি বাসটি ফুড ভিলেজে যেন থামে। সাধারণত এই লাইনের বাসগুলি যাত্রাপথে সাময়িক বিরতিতে কিছুটা ফ্রেস হওয়ার জন্য এই ফুড ভিলেজ চত্বরে থামে। সেই হিসাবে, এই বাসটিও থামার কথা। কিন্তু পথ কিছুতেই যেন এগোচ্ছে না। অবশেষে, ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো, আমাদের বাসটি বগুড়ার কাছাকাছি ফুড ভিলেজের পার্কিং লটে এসে থামলো। একে একে বাস থেকে প্রায় সবাই নেমে যাচ্ছে কিন্তু সেই মেয়েটি বা তার পরিবারের কেউ নামছে না। আমি সমানে দোয়া দরূদ পড়ে যাচ্ছি আর প্রার্থনা করছি, ‘হে আল্লাহ এদের যেন বাথরুমে যেতে হয়”।
সৃষ্টিকর্তা অসংখ্য প্রার্থনার কথা শুনেছেন কিন্তু এরকম বিচিত্র প্রার্থনার কবলে কখনও পড়েছেন কিনা সন্দেহ আছে। এক পর্যায়ে আমি মরিয়া হয়ে ফকিরকে পাঁচ টাকা দেয়ার মানত করলাম। দান খয়রাতের জন্যই হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক, সৃষ্টিকর্তা আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন। মেয়েটির বাবা মা মেয়ের নাম ধরে ডেকে বাস থেকে নামলেন। আমি সুর সুর করে ওদের পিছু নিলাম। ওঁরা রেস্টুরেন্টের উপরতলায় এসি রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। আমি তক্কে তক্কে আছি মেয়েটিকে একা পেলেই ফস করে প্রপোজ করে বসবো। বুয়েটের ইলেকট্রিক বিভাগে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, ভালোবাসা প্রপোজের লাইনে আমার হিউজ পোটেনশিয়ালিটি। প্রথমে ভদ্রলোক বাথরুমে গেলেন, মা ও মেয়ে টেবিলে বসে আছে। এবার বাবা ফিরে এলে মা ও মেয়ে একসাথে উঠে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। মেয়েটিকে আর একাই পাওয়া গেলো না। তবে আনন্দের কথা হচ্ছে, মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসেছে।
এরপরেই এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। মেয়েটিকে একা রেখে বাবা মা এক সাথে উঠে যেয়ে খাবারের অর্ডার দিতে যাচ্ছে। এটাই সেরা সুযোগ। কিভাবে প্রপোজ করবো আগেই সারা রাস্তা ভেবে রেখেছিলাম, সেসব আবার দ্রুত রিভিশন দিচ্ছি। সাধারণতঃ যাত্রাপথে এসব বিরতিতে খুব বেশি হলে বাস আধা ঘন্টাখানিক থামে। এরই মধ্যে এগারো মিনিট শেষ। হাতে থাকলো মাত্র উনিশ মিনিট। যা করার এরই মধ্যে করতে হবে। আমি উত্তেজনায় কাঁপছি। এরই মধ্যে মেয়েটির বাবা মা দ্রুত খাবারের অর্ডার দিয়েই মেয়ের কাছে টেবিলে ফিরে এলো।
রেস্তোরাঁটির উপর তলায় এসি রুমে কোনার দিকে একটি রুমে মেয়েটি তার বাবা, মার সাথে বার্গার জাতীয় খাবার খাচ্ছে। এখানকার খাবারগুলি অসম্ভব দামি। আমি বেকার ছাত্র মানুষ, তবে একেবারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট বেকার বলা যাবে না। ধানমন্ডি উনিশ নম্বরে এক বাড়িতে প্রাইমারি স্কুলের এক মেয়েকে টিউশনি করে যা টাকা পাই আর বাবার পেনশন থেকে পাঠানো গোনা টাকার সাথে মিলিয়ে আমার হোস্টেল জীবন মোটামুটি টেনেটুনে চলে যায়। সুন্দরীর মেয়ের পাল্লায় পড়ে বিলাসিতা করে বার্গারের অর্ডার দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। এদিকে, কিছু একটা না খেলে এমনি এমনি তো আর এই এসি রুমে বসে থাকা যায় না। পকেটের অবস্থা শোচনীয় জেনেও মেয়েটিকে সামনা সামনি দেখার লোভে পাশের দিকের একটি খালি টেবিল দেখে কফির অর্ডার দিয়ে বসে আছি। উজ্জ্বল ফর্সা রঙের দীঘির মতো চোখ দুটিতে নেশার মতো কিছু ছিল বিধায় আমি আরও খানিক্ষন দেখার লোভে প্রথম কাপ শেষ করে আরেকটি কফির অর্ডার দিলাম।
মিনিট বিশেকের মধ্যে বাসের হর্ন বাজতেই যাত্রীরা সবাই বাসে উঠে পড়লো। আমি অবাক হয়ে দেখলাম মেয়েটি টেবিলে ওর লাল টুকটুকে ছোট্ট ব্যাগটি রেখে গেছে। আমি ব্যাগটি হাতে নিতেই এক শিহরণ অনুভব করলাম। কতক্ষন ব্যাগটি হাতে নিয়ে এভাবে বসে আছি জানি না। ভাগ্যিস হোটেলের বয়-বেয়ারার কেউ দেখে ফেলেনি। হঠাৎ বাসের বারবার হর্ন শুনতে পেয়ে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। তখন ব্যাগ নিয়ে বাসের দিকে দৌড় শুরু করলাম। বাসটি ধীরে ধীরে রাজহাঁসের মতো হেলেদুলে বড় সড়কের দিকে যাচ্ছে। আর আমি ব্যাগটি উঁচিয়ে চিৎকার করে বাস থামাতে বলছি আর বাসের পিছন পিছন বাংলা সিনেমার নায়কদের মতো দৌড়াচ্ছি , সে এক দেখার মতো দৃশ্য। বাসের জানালা দিয়ে অনেকেই এটি উপভোগ করছে, কিন্তু এসি বাস বলে কেউ জানালা খুলে চিৎকার করতে পাচ্ছে না।
বাসের দরজায় দাঁড়ানো কন্ডাক্টারের মহানভুবতায় অবশেষে এক্রোবেটিক কায়দায় বাসের দরজায় কন্ডাক্টরের হাত ধরে বাসে উঠলাম। সারা বাসের লোকজন আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি মেয়েটির বাবার হাতে ব্যাগটি দিতেই ছো মেরে মেয়েটি বাবার হাত থেকে নিয়ে আমাকে আবারও সেই মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। আমার শরীরে হাজার হাজার এম্পিয়ারের বিদ্যুতের মতো কিছু একটা প্রবাহিত হতে থাকলো। ইতিমধ্যে এই মেয়েটির নাম জেনে ফেলেছি, শম্পা । শম্পা নামের অর্থ বিদ্যুত, বিজলী, ত্বড়িৎ, ক্ষণপ্রভা, সৌদামিনী ইত্যাদি। ক্লাস নাইনে সায়েন্স নেয়ার পর থেকে বিদ্যুতের নানাবিধ ডেফিনেশন পড়েছি এবং বাংলাদেশ প্রৌকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক বিভাগের ছাত্র হিসাবে বিদ্যুৎ বিষয়ে অদ্যাবধি পড়ে যাচ্ছি কিন্তু মানব শরীরে আজ এই ঢাকা -বগুড়া মহাসড়কে আমার শরীরে যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে তার সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।
নিজের সিটে বসে কেবল শম্পার কোথাও ভাবছি। বাসের জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছি আর শম্পার সেই মিষ্টি হাসির কথা ভাবছি। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষত্রে আমি একেবারেই পারদর্শী না, অথচ সেই আমি মাত্র উনিশ মিনিট সময়ের মধ্যে কিছুক্ষন আগে এক সাংঘাতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এক বিশাল কাজ করে ফেলেছি, যা চুপিচুপি আপনাদের বলছি। আমি ফুড ভিলেজ রেষ্টুরেন্টে ফেলে আসা শম্পার সেই ব্যাগটি ফেরত দেওয়ার আগে ব্যাগের মধ্যে একটি চিরকুট লিখে দিয়েছি, ‘ আগামীকাল সকাল সাড়ে এগারোটায় মহাস্থান জাদু ঘরের পাশে চলে এসো’- ইতি তোমার হৃদয়।
আমার নামের সুবিধার দিক হচ্ছে, খুব সহজেই কাউকে প্রপোজ করা যায়। একেবারে হার্ট টু হার্ট। জন্মের পরে আমার নাম রাখা হয়েছিল আশেকুজ্জামান বুলু। আমার বড় ফুপু বললেন, ‘আশেকুজ্জামান পর্যন্ত ঠিক আছে, তার সাথে ওসব বুলু ফুলু মানায় না, তার বদলে রাখ ‘হৃদয়’। আমার বাবা বড় ফুপুর কথা ফেলতে পারলেন না। একেতো আশেক মানে হচ্ছে প্রেম, তার পরে আবার হৃদয়, সবকিছু মিলে প্রেম ভালোবাসার জগতে আমার নামের জয় জয়কার অবস্থা। এরই মধ্যে আবার বুয়েটে ভর্তির পরে নারী জগতে আমার প্রচুর ডিমান্ড। অথচ, এই থার্ড ইয়ার পর্যন্ত সময়ে আমার কিছুই হলো না। আজ কিছু হওয়ার সুযোগ এসেছে। আগে পিছে না ভেবে তাই এই মহা রিস্ক নিয়েছি। শম্পার মিষ্টি হাসি আমাকে প্রশ্রয় দিয়েছে, আমাকে সাহসী করেছে।
সেদিন বাসায় ফিরে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। সারারাত শম্পাকে নিয়ে উথাল পাতাল ভেবেছি। শম্পা ব্যাগ খুলে চিরকুট কি দেখতে পারবে ! আর যদি দেখেও, বগুড়া শহর থেকে মহাস্থান এর দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলো মিটার। এতখানি দূরত্ব একটি মেয়ের পক্ষে আসা কি করে সম্ভব, তাও আবার সকাল এগারোটার মধ্যে। আমি গাধার মতো কেন কাছে পিঠে কোথাও আসতে বলিনি সে জন্য নিজের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছা হচ্ছে। আমার ইনটুইশন বলছিলো আসবে , অবশ্যই আসবে।
রাজনীতিবিদরা যেমন ভোটের আগে পীর ফকিরদের মাজার জেয়ারত করে ভোটের প্রচারকর্ম শুরু করে, অনেকটা সেরকম কায়দায় না হয় আমি শুরু করলাম আমার ভালোবাসাময় নতুন জগৎ। আমার মন বলছিলো, এঁরা ভয়ানক বড়লোক টাইপের। এঁদের কাছে প্রাইভেট গাড়ি ঘোড়া ম্যানেজ করা কোনো ব্যাপারই না। এই মেয়ে ঠিক ঠিক ঘড়ির কাটা ধরে সাড়ে এগারোটায় মহাস্থান গড়ের জাদু ঘরের পাশে ফুল হাতে চলে এসে রিন রিন মিষ্টি গলায় বলবে ,’ভাইয়া আপনি এতো কষ্ট করে কালকে জীবন ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে বাসে উঠলেন অথচ আমি আপনাকে থ্যাঙ্কস পর্যন্ত দিলাম না।’ আমি তখন দুষ্টমি করে বলবো, ‘তাইতো, আপনি মহা অপরাধ করেছেন, এজন্য আপনার কোর্ট মার্শাল হওয়া উচিত, এক্ষনি ওসব ভাইয়া /টাইয়া বাদ দিয়ে আমার হৃদয় নাম ধরে ডাকবে আর আমাকে তুমি বলে ডাকবে, এই হচ্ছে বিচারের রায়। কী ঠিক আছেতো ? এবার শম্পা আবারো মিষ্টি করে হাসবে আর আমার শরীরে যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে তা দিয়ে হাজার ওয়াটের অন্তত গোটা দশকে বাতি যে জ্বালানো যাবে তাতে সন্দেহ নেই।
একটি ধবধবে সাদা প্রাইভেট কার আমার প্রায় গা ঘেসে থামলো। এদিকে আমি সেই ধূর্ত কাক এর বিষ্ঠা পরিষ্কার করে ভেজা শার্ট বাতাসে দুলিয়ে দুলিয়ে শুকাচ্ছি। ঠিক একই সময়ে নান্টু দৌড়াতে দৌড়াতে হাজির। দোস্ত, তোর এই অবস্থা কেন ? শার্ট খুলে খালি গা হয়ে বসে আছিস? আমি সরি দোস্ত, অনেক দেরি করে ফেললাম, আমি শালা যাবো হিসি করতে কিন্তু যেতে যেতে যেই না সিগারেট ধরাইছি আর অমনি দুই নাম্বার এর চাপ, তাই একেবারে এক আর দুই সেরে আসতে একটু লেট হয়ে গেলো দোস্ত, এই যা !! এইতো গাড়ি চোলে আসছে মনে হচ্ছে । দোস্ত, তোর শম্পা না টম্পা কি যেন নাম, বোধ হয় চলে এসেছে, আমি ভাগলাম, তুই সামলা।’
গাড়ি থেকে এক ভদ্রলোক বের হয়ে এলেন। আমি তাড়াহুড়া করে শার্ট গায়ে দিয়ে বোতাম লাগাতে সব তালগোল পাকিয়ে ফেললাম। সম্ভবত বোতাম সঠিকভাবে লাগানো হয়নি। ভদ্রলোক এগিয়ে আমার কাছে এসে বললেন,’ তুমি সেই না, যে কাল দৌড়ে আমার মেয়ের ব্যাগ নিয়ে এলে ? আরে, এতো শম্পার বাবা, আমি বুঝতেই পারিনি। গাড়ির সাদা রঙের সাথে মিলিয়ে বগের পালকের মতো সাদা রঙের পাঞ্জাবি ও মোটা পাওয়ারের কালো চশমা পরে উনাকে চিনতেই পারিনি। আমি হতভম্ব হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি, সালাম পর্যন্ত দিতে ভুলে গেছি। আমাকে এরকম নার্ভাস লাগছে কেন? গাড়ির ভিতরে তাকাতেই দেখি শম্পা গাড়ির ভিতরে শুকনা মুখে বসে আছে। তবে কী কোনো ঝামেলা তৈরী হয়েছে! শম্পাই বা গাড়ি থেকে নামছে না কেন? আমি ভয়ে আতঙ্কে প্রমাদ গুনলাম।
(চলবে-)