দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে যাচ্ছে। আজ যে কেনো বারবার এতো অস্থির লাগছে কে জানে! কতটা দিন পর সেই অপেক্ষার আজ শেষ হবে। আরো আসতে হয়ত ঘন্টা খানিক লাগবে। ইস্ সময় মোটে যেতে চাইছে না।
– সাধারণত রিং টোনের শব্দ দেয়া থাকে না। কিন্তু আজ কোন ভাবেই কল মিস করা যাবে না। তারপরও অবচেতন মনে বারবার শুধু ফোনটা হাতে নিচ্ছে তুনি।
– হঠাৎ করেই ফোনটা বাজার আগেই আলো মোবাইলে জ্বলা মাত্রই তুনি হ্যালো…
– কি ব্যাপার ফোন নিয়ে বসে ছিলে ?
– হ্যা ও রকমই বলতে পারো।
– কেনো তর সইছে না – না – কি ?
– বয়স তো বাড়ছে এবার ছেলেমানুষী কথাবার্তা কম বলো।
– নাহ্ এটা কখনও নিষেধ করবে না। তোমার সাথেই এমনটা থাকবে শেষ অব্দি।
– আচ্ছা বেশ। কিন্তু তুমি এখন কোথায় ? জলদি এসো। কত দিন পর দেখা হবে বলো..
– দিন বলছো ! বলো কতটা অপেক্ষার পর বছর পার করেই তবে দেখা .. যাক তবে কি রান্না করছো তুনি..
এই এই গতবারের মত আবার হাত পুরাবে না তো? গতবার যা কান্ড করলে?
– দেখো তখন অনেক আগের বিষয় ছিলো। এখন আমি পুরোদস্তুর রাধুনি বুজলে ?
– তা বুজবো খেয়ে। তবে যা বলেছি আমার তাই চাই কিন্তু…
– ইস্ আবদারের ঢেঁকি। এতো জ্বালিয়ো না তো। সব রেডি আছে। তুমি শুধু তাড়াতাড়ি এসো। আচ্ছা বললে না যে তুমি এখন কথা বলছো.. কোথায় তুমি? আরে সবুর করো আমি লন্জে বসে আছি। এখানে তো আর সিগারেট টানতে দেয় না। বাইরে থেকে এসে তোমাকে কল করলাম। হাতে ১ ঘন্টার মত আছে। তারপর আবার ফ্লাইট। এবার বেশি না ৩ ঘন্টার মধ্যেই আমি হাজির। ওহ্ ভালো কথা শুনো তুমি আরো একটা কাজ করো তো হাতে মাখিয়ে ঘন মুসুরের ডাল করো তো। ইচ্ছে করছে?
– কি বলছো? মাথা কি ঠিক আছে? ভোনা খিচুড়ির সাথে ঘন মুসুরের ডাল … বাবার জন্মে শুনিনি আমি।
– তুনি আমার ভালো লাগে।
– ভোনা খিচুড়ি সাথে ইলিশ ভাজা, বেগুন ভাজা, সাথে আলু ভর্তা যা কেউ ভোনা খিচুড়ির সাথে খায় না। কিন্তু তুমি খাও। এখন বলছো ঘন ডাল …
– এই করবে কি না বলো?
– রাগ হচ্ছো কেনো? করে দিবো তো.. কিন্তু আমি কোন শাড়িটা পড়বো? ওহ্ তোমার জন্য পাঞ্জাবি কিনেছি। সুতির… ফ্রেস হয়ে ওটাই পড়বে। হালকা আকাশি রংয়ের। কিন্তু সমস্যা হলো শাড়ি। রং ম্যাচ হচ্ছে না।
– তুনি জানোই তো আমি ম্যাচিং পছন্দ করি। রং ম্যাচ না হলে মার্কেটে যাও ম্যাচ করে নিয়ে আসো।
– ভালো কথা বলেছ। এজন্যই তো তোমায় এতো ভালোবাসি। আচ্ছা আমরা শাড়ি আর পাঞ্জাবী নিয়ে মাতামাতি করছি কেনো? মনে আছে স্তব্ধ আমরা কোন ফাংশনেই শাড়ি আর পাঞ্জাবীর ধারে কাছে যেতাম না।
– সব মনে আছে সব টা। সে দিনে সারে ৭ ঘন্টা দোলখোলার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথাও মনে আছে তুনি।
– আমায় মাফ করে দাও স্তব্ধ।
– হা হা হা … এতো চাপ নিয়ো না। আমি সারাজীবনের জন্য তো তোমার হতে যাচ্ছি। বুজলে মহা রানী। তখন আমার মহারানী হওনি তো কি এখন হবে।
কিন্তু আজ শাড়িই পড়বে। ব্যস ..
– জোর করছো?
– হ্যা অধিকার যেখানে থাকে ভালোবাসা যেখানে গভীর জোর করা জায়েজ আছে ।
– বাহ্ ভালোই বলেছ।
– আসলে আমি খুব এক্সাইটেড৷ কতদিন পর তোমাকে দেখবো তাই না …
– একই কথা তো আমিও বলতে পারি। তোমায় দেখার তো একটা ইচ্ছে ভীষণ। কতদিনের সাধ বলো। আচ্ছা এমন যদী হতো এয়ারপোর্টের বাইরে তুমি এসেই দাঁড়াবে আর আমি দেখবো।
– এই এই সিনেমা করবে না কি?
– ধূর কি যা তা বলো দেখি। আজকাল কি তেলেগু মুভি বেশি দেখা হচ্ছে নাকি স্তব্ধ ?
– নাহ ভাবলাম তুমি বুঝি দৌড় দিয়ে আসবে। বেশ হতো।
স্বপ্ন কিন্তু একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে স্তব্ধ ;
আচ্ছা,
– যাই হোক, সুমনের কথা মনে আছে তোমার?
– কোন সুমন?
– আরে আমাদের ডিপার্টমেন্টেই ছিল৷ তোমার বেস্টফ্রেন্ড রিয়ার সাথে কত কাহিনী করলো মনে নেই?
– ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। কিন্তু ওই জোচ্চরটার কথা তুললে কেন হঠাৎ?
– এয়ারপোর্টে ওর সাথে দেখা হয়েছিলো৷ বউ নিয়ে থার্ড হানিমুনে যাচ্ছে ব্যাংককে।
আর,
অথচ আমাদের দেখো, এখনো স্বপ্নের সজ্জাটাই সারতে পারলাম না।
– আমাদের বিয়েটা এবার হচ্ছে তো স্তব্ধ ?
– যদি তুমি আবারো আমাকে অপেক্ষা না করাও।
– সেদিনের কথা এখনো ভুলতে পারো নি দেখছি।
– তুমি হলে ভুলতে পারতে?
– হয়তো পারতাম না। কিন্তু আমি ভীষণ সংকিত ছিলাম জানো তো।
– থাক আর টে – নে সুর তুলো না তো।
– আমি কাজী অফিসের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর ওদিকে তুমি বাবা-মায়ের বাধ্য মেয়ের মতো তাদের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে। কিন্তু নিয়তি তোমাকে আবারো আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে এলো। যাক,
– এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না স্তব্ধ । আগেও বলেছি তোমাকে।
– সত্যিই কি ছিল না? বাই দ্যা ওয়ে, তোমার হাজবেন্ড এখন কোথায় আছে? যোগাযোগ নেই তার সাথে?
– নাহ।
– কোন যোগাযোগ রাখতে পারবে না। আর আমি এসে দেখবো বাকিটা।
– কিন্তু…
– নট এগেইন প্লিজ তুনি । আমাকে এখন ছাড়ো। কত কাজ বাকি জানো? তোমার ওখানে আসার আগে আমাকে কতগুলো জিনিস গুছাতে হবে।
– কি জিনিস?
– সারপ্রাইজ। দেখলেই বুঝতে পারবে।
– লেট মি গেস…
– থাক আর গেস করতে হবে না৷ পারবে না, শুধু শুধু সময় নষ্ট হবে৷ আচ্ছা শুনো…
– উঁহু, এখন ভিডিও কলে আসার কোনো রিকোয়েস্ট চলবে না৷
– কি করে বুঝলে এটাই বলবো?
– তোমাকে পড়তে পারার শক্তিটা এখনো ক্ষয়ে যায় নি যে। সম্পর্কটা তো সেই কবে থেকে। আমি ছাড়া তোমাকে ভালো কেউ জানে না… শুধু মাঝখানে ঝামেলা তুমি পাঁকিয়েছ যার রেস এখন আমার টানতে হচ্ছে।
– আবার স্তব্ধ ?
-সন্ধ্যা হতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। ছয়টা বছর অপেক্ষা করতে পারলে আর এখন এতটুকু সময় অপেক্ষা করতে পারবে না?অপেক্ষা করো আসছি।
– রাখছি এখন৷ সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে।
– আমি অপেক্ষায় থাকবো।
– জানি তো। আমিও যে কতটা অপেক্ষায় আছি সে তুমি বুজবে না।
রাত ১২টা…
বারন্দায় পায়চারি করতে করতে একটু পরপর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে তুনি । পরনে তার আকাশি রংয়ের সুতির শাড়ি আর চুলের খোঁপায় স্তব্ধের পছন্দের বেলী ফুলের গাঁজরা লাগানো৷ স্তব্ধের মোটামুটি আসার কথা সন্ধ্যে ৭টায়। এদিকে ওর ফোনটাও সুইচড অফ দেখাচ্ছে। অপেক্ষা করতে করতে তুনির চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। সময় যত ঘনাচ্ছে, আশার আলো ততো নিভু নিভু করছে তার। একসময় সে ক্লান্ত হয়ে রাগে ফোপাঁতে ফোপাঁতে খোঁপা থেকে ফুলের গাঁজরাটা একটানে ছিঁড়ে ফেলে দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে। ঠিক তখনি তার ফোনে একটা মেসেজ আসে। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজটা ওপেন করে তুনি,
“আজ আমারও কোনো উপায় নেই জানো? বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হতে হয়েছে। তবে হিসেবটা এখনো বরাবর হয়নি। আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো সারে ৭ ঘণ্টা। মনে আছে তুনি?
আর তুমি অপেক্ষা করলে মাত্র ৫ ঘণ্টা।”
তুনি কিছুক্ষণ আয়নার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। জোরে নিশ্বাস ফেলে হেসে রিপনকে কল করলো। রিপন হলো তুনির নেশাখোর হাসবেন্ড।
– রিপনকে কল করে জানায়,
– প্ল্যান ক্যানসেল করো ৷ ও আসবে না। তাছাড়া ওকে কিডন্যাপ করে আমরা বড় কোনো এমাউন্ট হাতাতে পারতাম বলে মনে হয় না। হোপলেস হওয়ার কিছু নেই। নেক্সট প্ল্যান নিয়ে ভাবো। আমি তৈরি …
পুরাটাই কাল্পনিক ***
এক নিশাচর সাইকোপ্যাথিক *** ®
নীলিকা নীলাচল ***