তুই কোন দলের রে—?
না বড় ভাই আমি কোনো দলে টলে নাই। আমি নিজের মতো একটু থাকতে চাই।
ধাপবেটা ওটা আবার হয় নাকি? মাঠে (পৃথিবীতে) থাকলে তো কোনো না কোনো দলের সমর্থক হতেই হয়। এটা তো বোকায়ও বোঝে।
না তাও বড় ভাই দেখিনা একটু চেষ্টা করে নিজের মতো থাকা যায় কিনা। আমি নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে চাই।
আমি আবারও বললাম ওটা তুই পারবি না। আমার সাথে দেখা করিস। আমার দলে থাকলে কী কী সুবিধা পাবি সব বুঝিয়ে বলবো। আর যদি ওদের দলে যাস তাহলে তো বুঝতেই পারছিস তোর কপালে কি ঘটবে!?
এবার ফজর আলীর মাথায় দুশ্চিন্তাটা একটু যেন গেড়ে বসলো!
গ্রাম, গোত্র, দেশীয়, আন্তর্জাতিক… যেদিকেই তাকাই না কেন চিত্রটা সবক্ষেত্রেই এক। আর এই ফজর আলীটা কে? বুঝতেই পারছেন নিশ্চয়। না পারলে বলে দেই, এই ফজর আলী হলো আজকের ‘ইউক্রেন’! কিংবা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে প্রেসিডেন্ট মিঃ ভ্লদিমির জেলেনেস্কি (President Volodymyr Zelensky)। যদিও আমাদের জীবনের পরতে পরতে রাজনীতির দখল, তার নিয়ন্ত্রণ অবিসংবাদিত, তবুও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লিখতে বা কথা বলতে এখন আর ভালো লাগে না। কিন্তু তারপরও পৃথিবীর বড় সব কুশীলবরা এমন সব ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন যে একবারে চুপ মেরে বসে থাকাও মনোদাহর কারণ হয়ে দেখা দেয়। এবার তাই এসব কুশীলবদের কাছে একটা ছোট অনুরোধ নিয়ে হাজির হওয়ার চেষ্টা করলাম।
পৃথিবী এবং পৃথিবীর সাধারণ মানুষ এখন আর যুদ্ধ চায় না। আর বিশেষ করে এই সময়ে যখন কোভিড-১৯ ভাইরাস আমাদের মেরুদণ্ডে এক ব্যাপক আঘাত হেনে বসে আছে! কিন্তু কে শোনে কার কথা। স্বার্থের নেশায় একদিকে গনতন্ত্রের নামে ধুয়োতন্ত্র / মুর্দাতন্ত্র নিয়ে পাশা খেলায় মত্ত পশ্চিমা বিশ্ব। একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর পশ্চাৎদেশে লাঠি ঢুকিয়ে যুদ্ধ বাঁধানোর কুটচাল জন্ম থেকেই যাদের ডিএনএ-র মধ্যে। আর অন্যদিকে একনায়কতন্ত্র / হাফ– নায়কতন্ত্রের গুটিকতক কর্ণধার। হাফ-নায়কতন্ত্র বলছি একারণেই যে ক্ষমতার অহমে মাঝেমধ্যে মনে হয় এরা সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার সময়ে অন্যের মতামত নেয়ার প্রয়োজন তো মনে করেন ই না এমনকি নিজের সবটা মস্তিষ্ককেও যে জিজ্ঞেস করেন তাও মনে হয় না! বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেন সংঘর্ষের জন্যে প্রধানত কাকে দায়ী করা যায় তার চুলচেরা বিশ্লেষণে এ লেখায় যাচ্ছি না। তারপরও প্রাসঙ্গিক দু’একটি বিষয়ের উল্লেখ করতেই হয়।
গত শতকের আশির দশকের শেষার্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্ভাচেভ এর পেরেস্ত্রোইকা আর গ্লাসনস্ত এর পথ ধরে ১৯৯১ এ প্রজাতন্ত্রগুলোর ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে উন্মেষ ঘটার মাঝেই যে আজকের এমন পরিস্থিতির বীজ রোপিত হয়েছিল তেমন ভাবা কোনো অত্যুক্তি কিছু নয় বলেই মনে করি। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের আবহমানকাল ধরে (১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের পর থেকেই মেরুকরণের এই ধারা তীব্র রূপ নেয়) রুশ বিরোধী মনোভাব এবং তাদের (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স) ডিএনএ-তে স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে যেকোনো ধরণের নোংরা পাশা খেলার অভ্যেসই যে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে তাতো আমরা পূর্বেও বহুবার দেখেছি। উদাহরণ স্বরূপ আফগানিস্তানে নজিবুল্লাহ সরকারকে উৎখাতের জন্যে পাকিস্তানকে ব্যবহার করে তালেবানদের সৃষ্টি করা, গোটা মধ্যপ্রাচ্যে একটা যুদ্ধংদেহী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখা, আইসিসের জন্মদাতা হিসেবে আবিস্কৃত হওয়া, নিকারাগুয়ায় সান্দানিস্তা সরকারকে উৎখাতের জন্যে কন্ট্রাদের মদদ দেয়া, সম্প্রতি ভেনেজুয়েলায় সেই তথাকথিত গনতন্ত্রের ধুয়ো তুলে তাদের তাবেদার সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যে অস্থিরতার সৃষ্টি করা। একই কায়দায় তাদের অর্থনীতির উপরে চাপ সৃষ্টি করা এবং এমন আরও অনেক অনেক। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় গনতন্ত্রের নামে এই নাটেরগুরুদের এমন মহৎ(??) কর্মের তালিকার কোনো শেষ নেই! তাদের এই খেলায় পূর্বে এদের ঘুঁটি হতো অতি লোভী সামরিক জান্তারা। সময়ের সাথে সাথে মুখোশের আড়ালে তাদের এই কৌশল অতি পরিচিত হয়ে গেলে বর্তমানে তারা ভিন্ন ঘুঁটি নিয়ে মাঠে আসছে। এবং হালের এই ঘুঁটিরা হচ্ছে সেই (এখানে ইউক্রেন) দেশের অতি উচ্চাকাঙ্খী তরুণ যুবারা। পশ্চিমা মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা এবং ভোগবাদী শোবিজ জগতের মনোহরী ডিসপ্লে এর মাধ্যমে নাটগুরুরা এই তরুণ যুবাদের মগজ এমন সুচতুর ভাবে ধোলাই করে যে এটা তারা বুঝতেই পারে না!
নাহ্— যদি ভেবে থাকেন যে পৃথিবীতে গনতন্ত্র আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে মার্কিন মুলুক একেবারে মরণপণ, কেঁদে কেঁদে অস্থির তাহলে ভুল করবেন। এদের হরিহর আত্মার বন্ধুরা হলো তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যেখানে কোন গনতন্ত্রই নেই। যেখানে মানবিধাকারের লঙ্ঘনও হচ্ছে হরহামেশাই। অথচ তাদের সাথে কিন্তু এনারা সকাল–বিকেল একই সারিতে দাঁড়িয়ে কোরাস গেয়ে যাচ্ছেন! হয়তো ভাবতে পারেন এদের চরিত্রকে তুলে ধরে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে আমি পুতিনের আগ্রাসনকে সমর্থন করে যাচ্ছি। না মোটেই তা নয়। তবে যুদ্ধের পেছনের কারণকে একটুখানি অনুধাবন করার জন্যে কিছু মূল সত্যকে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করলাম বলেই এসবের অবতারণা।
১৯৯১ এর ডিসেম্বর এ তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের (USSR) পতনের পরে প্রায় দুই দশক ধরে কিন্তু মস্কো–কিয়েভের সম্পর্ক ভালোই যাচ্ছিলো। এ সময় অবশ্য রাশিয়ান সমর্থিত সরকারই কিয়েভের গদিতে ছিলো। এ পর্যায়টাকে আমরা সুপ্ত সময় বলতে পারি। অথবা বলা যায় পশ্চিমা বিশ্বের ঘুঁটিগুলোকে চিহ্নিত করা এবং ছকটাকে সাজানোর সময়। তবে এর মাঝে জর্জিয়ার সাথেও সম্পর্কের টানাপোড়েনের সম্মুখীন হয় রুশীরা। এতোটা ব্যাপক না হলেও সেখানেও ঝামেলা কম হয়নি। এই সুপ্ত সময়ের পর থেকেই ইউক্রেনের শীতল মাটি ক্রমশঃ উত্তপ্ত হতে থাকে রুশ বিরোধী আন্দোলনে। যার ফলোশ্রুতিতে ২০১৪ সালে রুশরা ক্রিমিয়া অঞ্চলটিকে (Crimea) প্রকারান্তরে আবার তাদের সাথেই সংযুক্ত করে নেয় এবং পরে সেখানে একটি রেফারেন্ডাম দেয়। যদিও অনেকের কাছেই এ রেফারেন্ডাম এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। প্রসঙ্গক্রমে, ঐতিহাসিক ভাবেই এই অঞ্চলটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং শাসক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছে মঙ্গল (Mongol) এবং অটোমান (Automan) শাসকরাও। তবে বেশি দূর অতীতে না গিয়ে বলতে পারি ১৭৮৩ সাল থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলটি রাশিয়ান সাম্রাজ্যের (Russian Empire) নিয়ন্ত্রণে ছিলো। ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের সময়কালে অঞ্চলটির দখল নিয়ে আবারও অরাজকতার সৃষ্টি হয়। অবশেষে ১৯২০ সালে এটির নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার রেড আর্মির হাতে চলে আসে। ১৯৫৪ সালে একটি ডিক্রির মাধ্যমে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এটির নিয়ন্ত্রণ তৎকালীন ইউক্রেনিয়ান সোভিয়েত সোস্যালিস্ট রিপাবলিকের কাছে হস্তান্তর করে। সেই থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটি এদের নিয়ন্ত্রণেই ছিলো। অঞ্চলটির জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগই রাশিয়ান বংশোদ্ভূত এবং এর পরে রয়েছে তাতার আর ইউক্রেনিয়ান (তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া)।
প্রায় ৪৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ইউক্রেন আয়তনের দিক থেকে রাশিয়ার পরেই ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকেও দেশটি পশ্চিমা বিশ্ব এবং রাশিয়া উভয়ের জন্যেই খুবই গুরুত্ব বহন করে। সর্বোপরি সোভিয়েতদের করা ঐ চেরনোবিল পারমানবিক স্থাপনাটিও ইউক্রেনে। সুতরাং রাশিয়ার নাকের ডগায় ইউক্রেনকে তাদের শত্রু হিসেবে দাঁড় করানোর পরিকল্পনায় মার্কিনী ষড়যন্ত্র যে কোনো ভুল করবে না তা বুঝতে রাজনীতির পন্ডিত হওয়ার প্রয়েজন পড়ে না। আর রাশিয়া কি চাইবে যে ক্রেমলিনের জানালা পথে সবসময়ই একটি মার্কিন ব্রান্ডেড মিসাইল তাক করা থাক!? সুতরাং বর্তমান ইউক্রেন যে পথে এগোচ্ছে তা যে নিসন্দেহে রুশীদের ঘাড়ের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে পুতিনের ঘুম হারাম করে দিবে তাতে তো কোনো সন্দেহ নেই! উপায়? তেমন যে কিছু ছিলো না সেতো আমরা এখন দেখতেই পাচ্ছি। জেলেনস্কি এবং পুতিনের মাঝে সমঝোতার পথটা একেবারেই কেন বন্ধ হয়ে গেলো সে সত্যটা অবশ্য এখনো ততোটা পরিস্কার নয় আমার কাছে।
কমেডিয়ান অভিনেতা জেলেনস্কি ২০১৯ সালের এপ্রিল নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন কোনো পরিচিত মুখ ছিলেন না। বলাবাহুল্য অল্প সময়ের পরিসরে এই দেশটিতে কয়েকবারই ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে এবং একটা অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো। কিন্তু এপ্রিলের ঐ নির্বাচনে এই অভিনেতা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হন। শুরুতে তাকে কিছুটা মধ্যপন্থী হিসেবে ভাবা হলেও সময়ের সাথে সাথে হয়তো তার চেহারায় (নীতিগত) পরিবর্তন আসে। বিশেষ করে পুতিনের দৃষ্টিতে তো অবশ্যই। সম্পূর্ণ গনতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত একটি দেশের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার পুতিনের এহেন প্রচেষ্টাকে তাই কে ই বা সমর্থন করতে পারে? বিশেষ করে ঐ পশ্চিমা বিশ্ব। যারা অন্তরে না হোক (বিশেষ করে বিদেশ রাজনীতির ক্ষেত্রে) মুখে অন্তত নিজেদেরকে গনতন্ত্রের সোল এজেন্ট বলে প্রচার করে থাকে! প্রসঙ্গত এখানে কয়েকবছর পূর্বের আরেকটি চিত্রকে তুলে আনতে চাচ্ছি। বহু প্রতিক্ষার পর যুদ্ধ বিদ্ধস্ত প্যালেস্টাইনে ২০০৬ সালের জানুয়ারী নির্বাচনে পশ্চিমাদের সব হিসেব নিকেশকে ভুল প্রমাণিত করে প্রতিপক্ষ কিছুটা নমনীয় ‘ফাতাহ’ সংগঠনকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে কট্টর পন্থী ‘হামাস’- রা বিজয়ী হয়। কিন্তু পশ্চিমারা তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়া তো দূরের কথা মেনেই নিলো না। কারণ তারা তাদের নিজস্ব সংগায় টেরোরিস্ট গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত। আরে ভাই তোমাদের চোখে তারা যে ই হোক বেশির ভাগ ফিলিস্তিনীরা তো তাদেরকেই চায়। এটাই তো গনতন্ত্র নাকি? না স্থান কাল পাত্র ভেদে সুবিধা বুঝে তোমাদের অতি আদরের এই গনতন্ত্রের মডেল বদলে যায়? এটা নিয়েই তো অন্যখানে এতো গলাবাজি করো তোমরা। অপ্রয়োজনে (তোমাদের স্বার্থকে বাদ দিলে) যুদ্ধ বাঁধিয়ে দাও! তারপর ঝাঁকা ভর্তি অস্ত্র নিয়ে আসো বিক্রির জন্যে। তা বুকে হাত রেখে সত্যি গোমরটা একবার অন্তত স্বীকার করার সাহস দেখাও না? আসলে এইসব গনতন্ত্র ফনতন্ত্র কিছু না তোমাদের কাছে। তোমাদের গোপনতন্ত্রটাই মোদ্দা কথা। পুঁজির পৃথিবীতে ক্ষমতা আর মুদ্রার নিয়ন্ত্রণে তোমাদের আধিপত্য যে চাই ই চাই! তা যেভাবেই হোক! অন্যের রক্ত ঝরে তো ঝরুক। এমন একটু আধটু রক্তের স্রোতে তোমাদের বিজয়ী শ্যাম্পেনের বোতলে আরেকটু বাড়তি স্বাদ আনে বৈ কি! তাই বলছিলাম দুঃখজনক হলেও সত্যি কোনো না কোনোভাবে ফজর আলীরা ঘুঁটি হয়েই যায়। উপায় থাকে না বলেই তারা বনে যায় ছাঁচের পুতুল।
মধ্যপ্রাচ্যে, ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে এমন রক্ত বহুবছর ধরে ঝরেছে এবং এখনো ঝরছে! এবার ইউরোপে। তাই তোমাদের মেকি কান্নাটাও আরেকটু জোরেসোরে শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে চিরশত্রু রাশিয়া এটা ঘটাচ্ছে বলে। এশিয়ায় তোমাদের আকাশ বোমা আর ড্রোন হামলায় কতশত সিভিলিয়ান আর নারী শিশু প্রাণ হারিয়েছে আরেকবার খাতা খুলে দেখার অনুরোধ করছি। রেডিমেড উত্তরে হয়তো বলবে বৃহত্তর স্বার্থে করেছি। তা এই স্বার্থটা কার? সভ্যতার, না ঐ দেশের, না তোমাদের পেট মোটা করার নোংরা স্বার্থ? বিশ্ব বিবেক আজ জানতে চায়।
তবে তোমরা যারা উপর চেয়ারে বসে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এইসব খেলা খেলিয়ে যাচ্ছো ফায়দাটা ছাড়া তোমরা তো এর আর কোনকিছুরই দায় নাও না। ভুক্তভোগী সবসময়ই তো সাধারণ জনগন! সারা পৃথিবীর খুনির চরিত্র যেমন এক, তেমনি সারা পৃথিবীর সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যন্ত্রণাও একই মাত্রার। এখানে কোনো সাদা-কালো–বাদামীর ভেদ নেই। থাকাও উচিত নয়। এটাই তো মানবতা।
এটাই যখন বাস্তব চিত্র তাই এবারে একটা অনুরোধ রাখছি অনুগ্রহ করে শুনো। পৃথিবী আর রক্তক্ষয় চায় না। শরনার্থীর ভীড় উপচে পড়ছে পৃথিবীর প্রান্ত থেকে প্রান্তে। আর অতীতে দেখা গেছে এই শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েও কখনো কখনো শেষ রক্ষা হয় না [১৯৮২ সালে লেবাননের শাবরা / শাতিলা (Shabra / Shatila refuse camp), ২০১৪ সালে ফিলিস্তিনের উনরাওয়া (UNRWA School refuse camp) স্কুলের কথা আমরা এখানে স্মরণ করতে পারি]। তাই অহেতুক এমন ভোগান্তি এবং রক্তক্ষয় এড়ানোর জন্যে তৃতীয় একটি পথের সন্ধান করার সময় এখনই। আমার প্রস্তাবটা এখানে খুবই হাস্যকর মনে হবে তারপরও রাখছি কারণ এরপরও যদি তোমাদের মানবিক বোধ খানিকটা হলেও জাগ্রত হয়! এখন তো পৃথিবীকে পূর্ব পশ্চিম ব্লকে ভাগ করার কোনো সুযোগ নেই। তবুও পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোকে দু’টা জার্সি গ্রুপে ভাগ করে ফেলো। যার একটির নাম হবে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত জার্সি (Jersey led by the West) আর অন্যটির নাম হবে পশ্চিমা বিরোধী জার্সি (Jersey led by the Anti-West)! পৃথিবীর দেশগুলো কে কোন দলভুক্ত হবে প্রাথমিক ভাবে সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে দাও। আর সেক্ষেত্রে কোনো দেশকে নিয়ে যদি এই ইউক্রেন আর আফগানিস্তানের মতো বিতর্ক শুরু হয়ে যায় তবে এই দুই ব্লকের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো তাদের ভেতর থেকে ফুটবল খেলোয়ার বেছে নিয়ে একটি করে বেষ্ট একাদশ ফুটবল দল গঠন করবে। এই দল দু’টো হোম এন্ড এওয়ে ভিত্তিতে দু’টা ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হবে। রেজাল্ট যাদের পক্ষে আসবে তাদের সমর্থিত সরকার চার বছরের জন্যে ক্ষমতায় বসবে। তাতে অন্তত অহেতুক এমন রক্তক্ষয় দেখে আমাদের হৃদয় কাঁদবে না। অবুঝ শিশুকে বাঙ্কারের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে থাকতে হবে না! আর এ দিয়ে যে অর্থ উপার্জিত হবে তা পৃথিবীর দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে। তবে প্রশ্ন একটা থেকে যায়। এবং তা হলো রেফারি নির্বাচনের বিষয়টা কিভাবে নির্ধারিত হবে? সেক্ষেত্রে বলা যায় উভয় ব্লকই তাদের পছন্দের আটজনের নাম দিবে। এই ষোলজন থেকে লটারির মাধ্যমে যে আটজনের নাম উঠে আসবে তাদের থেকে চারজনের গ্রুপ করে ম্যাচ দু’টা পরিচালিত হবে। লটারি ড্র করার জন্যে অল্প বয়েসী অক্টোপাস বা পাখিকে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। অল্প বয়েসী বলছি কেননা মানুষের সংস্পর্শে বেশিদিন থাকলে ওরাও পক্ষপাত দুষ্টতায় দুষিত হয়ে যেতে পারে!
আরেকটা অনুরোধ তোমাদের এই ন্যাটো ফ্যাটো জোট শুরুতেই পৃথিবীর মানুষের মাঝে বিভেদ তৈরী করে ফেলে। এমন বিভেদীয় সূত্রের পূজক হয়ে তোমাদের মুখে সত্যিকারের মানবতার কথা প্রকৃতপক্ষে মানায় না। বিষয়টা ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো। যদি কোন সংগঠন রাখতেই হয় তাহলে সার্বজনীন ভাবে শুধুমাত্র জাতিসংঘকেই রাখো। তবে ভেটো ক্ষমতার বিলোপ করে দিয়ে। কারণ ওখানেও শুরুতেই তোমরা তোমাদের অতি আদুরে গনতন্ত্র নামক ঐ শিশুটির গলাটিপে তাকে হত্যা করে রেখেছো!
পরিশেষে প্রিয় বব মার্লির (Bob Marley) গানের সেই লাইনটি দিয়েই শেষ করতে চাই—‘তুমি কিছু মানুষকে কিছু সময়ের জন্যে বোকা বানাতে পারো কিন্তু সব মানুষকে সব সময়ের জন্যে বোকা বানাতে পারবে না (You can fool some people sometimes but you can’t fool all the people all-times)’! সুতরাং এখন সময় এসেছে বিশ্ব বিবেক এবং ভুক্তভোগীদের জেগে উঠার। যদিও জানি এখনো ব্যাটনটা তোমাদেরই হাতে। তবে আর কতোদিন!?
___ ফরিদ / মার্চ ২, ২০২২