২০২১ সালের ২০ শে সেপ্টেম্বর কানাডায় মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার আগে ৩ দিন এডভান্স ভোটিং হয় সেপ্টেম্ব র ৩,৪,৫ তারিখে।
এইবার দিয়ে আমি তিন বার কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে, ও ১ বার মিউনিপাল নির্বাচনে কাজ করার সুযোগ পেলাম। প্রথম বার ইনফরমেশন অফিসার, যাদের কাজ ভোটারদের ওয়েল্কাম জানিয়ে, আই ডি কার্ড দেখে কোথায় যেতে হবে দেখিয়ে দেয়া।

২য় বার দায়িত্ব ছিল রেজিষ্ট্রেশন অফিসার, ভোটাররা আইডি কার্ড পাননি, বা খুব রিসেন্টলি এড্রেস চেঞ্চ হয়েছে কিন্তু নির্বাচন কমিশনে নতুন করে রেজিষ্ট্রেশন করার সময় হয় নাই তাদের দুটো আইডি দেখে, নিজে নোটারী হয়ে সাইন করে, আগের ঠিকানায় মিলিয়ে ভোটার কার্ড দেয়া।

এবার ছিলাম DRO ( Deputy returning Officer) আমাদের ডিঊটি ছিল ৫ দিন। অগ্রীম ভোট নেবার ৪ দিন, আর ভোট গননা করে ব্যালট পেপার স হ যাবতীয় কাগজ পত্র জ মা দিয়ে আসা। জমা দিয়ে আসা কমিশনে।

আগামী নির্বাচনে CPS ( Central poll Supervisor) হিসেবে কাজ করব আশা করছি। যার উপরে ওই কেন্দ্রের সমস্ত দায়িত্ব থাকে। এদের লিড একজন আর ৩ জন সহকারী।

আর একটা রিজনের সব কাজ মনিটর করেন CS সবার কাজ দেখার জন্য থাকেন.

যেদিন থেকে নির্বাচনের কাজের জন্য সাইন করবে কেউ সেদিন থেকে ভোট গননা ও রেজাল্ট পর্যন্ত কোন পার্টির হয়ে কথা বলতে পারবেন না।

পার্টির রিপ্রেজেন্ট করে ওই রং এর শার্ট বা ড্রেস পরা যাবে না। সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট কালো জুতা সবার জন্য।

প্রার্থীর এজেন্টদের ও সেই একই ড্রেস, সাথের আইডি দেখাতে হবে, তারা প্রার্থীর হয়ে কোন কথা বলতে পারবে না ভোটিং এড়িয়ার মধ্যে। পাশে বেঞ্চ দেয়া আছে বসবেন, এক ঘন্টা পর পর যে ভোট পরল তা একটা ফাইলে বুথের অর্ডার অনুযায়ী রাখা থাকে ( ABCD) তার ছবি তুলে কপি নিয়ে যাবে। প্রার্থীর এজেন্টরা বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরেন।

২ বার আইডি দেখার পর ভোটার তার Last name অনুযায়ী বুথের লাইনে দাড়ান। শেষে বুথে আসার পরে তার ভোটার কার্ড এর সাথে ড্রাইভার্স লাইসেন্স দেখান, DRO সব কিছু চেক করে যখন ব্যালট পেপার দেন তখন নাম, ঠিকানা, ব্যালট নাম্বার আবার লিখে রেকর্ড রাখতে হবে । ব্যালট পেপার নিয়ে বক্স দিয়ে আটকানো বুথে গিয়ে ভোট দিবেন ( কানাডায় ব্যালটে পেন্সিল দিয়ে ভোট হয়)। ব্যালট এর সাথে যে নাম্বার টা থাকে ওটা DRO রেখে দেন, ভোটার তার ভোট বাক্সে ফেলে চলে যান।

এডভান্স ভোটে প্রতিদিন ব্যালট বাক্স সিল্ড করে সমস্ত ডকুমেন্ট ও ব্যালট পেপার ( ইউজড ও আন ইউজড) সিল্ড করে দিতে হবে CPS sign করতে হবে । পরের দিন সেম প্রসেসএ সেসব খুলে ভোট নিতে হবে।

আমাদের ডিউটি থাকত সকাল ৭ঃ৩০ থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত, ৪ দিন।

সেদিন ফেডারেল ইলেকশন হলো ভোট শেষ হয়েছে রাত ৯ টায়। যারা এডভান্স পুলে ডিউটি করেছেন তারা আসল ভোটের দিন ডিঊটি পাবে না। কারন ওই দিন তাদের নির্বাচন কমিশনে ৭ টায় যেতে হবে।

এবার ভোট গগনা ঃ যার যার ব্যালট বাক্সের নাম্বার আর অর্ডার অনুযায়ী টেবিল সাজানো। সব ইন্সট্রাকশন দেবার পরে বাক্স খোলা হবে। ইলেকশন কমিশনের লোক থাকবেন যে কোন সাহায্য সহ যোগিতার জন্য। DRO বাক্স নিয়ে খুলবেন পাশে থাকবেন একজন আর সামনে বসেন একজন। প্রতি পার্থীর নাম আর ফাইল আছে, প্রথমে সব ভোট আলাদা করে একটা একটা করে গুনে রেকর্ড করে রাখতে হবে প্রার্থীর ফাইলের উপর। ২য় জন আবার কাউন্ট করবেন, ৩য় জন সাক্ষী হিসেবে কাউন্ট করবেন।
সবার ভোট কাউন্ট করে ,ব্যালটের রেকর্ড লিখেছি চার দিন একেবারে মিলে গেল। সমস্ত কাগজ পত্র বুঝিয়ে দিয়ে রাত ১২ টায় বাসায় আসলাম। ৬ মাস পর্যন্ত ভোটের সব রেকর্ড সবার ই রাখতে হবে, যদি কেউ এটা চ্যালেঞ্জ করে কোর্টে কেস করে তারজন্য।

ভোটের সময় পুলিশ এলাকায় ঢুকতে পারবে না এমনকি প্রার্থীও না। যদি ভোট দিতে হয় সিভিল ড্রেসে লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিয়ে চলে যাবেন। যদি কোন বিশৃংখলা বা অনয়িম দেখা যায় সেন্ট্রাল পুল সুপারভাইজারকে জানাতে হবে সাথে সাথে। আর যদি পুলিশকে আসতেই হয় তারা থাকবে পার্কিং লটের এক কোনায়।

এখানে স্কুল ডে তে ভোট হয় বিশাল বিশাল জিম রুমে, কমিউনিটি সেন্টার গুলোতে। স্কুল খোলা থাকে, ছাত্র/ শিক্ষক রা ওদিকে গেলেও ভোট কেন্দ্রের দিকে যায় না। যার যার কেন্দ্র আলাদা থাকে।

আমি নিজে অভিজ্ঞতা অর্জন আর জানার জন্যই একটানা ৪৮ ঘন্টার ডিউটি করেছি। আর অবশ্যই ভালো পে করে। ইলেকশনে একবার ভালো রেকর্ড করলে পরবর্তীতে আপনাকে ডাকবে।

১ মন্তব্য

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন