সাইফুলের সাহেবের “অনলাইন দুনিয়া, Sexting এবং আমাদের ছেলে মেয়ে ও করনীয়ঃ” লেখা পড়ে একটি ঘটনা মনে পরে গেলো।
বেশ কবছর আগে আমি একটি ক্লায়েন্ট পেয়েছিলাম। একসময়ের ভালো ছেলে, ভালো ছাত্র এবং বাবা মার্ বাধ্য সন্তান, হটাৎ করেই যেনো অন্য জগতে চলে গেলো। পড়াশুনায় মনোযোগ কমে গেলো, রেজাল্ট খারাপ হতে থাকলো, বাসায় কেমন যেন অন্য মনস্ক থাকতে শুরু করলো। বাবা মা তাকে ফ্যামিলি ডাক্তারের কাছে নিলো কিন্তু কোনো কুলু পেলো না, ফ্যামিলি ডাক্তার অবশেষে psychiatrist এর কাছে রেফার করলেন, কিন্তু তাতেও কিছু হলো না। psychiatrist তার অধীনে থাকা অবস্থায় আমাদেরকে রেফার করলেন, ছেলেটি দক্ষিণএসিও হওয়ায় কেসটি আমার কাছে এলো।


দীর্ঘ দুমাস কথোকপথনের পরেও তেমন কোনো তথ্য পাওয়া গেলো না, তবে পেশাগত সম্পর্ককে আস্তে আস্তে যখন একটু ফ্রেন্ডলি পর্যায় নিয়ে এলাম তখন সে একটু একটু মুখ খোলা শুরু করলো। আমরা আস্তে আস্তে একটি গেমের মতো আমাদের প্রতি দিনের প্রতি ঘন্টার বিবরণ দিতাম, এভাবে চললো বেশ কিসু দিন, হটাৎ খেয়াল করলাম ওর স্কুল dyas এর দিনের একটি ঘন্টার কোনো বিবরণ থাকছে না। তাই একদিন বললাম ওই এক ঘন্টা কি করো। ও বললো ওটা break time. আমি বললাম ফাইন, তুমি কি বাড়ি আসো তখন, ও বললো না। বললাম তাহলে বুঝি বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাও নাকি আমাদের মত চুরি করে মুভি দেখতে। ও বললো না, ঠিক মুভি দেখতে যাই না তবে এক বধূর বাসায় গিয়ে ডিভিডি দেখি। আমি বললাম বাহ্ এই যুগে কি মজা, চুরি করে চিনেমা হলে যেতে হয় না বাড়ি বসেই দেখা যায়। ও বললো, হা সব মুভি আবার হলেও দেখা যায় না।

আমার মনে খটকা লাগলো, তখন আরো একটু কৌশলগত ইনভেস্টিগেটিভ হলাম, তবে সেদিন আর কথা না বাড়িয়ে সেশন শেষ করলাম। আরো দুই একদিন যাওয়ার পর ওই আমাকে আমার পছন্দের মুভির কথা বললো, ভালো করে খেয়াল করে শুনে দেখলাম ওর বলা প্রতিটি মুভিই একটু খোলা মেলা টাইপের। তারপর আলাপটি ২/৪ দিন কন্টিনিউ করেই একটু পর্নের দিকে নিয়ে গেলাম এবং দেখলাম ওর খুব আগ্রহ। যাহোক এভাবে কিছুদিন পরে আবিষ্কার করে ফেললাম সে ওই এক ঘন্টা break এর সময় কোনো এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে DVDতে পর্ন ছবি দেখে, ২/৩ জন বন্ধু মিলে, এভাবে সে complete addicted হয়ে যায়, তাই যখন সে বাদ বাকি সময় কাটায় তখন সে withdrawl সিম্পটম এ ভোগে। একসময় সে কান্না কাটি করে বললো সে কি করবে সে জানে না, কারণ সারাক্ষন সে ভাবে কখন সে ওটা দেখবে আর সে জন্য ওর weekend এ খুব খারাপ সময় কাটে, এবং বাবা মার্ সাথে খারাপ বেবহার করে।


যাহোক তার psychiatrist এর সাথে আলাপ করে তাকে রেফার করলাম addiction কাউন্সিলর এর কাছে। প্রায় ২/৩ মাস ট্রিটমেন্ট এর পরে তার অবস্থা ভালো হলো, এবং সে মোটা মুক্তি পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে। তার বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর।


অতএব আপনার ছেলেমেয়ে শুধু ভালো রেজাল্ট করলে আর আপনার সাথে ভালো ব্যাবহার করলেই চলবে না, আপনাকে তাদের সাথে বন্ধুর মতো সম্পর্ক রাখতে হবে যাতে করে তার কর্মকান্ডের অধিকাংশ বিষয় আপনাকে শেয়ার করে। আপনাকে তাদেরকে যথাযত সময় দিতে হবে।
ধন্যবাদ সাইফুল, আপনার সময়উপযোগী একটি লেখার জন্য।
মুকুল

ছবি :- সৌজন্যে  Pitara Kids Network

[asa]B00025Z6SO[/asa]

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন