কর্মদিবসের সকাল মহাব্যস্ততায় কাটলেও কাজে যাওয়ার আগে টরোন্টোর স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেল অন্তত একবার হলেও না দেখে বেরুতে পারিনা। আবহাওয়া, ট্রাফিক এবং ব্রেকিং নিউজ একসাথে একই স্ক্রিনে না দেখলে কেন জানি না মনে হয় দিনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি। এমনি এক সকালে কাজের জন্য বাসা থেকে বের হবার ঠিক আগ মুহূর্তে টিভির পর্দায় চোঁখ আটকে গেলো বিশেষ একটি সংবাদ দেখে। খবরটি হচ্ছে ওয়ালমার্ট থেকে ড্রেস শার্ট, টাই এবং মোজা চুরির অভিযোগে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। পুলিশ অফিসার এসে যুবকটিকে জেরা করার পর জানতে পারেন যে আত্মীয় স্বজন এবং সহায় সম্বলহীন এই মানুষটি অনেক চেষ্টার পর একটি চাকুরীর ইন্টারভিউ পেয়েছে। কিন্তু ইন্টারভিউয়ে যাওয়ার মতো ড্রেস সে কোনোভাবেই জোগাড় করতে পারেনি বিধায় চুরির আশ্রয় নিয়েছে।মানবিক দিক বিবেচনা করে কর্তব্যরত এই পুলিশ অফিসার তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না এনে সতর্ক করেই তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ছেড়ে দেবার আগে ওই পুলিশ অফিসার ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতির জন্য নিজের টাকায়  যুবকটিকে ড্রেস শার্ট, মোজা এবং টাই কিনে দিয়েছেন। যে দেশে ১০০ ডলার আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হলে মিনিস্টার, সিনেটরের জেল-জরিমানা হয়, সেই দেশে শার্ট চুরির অভিযোগ আপাত প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও ছেড়ে দেয়ার ঘটনা একেবারেই বিরল। শাস্তি  না দিয়ে কেন তাকে ছেড়ে দেয়া হলো এই প্রশ্নের উত্তরে অফিসার Niran Jeyanesan বলেন, “This young person has been facing his own difficulty in life and he was looking to straighten all that by providing for his family and trying to get a job ”। তার ভাষায়, “While some might criticize me  for letting a shoplifting suspect walk free, it became clear to me that the man was trying for a second chance in life.” (CTV News, CP24: টরন্টো, ৭ আগস্ট )। মানুষের ভিতর মানুষ খুঁজে বেড়ানো এই অসাধারণ পুলিশ অফিসারকে আমার সশ্রদ্ধ অভিনন্দন।

আমি জানি পুলিশ অফিসারের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা, এতে করে মহা সামাজিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা ইত্যাদি নিয়ে আইনবিশারদ ও সমাজতাত্ত্বিকরা ঘন্টার পর ঘন্টা বিতর্কের ঝড় তুলতে পারেন। এই দেশের প্রেক্ষাপটে এই বিতর্কে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আমার আগ্রহ সেই মানুষটি এবং তার মানবিক বোধকে ঘিরে যিনি অন্ধকারের মধ্যেও আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে পান, যিনি ভুল বুঝার সমস্ত ঝুঁকি মাথায় নিয়ে দিকহারা একজন মানুষকে জীবনের মোড় ঘোরার  জন্য ‘second chance’ দিতে কুন্ঠিত নন।

অসীম ক্ষমতা ও বিপুল সম্ভাবনার আধার হলেও মানুষ খুব স্বল্প সময় নিয়েই পৃথিবীতে আসে। মহাবিশ্বের বিশাল সৃষ্টির মধ্যে এই মানুষের অবস্থান একেবারেই অকিঞ্চিৎকর। অনেকটা মহাসাগরের ফেনিল জলরাশিতে সৃষ্ট বুদ্বুদের মতোই। অস্তিত্ব বুঝার আগেই আমাদের মিলিয়ে যাওয়ার ডাক আসে। সেজন্য যে যার জায়গা থেকে নিজেদের এবং আশে পাশের সবার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। আলোচ্য পুলিশ অফিসারটি হয়তো তাই করার চেষ্টা করেছেন।

জীবনে কম বেশি সবাই আমরা ‘Second Chance’ এর প্রত্যাশায় থাকি, যদিও কয়জন এই সুযোগ পাবো সেই নিশ্চয়তা কারোরই নেই ।

সৈয়দ মসিউল হাসান
টরন্টো থেকে

ছবি:- সৌজন্যে Toronto Police

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন