আগামী ২২ শে অক্টোবর টরন্টো সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ।এই প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মেয়র প্রার্থী ছাড়াও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী কাউন্সিলর ও স্কুল ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে নির্বাচন প্রতিদন্দিতা করছেন । এটি অবশ্যই আমাদের কমিউনিটির জন্য একটি সুখবর Provincial ইলেকশনে ডলি বেগমের বিজয়ের মধ্যে দিয়ে যে নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে এটা হয়তো তারই প্রতিধ্বনি ।এই শুভযাত্রা যেন সফল হয় এই শুভকামনা রইল সকল প্রার্থীর জন্য।

জনাব সানি মীর Scarborough South West ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী। ডানফোর্থ তার নির্বাচনী প্রচারণা কার্যালয়ে বসে কথা হচ্ছিল জনাব সানি মীর এর সাথে।

বাবা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার  নিবাসী।  মাত্র আড়াই বছর বয়সে তিন ভাইয়ের সঙ্গে প্রবাসী বাবার হাত ধরে কানাডায় এসেছিলেন জনাব সানি মীর ।প্রথমে এক বছর মন্ট্রিয়লে থাকার পরে ভাষাগত কারণে টরন্টোতে চলে আসেন তার বাবা। তখন থেকেই টরন্টোতে থাকছেন । বার্চমাউন্ট কলেজিয়েট স্কুল থেকে স্কুল জীবন শেষ করেন তিনি , তারপর York University থেকে Computer Science এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ।তবে ব্যবসায়ের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে ছাত্রজীবনেই ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বেশ কিছুটা সময় ব্যবসা আর লেখাপড়া একই সাথে চলছিল। বর্তমানে একজন সফল ব্যবসায়ী সানি এম আই এ গ্রুপের CEO ।

-জানতে চাইলাম এখানে বাংলাদেশী রাজনীতি চর্চার পরিবর্তে  স্থানীয় সমাজসেবার প্রতি আগ্রহী  কেন হলেন?

জবাবে বললেন উনার বাবা একজন ধার্মিক পরেজগার ব্যক্তি ছিলেন সবসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করতেন। শীত হোক বা গ্রীষ্ম হোক এই নিয়মের কোন পরিবর্তন হয়নি।  একবার শীতের সময় বরফে পা পিছলে পড়ে গিয়ে পায়ে মারাত্মক ব্যথা পান তিনি। যার ফলশ্রুতিতে উনাকে অনেকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হয় । বাবার  এই দুর্ঘটনা ভীষণভাবে দাগ কাটে ছেলের মনে। নির্দিষ্ট সময় বরফ সাফ না করার কারণেই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে ।মনে মনে এই অনিয়মের প্রতিকারের পথ খুঁজতে থাকেন তিনি।  মন স্থির করেন এলাকাবাসীর জন্য কিছু একটা করার দরকর। এখান থেকে মূলত মনের মধ্যে সমাজসেবার  বীজ বপন হয়েছিল । এই চিন্তা ভাবনা আরো দৃঢ় হয়েছিল ওনার বাবার মৃত্যুর পর । সমাজসেবার প্রথম পদক্ষেপ ছিল ২০০৩ সালে উনার প্রতিষ্ঠা Community Support Access of South Asia । এটি ছিল একটি Non-profit organization, ২০০৩ থেকেই শুরু হয়েছিল এই মানুষটির সমাজ সেবার কার্যক্রম তারই ফলশ্রুতিতে আজ উনি একজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী।

-জিজ্ঞাসা করলাম আপনার এলাকাবাসীর প্রতি আপনার নির্বাচনী অঙ্গীকার কি?

বললেন  উন্নতি সাধনের জন্য এলাকার পরিছন্নতা ও সৌন্দর্য বর্ধন একান্তই প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে পার্শ্ববর্তী গ্রীক টাউনের কথা বললেন। একদিন উনিও দেখতে চান ওনার নির্বাচনী এলাকা  সুন্দর ভাবে গড়ে উঠেছে সবার জন্য একটি আদর্শ বাসযোগ্য স্থান হিসাবে। একটি ফ্রি ডে কেয়ার এবং সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য একটি মিলনস্থল তৈরি করতে চান যেখানে একে অপরের সাথে কিছুটা সময় হলেও সুন্দরভাবে পার করতে পারেন। উনার মতে বর্তমানে টিটিসির স্কেজিউল পর্যাপ্ত নয়, বিশেষত শীতের সময় এটি অনেকের জন্য কষ্টদায়ক বটে। তাই চেষ্টা করবেন যাতে টিটিসির ফ্রিকুয়েন্সি আরো বাড়ানো যায়।

অন্টারিওর Provincial পার্লামেন্টে  কিছুদিন আগে সিটির কাউন্সিলর সংখ্যা ৪৭ থেকে কমিয়ে পঁচিশে আনায় ওনার  মতামত জানতে চাইলে বললেন, এর কারণে প্রতিটি কাউন্সিল এর উপর কাজের চাপ অনেকটা বাড়বে, তাদের সবাইকে এক রকম চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে প্রতিদিন । কারণ আসন সংখ্যা কমার কারণে নির্বাচনী এলাকায়  পরিধি আরো বেড়ে গেছে। জনাব মীর পাল্টা প্রশ্ন রাখলেন যে ২৫ মিলিয়ন ডলার বাঁচার কথা বলছেন আমাদের প্রিমিয়ার , কিন্তু সেই টাকাটি কোথায় খরচ করা হবে?  সেটা কেন বলা হচ্ছে না ।সর্বোপরি বললেন এই সিদ্ধান্তে তিনি খুশী নন।

-জানতে চাইলাম ভবিষ্যতে সক্রিয় রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা আছে কিনা?

জবাবে বললেন যদি কখনো মনে করেন যে কমিউনিটির স্বার্থে তাকে রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়া প্রয়োজন, তাহলে অবশ্যই সরাসরি রাজনীতির  অঙ্গনে পা রাখবেন তিনি।

-জিজ্ঞাসা করলাম আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি অর্থাৎ আগামী পাঁচ বছরে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

বললেন যদি কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হই, তার মেয়াদ ৪ বছর। এই চার বছরে যদি সকল কাজ গুলি সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারি তাহলে হয়তো সরাসরি রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখব। আর যদি মনে করি কমিউনিটিতে তখনও আমার কিছু অসম্পূর্ণ কাজ রয়ে গেছে তাহলে আবারও কাউন্সিলর পদে দাড়াব।

কানাডাতে বাংলাদেশী রাজনীতি বনাম স্থানীয় রাজনীতি প্রসঙ্গে বললেন, আমরা অবশ্যই স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে থাকতে চাই কারণ এটাই আমাদের আবাসস্থল ।এখানে বেড়ে উঠছে আমাদের সন্তানেরা ।এখানেই আছে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ। তাদের ভবিষ্যৎ কে সুন্দর করার দায়িত্ব আমাদের সবার । আর এজন্যই স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে থাকা একন্ত প্রয়োজন।

-জানতে চাইলাম আগামী প্রজন্মের থেকে Leadership তৈরি করার জন্য আমাদের করণীয় কি?

বললেন তাদেরকে বিভিন্ন ভলেন্টারি কাজের মাধ্যমে কমিটির কাজে বেশি করে আনা দরকার। যাতে তারা উপলব্ধি করে কমিউনিটিতে  তাদের প্রয়োজন আছে। এর মাধ্যমে তাদেরকে আমরা সেবামূলক কাজের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারি। আর এর দায়িত্ব আমাদের বড়দের যারা বর্তমানে সমাজসেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত। এটা করার জন্য টিমওয়ার্কের প্রতি গুরুত্ব দিলেন তিনি । বললেন আমাদের সন্তানরাই আমাদের ভবিষ্যত।

-সবশেষে জানতে চাইলাম আপনার ভোটারদের প্রতি আপনার কিছু বলার আছে কি?

বললেন আমি সবার কাছে ভোট  চাই, তবে সেই সাথে ভোটারদেরকে বলবো আপনারা আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে সত্যিকারের একজন যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন । যে আপনার এবং আপনার কমিউনিটিকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। যে ব্যক্তি আপনার কমিউনিটির জন্য এবং আপনার বাচ্চাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি সুন্দর এবং একটি বাসযোগ্য স্থান গড়ে তোলার জন্য সক্রিয় থাকবে এবং আপনাদের বিপদের সময়  আপনাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। আপনারা সেই যোগ্য ব্যক্তি কে ভোট দিন এটাই আমি কামনা করি

নির্বাচনে হারজিত থাকবে, কেউ জিতবে কেউ হারবে এটাই নিয়ম। তবে আমরা চাই টরন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটিতে একটি পরিবর্তনের হাওয়া লাগুক। যেখানে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে গর্ব করে বলতে পারবো  “We are proud Bangladeshi Canadian”

জনাব সানি মীরকে নির্বাচনের সাফল্য কামনা করে বিদায় নিলাম।

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন