সম্প্রতি অনলাইন ভিত্তিক দেশের এক পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠলাম। এক ভদ্র লোক হাঁস/মুরগিকে খাবার দেয়ার মতো করে মাটিতে টাকা পয়সা ছিটাচ্ছেন আর এক দঙ্গল নিরীহ হতদরিদ্র মানুষ মাটি থেকে দলবেঁধে লুটোপুটি খেয়ে সেই টাকা/পয়সা মাটি থেকে কুড়াচ্ছেন, হায়রে মানবতা!!!

তাই আবারো লিখতে বসলাম।

করোনা ভাইরাস নিয়ে জ্ঞান বিজ্ঞান অর্জনে, সম্প্রতি আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে অতিপ্লাবিত (over flooded) পোষ্টগুলি বা মেসেঞ্জারে পাঠানো ভিডিও ক্লিপগুলি থেকে মনে হতেই পারে যে মোটামুটিভাবে আমরা সম্ভবত পৃথিবীর সেরা দেশদের তালিকায় বিরাজ করছি। কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে জ্ঞান অর্জন করা যত সহজ জ্ঞান চর্চা করা অতো সহজ না। তাই, এই দুঃসাহসিক কাজটি গতকাল আমি ও আমার টিন এজেড মেয়ে অধরা শুরু করলাম। তাহলে, পুরোটা শোনা যাক।

সকাল প্রায় এগারোটার মতো বাজে। মিতা মানে আমার সহ ধর্মিনী যথারীতি কাজে। আমি সেই সৌভাগ্যদের মধ্যে একজন যারা এই করোনা মৌসুমে বাসায় বসে থেকে অফিসের কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। । ছেলে অর্ণব প্রানপনে পরীক্ষার এসাইনমেন্ট লিখে যাচ্ছে, রাত বারোটার মধ্যে জমা দিতে হবে। আমি আর অধরা সিদ্ধান্ত নিলাম, আর বসে থেকে নয়, কমুনিটির জন্য কিছু একটা করা দরকার। যা ভাবা তাই কাজ। কাছাকাছি দোকানে ছুটলাম প্ল্যাকার্ড বানানোর সরঞ্জামাদি কিনতে।

প্রায় ঘন্টাখানিকের মধ্যে আমাদের দুইটি প্ল্যাকার্ড বানানো শেষ। সাদা বোর্ডের উপরে স্টিকার দিয়ে লেখা হলো “.PLEASE MAINTAIN SOCIAL DISTANCING”. বাবা ও মেয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে  গ্লোভস হাতে ও মুখে মাস্ক পোরে বেরিয়ে পড়লাম। বাড়ির কিছুটা পাশেই সরকারি হাউজিং। আমরা প্ল্যাকার্ড হাতে হেটে যাচ্ছি। কমিউনিটির লোকজন হাসি মুখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আহা!!, কি এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!! সমাজের জন্য কিছু একটা করার আনন্দে আমাদের বাবা -মেয়ের চোখ একেবারে চিক চিক করছে। দুই একজন অবশ্য অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমরা বেশ মজা পাচ্ছি। এবার, কমিউনিটি থেকে বের হয়ে মাইন্ রোড মর্নিং সাইড নামক রাস্তার ফুটপাথ ধরে প্ল্যাকার্ড হাতে আমরা হাটছি। অনেকেই গাড়ি থামিয়ে আমাদের অভিবাদন জানালো। অধরার উৎসাহের শেষ নেই। খানিক পরে, গাড়ি নিয়ে কাছা কাছি একটি শপিং মলে ডলার ষ্টোরের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে আমরা বাবা মেয়ে দুজনে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অধরা ক্লান্তিহীনভাবে দু হাত উঁচু করে প্ল্যাকার্ড হাতে অন্তত আধা ঘন্টা খানিক ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলো। মেয়ের জন্যে গর্বে বুক ফুলে গেলো।

একটু পরে, একটি পার্কের কাছে গেলাম। এখানে, সিটি থেকে সব পার্ক বন্ধ করে দিয়েছে, তবুও, কিছু মানুষকে পার্কে বসে থাকতে দেখলাম। আমরা বাবা মেয়ে কিছুক্ষন প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম, এবং সেই সাথে মানব সমাজে সচেতনতা নামক গাছের বীজ বপন করে এলাম। একদিন, সেই গাছ অনেক অনেক বড় হবে। গাছের ডালপালা , লতা/পাতা ছড়িয়ে পর্বে তাবৎ দুনিয়ায়।

সোশ্যাল ডিস্ট্যানসিং বা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আমাদের চলতেই হবে, এটাই শেষ কথা।
প্রবাসে/দেশে সবার জন্য বলছি, দয়া করে বাহিরে বেরুলে প্লিজ সোশ্যাল ডিস্ট্যানসিং সঠিকভাবে মেনে চলুন, নিজে বাঁচুন, অপরকে বাঁচতে দিন।

টরেন্ট সিটির ওয়েবসাইট থেকে নিম্নের তথ্যগুলো বাংলায় অনুবাদ করলাম, সবারই জানা তারপরেও চলুন একবার দেখে নেই:

সামাজিক দূরত্ব / শারীরিক দূরত্ব কি?
শারীরিক দূরত্ব বলতে COVID-19 এর বিস্তার রোধ করতে এবং আমাদের কমিউনিটিকে রক্ষার্থে প্রত্যেকের সর্বোচ্চ্য সময় বাসায় থেকে অন্যান্যদের কাছথেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকাকে বুঝায়। শারীরিক দূরত্বকে অনেকসময় সামাজিক দূরত্বও বুঝায়, আপনার সন্নিকটে আসা মানুষের সংখ্যাকে কমিয়ে আনাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

What is social / physical distancing?
To prevent the spread of COVID-19 and protect our community, everyone needs to stay home as much as possible and keep their distance from others. Physical distancing, also called social distancing, means limiting the number of people you come into close contact with.
কোনো শারীরিক সমাবেশ নহে
• বন্ধুদের সাথে টেলিফোনে, ইমেইলে, ডিডিও কলে বা সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ রাখুন
• সকল ধরণের দল সমাবেশ থেকে ও বাচ্চাদেরকে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলা থেকে বিরত থাকুন
• লং টার্ম কেয়ার হোমস , রিটায়ারমেন্ট হোমস বা কোনোরকম কেয়ার হোমসে প্রিয়জনকে ভিজিট করা থেকে বিরত থাকুন
No physical gatherings
• Connect with friends by phone, email, video or social media
• Cancel all group gatherings, parties or playdates with other children
• Avoid playgrounds or long lineups
• Do not visit loved ones in long-term care homes, retirement homes or other care settings

বহির্মুখী কাজকে সংক্ষিপ্ত করুন
• শুধুমাত্র জরুরী কাজ যেমন বাজারঘাট, চাকুরী এবং ব্যায়াম ছাড়া বাহিরে যাবেননা
• অন্যদের কাছ থেকে ৬ ফুট বা ২ মিটার নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলুন
• হাত নেড়ে বা মাথা নেড়ে অন্যদেরকে অভিনন্দন করুন (হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলির পরিবর্তে
• বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ও বাড়িতে প্রবেশের সময় হাত স্যানিটাইজ বা জীবাণুমুক্ত করুন
• এলিভেটরের বাটন টিপতে কনুই ব্যবহার করুন, এলিভেটরের মধ্যে অবশ্যই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন
• ক্যাশ টাকা না ব্যবহার করে কার্ড ট্যাপ করে পে করুন
• যখন গণ পরিবহন বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যাবহার করবেন অবশ্যই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন
Limit your trips outdoors
• Limit trips only for essentials such as groceries, work and exercise
• Keep a distance of 6 feet (2 meters) from others
• Greet others with a wave, a bow or a nod (in place of handshakes or hugs)
• Sanitize or wash your hands when entering and exiting buildings
• Limit the number of people in an elevator to ensure a distance of 6 feet from others, and use an elbow to press buttons if you can
• Use tap to pay rather than handling money
• When taking public transit avoid prolonged close contact with others:

Source: https://www.toronto.ca/home/covid-19/covid-19-health-advice/covid-19-practicing-physical-distancing/

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা কানাডিয়ান হাই-কমিশন বাংলাদেশে অবস্থানরত কানাডিয়ানদেরকে তাদের কানাডা আসার ব্যবস্থার ব্যাপারে তথ্য চেয়ে ইমেইল করছেন।!!!
পরবর্তী নিবন্ধসুন্দর দিন আসছে !!! সবাইকে মরিতে হবে, আজ অথবা কাল !
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন