ফ্লোরিডা থেকে:-

সভ্যতা মানুষকে অনেক কিছু দেয় , কিন্তু অনেক কিছু কেড়ে নেয়ার বদলে। এক তরফা ভাবে কোনদিন কিছু দেয়না। আজকে সভ্য মানুষ বিদ্যুৎ চায় , বিদ্যুৎ ছাড়া আলো নেই , ফ্যান বা এ সি নেই , কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নেই ,ফেবুক নেই। কল কারখানা , অফিস, আদালত, হাসপাতাল বন্ধ । দমকল না চললে কৃষিতে খরা। অথচ বিদ্যুৎ তৈরী হয় এটমিক এনার্জি থেকে যা চেরনোবিলের মত সব কিছু ধ্বংস করে ফেলার রিস্ক ধারন করে রাখে। আজ আমরা সুন্দর বন নিয়ে আশংকাগ্রস্ত খুব জেনুইন ভাবে। কিন্তু আসলে আমরা কি চাই ? বিদ্যুৎ এবং সুন্দরবন দুটোই পেলে হয় সোনায় সোহাগা । কিন্তু যদি দুটো একে অন্যের বিপরীতধর্মী হয় যাকে ইংরেজীতে বলে mutually exclusive তাহলে ?
১০০ % রিস্ক ফ্রি বিদ্যুৎ না “ফিরিয়ে দাও অরন্য ” ।
১০০ % রিস্ক ফ্রি বিদ্যুৎ কি পাওয়া সম্ভব আজকের বাস্তবতায় ?
দেশ তো এক রত্তি , বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমার বাড়ীর পাশ থেকে সড়িয়ে নিতে হবে হয় আপনার বা তার বাড়ীর পাশে , কিন্তু তাতে তো আমার রিস্ক আপনার বা তার কাঁধে সড়ানো হল, সমস্যার তো সমাধান হলনা ।

সমাধান অবশ্য একটা আছে , সমস্বরে বলতে হবে বিদ্যুৎ চাইনা , কুপি জ্বেলে দাও , দিকে দিকে হোক অরন্যায়ন, আমরা তারার এবং চাঁদের আলোয় বাঁচব শায়েস্তা খাঁ ‘র আমলের মত। আমাদের ফ্যাকটরী চাইনা , তাঁতে ফিরে যাবো, আমরা কম্পিউটার ফেইসবুক কিছু চাইনা, ব্যানার পোস্টার হাতে প্রতিবাদ করবো। এই তালিকাটি প্রত্যেকে নিজের মত করে তৈরী করে নেয়া যায় কি কি না হলেও আমরা চলবে ।

আচ্ছা আপনি বা আমি না হয় কুপির আলোতে বাঁচতে পারলাম কিন্ত ১৭০ মিলিয়ন? খাবে কি ? পড়বে কি ?

আমাদের দেশে শিক্ষিত প্রচুর , শিক্ষিত গালাগাল দাতা তারও বেশী। টেকনোক্রাটরা রিস্ক – বেনেফিটের আলোচনায় না যেয়ে রাজনৈতিক ভাবে যেটা লাভজনক শুধু সেই কথাটুকুই বলে । ফলে একদল গলা ফাটিয়ে শুধু রিস্কের সুনামীতে খাবি খায় আর অন্য দল শুধু বেনেফিটের ক্ষীর পায়েসের সুগন্ধ ছড়ায়।

অথচ প্রয়োজন সুস্থ গঠনমূলক আলোচনা এবং বিকল্প ভাবনা। দেশে ১৭০ মিলিয়ন মানুষ আজ, ক’ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই হবে ২০০ মিলিয়ন, তারপরে ২২০, তারপরে ….। দেশের মানুষতো প্রজনন বন্ধ করে নপংসুক হয়ে যাবেনা।
দেশ চলবে কি করে ? নাকি আমরা শুধু আজকের ঝামেলা বিএনপি আওয়ামী লীগ নিয়েই পেরেশান থাকব?

বিদ্যুৎ চাই । সুন্দরবন ধ্বংস বাঁচিয়ে বিদ্যুৎ পাওয়ার বিকল্প আছে বাংলাদেশে ? নাকি নেই ? একে অন্যের দিকে তর্জনী উচিয়ে গালাগালি বা বুদ্ধিদীপ্ত কথা না বলে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা কি এর সমাধান দেবেন না অতি উৎসাহীদের মাঠ গরম করে ঘোলা জলে মাছ মারতে দিয়ে নীরব থাকবেন?

রাজনীতিবিদরা সব দেশেই রাজনীতি করেন কিন্তু দেশ ও সভ্যতা গড়েন সাধারণ মানুষ এবং মেধাবী মানুষেরা , রাজনীতিবিদরা দেশপ্রেমিক হলে কাজটা একটু সহজ হয় ।কিন্তু আমি দস্যু তান্ত্রিক বাংলাদেশ, সামাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন , লুটেরা তান্ত্রিক রাশিয়া, অতি গনতান্ত্রিক ইংল্যান্ড , কানাডা এবং অলমোস্ট আইডিয়াল রাস্ট্র আমেরিকায় বাস করে একটি বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি যে ‘দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ’ সোনার পাথর বাটির মত প্রায় একটি অবাস্তব আইডিয়া বা ইওটোপিয়ান প্রজাতি ।

তবে এই দেশ গুলো কিভাবে আমাদের চেয়ে সুচারু ভাবে চলে তা নিয়ে অন্য সময়ে আলোচনা করা যাবে।

আমার ক্লিনিকে যখন কেউ আমার কর্মচারীদের সম্পর্কে অভিযোগ করে আমি হেসে তাদের বলি : “তোমার অভিযোগের সাথে আমি ১০০ % এক মত , ওরা মোটেও ভালো না , ওদের জ্বালায় তেতো বিরক্ত হয়ে আমি ফেরেশতা হায়ার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি , কোন ফেরেশতা দেখলে দয়া করে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও।”

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন