বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে ফেসবুক ব্যবহার করেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। ফেসবুকের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে সারা বিশ্বে ডাক /টেলিগ্রাফ ল্যান্ড টেলিফোন ব্যবহারও অনেক কমে গেছে।  ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে Mark Zuckerberg তার বন্ধুদের উদ্যোগে ফেসবুক যাত্রা শুরুর পর থেকে বর্তমানে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন . বিলিয়ন। যাত্রা শুরুর পর থেকে ফেসবুকের উত্তরোত্তর উন্নতি অগ্রগতির কারণে সারা বিশ্বে প্রতিদিনই ব্যাবহারকারির সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

ফেসবুক থেকে আমরা কি পাচ্ছি বা কি শিক্ষা বা কুশিক্ষা গ্রহণ করছি তা নিয়েও লেখালেখির শেষ নাই। আমার মত স্বল্পজ্ঞান সম্পন্ন ব্যাক্তি ছাড়াও বিশ্বের অনেক নামিদামি ব্যাক্তিগন ফেসবুক নিয়ে লিখে থাকেন। আমি শুধু আমার ফেসবুক বন্ধুদের বা পরিচিত জনদের ফেসবুক ব্যবহারের উপরই আমার কথা বার্তা সীমিত রাখবো।

আমি ফেসবুক একাউন্ট ওপেন করি ১৯১০ সালেক জানুয়ারি মাসে।  সর্বপ্রথম আমার ফেসবুক বন্ধু আমার ছেলে। আমার কিছুদিন আগে আমার স্ত্রী ফেসবুক ওপেন করে। মাবাবার ফেসবুক ব্যবহার শুরুর কিছুদিন পরই ছেলে আমাদের ব্লক করে পরে একাউন্ট বন্ধ করে দেয়। তার অনেক কর্মকান্ডের গোপনীয়তা রক্ষার জন্যই সে একাউন্ট ক্লোজ করে। যাইহোক ,ফেসবুক ব্যবহার শুরুর পর থেকে প্রথম দিকে খুব একটা নিয়মিত না হলেও বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতিদিনই ফেসবুকে ঢুকে হয়।  এটা এখন যেন একটা নেশার মত হয়ে গেছে।

আমার কাছে ফেসবুকের প্রধান আকর্ষণ ‘news feed’ নিউজ ফীডে বন্ধুদের দৈনন্দিন কর্মকান্ড ছাড়াও তাদের অতীত,বর্তমান ভবিষ্যৎ ইতিহাস   কর্ম পরিকল্পনা ইত্যাদি  জানতে পারছি। সেই সাথে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঘটমান বিশেষ বিশেষ ঘটনাবলী তার ফলো আপ জানতে পারছি। সকল বিষয়াদি নিয়ে জ্ঞানী গুণীজন ছাড়াও সাধারণ মানুষের কি ধরণের অভিব্যাক্তি সেটা আমি খুব উপভোগ করি।  ফেসবুকে কোনো বিষয়ের উপর অনেকে বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য করে থাকেন। কারো কারো মন্তব্য অনেক অর্থবহ আবার কারো কারো মন্তব্য অর্থহীন। এর সব কিছুই আমার কাছে শিক্ষণীয় বলে মনে হয়।

ফেসবুকে নিজের বা পরিবার পরিজন,বন্ধুবান্ধবের ফটো পোস্ট করা একটি জনপ্রিয় বিষয়। আজকাল প্রতিদিন নিউজ ফিডে বন্ধুদের বিভিন্ন বিষয় বা কর্মকান্ডের ফটো দেখি।  এসব দেখে তার বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয় স্বজন হরহামেশাই হাস্য রসাত্মক মন্তব্য করছেন। বিশেষ করে আমার বাংলাদেশের ফেসবুক বন্ধুবান্ধনগণ ফটো পোস্ট করা এবং তার উপর মন্তব্য করতেই যেন ফেসবুক ব্যবহার করেন। কোন কোন সময় এমন অর্থহীন বা অপ্রাসঙ্গিক ফটো মন্তব্য দেখি যা নিতান্তই হাস্যকর।যথাযথ শিক্ষা বা ভাষাজ্ঞান না থাকার কারণে অত্যান্ত আপত্তিকর মন্তব্যও দেখে থাকি। মাঝে মাঝে মনে হয় এখন শুধু প্রকাশ্যে জনসমুক্ষে মলত্যাগের ফটো বা ভিডিও বাকি আছে পোস্ট করতে।

বাংলাদেশে আমার কিছু বন্ধুদের ফেসবুক ব্যবহারের কয়েকটি উদাহরণ না দিলেই নয়। আমার এক আত্মীয় প্রতিদিনই ফেসবুকে ফটো পোস্ট করেন। তিনি তার স্ত্রী একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরী  করেন। তাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ড বা জীবন যাত্রা যেন ফেসবুক নির্ভর। এমন কোনোদিন নাই যে তার কোনো না কোনো ফটো ফেসবুকে অনুপস্থিত। কিছু না পেলে স্বামীস্ত্রী একত্রে চা পানের ফটো পোস্ট করেন। আমার আর এক কাজিন কে দেখলাম ফেসবুক পাগল। বাড়ি থেকে কাজে যাবার সময় দরোজায় দাঁড়ানো অবস্থার ফটো,নিজের দোকানে বসে থাকার ফটো, ভ্যান বা অটো রিকশায় ঘুরে বেড়ানোর ফটো,বন্ধুদের সাথে বসে চা পানের ফটো ইত্যাদি সব কিছুই সে প্রতিদিনই পোস্ট করছে। তার বন্ধুবান্ধবরাও তার মতোই নিম্নমানের বা অসৌজন্যমূলক বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। আমার দূর সম্পর্কের এক মামা ও মামীর ফেসবুকে ফটো দেখে অনেক সময় মনে হয় কি ভাবে তারা এসব ফটো পোস্ট করছে ? মামা বাংলাদেশ পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা। একবারও ভাবছে না এসব দেখে ছবি তার পরিচিতজনেরা কি ধারণা করছে তাদের সম্পর্কে? এভাবে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের ফেসবুক ব্যবহারের হরেকরকম কর্মকান্ডের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ফেসবুক থেকে মানুষের এসব কর্মকান্ড আমার  দৃষ্টিতে একটি কুশিক্ষা।

ফেসবুকের থেকে আরো কিছু কুশিক্ষা আমরা পাচ্ছি। যেমন আমি লক্ষ্য করেছি বিভিন্ন ফেসবুকে কন্টাক্ট গুরুপ আছে। অনেক গুরুপ থেকে নোংরা ছবি/ ভিডিও পোস্ট করা হয়। ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জের ব্যবহার করেন অনেকে। কেউ কেউ ব্যাক্তিগত বিষয়ে যোগাযোগ করলেও অনেকেই নোংরা বিষয় বা ভিডিও মেসেন্জারে পোস্ট করেন। ফেসবুকের মেসেঞ্জার চেক করে আমার এক বন্ধুর আপত্তিকর কিছু ফটো দেখেছি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে এধরণের নোংরামির শিকার কিভাবে হল সেটা নিয়ে বেশ কিছুদিন ভেবেছি। পরে আমি তাকে ব্লক করে দিয়েছি।

ভালো মন্দ সব কিছু মিলে ফেসবুক একটি জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুক ব্যবহারের ভালো মন্দ উভয় দিক নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক গবেষণা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলেন সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ,মানুষিক তৃপ্তি ও একাকীত্ব দূর করতে ফেসবুক অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। আবার অনেক গবেষক বলছেন ফেসবুক আমাদের শিশু বা কিশোরদের মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি করছে। শিশু-কিশোররা বন্ধুদের সাথে নিজেদের তুলনা করে নিজেকে আরো প্রতিযোগিতাপরায়ণ করে তুলছে। তবে ফেসবুক নিয়ে যত লেখালেখি বা গবেষণা হোক না কেনো এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটা থেকে ভালো-মন্দ বা যে যা খুশি গ্রহণ করতে পারে। ক্রমবর্ধমান এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আমরা শিক্ষার উপকরণ হিসাবে গ্রহণ করলে উপকৃত হতে পারি বলে আমি মনে করি ।

-মোঃ মনিরুজ্জামান / টরন্টো

2 মন্তব্য

  1. গ্রোন-আপ শিক্ষিত মানুষ যখন ছ্যাবলার মতন আচরন করে, সেটাকে নিয়ে আসলে কিছুই করার দেখি না। ছুরি দিয়ে তরকারি কাটাও যায়, মানুষ খুন করাও যায় – সমস্যাটা ছুরির ব্যাবহারে না, যে ব্যাবহার করবে তার মস্তিষ্কে।

  2. খুবই ভালো পর্যবেক্ষণ ভাই, দুটো দিকই ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। অনেক ধন্যবাদ।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন