এখনই আপনি করতে পারেন সর্বত্তোম দান!!

কথা হচ্ছিলো আমাদের অর্গানাইজেশনের একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থকর্মীর সাথে, আজকের ডগ ফোর্ডের আরো কঠোর লক ডাউনের কথা নিয়ে। Privacy এবং Confidentiality রক্ষার্তে আমি তার ছদ্দনাম ব্যবহার করছি, ডেভিড। ডেভিড এক সময় বছরে $৮০/৯০,০০০ বেতনের চাকরি করতেন একটি হাসপাতালে। বাড়ি ছিল, গাড়ি ছিল এবং জীবন ভালোই কাটছিলো, কিন্তু কোনো এক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান আজীবনের জন্য, তারপর শুরু হয় মানসিক সমস্যা, হয়ে যান কঠিন PTSD রুগী।
চিকিৎসা এবং নিজেকে কর্মক্ষম করে তুলতে শেষ করে দিয়েছেন বাড়ি, গাড়ি এবং সমস্ত সেভিং, কিন্তু ফিরতে পারলেন না আগের জীবনে। বিগত ১০ বছর ধরে আছেন একটি Subsidized বাসায়, CPP আর ODSP মিলে যা পান তাতে খুব টায় টায় চলে যায়। শরীর ভালো থাকা অবস্থায় ডেভিড সমাজকল্যানমূলক অনেক কাজ করতেন, কিন্তু গত ১০ বছরে কিছুই করতে পারেন নাই, এজন্য প্রায় ডেভিড আক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, এদেশের অগণিত ট্যাক্স পেয়ারদের সাহায্যে তিনি এখনো বেঁচে আছেন এবং মোটামুটি জীবনটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এই সমস্ত মানুষের জন্য তিনি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু করতে পারেন না, এবং এই ভাবনা তাকে অনেক পীড়া দেয়।

ডেভিড একা একা থাকেন, তাই কোভিড পূর্ববর্তী সময়ে প্রায়ই বিভিন্ন মলে এবং পার্কে ঘোরাঘুরি করতেন, কিন্তু কোভিডএর কারণে উনি গত ডিসেম্বর থেকে একদমই বাইরে যান না। ভলান্টিয়াররা বাজার ঘাট করে দেয়। বলেন, উনার জন্য বাসায় একা একা বসে থাকা অনেক কঠিন এবং কষ্টের, কিন্তু উনি ইচ্ছা করেই সেই কষ্ট সহ্য করছেন। আমি যখন জিগ্গেস করলাম কেন ! সে বললো মিঃ মুকুল ১০ বছর ধরে প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মানুষের জন্য শুধু মাত্র ঈশ্বরের কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন নাই, কিন্তু সেই ঈশ্বর আজ আমাকে যে সুযোগ করে দিয়েছেন সেই সুযোগ আমি হাত ছাড়া করতে চাই না। যখন প্রশ্ন করলাম ঈশ্বর কি সুযোগ করে দিয়েছেন। উনি একটু হেসে বললেন, এখন নিজ ঘরের মধ্যে থাকাটাই হলো মানুষ এবং মানবতার জন্য সবথেকে বড়ো কাজ এবং দান। তিনি বললেন এই দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকাটা খুব সহজ কাজ নয়, কিন্তু এটাইতো আমার মানুষের জন্য কিছু করার মক্ষোম সুযোগ।

ডেভিড এর মতো মন-মানষিকতা বা চিন্তা ভাবনা আমাদের সবার যদি থাকতো তাহলে লক ডাউন-টাউন আর দরকার হতো না। আপনি ভালো করে লক্ষ করলে দেখবেন অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করে, গায়ে গায়ে মিলে-মিশে, পার্টি করে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কিন্তু খেটে খাওয়া বা অতি সাধারণ মানুষ বাড়াচ্ছে না। এগুলি করছে বেশি আপনার আমার মতো মানুষরা।
সবারই মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র টিকা, কালোজিরা, থানকুনি পাতা যাই বলেন না কেন খুব বেশি প্রতিরক্ষা দিবে না। সাথে সাথে স্বাস্থ্যবিধিগুলি যদি না মানা হয় তাহলে সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে এই ভাইরাসকে পরাজিত করতে খুব একটি সাহায্য হয়তো করবেন না, এবং আমাদের সামনে থাকবে ভয়াবহ সময় !!!!!
কে কি করলো, কোথায় গেলো ইত্যাদি খবরে বা কথায় কান না দিয়ে শুধু মাত্র আপনার অংশটুকু করুন। ঘরে থাকুন, অযথা বাইরে যাবেনা না। মনে রাখবেন আপনার অবহেলা শুধু আপনার সুসাইড ডেকে আনবে না, আপনি আরো অনেককে নিয়ে সুইসাইড করবেন !! এটা কি ঠিক !!! ভাইরাসটি কিন্তু আস্তে আস্তে বলতে গেলে আমাদের দোর-গোড়ায় চলে এসেছে। আপনার আসে পাশের এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে যার কোনো আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু বান্ধবের কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হননি বা মারা যাননি। অতএব বুজতে পারছেন অবস্থাটা কত বিপদজনক। এই ভাইরাসের দ্রুত প্রস্থান আমাদের হাতেই। সৃষ্টিকর্তা তো আমাদের সেই Tool (বিবেক) দিয়েই দিয়েছেন, কিন্তু আমরা যদি সেটি না ব্যাবহার করি তাহলে আমাদের চরম পরিণতিতো হবেই !!!

স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আমরা যত ঢিলামি করবো, এই ভাইরাস ততো দেরিতে যাবে এবং হয়তো ধীরে ধীরে আরো বাচ্চাকাচ্চা তৈরী করবে। আসেন আমরা সবাই মিলে আমাদের নিজেদের দায়িত্বটুকু পালন করি এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি যাতে তিনি আমাদের এই অবস্থা উত্তরণে সাহায্য করেন।

হতাশ বা নিরাশ হওয়ার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা। ভালো দিন অবশ্যই আসবে, ইনশাল্লাহ ! কিন্তু কবে আসবে সেটি আপনার আমার উপর নির্ভর করছে !!!
বিগত ৪/৫ দিনে এখানে এবং বাংলাদেশে খুব কাছের কিছু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। মনটা ভালো নেই। সৃষ্টিকর্তা আমাদের মঙ্গোল করুন।
ধন্যবাদ।
মুকুল।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন