শিক্ষা ঋণ সম্পর্কে অনেকের অনেক রকম ধারনা রয়েছে।  কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কানাডার শিক্ষা খুউব ব্যয়বহুল। অনেকের উচ্চতর পর্যায়ে পড়াশুনার ইচ্ছা বাস্তবায়নে শিক্ষা ঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রদেশভেদে কানাডার শিক্ষা ঋণ কার্যক্রমে ভিন্নতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ। এ লেখায় আমি শুধু অন্টারিও প্রদেশের শিক্ষা ঋণ কার্যক্রম সম্পর্কে লিখব। অন্টারিও স্টুডেন্ট অ্যাসিসটেন্স্ প্রোগ্রাম যা ওসাপ নামে বহুল পরিচিত, কানাডা সরকারের একটি অন্যতম শিক্ষা ঋণ কার্যক্রম।

ওসাপ-এর জন্য যে কোন কানাডিয়ান নাগরিক বা স্থায়ী অভিবাসী বা শরনার্থীসহ অন্যান্য ব্যাক্তি যাদের কাছে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি রয়েছে তাঁরা আবেদন করতে পারেন। অনেকে মনে করেন ওসাপ মানেই পুরোটা ঋণ। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। ওসাপের জন্য আবেদন করে আপনি শুধু অনুদানটুকু (গ্রান্ট) নিতে পারেন। ঋণটুকু (লোন) নিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অনুদানের অংশ নিলে তা ফেরত দিতে হবে না। ঋণ নিলে ফেরত দিতে হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পূর্ণকালীন ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের ডিপ্লোমা বা ডিগ্রী প্রোগ্রামের সম্পূর্ণ ফি অনুদান হিসেবে পেতে পারেন। অন্যভাবে বললে বিনা বেতনে পড়াশুনা করতে পারেন। সাধারণতঃ পূর্ণকালীন ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে তাঁরাই বিবেচিত হবেন যাঁরা এক সেমিস্টারে ৬০% বা তার বেশি বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করবেন। কারো প্রতিবন্ধিতা থাকলে ৪০% বা তার বেশি বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করলেই পূর্ণকালীন ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ বিষয়টি চূড়ান্তভাবে নিরূপন করেন। পূর্ণকালীন ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ এবং সন্তান থাকলে সন্তানের দেখাশুনার খরচ ঋণ হিসেবে পেয়ে থাকেন। একজন ছাত্র/ছাত্রী কতটাকা ওসাপ পাবেন তা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে যেমনঃ শিক্ষা খরচ, অর্থনৈতিক অবস্থা, পূর্ণকালীন/ খন্ডকালীন শিক্ষা ইত্যাদি। উল্লেখ্য খন্ডকালীন শিক্ষার্রাও ওসাপ পেয়ে থাকেন।

ওসাপ আবেদন ভর্তি হওয়ার আগেই করা সম্ভব যদি আপনি জানেন আপনি কোথায় ভর্তি  হবেন। তবে ওসাপ পাবেন যখন আপনার সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপনার ভর্তি নিশ্চিত করবে। তবে একুশ সপ্তাহ বা তার বেশি সময়ের কোর্স/প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ওসাপ আবেদন শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হওয়ার ৬০ দিন আগে অবশ্যই করতে হবে। বিশ সপ্তাহ বা তার কম সময়ের কোর্স/ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ওসাপ আবেদন শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হওয়ার ৬ সপ্তাহ আগে করতে হবে। অনলাইনে ওসাপ একাউন্ট খুলে ওসাপের জন্য আবেদন করা যায় এবং এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সহায়তা করে থাকে। ওসাপ নিয়ে পড়াশুনা শুরু করে যদি তা আপনি চালিয়ে না যান অথবা নির্ধারিত মান ধরে না রাখতে পারেন তবে ওসাপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একজন ছাত্র/ছাত্রী তাঁর জীবনে সব মিলিয়ে ৩৪০ সপ্তাহের জন্য (পিএইডি’র জন্য ৪০০ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫২০ সপ্তাহ) ওসাপ পেতে পারবেন।

পড়াশুনাকালীন সময়ে আপনাকে শিক্ষা ঋণের জন্য কোন সুদ পরিশোধ করতে হবে না। সরকার এ সুদ পরিশোধ করবে। এমন কি পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর ছয় মাস পর্যন্ত এ সুদ সরকার দিবে যা ‘গ্রেইস পিরয়ড’ হিসেবে বিবেচিত হয়। ছয় মাস পর থেকে সুদসহ শিক্ষা ঋণ পরিশোধ করা শুরু করতে হবে। তবে চাকুরি না পেলে বা কম আয়ের কাজ করলে শিক্ষা ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে ওসাপ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। সাড়ে নয় বছর থেকে সাড়ে চৌদ্দ বছর সময়ের মধ্যে আপনি আপনার শিক্ষা ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।

ওসাপ নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার। আমার এই লেখা কোনভাবেই ওসাপ নিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নয়; শুধমাত্র এ বিষয়ে কিছু তথ্যপ্রদানের জন্য এবং এ বিষয়ে আপনি আরো বিস্তারিত তথ্য ওসাপ ওয়েবসাইটে পাবেন। মনে রাখবেন, স্বল্পআয়ের শিক্ষার্থী হলে আপনি বিনা বেতনে (সরকারি অনুদানে) অন্টারিওতে পড়তে পারবেন তবে আপনাকে ওসাপ-এর জন্য আবেদন করতে হবে।

-এস এম জাকির হোসেন, নির্বাহি পরিচালক, রাইটসপ্লাস কানাডা

টরন্টো, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন