বৈশাখ মানে বাংলা নববর্ষ ,পরিবর্তন আর ঝোড়ো রুদ্র আলোড়নের প্রবাহে নুতন কে গ্রহণ করা ।যাপিত জীবন পরিক্রমার মলিনতার , নির্বোধ মিথ্যাচারের আর মানবিক দুর্দশার বোবাকান্না মুছে সভ্যতার আলো নিয়ে নুতন ভাবে বাঁচার অঙ্গীকার নিয়ে অসো বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির এক কথায় মূল ধারক ও বাহক যা বাংলার সহস্র বৎসরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ,আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি সব দিক লালন করে l বাংলাদেশি ও বাঙালিরা সোনালী আশায় পুরানো বছরের ব্যর্থতা,নৈরাশ্য,গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে সানন্দে বরণ করে নেন এক সু সমৃদ্ধ জীবনের প্রত্যাশায় । বাংলার নববর্ষের দিনটি সকল বাংলাদেশি ও বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী দিন। শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয় ,ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাঙালির বিশেষ উৎসবের আমেজে পালিত হয়। ভারতের ত্রিপুরায় বাঙালিরাও এই উৎসবের আয়োজন করেন ।এর পাশাপাশি বিশ্বময় বাঙালি ও বাংলাদেশিরা যে যেখানে আছেন তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান হতে ছোট বড় পরিসরে বিভিন্ন আয়োজন করেন l
দেশে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি ও বাঙালির হৃদয়ে ‘ বৈশাখ ‘শব্দটি জীবনের বিভ্রান্ত বিভেদ আর ব্যথা ভুলে উৎসবের আমেজের এক হতে শেখায়l lভোজনরসিক বাঙালির যে কোন আনন্দ উৎসবের অপরিহার্য অংশ হলো তাঁদের বৈচিত্রময় খাদ্যাভ্যাসের চর্চা lখাদ্য আর দেশজ পরিচ্ছদ, দেশজ কারুশৈলীর সমন্বয় “বৈশাখ উদযাপনের বিশ্বময়তার ধারাবাহিকতায় কানাডায় নোভা স্কোশিয়ার প্রদেশের রাজধানী হ্যালিফ্যাক্সের বেডফোর্ডের লায়ন্স ডেন ক্লাবে গত ১৪ ই মে ‘ বাংলাদেশ কানাডা ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির ( বি সি এফ এসের ) ‘ উদ্যোগে আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা ১৪২৯ এবং এক মনোজ্ঞ সাংষ্কৃতিক সন্ধ্যা ।দুপুর বারোটা হতে বিকেল চারটা পর্যন্ত স্থায়ী মেলার এই নানন্দিক আয়োজনে ছিল একেবারে লোকে লোকারণ্য l চমৎকার রঙিন হাতপাখা ও বিভিন্ন দেশীয় নকশার মঞ্চসজ্জার আবহে বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু হয় সংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান যা সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত চলে l উল্লেখ্য যে গত এপ্রিল মাসে পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য মে মাসে এই দিনে অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত হয়েছিল l
হ্যালিফ্যাক্স ও নোভা স্কোশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সরকারি ও বেসরকারী পর্যায়ের কর্মরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিক্ষক ,চিকিৎসক , প্রকৌশলী ,সমাজ কর্মী , নীতি নির্ধারক সহ সকলের শ্রদ্ধাভাজন কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই অনুষ্ঠানে স্ব পরিবারের উপস্থিত ছিলেন l অধ্যাপক ডঃ ফজলে সিদ্দিক , লিলি সিদ্দিক , অধ্যাপক ডঃ শামসুদ দোহা চৌধুরী ,জেবুন চৌধুরী জুয়েল , অধ্যাপক ডঃ আশরাফ আল জামান , অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ মুজাহিদ রহমান , তাহমিনা আক্তার ডালিয়া, ডঃ নুরজাহান বেগম , কাজী শাহ্জালাল , ডাঃ দিলরূবা রহমান সুরভী,ডাঃ তাহমিনা ওয়াহাব ,আহসান রিজভী চৌধুরী, সাবিনা ইসলাম রেশমা , রহমান চৌধুরী , মাহমুদুল সুফিয়ানী , খসরুল কবির , আহসান রিজভী চৌধুরী ,সাইয়েদা লায়লা নার্গিস কেয়া l উল্লেখ্য যে আশির দশকের শুরু হতেই হ্যালিফ্যাক্সের বাংলাদেশিদের বিভিন্ন উৎসবে র ছোট বড় বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এনারা সবাই উদোক্তা ও আহ্বায়ক হিসেবে একনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন l
কানাডার হ্যালিফ্যাক্স বিসিএফ এসের এই আয়োজনে আমন্ত্রিত বাঙালি অতিথি সহ চারশ র অধিক লোকের সমাগম ঘটেছিল , হ্যালিফ্যাক্সে বসবাসরত বাঙালিদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত বাংলাদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী , স্থানীয় বাংলাদেশি অভিবাসী ছাড়াও কানাডার সরকারের মেইনস্ট্রীম বা মূলধারার বিশিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা এই আয়োজনে আমন্ত্রিত ছিলেন l এনারা হলেন এম এল এ আলী ডুয়ালে ,এম এল এ এঞ্জেলা সিমন্ডস, এমপি লিনা ডিয়াব , হ্যালিফ্যাক্স রিজিওনাল মিউনিসিপ্যালিটি র মেয়র মাইক স্যাভেজ ও কানাডার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল লিবারেল পার্টির একজন নেতা বিশাল ভারওয়াজ , এনডি পি পার্টির লিডার গ্যারি বুঢ়িল , এরা সবাই আমন্ত্রিতদের সাথে মত বিনিময় করেন বিভিন্ন স্টলের খাবার উপভোগ করেন, দেশজ পণ্য ক্রয় করেন এবং মঞ্চে তাঁদের শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন l
কানাডার হালিফ্যাক্সে আয়োজিত সেদিনের এই আয়োজন পরিণত হয়েছিল কানাডার প্রবাসভিত্তিক বাঙালি ও বাংলাদেশিদের মনোরম সুন্দর এক মিলন মেলায় l আয়োজনে বাংলাদেশের ও বাঙালিদের জনপ্রিয় ও প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার ও দেশজ বিভিন্ন কারু শৈলীর সমাহার ঘটেছিল । উল্লেখ্য যে বৈশাখী মেলাতে খাবারের স্টলের পাশাপাশি ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবাসন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এক্সিট রিয়ালিটির রিয়েল্টর জনাব মারভিন রোজারিওর একটি স্টল যার মাধ্যমে তিনি স্থানীয় সবার জন্য কানাডার হালিফ্যাক্সে বাংলাদেশিদের আবাসন/ গৃহ ক্রয়ে , লিজ ,সংক্রান্ত তথ্যে বিষয়ে অগ্রহীদেরহ্যালিফ্যাক্স ভিত্তিক প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সঠিক সুন্দর ভাবে মাতৃভাষায় ব্যক্ত করেন l
বাঙালি খাবারের বিভিন্ন স্টলে ফুচকা , পিঠা, দইবড়া ও দই ফুচকা , ঝাল মুড়ি , মাটন রেজালা , আচার , কালো ভুনা , বিভিন্ন স্বাদের বিরিয়ানি ,পিঠা , গজা , জর্দা হালিম ইত্যাদি আবহমান বাংলার সংষ্কৃতি লালিত দেশজ ও মোগলাই খাবারের এক মজাদার রসনা ময় সামঞ্জস্য ঘটেছিল l খাবারের স্টলগুলি সহ পনের টি স্টলে হ্যালিফ্যাক্সের স্থানীয় বাঙালি ও বাংলাদেশিরা রা বিভিন্ন খাবার ও দেশজ দ্রব্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন l প্রতিটি স্টলের নামকরণ ছিল বাংলা শব্দ, ঐতিহ্যর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বেশ চিত্তাকর্ষক l লীয়া ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের স্টলের নামকরন করেছিলেন ‘কাদম্বিনী ফুচকা ঘর’ আর সাজিয়েছিলেন মুচমুচে জিলাপি, ফুচকা , চটপটি , আচার ,পিঠার রকমারি সম্ভারে l হাবিৱ তাঁর স্টলে সাজিয়েছিলেন ঝালমুড়ি সামোসা , পোলাউ , মাটন রেসিপি ও মুগ ডাল এর মজাদার স্বাদের কয়েকটি পদ l মাইশা তাজ ও সীমাত তাঁদের ‘সাজ’ শাড়ির স্টলে বিভিন্ন ধরণের শাড়ির সুন্দর সম্ভার রেখেছিলেন lকাকলি মজুমদার তার ‘ঐতিহ্য’ স্টলে সাজিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বাদের ঐতিহ্যবাহীপিঠা যেমন ভাপা , দুধ পুলি , পাটিসাপ্টা ও ফুলঝুরি পিঠার সম্ভারে l সোনিয়া আফরোজ ও তানিয়া আফরোজ সাজিয়েছিলেন তাঁদের স্টল ‘বাংলা ভর্তা’ মুখরোচক স্বাদের আলু বেগুন শুটকি মজাদার দেশজ ভর্তা, কাবাব ‘ভাজি , মিষ্টান্ন দ্বারা l
সাবরিনা শারমিন জুঁই ও তার সহযোগী তাহমিনা , নাদিয়া তাঁদের নিজস্ব ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তা সংগঠনের হাতে তৈরি পসরা নিয়ে তাঁদের ‘ নোভা নারী ‘ স্টলে রেখেছিলেন সুন্দর সম্ভার l প্রদেশ নোভা স্কোশিয়া নামের সাথে সামঞ্জস্যরেখে নামকরণকৃত তাঁদের এই স্টলে , হাতে করা নকশি কাজের চাদর , হাতে তৈরি মালা ও চিত্র কর্ম , টি শার্ট , শাড়ি , বিভিন্ন বৈচিত্রময় সুন্দর গৃহ সজ্জার কারুপণ্য র সম্ভার ছিল l লামিয়া ও সহযোগীরা তাঁদের ‘দর্জি বুটিক ‘ স্টলে বাংলা দেশের বিভিন্ন শাড়ি, পোশাক, ‘ উপমহাদেশের কয়েকটি দেশের নাগরা জুতা সুন্দর সম্ভার রেখেছিলেনl lফাতিমা আক্তার ও আমির হাসিব খান তাঁদের স্টলে চটপটি পায়েস স্প্রিঙ রোল , ঝালমুড়ির , কাপকেক চিপস ও ললিপপ রেখেছিলেন lফারিস্তা ও সহযোগীরা তাঁদের ‘ভুঁড়িভোজ ‘ স্টলে পোলাউ বিফ কালা ভুনা , কাটা মসলার বিফ , চিকেন রোস্ট ও বোরহানির’এই সব মজাদার পদের আয়োজন রেখেছিলেন l জলি , মিশু , সমীরণ, সৈকত , সঞ্জয় চৌধুরী , নবনীতা তাঁদের ‘ ‘টক ঝাল মিষ্টি ‘স্টলে বিভিন্ন স্বাদের মুখরোচক চপ যেমন আলুর ,টুনার চপ ও সমুচা, মজাদার কাঁচা আমের শরবত , মালাই গজা ও বোরহানী আয়োজন রেখেছিলেন l
মারজান, রিনাত ও সিফাত তাঁদের ‘ খুশিতে ঠেলায় ঘুরতে ‘ এই স্টলে মুখায়বয়ব এর ফেস পেইনটিং , স্নাক্স ও বিরিয়ানি ইত্যাদির আয়োজন রেখেছিলেনl বিয়াস বিশ্বাস বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের দুই বাংলার বিভিন্ন ধরনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বাহী ভিত্তিক থিমে তাঁর হাতে করা চিত্রিত কাঠের ম্যাট , ট্রে , বৈচিত্রেময় গহনা , চিত্রকর্ম গৃহসজ্জা সামগ্রীর পণ্য দিয়ে নান্দনিক ভাবে ‘লাভইট’ ‘স্টল টি সাজিয়েছিলেন l হ্যালিফ্যাক্সে মুখরোচক বাংলা খাবারের জনপ্রিয় ‘শেলীজ স্পেশ্যাল বাংলা কিচেন’ র কর্নধার শেলী জুয়েল আপা ‘র অসাধারণ স্বাদের কয়েক রকমের বিরিয়ানি ‘ চিকেন ফ্রাই , মাংসর ইত্যাদির আয়োজন করেছিলেন l
মেলার প্রতিটি মুখরোচক খাবার ও দেশজ কারু পণ্যের স্টলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড়ে সরগরম ছিল l মেলার আয়োজকদের মুখরোচক সব খাবারগুলি এবং পণ্য সম্ভার ক্রেতাদের ও অতিথিদের কাছে বিশেষ ভাবে উপভোগ্য ও সমাদৃত হয় l
উল্লেখ্য যে কানাডার হ্যালিফ্যাক্স বিসিএফ এসের উদ্যোগে সেদিনের এই আয়োজনে হ্যালিফ্যাক্সের আমন্ত্রিত বাঙালি ও বাংলাদেশি অতিথি সহ চারশ র অধিক লোকের সমাগম ঘটেছিলl
আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমগ্র আয়োজন টি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সীমাত , লিয়া ও নিপা l শুরুতেই রাঙামাটির রঙে তে চোখ জুড়ালো ‘ এই দেশাত্মবোধক সঙ্গীতের উচ্ছল পরিবেশনা দর্শকদের উপহার দেন রিনাত , মিশু , কাকলি , নিপা ও মৃত্তিকা ।এর পর শিশুদের তিনটি পরিবেশনা হয় , ‘আতা গাছে তোতা পাখি ‘এই শিশুতোষ ছড়াটি পরিবেশন করেন এলিজা , তুরহান ,আইদান ।’ওই দেখা যায় তাল গাছ’ ছড়াটির সুন্দর পরিবেশনা করে ড্যানিয়েল ও জেইদান।একক ভাবে রবীন্দ্রসংগীত ‘মায়াবন বিহারিণী’ এই গানটির আবহে সাথে প্রাণোচ্ছল অসাধারন নৃত্য পরিবেশনা করে শিশু শিল্পী জুড়াইয়া l
আক্তার জামান তোমার আঁখির মতো আকাশের দুটি তাঁরা ‘ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রেয়সীর চোখের প্রতি প্রেমিকের আহ্বান বিষয়ক গানের সুলোলিত পরিবেশনার মাধ্যমে একটি অসাধারণ আবহের সৃষ্টি হয় ।এই শিল্পী পরবর্তীতে কে তুমি তন্দ্রাহারিনী এই গানটি র সুন্দর পরিবেশনা করেন lএর পর লিয়া ও তার দল একটি দলীয় পরিবেশনার মাধ্যমে ‘ কমলায় নৃত্য করে ‘ এই গানটির সাথে চমৎকার ভঙ্গিমায় নাচ পরিবেশনা করেন l
যন্ত্র সঙ্গীত পরিবেশনা পর্বে গিটারের শ্রুতিমধুর তালে সোনিয়া র সুরের ছোয়াঁ ‘ ও নদীরে একটি কথা সুধাই শুধু তোমারে ‘ যা অতিথি আমন্ত্রিতদের আনন্দময় এক ফেলে আসা নদীবিধৌত বাংলার স্মৃতিতে কিছু সময় আচ্ছন্ন করে l সোনিয়া পরবতী একটি পরিবেশনায় যন্ত্রসংগীতের অপূর্ব মূর্চ্ছনায় ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এক অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঋদ্ধ এই জনপ্রিয় গানের সুর তোলেন ।
শিশু শিল্পী জারিফ সুন্দর ও সপ্রতিভ উপস্থাপনা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিচিত্র স্বাদ’ কবিতা টি l
রেহাম “আজ যে আকাশ’ ও রিদা ‘বেহুলা ‘এই গানটি সাবলীল সুন্দর ভাবে পরিবেশনা করে ।আবিদ রানার কণ্ঠে ‘হৃদ মাঝারে রাখবো ‘ গানটি ছিল বেশ শ্রুতিমধুর lলীয়া ও তাঁর দল ‘এই বৈশাখের ঢাকে’ আধুনিক ও দ্রুপদী ঢঙ্গের সংমিশ্রণে এই গানের সাথে একটি দলীয় নৃত্য সুন্দর ভাবে পরিবেশন করেন ।বড়োদের দলীয় সংগীতে মৃত্তিকা , নিপা , কাকলি,সিমাত , মিশু বাংলাদেশের জনপ্রিয় সোলস ব্যান্ডের গান ‘এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে ‘ এই গানটির সুন্দর দলীয় পরিবেশনা দর্শকদের দেশে ফেলে আসা জন্মভূমির শৈশবের স্মৃতির আবেশে আচ্ছন্ন করে নিয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য ।এরপর ‘ গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত বসন্ত ‘ এই গানের মাধ্যমে শিশু শিল্পী শ্রেয়া , আদৃতা , পৃথু, সমিতা , রিদা আমাদের বাংলা দেশের ঋতু বৈচিত্র স্বরূপ তুলে ধরে ।
একটি নাটিকার মাধ্যমে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন পেশাজীবী সাধারণ বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন পরিচ্ছদের সাজ পোশাকে লীয়া তাঁর দল একটি সুন্দর পরিবেশনা করেন ।শিশু শিল্পী শ্রেয়া সাবলীল ভাবে পরিবেশন কর ‘ গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ এই গানটি l ফ্যাশন শোতে শিশু কিশোর শিল্পীরা বাংলার দেশজ ,ধ্রুপদী ও পাশ্চত্যের আধুনিক পোশাকের বিভিন্ন সাজে মঞ্চে উপস্থিত হন ।শিশুদের পরিবেশনায় পৃথু ইমু ও আইউয়ানা সুন্দর ভাবে কবিগুরুর রচিত ‘ আমাদের ছোট নদী ‘ ছড়া কবিতা টি পরিবেশন করেন । বাংলাদেশে সম্প্ৰতি ইউ টিউব ভিত্তিক জনপ্রিয় কোক ষ্টুডিও বাঙলা কর্তৃক প্রচারিত কিছুটা ফিউশন আদলে প্রচারিত জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের কালজয়ী সৃষ্টি ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই ‘ গানটি আবেদ রানা ও রিনাত সুন্দর ভাবে যুগল পরিবেশনা করেন lঅনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নির্ভর কয়েকটি প্রশ্নমালার সমন্বয়ে একটি কুইজের আয়োজন করা হয় , আর এর বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন সকলের শ্রদ্ধাভাজন ডঃ নুরজাহান বেগম ও জেবুন চৌধুরী জুয়েল , অধ্যাপক শামসুদ দোহা চৌধুরী l এছাড়া বিজয়ীদের তাঁদের বাংলাদেশের পারিবারিক বংশধারা অনুসারে নিজেস্ব জেলা ভিত্তিক উচ্চারণে কিছু বলতে অনুরোধ করা হয় ‘ তাঁরা সুন্দর ভাবে তা উপস্থাপনা করেনllবিসিএফ এসের প্রেসিডেন্ট আহসান রিজভী চৌধুরী এরপর ডোর প্রাইজের ড্র এর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন l
সার্বিক ভাবে উপভোগ্য এই আয়োজনের সুন্দর ইতি টানেন নাগিব ,বাপ্পি ও বি সি এফএসের প্রেসিডেন্ড জনাব আহসান রিজভী চৌধুরী বাংলাদেশের শিল্পী জেমস আইয়ুব বাচ্চু আর বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যান্ডর গানের সুন্দর প্রাণবন্ত পরিবেশনা দ্বারা l এই দূর পরবাসে ভিন্ন ধারার বাস্তবতা ও প্রতিনিয়ত ছুটে চলার অবিরত সংগ্রামের মাঝে বাংলার ঐতিহ্য কে আমাদের শেকড়ের পরিচয় ,বাংলাদেশ ও বাংলার ইতিহাস ,সংষ্কৃতি কে হৃদয়ে লালন করে অনুষ্ঠান পরিবেশনা ও মেলায় বিভিন্ন স্টল এর বর্ণিল আয়োজনে অনেকই সেচ্ছাসেবক হিসেবে নিরলস ভাবে কাজ করেছেন l সবারই ঐকান্তিক প্রয়াস লক্ষণীয় ছিল সামগ্রিক আয়োজনের সফলতার নিরিখে l
বৃহত্তর এই সফল আয়োজনের সকল শিল্পী ,পরিবেশক ,সেচ্ছাসেবক উদোক্তা ও বিসিএফ এসের সংশ্লিষ্ট শ্রদ্ধেয় সকল সদস্যর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও সাধুবাদ জানাচ্ছি l সেদিনের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস আমাদের একটি বিষয় শেখায় কানাডার প্রবাসের মাটিতেও আমরা বাঙালি রা আমাদের অদম্য একতা ও ইচ্ছেশক্তি দ্বারা বাংলাদেশ ও বাঙালীর সঠিক ইতিহাস ঐতিহ্যর প্রকৃত ভাবধারা কে অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম lঅনুষ্ঠানে বিষয়ক এই ফিচারটি লেখার সময় আমাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে সয়াহতা করেছেন ডঃ দিলরুবা রহমান , বি সি এফ এসের প্রেসিডেন্ট জনাব আহসান রিজভী চৌধুরী , সোনিয়া আফরোজ , মৃত্তিকা , সঞ্জয় চৌধুরী ও মারভিন রোজারিওl তাঁদের সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি l