এবার সামারের শেষ দিকের উইকেন্ড এর প্রোগ্রাম ছিল স্কুগোগ লেকে আমাদের একটি ছোট পারিবারিক Boat Cruise. আমরা public বা বড়ো কোনো বোটে না গিয়ে, ছোটো একটি বোটে নিজেদের মতো করে লেকের মধ্যে কিছু সময় কাটাতে চেয়েছিলাম, যাতে করে আমাদের নিজেদের স্বাধীনতা থাকে। আমাদের সঙ্গে ছিল বনধু অনীক ভাই, শাম্মি ভাবি, মুক্ত ভাই, রানী ভাবি, ভাবির আম্মা এবং বাচ্চারা। মোট ১১ জনের মতো। পোর্ট পেরির কাছে স্কুগোগ আইল্যান্ড স্কুগোগ লেকের ছোট একটি দ্বীপ। ওখানকার মারিনা থেকে আমরা একটি পন্টুন বোট ৩ ঘন্টার জন্য ভাড়া নিয়েছিলাম।

 

আমাদের ছোট পোর্টেবল BBQ মেশিন সহ লাঞ্চের সমস্ত কিছু সঙ্গে নিয়ে দুপুরের দিকে উঠে পড়লাম বোটে। দুপুর হয়ে যাওয়ায় লেকের মাঝখানে আমরা বোট নোঙ্গর করে BBQ শুরু করে দিলাম। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে সবাই লাঞ্চ সেরে ফেললাম। তাপমাত্রা বেশ গরম ছিল তাই লেকের ঠান্ডা হাওয়া বেশ ভালোই লাগছিলো। লাঞ্চের পরে বড়োরা ছবি তোলায় বেস্ত গেলো, আর বাচ্চারা মজা করতে থাকলো। আমরা ইচছামতো কখনো লেকের মধ্যে দিয়ে, কখনো কুলঘেষে আসে পাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে চলতে থাকলাম। রোদ এবং তাপমাত্রা ভালো থাকায় আসে পাশে অনেক বোট দেখা গেলো। অনেকে মাছ ধরছিলেন, তবে আমরা কোনো ফিশিং গিয়ার না নেওয়ায় মাছ ধরা হয়নি।

আমি ছাড়া আমাদের আরোহীদের কারোরই বোটিং লাইসেন্স ছিল না। অবশ্য কিছু কিছু জায়গা শুধু ড্রাইভিং লাইসন্স থাকলে ওরা একটি টেম্পোরারি লাইসেন্স দেয়, তবে আপনাকে বোট চালানো এবং কিছু নিয়ম কানুন জানতে হবে, তা না হলে একটু রিস্ক থেকে যাবে।

আমি পরবর্তী লেখায় লাইসেন্স পাওয়ার সমন্ধে বিস্তারিত লিখবো, অন্ততঃ যাদের লাইসেন্স নেই এবং লাইসেন্স নিতে চান তাদের জন্য।

পানিতে ট্রাফিক বেশি না থাকলে পন্টুন বোট চালানো সহজ। শুধু স্টিয়ারিং ধরতে পারলেই হলো। তাই আমার উদ্দেশ ছিল ঐদিন আমাদের আরোহীদের ছোট বড়ো সবাইকে বোট চালানোর হাতে খড়ি দেওয়া এবং স্টিয়ারিং ধরানো। রেন্ট করার সময় চালক হিসাবে যেহেতু শুধু আমার নাম ছিল তাই অন্য কেউ চালনার সময় ধরা খেলে টিকেট পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, এজন্য লেকের একটু ফাঁকা অংশে গিয়ে আমি পাশে থেকে এক এক করে ছোট বড়ো সবাইকে বোট চালানোর হাতে খড়ি দিলাম। আমাদের হাতে যেহেতু ৩ ঘন্টা সময় ছিল তাই সবাই এক এক করে প্রাক্টিস করতে পেরেছিলো। এদের মধ্যে অনেকেই জীবনে কখনো গাড়ির স্টিয়ারিং ও ধরে নাই তাই তারা বেশ মজা পাসছিলো। বাচ্চারাও খুব মজা করছিলো এবং খুব কনফিডেন্স ফিল করছিলো। আমি বেস্ত থাকায় নিজে খুব বেশি ছবি তুলতে পারি নাই তাই আমার তোলা ছবির কিছু এখানে পোস্ট করা হলো। লেকের ঠান্ডা হওয়া, পারে নয়নাভিরাম দৃশ্য, গল্প গুজব, খাওয়া সব মিলিয়ে ৩টা ঘন্টা খুব ভালো কাটলো।
তীরে ফিরে বোট জমা দিয়ে আমরা চলে গেলাম পোর্টপেরি হার্বরফ্রন্ট পার্কে। বাচ্চারা ওখানে পানির মধ্যে স্প্ল্যাশ করতে থাকলো। আমরা একটু লেকের পারে ঘোরা ঘুড়ি করতে থাকলাম, আর অন্য দিকে রানী ভাবি শুরু করে দিলেন পিয়াজু আর ডাল পুরি ভাজতে। কিছুক্ষনের মধ্যে আমরা শুরু করলাম পিয়াজু আর ডালপুরি দিয়ে বিকালের স্ন্যাক্স করতে। এর পর পার্কে শুরু হলো একটি মিউজিক্যাল অনুষ্ঠান। আমরা কেউ কেউ সেটা উপভোগ করলাম আর কেউ কেউ হাঁটা হাটি এবং ছবি তোলাতে বেস্ত হয়ে গেলো। এর কিছুক্ষন পরে আবার রানী ভাবি সুস্বাধু ছোলা মুড়ি বানালেন। এতক্ষনে বেলা পড়ে এসেছে তাই সূর্যের অল্প আলোয় লেকের হালকা ঠান্ডা বাতাসে ছোলা মুড়ি খুব ভালো লাগছিলো।


এ সময় বাচ্চারা মেতে ছিল পার্কে খেলা ধুলায়।
সূর্য ডুবে যাওয়ার পর আমরা আস্তে আস্তে গোছ গাছ শুরু করে টরোন্টোর দিকে রওয়ানা হলাম। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর দিনা কাটলো। অনিক ভাই আর শাম্মি ভাবিদের জন্য এটা ছিল প্রথম, তবে তাদের মতে এটা ছিল তাদের গত সামারের অন্যতম একটি দিন। তাদেকে ধন্যবাদ আমাদের সহযোগী হওয়ার জন্য।

একটি সুন্দর ডে ট্যুরের জন্য এটি একটি সুন্দর প্রোগ্রাম। টরন্টো থেকে বেশি দূরে না তাই যাওয়া আশায় বেশি সময়ও নষ্ট হয় না। সময় থাকলে পার্শবর্তী গল্ফ কোর্সের ড্রাইভিং রেঞ্জে গিয়ে কিছুক্ষন বল পিটিয়ে আসতে পারেন বা ওখানকার সুইমিং পুলে কিছুক্ষনের জন্য ডুবাডুবি করে নিতে পারেন। বন্ধুবান্ধব আর পরিবার নিয়ে চলে যান আগামী সামারে, নিশ্চিত আপনাদের ভালো লাগবে এবং খরচটা হবে reasonable .

ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
মুকুল
টরন্টো

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন