-মোঃ মনিরুজ্জামান

পরদিন সকালে আমরা ফ্লোরিয়ানাপোলিস বা ফ্লোরিপার থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী ঐতিহাসিক স্থান ব্লুমেনাউ (BLUMENAU) যাবার জন্য তৈরী হয়ে ট্যুর বাসের জন্য নির্ধারিত পিক আপ পয়েন্টে উপস্থিত হলাম সকাল নয়টায়। ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত আর সব শহর থেকে ব্লুমেনাউ ব্লুমেনাউ শহরটি সান্তা ক্যাটরিনা স্টেটের একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন বা টুরিস্ট স্পট। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু কারণে যেমন ইনফরমেশন টেকনোলজি, লেদার, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির জন্যও ব্লুমেনাউ  বিখ্যাত শহর। ১৮৫০ সালে জার্মান নাগরিক ডঃ হারমান ব্রুনো অটো ও তার ১৬ জন সহযোগীর উদ্যোগে  ব্লুমেনাউ শহরটির গোড়াপত্তন হয়। ইতযাই (ITAJAI) নদীর তীর ঘেঁষে ইতযাই ভ্যালির পাদদেশে জার্মানরা কলোনি স্থাপন করে এখানে বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে জার্মান ও ইতালি থেকেও অনেক নাগরিক এসে এ শহরে বসবাস শুরু করেন। এ শহরের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, জীবনযাত্রার স্টাইল, ভাষা ও সাংকৃতিক কর্মকান্ডের সব কিছুতেই জার্মান ঐতিহ্যের প্রমান পাওয়া যায়। শহরের অনেকেই এখনও জার্মান ভাষায় কথা বলেন। হিউমান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স মতে ব্রাজিলের অন্যানো শহর থেকে ব্লুমেনাউর জীবনযাত্রার মান অনেক উঁচু বলে মনে করা হয়।

ছবি:-  ব্লুমেনাউ শহর,সান্তা ক্যাটরিনা,ব্রাজিল

 

আমরা ব্রাজিল আসার আগে থেকেই রিনালদো ও ইন্টরনেটের  মাধ্যমে ব্লুমেনাউ সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য জেনেছি। তাই,ব্লুমেনাউ যাবার জন্য অধীর আগ্রহ ও কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। সকাল নয়টায় একটি আধুনিক ও সুসজ্জিত টুরিস্ট বাস আমাদের ও আশেপাশের হোটেলগুলোতে অবস্থানরত ট্যুরিস্টদের তুলে নিল। সাও পাওলো ও রিও’র ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস বা বাস-ট্রেনের কথা আগেই বলেছি। ব্লুমেনাউ যাবার বাস দেখেও আমি রীতিমতো চমৎকৃত হলাম। সুন্দর/প্রশস্ত ও আরামদায়ক বডি, সিট্, এয়ার কন্ডিশনার ,ল্যাপটপ বা ফোনের প্লাগ পয়েন্ট ,বাথরুম ও সেই সাথে ফ্রি পানির বোতল  ও তাদের সার্বিক ব্যাবস্থাপনা সত্যিই প্রশংসনীয় । আমরা ফ্লোরিপা থেকে টুরিস্ট কোম্পানির কয়েকটি বাস একত্রে ব্লুমেনাউ যাত্রা শুরু করলাম সকাল দশটায়। যাত্রার শুরুতে আমাদের গাইড প্রথমে পর্তুগিজ ও পরে ইংরেজিতে আমাদের সারা  দিনের ভ্রমণ কর্মসূচি জানিয়ে দিল। একত্র এভাবে ফ্লোরিপা শহর থেকে পাহাড়ি রাস্তায় এ যাত্রা আমার কাছে বেশ আনন্দদায়ক মনে হচ্ছে। বাসের ড্রাইভার  পাহাড়ের কোলে নির্মিত একটি রেস্টুরেন্টে পনের মিনিটের যাত্রা বিরতি দিল। সকলে টয়লেট ও চা-কফি বা ধূমপান করে আবার গাড়িতে উঠলাম। ব্লুমেনাউ শহরের শুরুতেই শহরের ঐতিহ্যন্ডিত জার্মান জাদুঘর ও সংলগ্ল মার্কেট এবং শহরের স্থপতি ডঃ হারমান ব্রুনো অটো ও সহযোগীদের স্থাপিত কলোনি এলাকা, VILA GERMENICA PARK, GLASPARK MUSEUM, BLUMENAU CITY HALL, BLUMENAU MUNICIPAL MARKET , ফেরার পথে ব্লুমেনাউ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি ও তৈরী পোশাকের জন্য প্রসিদ্ধ দুটি শপিং মল ও সব শেষে জুতা সেন্ডেল ও চামড়ার তৈরী সামগ্রীর একটি মার্কেট দেখার কর্মসূচি ও সময় সীমা গাইড আমাদের জানিয়ে দিল।

রাস্তার দুপাশের পাহাড় শ্রেণী ও অন্যানো দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে  প্রায় আড়াই ঘন্টা পরে আমরা ব্লুমেনাউ এসে পৌছালাম। কর্মসূচি মোতাবেক আমরা ব্লুমেনাউ শহরের প্রান্ত সীমায় অবস্থিত জাদুঘর ও মার্কেট দেখতে নামলাম। এ জাদু ঘরটিতে জার্মানদের এ শহরের সৃষ্টি ,তার ইতিহাস ,ডঃ হারমান ও তার সহযোগীদের সম্পর্কে বর্ণনা ,তাদের ব্যবহৃত সামগ্রী শহরের অন্যানো উল্লেখযোগ্য বিষয়ের সচিত্র তথ্য ও প্রতিবেদন ইত্যাদি রাখা হয়েছে। আমরা জাদুঘরটি দেখে পাশের মার্কেটে ঢুকলাম। সেখানে জার্মান স্টাইলের পোশাক পরিচ্ছদ ও সবকিছুই পাওয়া যায়। মার্কেটের কর্মচারীরাও এখানকার জার্মান পরিবারের এবং তারা পর্তুগিজ ও জার্মান ভাষায় কথা বলছে। তবে কেহই ইংরেজি বলে না। চারিদিকের সাজসজ্জা ও লোকজন দেখে আমাদের মনে হল আমরা  জার্মানির কোনো শহরে এসেছি। আমরা সেখানে আধা ঘন্টা কাটিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত VILA GERMENICA PARK ও GLASPARK  MUSEUM দেখতে গেলাম।

ভিলা জার্মানিকা পার্ক ও গ্লাস মিউজিয়াম পাশাপাশি অবস্থিত। ডঃ হারমানের বাড়িটিই ভিলা জার্মানিকা। ইতযাই নদীর তীরে উঁচু স্থানে বাড়িটি নির্মিত। বাড়িটির চারিদিক দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের বৃক্ষরাজির নিচেই সুশীতল পরিবেশে সুদৃশ্য পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। এককথায় এলাকাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোরম। উল্লেখ্য ,ব্লুমেনাউতে শহরটির জন্মমাস উপলক্ষে প্রতিবছর  সপ্তাহব্যাপী এখানে ‘অক্টোবর ফিস্ট’ উদযাপন আয়োজন করা হয়। রিও’র কার্নিভালের  পরে এটি ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাৎসরিক মেলা। প্রতি বছর এ মেলায় যোগদানের জন্য ব্রাজিলসহ জার্মানি থেকেও প্রচুর জনসমাগম হয়। সেজন্য ব্লুমেনাউ শহরে অনেক হোটেল রেস্টুরেন্টের ছড়াছড়ি। ফিস্ট-এ যোগদানের জন্য কয়েকমাস আগে থেকে হোটেল বুকিং দিতে হয়। আমরা ঘুরে ফিরে ভিলা জার্মানিকা  তথা ‘অক্টোবর ফিস্ট’ এর মেলার স্থান দেখছি আর বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলছি। একসময় রাস্তা পেরিয়ে আমরা মিউজিয়ামে ঢুকলাম। মিউজিয়ামটির প্রবেশপথ ও অভ্যন্তরের দেয়াল সুদৃশ্য ক্রিস্টাল পাথরের দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে। যে কেউ ভিতরে প্রবেশ করলে চারিদিকের দেয়ালে তার অসংখ্য ছবি দেখতে পাবে। মিউজিয়ামের ভিতরের শীতল পরিবেশে নিজেকে ভিনগ্রহের প্রাণী মনে হল। এ মিউজিয়ামের মধ্যে রয়েছে  জার্মানদের সাংস্কৃতিক  ঐতিহ্যের বেশ কিছু নিদর্শন ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য  বিভিন্ন সামগ্রীর সমাহার।  মিউজিয়ামের সাথে রয়েছে একটি সুভেনির বা গিফট শপ। কেহ ইচ্ছা করলে সেখান থেকে জার্মানিতে নির্মিত দ্রব্যসামগ্রী কিনতে পারেন।

ছবি:গত বছর(২০১৬) অক্টোবর ফিস্ট -এর সময় ব্লুমেনাউ শহরের একটি চিত্র ,ব্লুমেনাউ ,ব্রাজিল

আমাদের গাইড জানালো পরবর্তী গন্তব্য ব্লুমেনাউ সিটি হল। এটিও একটি জার্মান আরকিটেক্চার বৈশিষ্ট মন্ডিত ভবন। ১৯৮২ সালে এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ব্লুমেনাউ সিটির প্রায় সব সরকারি অফিস  এ ভবনে অবস্থিত। ভবনের চারিপাশে জার্মান স্টাইলে পরিকল্পিত গার্ডেন। এ ভবনের আশেপাশে দাঁড়িয়ে বসে আমরা অনেক ছবি তুললাম। সেখানে পনেরো মিনিটের যাত্রাবিরতি শেষে আমরা পরবর্তী গন্তব্য ব্লুমেনাউ মিউনিসিপাল মার্কেট এলাকায় গেলাম। এটি একটি বিশাল মার্কেট। আসে পাশে প্রচুর দোকানপাট ,গিফট বা সুভেনির শপ ও ক্যাফে রেস্টুরেন্ট। আমাদের গাইড এখানে দুঘন্টার যাত্রাবিরতি ঘোষণা করলো। এ সময়ের মধ্যে আমাদের দুপুরের খাওয়া ও মার্কেটে কেনাকাটা করতে হবে বলে সে জানিয়ে দিল।

ছবি:- ব্লুমেনাউ সিটি হলের সামনে থেকে তোলা

এসময় বেলা তিনটা বেজে গেছে। তাই আমরা দুপুরের খাবারের জন্য একটি সেলফ সার্ভিস বাফেতে ঢুকলাম। সকল কাফে রেস্টুরেন্টে  দুপুরের খাবারের  জন্য ট্যুরিস্টদের প্রচন্ড ভিড়। আমরা তারই মধ্যে একটু অপেক্ষা করে একত্রে বসার জন্য একটি টেবিল দখল করে নিলাম।  এখানকার বাফেটিতে অনেক প্রকার খাবারের সমারোহ দেখলাম। প্রতি কেজি এখানে মাত্র ত্রিশ রিয়াল। যে যার খাবার ও ডেজার্ট নিয়ে দুপুরের খাবার সেরে আমরা মার্কেট ঢুকলাম। মার্কেটেও অজস্র মানুষের ভিড়। এখানেও ব্লুমেনাউ এর ছবি ও মনোগ্রাম মুদ্রিত আছে সব কিছুতে। এস্থের ,মার্গারেট ,গ্রেস ও আমি কিছু টিশার্ট ও স্যুভেনির কিনলাম। এ পর্যন্ত আমি এক ডজনের ও বেশি টিশার্ট কিনেছি বিভিন্ন স্থান থেকে। ব্লুমেনাউ এর টিশার্ট গুলি অনেক ভালো যদিও দাম একটু বেশি। রাস্তার দুপাশের বাড়িঘর দোকান পাটে ব্রাজিল ও জার্মানির প্রস্তুতকৃত পণ্য সামগ্রী রয়েছে। ব্লুমেনাউ জার্মান অধ্যুষিত শহর হলেও ইতালিয়ান ও পর্তুগিজদের প্রভাব একেবারে নেই তা নয়। প্রতিটি শপিং মল বা গিফট শপে একই সাথে পর্তুগিজ ও জার্মান ভাষায় সাইনবোর্ড লেখা আছে। দোকানের কর্মচারীরা উভয় ভাষায় ক্রেতাদের সাথে কথা বলেন। কেনাকাটা ও ঘুরাঘুরি শেষে বিকাল সাড়ে পাঁচটার সময় আমরা বাসে আরোহন করলাম। আমাদের বাস শহরের মধ্যে বিভিন্ন রাস্তায় আরো কিছুক্ষন ঘোরাফেরা করে হাইওয়ের পথে রওয়ানা দিল।

ব্লুমেনাউ থেকে বেশ কিছুটা দূরে হাইওয়ের দু’পাশে বিশাল আকারের শপিং কমপ্লেক্সে আমাদের বাস যখন এসে দাঁড়াল তখন সময়  ছয়টা বাজে। গাইড বলল ,এখানে একঘন্টার বিরতি। দেখলাম আমাদের মতো অন্য আরো অনেক টুরিস্ট বাস সেখানে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা শপিং কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দোকানপাট ঘুরে দেখলাম এবং টুকটাক কেনাকাটা করলাম। বিশেষ করে মেয়েরাই কেনাকাটা করেছে আর আমরা ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে সফট ড্রিঙ্কস কিনে ঘুরে ঘুরে দেখছি। কানাডা বা উত্তর আমেরিকার কোনো বড় মলের তুলনায় এ এলাকাটি কোনো অংশে কম নয়। রাস্তার দু’পাশেই মলের বিস্তার। ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য রয়েছে হরেক রকমের সেলস অফার ও গিফট। মলে ঘুরে দেখছি আর ভাবছি ব্রাজিলের এ পর্যন্ত আমি যতটুকু দেখেছি তাতে এখানকার কোনোকিছুই বিশ্বের অন্য যেকোনো উন্নত দেশের থেকে কম নয়। বরং কিছু কিছু জিনিস যেন  উন্নত দেশগুলি থেকেও আমার কাছে ভালো লেগেছে ।

আগেই উল্লেখ করেছি ,ব্লুমেনাউ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি ও ইনফরমেশন টেকনোলজির জন্য বিখ্যাত। ইনফরমেশন টেকনোলোজির ব্যাপক প্রসারের জন্য ব্লুমেনাউ শহরকে ‘ভ্যালি অফ সফটওয়্যার’ বলা হয় । শপিং মল থেকে হাইওয়েতে উঠার পরে রাস্তার দু’পাশে কয়েক কিলোমিটারব্যাপী অনেক শিল্প কলকারখানা দেখতে পেলাম। আমাদের গাইড বিরামহীন ভাবে এখানে অবস্থিত শিল্প কারখানার বর্ণনা দিয়ে চলেছে। আমরা ব্লুমেনাউ আসার সময় যে পথে এসেছিলাম সেটা ছিল পাহাড় পর্বতের মধ্যে দিয়ে ওপর একটি সিনিক রোড । এখন ফেরার পথে আমরা ফ্লোরিপা – ব্লুমেনাউ হাইওয়ে দিয়ে যাচ্ছি। ঘন্টা খানেক পরে রাস্তার পাশে লেদার ইন্ডাস্ট্রি এলাকায় বাস থামলো। আমরা এখানে কয়েকটি চামড়ার তৈরী জুতা সেন্ডেল ও অন্যানো সামগ্রীর শোরুমে ঢুকলাম। চামড়ার তৈরী সামগ্রীর দাম এখানে বেশ চড়া। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিনলাম না। এখানে বিশ মিনিট অপেক্ষা করার পরে বাস ফ্লোরিপার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। আমাদের এপার্টমেন্টের কাছে নির্ধারিত স্থানে আমরা যখন নামলাম তখন রাত এগারোটা বাজে। আমরা কাছাকাছি একটি রেস্টটুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে এপার্টমেন্টে ফিরলাম রাত  বারোটায়। সারাদিনের হাঁটাহাঁটি ও বাস ভ্রমণে সবাই ক্লান্ত। তাই বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে গেলাম।

ছবি:-  ব্লুমেনাউ- ফ্লোরিপা হাইওয়ের পাশের শপিং কমপ্লেক্সে, ব্লুমেনাউ, ব্রাজিল

 

ফ্লোরিয়ানাপোলিস বা ফ্লোরিপায় আজ আমাদের শেষ দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে এপার্টমেন্টেই আমরা ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম। কারণ গতকালের টাইট প্রোগ্রামের কারণে সবাই বেশ ক্লান্ত-শ্রান্ত। তাই এপার্টমেন্ট থেকে আমরা একটু দেরি করেই বের হলাম। আজ আমরা ফ্লোরিপার মার্কেট স্কোয়ার ও মেইনল্যান্ডের কয়েকটি বিচ দেখতে যাবো। প্রথমে আমরা ডাউন টাউনের মার্কেট এলাকায় গেলাম। মিউনিসিপাল মার্কেট ও নভেম্বর ফিফটিন শপিং সেন্টার থেকে এস্থের ও মার্গারেট অনেক কেনাকাটা করে ফেলেছে ইতোমধ্যে। আসার সময় সকলে একটা লাগেজ আনলেও যাবার সময় দু ‘টিতেও তাদের সংকুলান হবে না। তারা উভয়েই রোনালদো ও আমাকে তাদের কিছু মালামাল আমাদের ব্যাগে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। রোনালদো রাজি হলেও আমি না হ্যা কিছু বলি নাই। কারণ আমি জানি আমাদের ব্রাজিলের আরো দু’টি বিখ্যাত টুরিস্ট স্পটে যেতে হবে।  তখন আরো কিছু কেনাকাটা হবে এবং আমার ব্যাগে আর অতিরিক্ত জায়গা থাকবে না।

ছবি:- মিউনিসিপাল মার্কেট এলাকা ,ফ্লোরিয়ানাপোলিস ,ব্রাজিল

 

কেনাকাটার ফাঁকে আমরা মিউনিসিপাল মার্কেটের একটি ফুডকোর্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। আজ সী ফুড না নিয়ে আমরা সেলফ সার্ভিস বাফে থেকে নিজেদের পছন্দ মত খাবার নিয়ে খেলাম। পরে মার্কেট সংলগ্ল পার্কে বসে সবাই কিছুক্ষন রেস্ট নিলাম । তার আগে সবাই যার যার পছন্দ মত সফট ড্রিঙ্কস নিল রাস্তার পাশের ফাস্ট ফুড দোকান থেকে। আমি ডাবের পানি নিলাম। প্রচন্ড রোদে ও মার্কেটের হাঁটাহাঁটিতে আমরা ক্লান্ত। রোনালদো বলল ,এ সময়টা  ব্রাজিলে ভ্রমণের সব থেকে ভালো সময়। শীতের আগমনের পূর্বের এ সময় গরম বা ঠান্ডা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। রিনালদো এ সময়কে ভালো বললেও আমরা কিন্তু গরম ও রোদের তাপে হাঁপিয়ে উঠেছি। পার্কের গাছের নিচে সুশীতল পরিবেশে বসে শরীরের ক্লান্তি দূর করে আমরা ফ্লোরিপা পোর্ট এলাকায় গেলাম। আটলান্টিকের পূর্বতীরে বিশাল পোর্ট এলাকা ও তার সাথেই বিচ। ফ্লোরিপা পোর্ট থেকে পণ্য সামগ্রী ব্রাজিলের অভ্যান্তরে ও আসে পাশের সব দেশে পরবহন করা হয়। এখান থেকে প্রচুর ‘সী ফুড’ দেশে বিদেশে রফতানি করা হয়।

পোর্ট এলাকা থেকে শুরু এ বিচটিও বেশ দীর্ঘ। প্রচন্ড গরমের কারণে বিচটি  লোকে লোকারণ্য। সবাই এসেছে বিচে নেমে শরীর  ঠান্ডা করতে ও  তীরবর্তী গাছের ছায়ায় বসে আরাম করতে। আমরা একটু দূরে বিচের অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় গেলাম। মার্গারেট, জন ও গ্রেস বিচে নেমে জলকেলিতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো। আমি রিনালদো ও এস্থের গাছের ছায়ায় বসে রেস্ট নিতে গেলাম। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আমরা বিচে থাকলাম। সফরসঙ্গীরা জলকেলী করে সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে আসার পর এপার্টমেন্টের পথে রওয়ানা হলাম। এপার্টমেন্টে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে রাত সাড়ে আটটায় নিচে নামলাম রাতের খাবারের জন্য। খাবার পর রাস্তার পার্শবর্তী বিচের কিনারা বরাবর নির্মিত রাস্তা দিয়ে বেশ কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করলাম।  রাত সাড়ে এগারোটায় এপার্টমেন্টে ফিরে এলাম। সেইসাথে আমাদের ফ্লোরিপা ভ্রমণের সমাপ্তি হল। আমরা সবাই ফ্লোরিপা ভ্রমণ পর্যালোচলায় বেশ কিছুক্ষন ব্যায় করলাম। সান্তা ক্যাটরিনা স্টেটের  ফ্লোরিপা ব্রাজিলের অন্যতম পর্যটন শহর ও সী ফুড উৎপাদনকারী অঞ্চল। আমরা এ দ্বীপ পরিবেষ্টিত শহরের যতটুকু দেখেছি তা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। আগেই বলেছি এ শহরটিকে অনেকে ‘A CITY OF BEACH’ বলে থাকেন। ফ্লোরিপা ভ্রমণের শেষে আমরাও সেটা উপলদ্ধি করেছি। পরদিন আমাদের পরবর্তী গন্তব্য “IGUAZU FALLS” যাত্রার জন্য সব কিছু প্যাক আপ শেষ করে ঘুমাতে গেলাম।

To be contd /………….

 

১ মন্তব্য

  1. মনির ভাই, অসাধারণ পর্যবেক্ষণ সমৃদ্ধ আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো. ভবিষ্যতে পুরো ভ্রমণ বৃত্তান্তটি বই আকারে পাওয়ার আশা করবো, সম্ভব হলে পরবাসিব্লগ.কম থেকেই.

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন