দৈনিক দেশজনতা, দৈনিক রূপালী,   দৈনিক ইনকিলাব ও দৈনিক আজকের প্রত্যাশাসহ মোট ৪ টি পত্রিকা নিয়ে এখন আলোচনা করবো। এ পত্রিকাগুলোর বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই।

*দৈনিক দেশজনতা পত্রিকার কারও সাথে আলাপ-পরিচয় ছিলো কি না তাও আজ মনে করতে পারছি না। ডাক যোগে লেখা পাঠাতাম, ছাপা হতো। চোখে পড়লে লেখা ও পত্রিকা সংরক্ষণ করতাম। সকল লেখা তো সংগ্রহে নেই, যা আছে তা-ই এখানে তুলে ধরছি।

 

০১. ‘কুড়িয়ে চলি’, আমার লেখা কবিতা। দৈনিক দেশজনতা পত্রিকার কবিতাগুচ্ছ বিভাগে প্রকাশিত হয়।  প্রকাশের তারিখ ২০ মার্চ ১৯৯৬।

পরবর্তী সময়ে কবিতাটি আমার ‘অপেক্ষায় আছি’ কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়। দৈনিক দেশজনতা পত্রিকায় কবিতাটি একাধিক বার ছাপা হয়েছে। ‘কুড়িয়ে চলি’ একটি ছোট্ট কবিতা। কবিতাটি এইরকম-

‘হারাবার জীবন জানি
তবুও কুড়াই,
কুড়িয়ে কুড়িয়ে চলি
দৈবাৎ যদি বা কিছু পাই,
পেয়ে যাই যদি অমূল্য রতন।
এই যা পেলাম আমি
তা-ও থাকবে না জানি
তবু তো কুড়িয়ে চলি
তবুও কুড়াই
দু’হাত বাড়িয়ে ধরি
সামনে যা পাই।’

০২. ‘একই পথের যাত্রী’, আমার লেখা একটি কবিতা। দৈনিক দেশজনতা পত্রিকার কবিতাগুচ্ছ বিভাগে এটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২৪ এপ্রিল ১৯৯৬, ১১ বৈশাখ ১৪০৩ বঙ্গাব্দ। উল্লেখ্য, কবিতাটি মৌলভী বাজারে বসবাস করার সময়ে রচিত। পরবর্তী সময়ে কবিতাটি আমার ‘অপেক্ষায় আছি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। দৈনিক দেশজনতা পত্রিকা এই কবিতাটিও একাধিকবার তাদের পত্রিকায় ছেপেছে। ‘একই পথের যাত্রী’ কবিতাটি ২৩ পংক্তির একটি কবিতা। কবিতাটি একটু ভিন্ন ধরনের। একটু বলি –

‘একদা সবকিছু যৌনতার আলোকেই দেখতাম / ভাবতাম, কিশোরী হৃদয় কিংবা যুবতী /সবাই যেন যৌনতায় উন্মুখ। এবং আজও মনে হয় / প্রৌঢ়া সহাস্যে তুলে ধরে যৌনতা যত্রতত্র / নানা বর্ণে, উগ্র জৌলুষে / নামীদামী প্রসাধনী মেখে।/ এবং আজও বিশ্বাস করি-/দারিদ্র করে না হরণ যৌবন যৌনতা।’

**দৈনিক রূপালী পত্রিকাটি ৭৪ দিলকুশা, মতিঝিল, ঢাকা থেকে প্রকাশিত হতো। ঐ পত্রিকার কারও       সাথে আলাপ-পরিচয় ছিলো কি না, তা আজ মনে করতে পারছি না। ডাক যোগে লেখা পাঠাতাম, ছাপা হতো। চোখে পড়লে লেখা ও পত্রিকা সংরক্ষণ করতাম। এই পত্রিকায় প্রকাশিত সকল লেখা আমার সংগ্রহে নেই। প্রকাশিত ৭ টি লেখা খুঁজে পেয়েছি। লেখাগুলো নিম্নরূপ –

০১. ‘ঢাকা থেকে চাটগাঁ’, আমার লেখা ছড়া। দৈনিক রূপালী পত্রিকার সাহিত্য বিভাগের পাতায় এটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ১৭ এপ্রিল ১৯৯৬। পরবর্তী সময়ে এটি আমার ‘তিড়িং ভিড়িং ভোঁদড় নাচে’র অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘ঢাকা থেকে চাটগাঁ’ একটি ছোট্ট ছড়া। ছড়াটি এইরকম-

‘ঢাকা থেকে চাটগাঁ /কতদূর কতদূর / রেলকম ঝমঝম /ঝুড় ঝুড় ঝুড়। / ঢাকা থেকে চাটগাঁ /কতদূর কতদূর / যেতে যেতে যেতে দেখি /দূর বহুদূর।’

০২. ‘ভালোবাসার কষ্ট’, আমার লেখা একটি কবিতা। দৈনিক রূপালী পত্রিকার রোববারের সাহিত্য বিভাগের পাতায় এটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২৮ এপ্রিল ১৯৯৬, রোববার ১৫ বৈশাখ ১৪০৩ বঙ্গাব্দ।

পরবর্তী সময়ে কবিতাটি আমার ‘অপেক্ষায় আছি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। কবিতাটি ছোট ছোট ৩টি অংশে বিভক্ত। এর অংশবিশেষ তুলে ধরছি,

১।।

‘ভালোবাসার কষ্টগুলো /সতেজ করে প্রাণ/ প্রকৃতির সম্ভ্রমে খুঁজি /সংস্কার ভাঙ্গা কোনো গান।’

                  ২।।

‘বারংবার তোমারই স্পর্শে / খুঁজেছি আশ্রয় / তিরস্কারে দূরে ঠেলে /  করলে নিরাশ্রয়।’

০৩. ‘প্রহর গুণি’, আমার লেখা কবিতা। দৈনিক রূপালী পত্রিকার সাহিত্যের পাতায় এটি প্রকাশিত হয়।  প্রকাশের তারিখ ১৭ মে ১৯৯৬ । এটি ১০ পংক্তির কবিতা। এর শেষের দিকের দুটি মাত্র লাইন তুলে ধরছি-

‘ঘুম থেকে জেগে উঠি, টের পাই- আনন্দ আজ দখল / তৃষ্ণার্ত নিবিড় সংলাপে, অনিচ্ছার খুশিকেই করি নকল।’

০৪. ‘দীর্ঘ সময়’, আমার লেখা একটি কবিতা। দৈনিক রূপালী পত্রিকার সাহিত্য বিভাগের পাতায় এটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ৩১ মে ১৯৯৬ । পরবর্তী সময়ে কবিতাটি আমার ‘অপেক্ষায় আছি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি ১৫ পংক্তির একটি কবিতা। এর শেষ ৫টি লাইন তুলে ধরছি –

‘আমিই দেরি করে ফেললাম / আর সকলেই কিনে নিলো মুক্তি-আনন্দ / পৃথিবীর পাঠশালা থেকে /সুখের ঝিনুক কুড়াতে গিয়ে / দীর্ঘ সময় ধরে আমিই বঞ্চিত আছি।’

০৫. ‘নৌকা আমার’, আমার লেখা একটি কবিতা। দৈনিক রূপালী  পত্রিকার সাহিত্যের পাতায় এটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২৫ জুলাই ১৯৯৬। পরবর্তী সময়ে কবিতাটি আমার ‘অপেক্ষায় আছি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি ১৮ লাইনের একটি কবিতা। এর মাঝখান থেকে একটু উল্লেখ করছি-

‘নৌকা আমার সাত পুরুষের ধন / সাম্রাজ্যবাদ ঠেকানোর অস্ত্র / নৌকা আমার সব কিছু / ধন মান জান।’

০৬. ‘কাজটা’,আমার লেখা কবিতা। দৈনিক রূপালী পত্রিকার সাহিত্য   বিভাগের পাতায় এটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর   ১৯৯৬। পরবর্তী সময়ে কবিতাটি আমার ‘অপেক্ষায় আছি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। কবিতার অংশ বিশেষের উদ্বৃতি দিচ্ছি –

‘আর কতো অতলে তলাবো…
তাহলে চলোনা শুরু করা যাক
সে কাজটা,
কাজটা যে অতি জরুরি!’

০৭. ‘নিজেই’, আমার লেখা একটি কবিতা। দৈনিক রূপালী পত্রিকার সাহিত্যের পাতায় এটি প্রকাশিত হয়।  প্রকাশের তারিখ ১৮ অক্টোবর ১৯৯৬ । পরবর্তী সময়ে কবিতাটি আমার ‘অপেক্ষায় আছি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘নিজেই’ কবিতার শেষাংশ নিম্নরূপ –

‘সময় জানা নেই, জানিনা কবে
কাটবে দুঃখের কাল,
জানি শুধু নিজেই কেটেছি আমি
এই সর্বনাশের খাল। ‘

***দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা অফিসে লেখা দিতে যেতাম। একমাত্র মাওলানা একেএম ফজলুর রহমান মুন্সি ছাড়া সেখানকার আর কারও নাম স্মরণ করতে পারছি না। তিনি আমার গ্রামের লোক এবং দুঃসম্পর্কের আত্নীয়। দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার মধ্যে মাত্র দুটি ছড়া খুঁজে পেয়েছি। সে দুটি ছড়ার কথাই এখানে উল্লেখ করছি –

০১. ‘তিড়িং বিড়িং’ শিরোনামে ছড়াটি দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাহিত্যের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২২ এপ্রিল ১৯৯৬, সোমবার ০৯ বৈশাখ ১৪০৩ বঙ্গাব্দ। এ ছড়াটি তিড়িং বিড়িং ভোঁদড় নাচে’ শিরোনামের ছড়ার বইতে গ্রথিত হয়েছে। ছড়াটি এইরকম-

‘তিড়িং বিড়িং ভোঁদড় নাচে /বাঁদর নাচে জোরে / ভালুক নাচে খাঁচার ভেতর / কাঠের গুঁড়ি ধরে। /ময়ুর নাচে পেখম খুলে / ঘুমায় কুমির ছানা /নাচলে সবাই প্রাণ খুলেও / নাচতে ওদের মানা। /নেউল সাপের এমন নাচন / কেউতো দেখে নাই / নাচের চোটে হাঁতি কাঁপে / বাঘের দেখা নাই।’

০২. ‘রাজধানীর বৃষ্টি’ শিরোনামে আমার লেখা ছড়াটি দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ‘সোনালী আসর’-এ প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ১৭ জুন ১৯৯৬। এ ছড়াটিও তিড়িং বিড়িং ভোঁদড় নাচে’ শিরোনামের ছড়ার বইতে গ্রথিত হয়েছে। ছড়াটি এইরকম-

‘রাজধানীতে বৃষ্টি এলে / রাস্তা ডুবে জলে /ড্রেনের পানির ওপর দিয়ে / বাসগাড়ি সব চলে। / কাজের জন্য ঘুরে যারা / পকেটে নেই টাকা, / ক্ষণে ক্ষণে দেয় ভিজিয়ে / ট্যাক্সি-বাসের চাকা। / তারপরেও কাজ না পেলে/ উপোস করে থাকা, / আকাশেতে মেঘ হলেও / মনটা থাকে ফাঁকা।’

****দৈনিক আজকের প্রত্যাশা পত্রিকায় আমার অনেক লেখাই ছাপা হয়েছে। আমার সংগ্রহে খুঁজে পেয়েছি মাত্র দুটি কবিতা। কবিতা দুটি এখানে উল্লেখ করছি।

‘বর্ম’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক আজকের প্রত্যাশা পত্রিকার সাহিত্যের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২৮ এপ্রিল ১৯৯৬। এ কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার ‘অপেক্ষায় আছি’ কাব্যগ্রন্হে ঠাঁই পায়। কবিতাটির অংশবিশেষ  উল্লেখ করছি –

‘ঈদকে পাই আমি আমার মতো করে / স্মরণ করি, ক্ষুধা-খরা-মারি ও মন্বন্তরে / শহুরে বস্তি আর গ্রাম-গ্রামান্তরে।…

ঈদের আনন্দ আজ ছিনতাই হয়ে গেছে / খুশীর উৎস হারিয়ে ফেলেছে মানুষ /  মনে আজ সামাজিক দেয়ালের বর্ম বিঁধেছে।’

 ‘আমি যখন যুদ্ধে যাই’, শিরোনামে আমার লেখা আরও একটি কবিতা দৈনিক আজকের প্রত্যাশা পত্রিকার সাহিত্যের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ০৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬। এ কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার ‘অপেক্ষায় আছি’ কাব্যগ্রন্হের অন্তর্ভুক্ত হয়। কবিতাটি উদ্ধৃত করছি –

‘আমি যখন যুদ্ধে যাই / তখন আমার বয়স কতই-বা, / সতেরো পেরিয়েছি সবে / আঠারোয় দিয়েছি পা।

সীমান্তে দাঁড়িয়ে অনুভব করেছি প্রবল উত্তেজনা / একী আবেগ না দেশপ্রেম তা আজও জানিনা, / নাকি ছিল উঠতি যৌবনের প্রবল উন্মাদনা / সে কথা জানিনা আমি,আজও জানিনা / স্বদেশের মাটি চুমু খেতে খেতে / অন্তরে শুনেছি শুধু যুদ্ধের উন্মাদনা।

আমি যখন যুদ্ধে যাই / তখন আমার ভয় ছিলো না মনে / এখনতো মুক্ত স্বদেশ ভাই / ভয় কেন মুক্তির

          (চলবে)

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন