( ষোড়শ পর্ব )
দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান সুকান্তর ব্যপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। তার আগ্রহ ও অনুপ্রেরণায় আমি ‘সুকান্তের মৃত্যুভাবনা’ শিরোনামে আরেকটি বড় নিবন্ধ দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকায় পাঠাই। নিবন্ধটির প্রকাশকাল ছিল, বৃহস্পতিবার ২০ জুন ১৯৯৬, ০৬ আষাঢ় ১৪০২ বঙ্গাব্দ। উল্লেখ্য, পত্রিকায় প্রেরিত আমার লেখা সম্পুর্ণ নিবন্ধটি আজকের কাগজ পত্রিকায় ছাপা হয়নি। তাই মূল পান্ডুলিপি থেকেও কিছু অংশ এখানে সন্নিবেশিত হলো।

দৈনক আজকের কাগজ পত্রিকার সাহিত্যের পাতায়, প্রায় পৃষ্ঠাব্যাপী ‘সুকান্তের মৃত্যুভাবনা’ শীর্ষক নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। এর শুরুটা ছিলো,
‘যে কবির আগমনের প্রতীক্ষায় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কান পেতে বসেছিলেন — সে কবি জন্ম নিলো ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ৩১ শ্রাবণ। কলকাতার কালী ঘাটের মহিম হালদার স্ট্রীটে। নাম তার সুকান্ত ভট্টাচার্য্য। সুকান্তর কবিতা দিয়েও আমরা তাকে স্বাগত জানাতে পারি, “যে শিশু ভূমিষ্ট হলো আজ রাতে / তার মুখে খবর পেলুম, / সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক, / নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার / জন্ম মাত্র সুতীব্র চীৎকারে৷ ” . ..
… সুকান্ত দেখলেন পঞ্চাশের মন্বন্তর। চারিদিকে হা-অন্ন হা-অন্ন রব। দুর্ভিক্ষের নিষ্ঠুর আক্রমণ থেকে আগামী দিনের নাগরিকদের বাঁচিয়ে রাখার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে তোলেন ‘কিশোর বাহিনী’। কঠোর পরিশ্রমে, অনিয়মে, শরীর-স্বাস্থ্যের অযত্নের ফলে তখন থেকেই সুকান্তর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে।…

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য হয়তো নিজের অজান্তেই কবি শেলীর মতো মৃত্যুকে নিদ্রার সহোদর রূপে ভেবেছিলেন। শেলী যখন বলেন,
“How Wonderful in Death…
Death and His Brother Sleep! ”
সুকান্ত তখন বলেন,
” ক্লান্ত আমি, ক্লান্ত আমি, কর ক্ষমা, মুক্তি দাও হে এ মরু তরুরে, প্রিয়তমা। ”
অথবা –
” আমায় তুমি নিরব চুমি করিও হরণ।”

‘লংফেলো’ মৃত্যু সম্পর্কে বলতে গিয়ে একস্হানে লিখেছেন, “There is no Death! What seems so is Transition ;”
ভক্তকবি ‘কবির’ মৃত্যুকে জীবনের সাথে জীবন স্বামীর বিবাহ-মিলন বলে বর্ণনা করেছেন। গায়িকাদের তিনি মঙ্গলাচার গান করার কথা বলেন। কেননা তিনি এক অবিনাশী পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন। তাঁর ভাষায়,
“গাউ গাউরী দুলহনী মঙ্গলাচারা, মেরে গৃহ আয়ে রাজা রাম ভতারা।
কহৈ কবীর, হম্ ব্যাহ চলে ঐ
পুরুষ এক অবিনাশী। ”

সুকান্ত অবশ্য মৃত্যুর ব্যাপারে এতটা উচ্ছ্বসিত নন, যতটা উচ্ছ্বসিত ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘বেকস’, ‘শেলী’, ‘কবির’ কিংবা ‘লংফেলো’। তবে মৃত্যু কামনায় সুকান্ত রবীন্দ্রনাথের দ্বারস্হ হয়েছেন। মৃত্যুর জন্যে সুকান্তর এ আকুতি সম্ভবত নিম্নোক্ত কবিতাংশ পাঠ করেই এসেছিল।
“সারা জনম তোমার লাগি,
প্রতিদিন যে আছি জাগি,
তোমার তরে বহে বেড়াই
দুঃখ সুখের ব্যথা। ”

সুকান্তর মৃত্যুকে সুকান্ত নিজেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। হৃৎস্পন্দন থেমে আসার সংবাদ অনুভব করছিলেন নিজেই। তাঁর রচনায়ও সে মৃত্যুর কথা বাদ পড়েনি। তাই তার মনে প্রশ্ন,
“দ্বারে মৃত্যু,
বনে বনে লেগেছে জোয়ার,
পিছনে কি পথ নেই আর? ”
অবৈধ কবিতায় বলেছেন,
“সহসা একদিন আমার দরজায় নেমে এল
নিঃশব্দে উড়ন্ত গৃধিনীরা।
সেই দিন বসন্তের পাখি উড়ে গেল
যেখানে দিগন্ত ঘনায়িত। ”

‘হে পৃথিবী’ কবিতায় সুকান্ত আমাদের পূর্বাভাস দিয়েছেন–
“হে পৃথিবী, আজকে বিদায়
এ দুর্ভাগা চায়,
যদি কভু শুধু ভুল করে
মনে রাখো মোরে,
বিলুপ্তি সার্থক মনে হবে
দুর্ভাগার।…
প্রভাত পাখির কলস্বরে
যে লগ্নে করেছি অভিযান,
আজ তার তিক্ত অবসান। ”

‘সহসা’ কবিতায় সুকান্ত লিখেছেন,
“আমার গোপন সূর্য হল অস্তগামী,
এ পারে মর্মরধ্বনি শুনি, / নিস্পন্দ শবের রাজ্য হতে ক্লান্ত চোখে তাকাল শকুনি। /গোধুলি আকাশ বলে দিল, / তোমার মরণ অতি কাছে, ”
‘সুতরাং’ কবিতায়ও মৃত্যুর হাতছানি পরিলক্ষিত হয় — “এতদিন ছিল বাঁধা সড়ক, / আজ চোখে দেখি শুধু মরক! / এত আঘাত কি সইবে, / যদি না বাঁচি দৈবে? “।…’আমার মৃত্যুর পর’ কবিতায় সুকান্ত মৃত্যু সম্পর্কে যে মত ব্যক্ত করেছেন তা হলো, “আমার মৃত্যুর পর থেমে যাবে কথার গুঞ্জন, “…

‘মরণরে তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান’ পূর্বসূরী কবির এই তত্ত্ব নিয়ে সুকান্ত একটি গান রচনা করেছিলেন, যেখানে মৃত্যুকে তিনি বরণ করে নিয়েছেন। মরণকে বলেছেন, ‘ নিরব চুমি করিও হরণ ‘। এখানে এসে যেন সুকান্তর সাথে মৃত্যুর সাক্ষাৎ ঘটেছিল।
” হে মোর মরণ, হে মোর মরণ।
বিদায় বেলা আজকে একেলা দাওগো শরণ!…
তোমার বুকে অজানা স্বাদ,
ক্লান্তি আনো, দাও অবসাদ ;
তোমায় আমি দিবস যামী করিনু বরণ।
আমায় তুমি নিরব চুমি করিও হরণ।”

আয়োজন (বর্ণনা)-এ দেখা যায় কবি মৃত্যুকে চিরন্তন সত্য এবং শ্বাশত ও আবহমান কালের সুর বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন।… “বিশ্ব বীনার তারে আজ কোন সুর বেজে উঠেছে, জানো? সে তোমারই বিদায় –বেদনার সকরুণ ওপারের সুর। ” ‘যাত্রা’ (আবৃত্তি)-য় মৃত্যুর জন্য সুকান্তকে ধীরে ধীরে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে দেখা যায় — “অমৃত লোকের যাত্রী হে অমর কবি,/ কোন প্রস্থানের পথে তোমার একাকী অভিযান।/ প্রতিদিন তাই নিজেরে করেছ মুক্ত,/ বিদায়ের নিত্য আশঙ্কায়, “…
কবি যে ঝরে যাবেন তা তার অন্তর জেনেছিল। জেনেছিল বলেই তার এতো কাজ, এতো তাড়া। সুকান্তর ব্যক্তিজীবনে কেবলই মরণের আধিক্য। তাই তিনি লিখেছেন, ‘জন্মেই দেখি এদেশে মৃত্যুরই কারবার ‘। রাণীদি নেই, মা নেই, জ্যাঠা ম’শায় নেই ; এমনকি আর কিছুদিন পর তিনিও বিদায় নিলেন। তবু এই মরণের মাঝে তিনি রেখে গেছেন এক অমর জীবনের জয়গান। ‘হে পৃথিবী’ কবিতায় সুকান্ত বলেছেন,
“তবু তো পথের পাশে পাশে / প্রতি ঘাসে ঘাসে / লেগেছে বিস্ময়! /সেই মোর জয়।”

দেশপ্রেমই ছিলো সুকান্তর মুখ্য বিষয়। দেশপ্রেম আর মানুষের মুক্তিচিন্তাই সর্বদা কাজ করেছে তার মর্মমূলে। সুকান্ত ছিলেন সমাজ সচেতন শিল্পী। মুক্তি কামনায় উন্মুক্ত সুকান্ত মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত যা দেখেছেন আর ভেবেছেন — তা নিয়েই লিখেছেন একজন সৃজনী শিল্পী হিসেবে।… ছাড়পত্র, আঠারো বছর বয়স, চারাগাছ, কলম, দেশলাই কাঠি, বোধন, একটি মোরগের কাহিনি প্রভৃতি কবিতাগুলোর প্রতিটি পংক্তিই সুকান্তর বাস্তব অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ চিন্তার ফসল।…
প্রার্থী কবিতায় সুকান্তর আসল রূপ ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন,
“হে সূর্য! শীতের সূর্য! /হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায় আমরা থাকি / যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ, / ধান কাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে।
….
হে সূর্য! / তুমি আমাদের স্যাঁত-স্যাঁতে ভিজে ঘরে / উত্তাপ আর আলো দিও, /আর উত্তাপ দিও / রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে। ”

… একেবারে স্বল্প আয়ুর লেখক সুকান্ত। তবু তিনি বলে গেছেন অনেক কথা, অনেক কম সময়ে। তাইতো শোষণের বিরুদ্ধে তার বলিষ্ঠ উচ্চারণ। ‘শোনরে মালিক, শোনরে মজুতদার / তোদের প্রাসাদে জমা হলো কতো / মৃত মানুষের হাড় / হিসাব কি দিবি তার? … লক্ষ লক্ষ প্রাণের দাম / অনেক দিয়েছি, উজাড় গ্রাম / সুদ ও আসলে আজকে তাই / যুদ্ধ শেষের প্রাপ্য চাই / আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই / স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই।’

মহাজীবনের সন্ধানে কবি হৃদয় হয়েছে ব্যাকুল, অধীর। যে জীবনে থাকবেনা জরা-ব্যাধি, মৃত্যুভয়, অভাব-অনটন এবং বঞ্চনা। সে উদ্দেশ্যে সুকান্তর সুস্পষ্ট উচ্চারণ, ‘হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয় / এবার কঠিন কঠোর গদ্যে আনো…
ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় / পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’

যুগান্তকারী ‘ছাড়পত্র’ কবিতায় সুকান্তর সাহসী উচ্চারণ আজও বিশ্ববাসীর নিকট এক বিস্ময়!
“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি —
নবজাতকের কাছে আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে,
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাবো আশীর্বাদ।
তারপর হবো ইতিহাস। ”
‘আগামী’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য বলেছেন,
“জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ, / আমি তো জীবন্ত প্রাণ,আমি এক অংকুরিত বীজ ;”

সুকান্ত স্বাস্থ্য পরিচর্যায় সচেতন ছিলেন না। এদিকে সময় দিতেন না, সময়ও পেতেন না ৷ হাজারও কাজ নিয়ে ব্যস্ত তিনি। এরই মধ্যে, কিশোর বয়সেই সুকান্ত অনুভব করলেন তার হৃৎস্পন্দন থেমে আসছে। অবশেষে ধরা পড়লো সুকান্তর যক্ষা হয়েছে। সংবাদটা ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে।’

নিবন্ধটির শেষভাগে ছিলো,
‘বিখ্যাত সাহিত্যিক, রাজনীতিক, অন্যান্য খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গও একটি প্রতিভাকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে তৎপর হয়ে উঠলেন। কিন্তু সমস্ত প্রচেষ্টাই মৃত্যুর অন্ধকার বিবরে হারাতে লাগলো। যাদবপুর টিবি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিলো। চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিলোনা। হাসপাতালে সারাদিন শুয়ে থাকে সুকান্ত। মাঝে মাঝে খবর পায় তার কবিতা বিদেশে অনুবাদ হচ্ছে। বড় বড় কবিদের সঙ্গে তাঁর কবিতাও ছাপা হচ্ছে। চারদিকে বিপুল সমাদর! তার বই ছাপা হচ্ছে। আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই বই বেরুবে। কিন্তু সবকিছুই মিথ্যে প্রমাণিত করে ১৩৫৪ বঙ্গাব্দের ২৯ বৈশাখ সুকান্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।…
মৃত্যু সবসময়ই বেদনাদায়ক। শেলী, কীটস-এর অকাল মৃত্যুও বেদনাদায়ক। সুকান্তর মৃত্যু আরও বেশি বেদনাদায়ক। সুকান্ত যখন মারা যান তখন তার একুশ বছরও পূর্ণ হয়নি। মারা যাবার আগে তাঁর একটি কবিতার বইয়ের ছাপার কাজ চলছিলো। বইটি তিনি দেখে যেতে পারেননি। হাসপাতালের নিরানন্দ পরিবেশে বইয়ের যে ক’টি ফর্মা ছাপা হয়েছিলো তার কয়েক গুচ্ছ হাতে নিয়ে সুকান্তর সে কী চাপা আনন্দ!

শেষ পর্যন্তও সুকান্তর বিশ্বাস ছিলো, সে ভালো হয়ে উঠবে। আবার সে কাজ করবে লক্ষ-কোটি জনতার মাঝে। আবার কবিতা লিখবে। তার স্বপ্নের স্বদেশ সে দেখে যাবে নিজের চোখে। তা আর হয়ে ওঠেনি। যা হয়েছে তা হলো ‘আগামী’ কবিতার আশ্বাস —
“তবুও তোমায় আমি হাতছানি দেবো বারে বারে ; / ফল দেবো, ফুল দেবো, দেবো আমি পাখিরও কুজন / একই মাটিতে পুষ্ট তোমাদের আপনার জন।”

তথ্যসুত্রঃ
১. সাহিত্য চর্চা, বুদ্ধদেব বসু।
২. কালিক ভাবনা, আহমদ শরীফ। ৩. সুকান্ত সমগ্র, বদরুদ্দীন উমর ও রণেশ দাশগুপ্ত সম্পাদিত।
৪. অন্বেষণ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী৷
৫. সুকান্ত – চর্চা, নারায়ণ চৌধুরী।
৬. সুকান্তঃ কবি ও মানুষ, সামাদ সিকদার।
৭. কালের সারথীঃ সুকান্ত, অজিত কুমার মৃদুল।
৮. বাংলা সাহিত্যের খসড়া, শ্রী প্রিয়রঞ্জন সেন৷
৯. Civil Disturbances in India, S. B. Chowdhury.
১০. Elements of Political Knowledge, Progress Publishers, Mosco.
১১. On Poetry and Poets, T. S. Eliot.
১২. স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা, নরহরি কবিরাজ।
১৩. সুকান্তর সমগ্র কবিতা, আব্দুল হাফিজ, রাজশাহী।
১৪. কবি কিশোর সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের রচনা সমগ্র, সম্পাদনায় — রফিক সন্যামত।
১৫. নাজিম হিকমতের কবিতা, অনুবাদ – সুভাষ মুখোপাধ্যায়।

(চলবে)
৩০-০৬-২০২০ ।
রূপায়ণ টাউন, ভুঁইগড়, নারায়নগঞ্জ, বাংলাদেশ।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন