কানাডায় আসার পর দু’টি শব্দ খুউব বেশি শুনেছি। শব্দ দু’টি চাকুরি পাওয়া বিষয়ে। এক- স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ (voluntary work)। দুই- ‘ইউ নেভার নো (you never know)’। যাঁরা আমার আগে কানাডায় এসেছিলেন তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতা বলার সময় উল্লেখিত শব্দ দু’টি ব্যবহার করেছেন। আমিও নতুন কানাডা প্রবাসীদের জন্য এ দু’টি শব্দ নিয়ে কিছু বলতে চাই। কথাগুলো সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে এমন নয়। তবে বিশেষ করে প্রফেশনাল চাকুরি প্রত্যাশীদের জন্য আমার কথাগুলো বিবেচনার দাবী করে।
কানাডা আসার সপ্তাহ খানেক পর নিউকামারদের সেটেলম্যান্ট বিষয়ক এক কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলাম। কর্মশালাটি আয়োজন করেছিল ডেনফোর্থে অবস্থিত একটি নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন। যাঁদের সাথে সেখানে পরিচয় হয়েছিল এখনও তাঁদের অনেকের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। নেটওয়ার্কিং এর শুরু সেখান থেকেই। ভলান্টারি কাজ করার পরামর্শও দেয়া হয়েছিল সেই কর্মশালায়। ভলান্টারি কাজ করার বিষয়টি আমার কাছে যুক্তি সঙ্গত মনে হয়েছে তিনটি কারণে।
প্রথমতঃ চাকুরী প্রত্যাশীদের কমপক্ষে দুই জন রেফারীর নাম, ঠিকানা ইত্যাদি প্রস্তুত রাখতে হয় রেফারেন্স হিসেবে দেয়ার জন্য। কানাডায় আসার পর একজন নতুন অভিবাসীর বাংলাদেশি ছাড়া দু’জন পরিচিত থাকার কথা নয়। তাই সাধারণতঃ নতুন অভিবাসীরা রেফারী হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশিদেরই নাম, ঠিকানা প্রদান করেন। ভলান্টারি কাজ করলে সেখানকার সুপারভাইজরের নাম অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। এক অফিসে ভলান্টারি করলে কমপক্ষে একজনকে আপনি পাবেন যিনি (হয়তবা) বাংলাদেশি নন। দুই জায়গায় ভলান্টারি করলে দু’ জন পাবেন। রেফারেন্স হিসেবে বাংলাদেশিদের নাম ব্যবহার করা দোষের কিছু নয়। বাংলাদেশিদের বাইরেও যদি কাউকে করা যায় তবে আমার মনে হয় চাকুরি প্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। অনেকে মনে করেন ভলান্টারি কাজ করলে পেট চলবে কিভাবে। পেট চালানোর জন্য সার্ভাইবাল জব করা যেতে পারে। কিন্তু প্রফেশনাল জব না পেলে, সেই কাঙ্খিত প্রফেশনাল জব পাওয়ার জন্য ভলান্টারি কাজ করা দরকার হতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, কানাডার কালচারে ভলান্টারি কাজ করা একটি অন্যতম উপাদান। সেজন্য হাইস্কুল থেকেই এখানকার ছেলে মেয়েদের ভলান্টারি কাজ করতে উৎসাহিত করা হয়। চল্লিশ ঘন্টার ভলান্টারি কাজ তাদের কারিকুলামের অংশ। আমি কানাডায় আসার পর এক মাসের মধ্যে একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছিলাম ভলান্টারি কাজ করার জন্য। সেখানে আমাদের প্রশিক্ষণের প্রথম দিন পরিচয় পর্বে প্রত্যেকের কাছে জানতে চাওয়া হলো কেন আমরা ভলান্টারি করতে এসেছি। একজন ষাটোর্ধো নারী বললেন তিনি আগে সেই সংগঠনে নিয়মিত ভাবে অর্থ প্রদান (ডোনেট) করতেন। এখন তাঁর আর্থিক অবস্থা ভালো না। তিনি আর ডোনেট করতে পারছেন না। তাই তিনি ভলান্টারি কাজ করতে চান।
দ্বিতীয় যে কারণে ভলান্টারি কাজ করা দরকার তা হলো অনেকের সাথে পরিচিত হওয়া যায়, নেটওয়ার্কিং হয়। শুধু পরিচিত হলে হয় না। পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। ভলান্টারি কর্মস্থল ত্যাগ করলেও পরিচিতজনদের সাথে, সুপারভাইজারের সাথে মাঝে মধ্যে যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন।
তৃতীয় কারণটি হলো ভলান্টারি কাজ করে কানাডায় কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। অনেকক্ষেত্রে ভলান্টারি কর্মস্থলে চাকুরি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ইতিমধ্যে নতুন অভিবাসীরা হয়তো কানাডার হিডেন জব মার্কেটের কথা শুনে থাকবেন। বিভিন্ন কারণে সব চাকুরির বিজ্ঞপ্তি জব সাইটগুলোতে প্রকাশ করা হয় না । ভলান্টারি কাজ করলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের ইন্টারনাল জব ওপেনিং সম্পর্কে অবগত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ভলান্টিয়ার হিসেবে যিনি ভালো পারফরম করবেন তাঁর সেখানে চাকুরি হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
সব ভলান্টিয়ার কি চাকুরি পাবেন? ইউ নেভার নো। কোথায় আপনি আপনার কাঙ্খিত জবটি পাবেন তা কেউ বলতে পারবেন না। কিন্তু চেষ্টার অংশ হিসেবে ভলান্টারি কাজ করা যেতে পারে। মনের আনন্দের জন্য যদি ভলান্টারি করেন তবে এক বিষয়। আর প্রফেশনাল চাকুরির প্রত্যাশায় ভলান্টারি করলে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। এক জায়গায় তিন মাস ভলান্টারি করার পরও যদি সেখানে চাকুরি লাভের সম্ভাবনা না দেখা যায়, আমার মতে সেখান থেকে প্রস্থান করা উচিত। নতুন কোন সংগঠন খোঁজা দরকার। প্রতিদিন নয়। সপ্তাহে একদিন হলেও আপনার কাঙ্খিত জব পেতে ভলান্টারি কাজ করুন। যে কোন সময় আপনি পেয়ে যেতে পারেন আপনার কাঙ্খিত জব। ইউ নেভার নো।
জাকির হোসেন সরকার/টরন্টো
জুন ২৮, ২০২০।