তৃতীয় পর্ব –

রেইকি। ভাইটাল লাইফ ফোর্স এনার্জি। রেইকি গ্রান্ড মাষ্টার পারল দত্তের সাথে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন দীপান্বিতা নায়ার। নব্বই-এর দশকের সানন্দা থেকে সংগৃহীত।

নানা নতুন তথ্য – রেইকি সম্পর্কে নানা নতুন তথ্যের হদিস দেওয়ার আগে রেইকি প্রসঙ্গে কয়েকটি জরুরী কথা মনে করিয়ে দেয়া দরকার। রেইকি শব্দটা জাপানি। রেইকি মানে “মহাজাগতিক প্রাণশক্তি”। ইউনিভার্সেল লাইফ ফোর্স। এই শাস্ত্রের প্রবক্তারা মনে করেন, এই এনার্জি বা শক্তি প্রাণী থেকে পাথর সব কিছুটা আহরণ করছে যে যার নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী। তারা আরো বিশ্বাস করেন এই লাইফ ফোর্সের কারণেই পৃথিবীটা ঠিকঠাক চলছে। এবার দেখা যাক রেইকি কিভাবে আমাদের আরো ভালোভাবে বাঁচতে সাহায্য করে। রেইকি বিশেষজ্ঞরা বলেন, রেইকি করার সময়ে এই লাইফ ফোর্স এনার্জি স্পর্শের মাধ্যমে অন্যের শরীরে প্রবেশ করে। কারণ এই রেইকি খুবই ইনটেলিজেন্ট এনার্জি। রেইকি পজেটিভ এনার্জি, রেইকি মানুষের শরীরের সব সমস্যাই দূর করে।

এখন প্রশ্ন, একজন কিভাবে এই কসমিক এনার্জির সাহায্য নিতে পারেন। উত্তর – নিজে নিজেকে রেইকি দিয়ে অথবা দু-তিন জন রেইকি জানা মানুষের মাধ্যমে। রেইকি তত্ত্ব চলে আসছে গুরু-শিষ্য পরম্পরায়। একজন রেইকি বিশেষজ্ঞ এই কসমিক এনার্জি বা ভাইটাল লাইফ ফোর্স এনার্জি অ্যাবজর্ব করেন তার শরীরের বিভিন্ন এন্ডোক্রাইন গ্রন্থির মাধ্যমে। এবং এই এনার্জি হাতের মাধ্যমে বাহিত হয়ে তিনি অন্যের শরীরে প্রয়োগ করেন। এরপর রেইকি নিজে নিজেই প্রবাহিত হয় শরীরে। যিনি রেইকি করছেন তিনি হয়তো যে সমস্যার সমাধান খুঁজতে রেইকি করছেন তার থেকে বড় সমস্যা লুকিয়ে আছে বস্তু বা শরীরে। সে ক্ষেত্রে এই ভাইটাল লাইফ ফোর্স এনার্জি পৌঁছে যাবে শরীরের বা বস্তুর বড় সমস্যায়। আগে সেটার সমাধান করবে, পরে যাবে অন্য সমস্যায়। এ কারণে রেইকি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি।

রেইকিতে ক্রনিক রোগ সারে?
অবশ্যই সারে। এর কারণ ৯৯% ক্রনিক রোগ হলো সাইকোসোম্যাটিক। অর্থাৎ এর লক্ষণ শরীরে দেখা দিলেও উৎস থাকে মনে। যেমন ধরুন, আর্থ্রাইটিসের কারণ মনের মধ্যে ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা, অ্যাজমার কারণ মনের মধ্যে বদ্ধতা, নিজেকে ক্রমাগত বেঁধে রাখার চেষ্টা। রেইকি মনের মধ্যে থেকে এই নেগেটিভিটির কারণ সারায়। ফলে রোগ সেরে যায়। প্রথম অবস্থায় রোগী আসেন রেইকি করাতে মনে অবিশ্বাস নিয়ে। তাকে ২১ দিন রেইকি দেয়া হয়। এরপর তিনি রেইকি শিখে রোগ অনুযায়ী যে পয়েন্টে ভাইটাল ফোর্স এনার্জি দরকার সেখানে রেইকি করে সম্পূর্ণ নিরাময় আনতে পারেন। অ্যাজমা, আর্থ্রাইটিস, এলার্জি, আলসার, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে যে কোনো ক্রনিক রোগ রেইকি করে সারানো যায়। তবে রেইকি পদ্ধতি নিয়মিত করে যেতে হবে। আরো একটা কথা যে কোনো ক্রনিক রোগ যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে তা’হলে সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে যাবে।

ইমার্জেন্সি বা আচমকা যন্ত্রণাদায়ক শারীরিক সমস্যায় রেইকি কি কাজ করে?
রেইকি হলো স্লো কিন্তু ষ্টেডি এক চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি কোনো ম্যাজিক নয়। যারা নিয়মিত রেইকি চর্চা করেন তারা কখনোই আচমকা বিপদে পড়বেন না। তবে হঠাৎ আলসার থেকে ব্লিডিং, এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা এই রকম সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ বা সাহায্য নেয়া উচিত। কারণ রেইকি সময় নিবে। তবে কোনো কারণে অস্ত্রোপচার বা ঔষধের মাধ্যমে পরিস্থতি সামাল দেয়ার পর রেইকি করলে হিলিং বা নিরাময় তাড়াতাড়ি হবে।

মুমূর্ষ রোগীকে কি রেইকি বাঁচাতে পারে?
মৃত্যু জীবনের ওনলি সার্টেনিটি, পৃথিবীর কোনো শক্তিই মৃত্যু পথযাত্রীকে বাঁচানোর গ্যারান্টি দিতে পারে না। তবে, রেইকি মৃত্যু যন্ত্রণার উপশম ঘটাতে পারে। মৃত্যু পথযাত্রীকে যন্ত্রণাহীন মৃত্যু দিতে পারে। দূর থেকেও রেইকি করে যাকে বলে ডিসট্যান্ট রেইকি করেও মৃত্য যন্ত্রণায় কাতরকে প্রশান্ত মৃত্যু দান করা যেতে পারে।

রেইকি কি অন্য চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে চলতে পারে?
যদিও রেইকি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি, তবু অনেক সময়ে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি রেইকি করা হয়ে থাকে ট্রিটমেন্ট তাড়াতাড়ি করার জন্য। মানুষ যখন অসুস্থ হন তখন ভেতরে ভেতরে একটা স্ট্রেস, একটা উৎকন্ঠা থেকেই যায়। অসুখের জন্য কিছুটা যন্ত্রণাও থাকে। হোমিওপ্যাথি, এলোপ্যাথি বা আয়ুর্বেদিক যে পদ্ধতিতেই চিকিৎসা হোক না কেনো সঙ্গে সঙ্গে সমান্তরালভাবে রেইকি করলে রোগীর মানসিক ও শারীরিক কষ্ট দূর হয়। ফলে রোগী চিকিৎসাকালীন স্ট্রেস থেকে মুক্তি পান। এছাড়া যেহেতু রেইকি লাইফ ফোর্স এনার্জি বৃদ্ধি করে তাই যে পদ্ধতিতেই চিকিৎসা চলুক না কেনো শরীর রেসপন্স করে বেশি করে। ফলে পরোক্ষভাবে রেইকি চিকিৎসা পন্থার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

রেইকি চিকিৎসার সময়ে কি গহনা খুলে ফেলা উচিত?
রেইকি বা এই ভাইটাল লাইফ ফোর্স এনার্জি যেহেতু পৃথিবীর যাবতীয় জড় বা প্রাণবস্তুর মধ্যে আছে তাই কোনো কিছুই রেইকি আটকাতে পারে না। সবকিছুর মধ্যে দিয়েই ফ্লো অবাধ। তাই নিয়মিত যে সব গহনা আপনি পরে থাকেন সেগুলি পরে থাকতেই পারেন। সেগুলি শুরুর দিকে কিছুটা এনার্জি শুষে নেবে এবং শুষে নিয়ে এনার্জাইজড হয়ে যাওয়ার পরে আর কোনো সমস্যা তৈরী করবে না। তবে যে গহনাগুলির সাথে শরীর নিয়মিত অভ্যস্থ নয় অর্থাৎ বাড়তি গহনা না পরাই ভাল। কারণ এতে গহনাগুলি রেইকি শুষে নেবে ফলে প্রয়োজনীয় পয়েন্টে পর্যাপ্ত এনার্জি পৌঁছবে না।

রেইকি করার আদর্শ সময় কখন?
যে কোনো সময়েই রেইকি করা যেতে পারে। রেইকি করার জন্য আলাদা কোনো সময় নেই। নিজেকে রেইকি করার সবচেয়ে আদর্শ সময় ভোর বেলা। কারণ তখন দিনের ব্যস্ততার কনসেনট্রেশান হারানোর ভয় নেই। চারদিক শান্ত থাকে। রাতের বিশ্রামের পর শরীর তরতাজা থাকে তাই এই সময়ে এনার্জি অ্যাবজর্ব ভালো হয়। আমাদের শরীর খুব রিসেপটিভ থাকে। ভোর চারটে থেকে ছয়টা হলো ব্রাহ্ম মুহূর্ত। যে কোনো ভালো কাজ এই সময়ের মধ্যে করলে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। তাছাড়া এই সময়ে কসমস থেকে একটা স্পেশাল রে পৃথিবীতে আসে। এবং সেটা আমাদের শরীরের পক্ষে বিশেষ উপকারী যে কারণে মন্দিরের ঘন্টা চারটায় বাঁজে। তখন তাহাজ্জুদ নামাজের সময়। গীর্জায় ঘন্টা বাঁজে ঐ সময়ে। হিলিং পাওয়ার খুব বেশি এই কসমিক রে – এর। আর রশ্মির ফলে এই সময়ে ভাইটাল লাইফ ফোর্স এনার্জি আরো জোরদার হয়।

যে কোনো যন্ত্রপাতি কি রেইকির মাধ্যমে সারানো যায়?
নিশ্চয়ই সারানো যেতে পারে। যে কোনো জিনিস যখন খারাপ হয়ে যায় তখন সেটা ভালো করতে গেলে দরকার এনার্জি। একবার একটি টেপরেকর্ডার খারাপ হয়ে যাওয়ার পর ১২ মিনিট রেইকি করে সেটা সাত দিন চলেছিলো। তবে অনন্তকাল রেইকি জিনিস সারাতে পারে না। আসলে রেইকি এইসব ক্ষেত্রে সঙ্কটমুক্তির কাজ করে। যেমন – হঠাৎ আপনার বাড়িতে সকালে গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না। আপনি রেইকি দিলেন, হয় গাড়ি স্টার্ট হলো না হয় এমন একজন অপ্রত্যাশিত বন্ধু এলেন যিনি স্টার্ট করে দিলেন। ফুয়েল নেই গাড়িকে রেইকি দেয়া হয়েছে এবং পাম্প অবধি গাড়ি চলে গিয়েছে এমন উদাহরণও রয়েছে। আসলে রেইকি সাময়িক বাড়তি এনার্জি দিয়ে আপনাকে এমন একটা পরিস্থিতি অবধি পৌঁছে দিবে যখন আর ক্রাইসিস নেই। একটা কথা মনে রাখবেন, আমাদের চারপাশে যেসব যন্ত্রপাতি বা নিত্য ব্যবহার্য জিনিস রয়েছে সেগুলির সাথে আমাদের মনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের মেন্টালিটি ডেফিনিটলি প্রভাব ফেলে আমাদের যন্ত্রপাতির উপরে। দেখবেন যে দিন আপনার মন মেজাজ বিগড়ে আছে সে দিন আপনার চারপাশের যন্ত্রপাতিও ঠিকঠাক চলছে না।

– চলবে

ছবি – রেইকি গ্রান্ডমাষ্টার পারুল দত্ত।
(তিনি আমার রেইকি’র শিক্ষক)

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধপশ্চিমা দেশগুলোতে ওল্ড হোম আমাদের ধারনা
পরবর্তী নিবন্ধকিছু ভাবনা
কামাল উদ্দিন
লেখক পরিচিতি: কামাল উদ্দিন (জন্ম: ১৯৫৮) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে "বাংলা সাহিত্যে" স্নাতকোত্তর (১৯৮২) সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি ফটোগ্রাফি চর্চা করেন। বেগার্ট ইনষ্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি থেকে ডিপ্লোমা-ইন-ফটোগ্রাফি (১৯৯০) এবং বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি'র (বিপিএস) যোগ্যতা বোর্ড থেকে ১৯৯০ সালে "সিনিয়র গ্রেড ফটোগ্রাফার" "লাইসেনসিয়েটশীপ" (এলবিপিএস) অর্জন করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর প্রকাশিত বই "সহজ আলোকচিত্র" ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় এবং "আলোকচিত্র সহজ ও উচ্চতর" (২০০২ সালে) ভারত হতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ সুধীজন পাঠাগারে অবৈতনিক গ্রন্থাগারিক হিসাবে নয় বৎসর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য। " কামাল হাসান" ছদ্মনামে সাহিত্য চর্চা করেন। তিনি "কথন" আবৃত্তি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা ও এক বৎসর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন