বাংলাদেশে গাড়ির জালানির নাম পেট্রোল, নর্থ আমেরিকায় বলা হয় গ্যাস। “এক দেশের গালি, আরেক দেশের বুলি”। বাথরুমের নাম হয়েছে ওয়াশরুম। প্রতিটি গ্যাস স্টেশনে রয়েছে ওয়াশরুম। রেস্টুরেন্ট, কফি, ডোনাটের দোকানেও ওয়াশরুম থাকা বাধ্যতামূলক। গ্যাস নেয়ার পর অনেকেই ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। গাড়িতে গ্যাস নেয়ার পর পেমেন্ট পরিশোধ করতে হয়। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম সর্বত্র। গ্যাস প্রি পেইডের ব্যবস্থাও রয়েছে। অগ্রিম টাকা পরিশোধের পর গ্যাস নেয়া যাবে। গ্যাস নেয়ার জন্য গাড়ি যথাস্থানে রেখে গ্যাস প্রাপ্তির ক্লিয়ারেন্স মিলছে না। তাকিয়ে দেখি প্রি পেইড স্টেশন এটি। আমারই ভুল হয়েছে। আবার গাড়ি সরিয়ে অন্য একটাতে নিয়ে যাবো। “আলস্য সকল দোষের আকর”। অপরদিকে জল বিয়োগের চাপ অনুভব করছি। ভিতরে গিয়ে গ্যাস ক্রয়ের জন্য ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অগ্রিম বিশ ডলার পরিশোধ করি। জলবিয়োগের পর গাড়ির কাছে এসে আমার সীটের দরজার কাছ এসে চক্ষু চড়ক গাছ। গ্লাসে চোখ পড়তেই দেখি ফোন আমাকে হাই বলে সে তার নিঃসঙ্গতা প্রকাশ করে। ভুল করে ফোন রেখে গিয়েছিলাম। ফোনের টানে অগ্রিম পরিশোধকৃত গ্যাসের কথা ভুলে যাই সাথে সাথে।

গত বৎসর লেকের পাড়ে সূর্যরশ্মির ছবি তুলেছিলাম। লেকটি এই গ্যাস স্টেশনের পাশেই। গতকাল তুষারপাত হয়েছে। ভাবলাম যাই তাহলে ছবি তুলি। “ওইখানে যেওনাকো তুমি, বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে”।
ঘাস তুষারাচ্ছিত হলেও আমার হৃদয় আজ ঘাস না। তুষার ও লেক আমাকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের সাথে কথা বলার জন্য। লেক ও তুষারের সাথে কথা বলা শেষে দুপুরে বাসার কাছে এসে ফুয়েল গেইজে তাকিয়ে দেখি গ্যাস নেই নাই। টরেন্টোতে পেট্রো কানাডা, শেল এবং এসও – এই তিনটি প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে গ্যাস বিক্রীর জন্য। পরদিন বিকালে এসও-এর ওয়ানএইটহান্ড্রেড নাম্বারে কাষ্টমার সার্ভিসে ফোন করি। দেখো আমারই ভুল হয়েছে, এডভান্স পেমেন্টের পর আমি গ্যাস নিতে ভুলে গেছি। এখন আমি কিভাবে সমমূল্যের গ্যাস পেতে পারি, তুমি সে ব্যবস্থা করে দিলে ভাল হয়। তোমাদের ঐ গ্যাস স্টেশনে গিয়ে আমি গ্যাস নিতে পারবো না। কারণ আমার বাসা ঐ স্টেশন থেকে অনেক দূরে। কাষ্টমার সার্ভিস থেকে জানালো, তুমি তোমার ই-মেইলে গিফট কার্ড পাবে। তোমার নিকটস্থ গ্যাস স্টেশনে গিয়ে ফোন থেকে গিফট কার্ড স্ক্যান করে গ্যাস নিতে পারবে। রাতে খাবারের সময় গ্যাস স্টেশন থেকে ম্যানেজার ফোনে জানালো, দেখো তুমি আমি তো একই নেইবারহুডে থাকি। তুমি সরাসরি আমাকে ফোন করলেই পারতে। অথবা সরাসরি আমার দকানে আসলেই পারতে। টাকা তোমার কার্ডে পাঠিয়ে দিয়েছি। আচ্ছা, টাকা রিইমবার্স করার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি তোমার এলাকা থেকে অনেক দূরে থাকি। ঠিক আছে, গোগল মামাকে জিজ্ঞেস করলে আমার ফোন নাম্বার পেয়ে যেতে।

রোজই ই-মেইলে চোখ রাখি। বেশ কয়েকদিন পর দেখি এসও-এর ই-মেইল। শুভষ্য শীঘ্রম ইলেকট্রনিক গিফট কার্ডের সদ্ব্যবহার করা উচিত। গ্যাস স্টেশনে গিয়ে ফোন থেকে ই-মেইলে প্রাপ্ত গিফট কার্ডটি দেখিয়ে স্ক্যান করে বিশ ডলারের গ্যাস নেই। প্রতিটি বড় প্রতিষ্ঠানে পয়েন্ট কার্ড থাকে। যে কোন কিছু ক্রয়ের পর পয়েন্ট কার্ড স্ক্যান করে নিলে ক্রেতা লাভবান হয়। এসও-এর পয়েন্ট কার্ডে যে পরিমান পয়েন্ট জমেছে, তা থেকে পয়েন্ট রিডিম করে আবার বিশ ডলারের গ্যাস নেই।

ক্রেডিট কার্ডের কাস্টমার সার্ভিসকে ফোন করি। সে জানালো, তারা তোমার টাকা হোল্ড করেছিল। তুমি গ্যাস নিতে ভুলে যাবার কারণে ম্যানেজার তোমার কার্ড থেকে টাকা নেয়নি। কি দারুণ মজার ঘটনা তাহলে, ভুলের কারণে বিশ ডলারের ফ্রি গ্যাস পাওয়া গেল। ভুল করলে ক্ষতি হয়, ভুল করে আবার লাভও হয়। “ভুল সবই ভুল এ জীবনের পাতায় পাতায়”।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসহজ_কথা
পরবর্তী নিবন্ধবাড়িয়ে দাও হাত-পর্ব ১৬
কামাল উদ্দিন
লেখক পরিচিতি: কামাল উদ্দিন (জন্ম: ১৯৫৮) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে "বাংলা সাহিত্যে" স্নাতকোত্তর (১৯৮২) সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি ফটোগ্রাফি চর্চা করেন। বেগার্ট ইনষ্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি থেকে ডিপ্লোমা-ইন-ফটোগ্রাফি (১৯৯০) এবং বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি'র (বিপিএস) যোগ্যতা বোর্ড থেকে ১৯৯০ সালে "সিনিয়র গ্রেড ফটোগ্রাফার" "লাইসেনসিয়েটশীপ" (এলবিপিএস) অর্জন করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর প্রকাশিত বই "সহজ আলোকচিত্র" ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় এবং "আলোকচিত্র সহজ ও উচ্চতর" (২০০২ সালে) ভারত হতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ সুধীজন পাঠাগারে অবৈতনিক গ্রন্থাগারিক হিসাবে নয় বৎসর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য। " কামাল হাসান" ছদ্মনামে সাহিত্য চর্চা করেন। তিনি "কথন" আবৃত্তি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা ও এক বৎসর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন