দেখতে পুডিং এর মত। তবে রংটা রক্ত লাল। খাবার টেবিলে সাজিয়ে দেয়া বিভিন্ন খাবার আইটেমের মধ্যে এটাকেই আমার সন্দেহজনক মনে হলো। ভিন দেশে গিয়ে খাবার খাওয়ার আগে আমি সবসময় কোনটা কী দিয়ে তৈরি, কী জিনিস তা জিজ্ঞেস করি। এটা আমার অভ্যাস। সুতরাং পুডিংসদৃশ আইটেমটা কী জিজ্ঞেস করলাম। উত্তর শুনে খাবার আগ্রহ চলে গেল। আমাকে বলা হলো, ’চিকেন ব্লাড’। ঘটনাটা ঘটেছিল মিয়ানমারে। খাবার-দাবার নিয়ে আমার আরো দু’একটি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

ফিলিপাইনে সারাদিন ট্রেনিং শেষে সবাই ক্লান্ত। ফিলিপাইনের আয়োজক সংগঠনের একজন সহকর্মী আমাকেসহ আরো কয়েকজনকে ডিম খাওয়ানোর প্রস্তাব দিলেন। রাস্তার ধারে বিক্রি করে সেই ডিম। আমি ভাবলাম, মনে হয় বাংলাদেশে রাস্তার পাশে যেভাবে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে সেরকম সিদ্ধ ডিমই হবে। ডিম খাওয়া হবে, আশে পাশে একটু ঘুরাঘুরিও হবে। সবাই মিলে ডিম খেতে গেলাম। ডিম একটা একটা করে দেয়া হচ্ছে। প্রথমটা আমাদের ফিলিপাইনের সহকর্মী নিলেন। আমিতো ভাবলাম, তিনিতো অতিথি হিসেবে আমাদের কাউকে প্রথমে ডিমটা দিতে পারতেন। পরক্ষণেই আমার ভুল ভাঙ্গলো। এই ডিম খাওয়ার বিশেষ কায়দা-কানুন শেখানোর জন্যই তিনি প্রথম ডিমটা নিয়েছেন। কায়দা-কানুন দেখেই আমার সন্দেহ! মুরগীর ডিম খাব কিন্তু কীভাবে খেতে হবে তা শেখানোর কী আছে। বিষয়টা কী জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তর পেলাম, ‘…ইনসাইড চিকেন’। ডিমের ভিতরে ছোট মুরগীর বাচ্চা। সবাই খুব মজা করে খেল! আমি তাঁদের দেখলাম।

চীনে খাবার টেবিলে একটা আস্ত মাছ দেয়া হলো। কয়েকজন সহকর্মী মিলে সেই বড় মাছটি খাব। মাছতো খাওয়া যাবে। আমাকে জিজ্ঞাসা করেই মাছের অর্ডার করা হয়েছে। না হয় আমার চাইনিজ সহকর্মীরা হয়তবা আশে পাশের টেবিলের অনেকের মত বিশেষ কায়দায় তৈরি করা ছোট ছোট শামুক খেতেন। যাহোক, মাছ খেতে গিয়ে মাছ থেকে যেভাবে রক্ত বের হচ্ছিল আমি আর শেষ পর্যন্ত মাছ খেতে পারিনি।

আফগানিস্তানের কাবুলে ছিলাম কয়েকদিন। প্রথম দু’দিন শুকনা ও শক্ত রুটি-মাংস খেয়ে অতীষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম। কাবুল অফিসের একজন সহকর্মী ’রাইস’ খাব কিনা জানতে চাইলেন। প্রস্তাবটা যে লুফে নিব বুঝতেই পারছেন। কিন্তু সেই রাইস দেখে বুঝতে পারছিলাম না যে “এটা কি রাইসের মধ্যে কিসমিস দেয়া হয়েছে, না কি কিসমিসের মধ্যে কয়েকটি রাইস দেয়া হয়েছে।” আমি কিসমিস পছন্দ করি না। তাই কিসমিসগুলো আলাদা করার পর হাতেগুনা কয়েকটা রাইস পেলাম। কাবুলে আমার এক বাংলাদেশি সহকর্মী স্বপরিবারে বসবাস করতেন। তিনি আমার খাবারের সমস্যাটা উপলব্ধি করলেন। বাকী যে কয়টা দিন কাবুল ছিলাম, তিনিই আমাদের গেস্ট হাউজে খাবার পাঠিয়েছিলেন। 

লাইবেরিয়া আমি স্বপরিবারে ছিলাম। তাই খাবার নিয়ে আমার কোন সমস্যা হয়নি। তবে সেখানে আমাদের অফিসিয়াল প্রোগ্রামে যে খাবার দেয়া হত সেটা আমার কাছে অন্য রকম মনে হয়েছে। প্রায় সবসময়ই সেখানে একধরনের তরকারী দেয়া হতো যা মাছ, শুটকী ও মুরগীর মাংসের মিশ্রণ। তরকারিটি উল্লেখিত তিনটি আইটেম দিয়ে একসাথে রান্না করা হতো। মনরোভিয়ায় যে মুরগী পাওয়া যেত তা অনেকটা আমাদের দেশি মুরগীর স্বাদের। বাসার আশে পাশে ফেরি করে মুরগী বিক্রি করা হতো। তবে সেই মুরগী বিক্রেতারা খাওয়ার জন্য বানরসহ আরো অন্যান্য বণ্যপশুও বিক্রি করতেন।

আমার এক বাংলাদেশি সহকর্মী চীনে গিয়ে সাপ খেয়ে এসে তা কতটা সুস্বাদু বর্ণনা করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, জাকির আপনি কখনো সাপ খেয়েছেন? না, আমি খাইনি। আমার বড় মেয়ে নুহা স্কুইড খায়। একদিন বাসায় এনে আমাকে অনেক জোরাজোরি করে। আমি বললাম, না মা, আমি খাব না। সে বলল, কেন? আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, আমি যা খাই তুমি কি সব খাও। আমি মাছ খাই, তুমি খাও না। আমি গরুর মগজ পছন্দ করি, তুমি কর না। খাবার পছন্দ-অপছন্দের তালিকা অনেক দীর্ঘ হবে। আমি সেই তর্কে যেতে চাই না। তোমার যা পছন্দ, তুমি খাও। আমার যা পছন্দ আমি খাব। অন্যদের যেটা পছন্দ সেটা তাঁরা খাবে, আমার তাতে কিছু যায় আসে না। 

টরন্টো

মার্চ ০৬, ২০২১।

১ মন্তব্য

  1. মালয়েশিয়াতে হালাল ফুড সর্বত্র। নন হালাল বড় করে লেখা থাকে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন