তৃতীয় বিশ্ব একটি অপ্রচলিত শব্দ যা প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বের দেশগুলির সংঘর্ষের ফলে যে দেশগুলি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল তাদের বুঝানো হয়ে থাকে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান এবং কিছু পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ যেখানে উন্নত গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে- এ সব দেশকে প্রথম বিশ্বের দেশ বলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বের দেশগুলি যেমন বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, মঙ্গোলিয়া, উত্তর কোরিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন; এ সব দেশগুলি কমিউনিস্ট বা পরিকল্পিত অর্থনীতি ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত। তৃতীয় বিশ্ব- দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বুঝানো হয়, এ সব দেশ গণতন্ত্রহীনতা, অর্থনৈতিক মন্দ বা দুর্নীতির জন্য অবমাননাকর হিসাবে ও দেখানো হয়। এ সব দেশের অধিকাংশ-ই দুর্নীতিগ্রস্ত গণতন্ত্র ও অর্থনীতি , শাসনতান্ত্রিক অরাজকতা থাকার জন্য তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে । এ সব দেশে সীমাহীন সমস্যা, অদক্ষ শাসন ব্যবস্থা, ক্ষমতাসীন লোভী শাসকগুষ্টি জনগণের কাজ করার পূর্বে নিজেদের স্বার্থকে বড় করে দেখে এবং পরিকল্পিত শোষণ ব্যবস্থা চালু করে। ক্ষমতাসীন সরকার নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিরীহ জনগণের মতামত উপেক্ষা করে, বর্জুয়া বাহিনী দিয়ে ভয়ভীতি, গুম, খুন করে দূরে সরিয়ে রাখে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে জবাবদিহিতার অভাব, দেশ শাসনের নামে জনগণের অর্থ যথা কোষাগার লুন্ঠন,বিদেশী ব্যাংকে অর্থ পাচার , বাড়ি ঘর, ব্যবসা বাণিজ্য খরিদ করে; এক সময় তল্পিতল্পা নিয়ে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। কাজের নামে ফাঁকি,নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে কি ভাবে চাপানো যাবে এ নিয়ে মহা ব্যস্ত থাকে ।

দক্ষিন আফ্রিকার নাম স্বরণে আসলেই শ্রদ্ধার সঙ্গে একটি নাম চোখের সামনে ভেসে উঠে আর তা হলো ” নেলসন মেন্ডেলা “, যে সারাজীবন দেশের অবহেলিত জনগণের মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন । এ জাতীয় কিছু কিছু মানুষ সময় সময় পৃথিবীতে আগমন করে , আলোর বর্তিকা হাতে নিয়ে জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখায় । নেলসন মেন্ডেলার ত্যাগের বিনিময়ে পরাধীনতার শিকল থেকে একটি জাতিকে মুক্ত করেছেন ; এই সে ব্যক্তি যার নামে সারা বিশ্বে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সড়ক ও বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠানের নাম করণ করা হয়েছে। নেলসন মেন্ডেলা তাঁর কঠোর পরিশ্রমের জন্য শান্তি কমিটি কতৃক ” নোবেল পুরস্কার ” পেয়েছিলেন ।

১৯৪৪ সালে ছাত্র রাজনীতিতে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে (এএনসি) মেন্ডেলা যোগ দেন , কৃষ্ণাঙ্গ-মুক্তিকামি দল, এবং এর নেতা হিসাবে যোগ দিয়ে জাতিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখান । নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন একজন কিংবদন্তি নেতা যিনি দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বিশ্বের স্বাধীনতাকামি মানুষের ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করার পথ দেখিয়েছিলেন। তিনি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানবতাবাদী হিসাবে ব্যাপকভাবে বিবেচিত হন ।

তাঁর বিশেষ কয়েকটি দিক হল:
১ ) তিনি ও তাঁর দলের জনগণ কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে বর্ণবৈষম্য, জাতিগত বিচ্ছিন্নতা এবং নিপিড়িত শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মৌলিক অধিকার আদায় করেছিলেন । শ্বেতাঙ্গ সরকারের নিপীড়নে মেন্ডেলা ও তার দলের অধিকাংশ নেতৃস্থানীয় লুকিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা (আন্ডারগ্রাউন্ড একটিভিটিস) করতে হয়।
২) মেন্ডেলা মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করেন । তিনি অবিচার, নিপীড়ন এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশের ভিতর এবং বাইরের মুক্তি আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন।
৩) তিনি সাহস, সহানুভূতি এবং প্রজ্ঞা দিয়ে বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন যে একজন ব্যক্তি তার কর্মের মাধ্যমে পার্থক্য তৈরি করতে পারে। তিনি দেখিয়েছেন ক্ষমা করা, ঘৃণা, সহিংসতা প্রতিশোধের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। মেন্ডেলা শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে একত্রে কাজ করার নিদর্শন দেখিয়েছেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন যে “বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় গৌরব নিজের বা জাতির পতন নয়, বরং উত্থানের মধ্যে নিহিত।
৪) তিনি একজন সত্যিকারের একজন রাষ্ট্রীয় নায়ক ছিলেন, যিনি বিশ্বকে আরও ভাল জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন ।
৫ ) তাঁর জীবনের উৎস ছিল “আমি নিজের দেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করবো, আমি আমার নিজের ও দেশের পথ নির্দেশক “। মেন্ডেলা ক্ষমতার লোভী ছিলেন না, তিনি একবারের বেশি দেশের নেতৃত্ব দেন নি বা পরিবারের কাউকে টেনে ক্ষমতার মসনদে বসাতে চান নি। তাঁর মতে “জনগণ ক্ষমতার উৎস এবং জনগণ যাকে পছন্দ ক্ষমতায় বসাবে”।

দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনের ইতিহাস শুরু হয় ১৬৫২ সালে, ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ দেশে ব্যাবসার উদ্দেশ্যে এসে উপনিবেশ স্থাপন করে এবং ১৮৬১ সালে যুক্তরাজ্য কর্তৃক সংযুক্ত হওয়ার আগে প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এই দেশ ডাচ শাসনের অধীনে ছিল। সেই সময়, দক্ষিণ আফ্রিকা ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত সংখ্যালঘু লোকের শাসন ব্যবস্থা ছিল, যাদের বেশিরভাগই এখনও ডাচ বংশোদ্ভূত । বর্তমানে এই দেশে লোকসংখ্যা ৬১ মিলিয়ন এর মাত্র ৫ মিলিয়ন শ্বেতাঙ্গ যা মূল জনসংখ্যার ১২% ।

সে যুগে ট্রেনে যাতায়াতের জন্য কৃষ্ণ এবং শ্বেতাঙ্গদের কম্পার্টমেন্ট আলাদা ছিল। একবার গান্ধী ১৮৯৩ সালের ৭ ই জুন ডারবান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া যাচ্ছিলেন, তাঁকে প্রথম শ্রেণীর গাড়ি থেকে তৃতীয় শ্রেণীর বগিতে যেতে বলা হয়েছিল, যদিও তার কাছে বৈধ প্রথম শ্রেণীর টিকিট ছিল। তিনি আদেশ মানতে অস্বীকার করেছিলেন এবং পিটারমারিৎজবার্গ স্টেশনে জোর করে ট্রেন থেকে সরানো হয়েছিল। এই ঘটনা গান্ধীর জীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল (Turning point ) এবং ভারতের অহিংস প্রতিরোধের মাধ্যমে জাতিগত বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাকে অনুপ্রাণিত করে।

গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্য নিয়ে এই উপলব্ধির মুখোমুখি হয়েছিলেন যে ভারতীয় (ব্রাউন ইন্ডিয়ান) হওয়ার কারণে তিনিও এর শিকার হয়েছেন । তিনি একজন আইনজ্ঞ ব্যাক্তি হওয়া স্বত্বে ও আলাদা কোনো মর্যাদা পান নি। তাঁর দেশ ভারতে স্বেতাঙ্গরা এ ধরণের ঘৃণার উপলব্ধি নিয়ে দেশ শোষণ করে যাচ্ছে। কাজেই তাঁর কাজ হবে আর বিলম্ব না করে ভারত থেকে বিপ্লব করে শ্বেতাঙ্গদের বিতাড়িত করা ।
গান্ধী ভারতীয় এবং আফ্রিকান কৃস্নাঙ্গদের সমান দৃষ্টিতে দেখতেন, ওদের স্বাধীনতা অর্জন এবং শ্বেতাঙ্গদের মতো একই অধিকার ভোগ করার জন্য পরিকল্পনা ও প্রচার করতেন ;যে জন্য গান্ধী শ্বেতাঙ্গদের দৃষ্টিতে একজন শত্রু ; কৃস্নাঙ্গ এবং ভারতীয়দের মদদ দাতা হিসাবে আখ্যায়িত হন, ফলে ওকে নিরাপদ মনে করতেন না। তাছাড়া ভারতে হিন্দু, পার্সি, মুসলিম ও খ্রিস্টানবণিক ও শ্রমিকদের আত্মরক্ষাহীনতা প্রত্যক্ষ করে গান্ধী মনে করতেন ইউরোপীয় প্রশাসকদের দ্বারা সৃষ্ট শত্রুতার একটি চক্র এখানে ও রয়েছে, যাদের উৎখাত করা প্রয়োজন ।

বর্ণবৈষম্য শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী (এ এন সি ) দল ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে ধারাবাহিক পদক্ষেপের (মেন্ডেলাকে মুক্ত করে) মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগ্রাম শেষ করে ১৯৯৪ সালে গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের দিকে পরিচালিত হয়।

তবে তাঁকে এর জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে ; শ্বেতাঙ্গদের উৎখাত করার ষড়যন্ত্রের জন্য ১৯৬২ সালে গ্রেপ্তার করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল; গণ জাগরণের মাধ্যমে অবশেষে তিনি মুক্তি পান। ১৯৯০-এর দশকে সার্বজনীন ভোটাধিকারের পক্ষে বর্ণবৈষম্যের অবসানের ফলে ম্যান্ডেলাসহ দক্ষিণ আফ্রিকার লাখ লাখ মানুষ প্রথমবারের মতো ভোট দিতে সক্ষম হন। এভাবে ভারতের মতো বহু দেশ উপনিবেশ শাসনের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা আজ জীবিত নেই ;তবে তাঁর দেশ স্বাধীন হিসাবে বেঁচে আছে এবং চিরদিন থাকবে এবং ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে তাঁর নাম লেখা থাকবে।
ডাচ, পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশরা বিভিন্ন কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। সে সময় সুয়েজ ক্যানাল ছিল না, তার পরিবর্তে এই পথে এশিয়া,ইউরোপ এবং আফ্রিকার বাণিজ্য জাহাজ চলাচল করতো। গুরুত্বের দিকে বিবেচনা করে ব্রিটিশ, ফরাসি এবং ডাচ সরকার বাণিজ্য পথ রক্ষার জন্য কেপে একটি স্থায়ী উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।পর্তুগিজরা প্রথম ইউরোপীয় যারা দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রেখেছিল এবং আজকের কেপ টাউনের অঞ্চলটিকে “দ্য কেপ অফ গুড হোপ” নামকরণ করেছিল। তাছাড়া দক্ষিন আফ্রিকা এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে কৃষ্ণাঙ্গ দাস জোর করে ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো দেশগুলিতে বিক্রি করা হতো।


কালা পানি কি?
বিদ্রোহী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মোকাবেলা করার জন্য ব্রিটিশদের দ্বারা প্রবর্তিত একটি শাস্তি মূলক ব্যবস্থা , যারা তাদের ঔপনিবেশিক শাসনের জন্য হুমকি স্বরূপ ছিল। দোষী সাব্যস্ত এবং রাজনৈতিক বন্দীদের ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে,ক্যারিবিয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস এবং ফিজি অবস্থিত উপনিবেশগুলিতে পাঠিয়ে দিতো।

আপনি যেখানেই যাবেন, সেখানেই নিজের দেশের লোক না পেলে ও ভারতীয় পাবেন এবং ওরা যত দূরেই থাক না কেন; নিজেদের ভাষা এবং কৃষ্টি ছেড়ে দেয় নি। এক সময় নাইজেরিয়ায় সরকারি চাকুরী করতাম ; প্রতি শনিবারে ওখানকার টেলিভিশনে ভারতীয় হিন্দি মুভি দেখানো হতো । আমাদের সহ- কর্মীদের কেউ কেউ হিন্দি মুভির কথোপকথন বা গান বুঝতে না পেরে আমার মতো অনেকের সঙ্গে আলাপ করতো; আমি নিজেও ভালো হিন্দি বা উর্দু জানিনা, তথাপি কিছু না কিছু বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করতাম।

শত শত বৎসর ইউরোপীয়রা সারা পৃথিবী জোর করে শাসন ও শোষণ করে নিজেদের দেশ সমবৃদ্ধ করেছে । এখনো ও ব্রিটিশদের অনেক উপনিবেশ রয়েছে এবং স্বাধীনতা না দিয়ে নিজেরা ভোগ দখল করে যাচ্ছে। ১৯৮২: ফকল্যান্ড যুদ্ধ, যা দক্ষিণ আটলান্টিক যুদ্ধ নামে পরিচিত, আর্জেন্টিনা এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ । যুদ্ধের প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ড দখলে রাখতে পারবে। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারে নি। যুক্তরাজ্য তার দেশ থেকে ৮,০৫০ মাইল দূরে গিয়ে ১৭৬৫ থেকে এই দ্বীপ দখল নিয়েছিল, যা আজ ও তাদের হাতছাড়া হয় নি ।
ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা নিজেদের দেশীয় পণ্য আফ্রিকাতে বিক্রি করত, পরিবর্তে তারা আফ্রিকানদের কাছ থেকে ক্রীতদাস নিয়ে আমেরিকাতে প্রচুর মুনাফা পেতো। এ ছাড়া তারা আফ্রিকান ও ভারতীয়দের দিয়ে চিনি, তামাক এবং তুলার মতো কাঁচামাল উৎপাদন করতো । ব্রিটিশ জাহাজগুলি ব্যবসা শেষ করে দেশে ফিরে যাওয়ার আগে ব্রিটেনে বিক্রি করার জন্য চিনি এবং রাম(মদ) বোঝাই করে নিয়ে যেত।

আমেরিকায় যারা দাসত্বের শিকার হয়েছিল তাদের করুন কাহিনী এবং নিপীড়ণের কথা স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র আমেরিকায় আফ্রিকার ক্রীতদাসদের নাগরিকত্ব রক্ষার জন্য তাঁর জীবন দিয়ে গেছেন।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, একজন আফ্রিকান-আমেরিকান ধর্মযাজক এবং নাগরিক অধিকার নেতা; তিনি সারাজীবন কৃষ্ণাঙ্গদের স্বাধীন এবং আমেরিকার নাগরিকত্বের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। তাঁকে জীবন দিতে হলো টেনেসির মেমফিসের লরেন মোটেলে; ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬:০১ মিনিটে আততায়ীর গুলিতে বিদ্ধ হয়ে । তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট নেতা এবং নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী ছিলেন। আজ ও আমেরিকায় মার্টিন লুথার কিং দিবস পালিত হয়।


ভারতের অবিভক্ত পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার তিন স্বনাম ধন্য জনাব এ কে ফজলুল হক,হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম মুসলমান হওয়া স্বত্বে ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার ভোটে প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন। সব চেয়ে মজার ব্যাপার এই যে এরা কেউ বাংলাকে বিভক্ত করার পক্ষে ছিলেন না। ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলার প্রধানমন্ত্রী ও মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনায় বাংলা বিভাজনের বিরোধিতা করে নয়া দিল্লীতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। ১৯৪৭ সনে দেশ ভাগ হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাব, দিল্লী ও কলিকাতার মতো বড়ো বড়ো শহরগুলিতে যে ভাবে গণহত্যা হয়েছিল ; সে ভাবে পূর্ব পাকিস্তানে হয় নি। এখানকার হিন্দু-মুসলিম সব সময়-ই ভ্রাতৃপ্রতিম ছিল। দেশ ভাগ হওয়ার পিছনে স্বাধারণ জনতার কোনো হাত ছিল না। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশে) হিন্দ -মুসলমান সমস্যা কখনই দেখি নি ; এখানে এই দুই ধর্মের লোক সব সময় মিলেমিশে ছিল এবং আজ ও আছে।

ভারতে কয়েক লক্ষ বাঙ্গালী মুসলমান আসাম ও অন্যন্য প্রদেশে যুগের পর যুগ রয়েছে। ভারত সরকার বা বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিরা সময় সময় ওদের নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করে , আমাদের হিন্দু ভাইবোনরা ও পারে (ভারতে) গেলে নাগরিকত্ব সহ সব ধরণের সুবিধা পায় ; অথচ এ সব বাঙ্গালীরা যুগের পর যুগ ভারতে থেকে কাজ করে ওদের অর্থনীতির চাকা সচল করা স্বত্তে ও তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হয় না। এটার মূল কারণ কী ?
দুই শত বৎসর বা তার ও বেশি সময় মুগল সম্রাট এ দেশ শাসন করেছে; সে সময় হিন্দু -মুসলমান মিলেমিশে কাজ করেছে। আজ এ সমস্যা কেন ?

মিয়ানমারের লক্ষ লক্ষ মুসলিম রোহিঙ্গা শত শত বৎসর থেকে বাস্তুহারা, নাগরিকত্বহীনতা,অত্যাচারিত এবং শেষ পর্যন্ত অমানবিক ভাবে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এ সব রোহিঙ্গাদের অপরাধ কী ? এ সব লোক যদি বৌদ্ধ ধর্মালম্বী বা অন্য ধর্মের হতো, সম্ভবত এ অবস্থায় পড়তো না।বৌদ্ধ ধর্মে বলে ” জিবে দয়া করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর। ” তাই যদি হয় এখানে তার ব্যাতিক্রম কেন ?
সমাপ্ত

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতিবাদ সভা থেকে বিজয় সমাবেশ
পরবর্তী নিবন্ধ“হট বেড”
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন