ছোটবেলায় গফুর চাচার দোকানে পাউরুটি কিনতে যেতাম । আমার ধারণা ছিল, গফুর চাচা বেকার মানুষ, চাকরি পায়না তাই রুটি বানিয়ে বিক্রি করে । এই জন্য তার দোকানের নাম গফুর বেকারী । আমিও চাকরি না পেলে রুটি বানিয়ে বিক্রি করবো ।
তখন ট্রাফিক পুলিশরা সাদা ড্রেস পরতো । বুকে বিশেষ ধরনের বেল্ট বেঁধে তার মধ্যে সাদা ছাতার বাট ঢুকিয়ে, ছাতা মাথায় দিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতো । পায়ে বুট আর ক্রিকেটার এর মতো প্যাড । হাত তুললেই গাড়ি থেমে যায় । আমি অবাক হয়ে ভাবতাম , উফফ কি ক্ষমতা !!!
বড় হয়ে ট্রাফিক পুলিশ হবো ।
এ ছিলো আমার শিশু মনের ভাবনা । তবে আমি নিশ্চিত যে, আটানব্বই ভাগ মানুষের ইচ্ছে বা শিক্ষাগত বিষয়ের সাথে কর্ম আর ব্যক্তি জীবনের কোন মিল থাকে না ।
আমারও মেলেনি । হয়ে গেলাম দন্ত শল্য চিকিৎসা যন্ত্রপাতি আর ঔষধ বিক্রেতা ।
এর দুটি দিক আছে, প্রথমটা হলো মানুষ প্রচন্ড দাঁতের ব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসে, আর চিকিৎসক আমার কাছে আসে । আমাদের দু‘পক্ষের চেষ্টায় রুগি সুস্থ হয়ে হাসে । আমি তৃপ্ত হই এই ভেবে যে, ঐ হাসিতে আমারও ভাগ আছে ।
দ্বিতীয়টা হলো, যে মানুষ কাউকে ঘুসি মেরে দাঁত ফেলে দেয়, সে খারাপ। চিকিৎসক সেই দাঁত ফেলে ব্যথাও দেয় আবার টাকাও নেয় সে আরও খারাপ !! আর সেই চিকিৎসকের পকেট থেকে আমি টাকা বের করি, তাহলে আমি কত খারাপ !!!????????????????????
প্রতিটি মানুষই কিছু ইচ্ছে মনের ভেতর লালন করে, কিন্তু বিধাতা তার নিজের ইচ্ছে মতো দেন, ইচ্ছে পূরণ হোক আর না হোক । তবে তিনি কাউকে হতাশ করেন না, যদি প্রচেষ্টা থাকে । আমাকেও হতাশ করেননি । এক জীবনে অনেক পাওয়া । ইচ্ছে ছিলো একজনকে পাওয়া , সে ইচ্ছেও বিধাতা পূরণ করেছেন বটে, তবে তার উদার হাত, এ ব্যাপারে সময়ের কার্পণ্যতা দেখিয়েছে । ,,,তার ইচ্ছেকে মেনে নিয়েছি ।
এখন খুব ইচ্ছে করে পশ্চিমে একটা ফার্ম হাউজ করার । একটা কাঠের বাড়ি, ফায়ার প্লেস, অনেক গুলো বই আর সবজি বাগান ।
তদুপরি বিধাতা যদি বলেন, ওটা হবে না । তোমাকে মৎস্যজীবী বানাবো । আমি বলবো, তথাস্তু প্রভু , তোমার ইচ্ছেই পূরণ হোক ।
মিশিগান এর বৃহৎ লেকের পানিতে হুইল ছিপ ফেলে, তার পাড়ে বসে যাবো ।
…..ধরিবো মৎস্য, খাইবো সুখে ।।।।
ছবি:সৌজন্যে mguhlin.org