নরওয়ে থেকে:-

একটু আগে আম্মার সাথে কথা বলছিলাম। আম্মা বলছিলেন যে দেশে নাকি ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। শুনে খারাপ লাগলেও নিজের পরিবারের সবার জন্য মোটেও সঙ্খিত নোই। গ্রামের বাড়িতে আমাদের ভালো একটা ঘর আছে। মেঘ বৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় কোনো কিছুই আমাদের পরিবারের তেমন কোনো কিছুই করতে পারবেনা তা আমি ভালো করেই জানি। গ্রামের বাড়িতে আমাদের যে ঘরটা আছে , তা ঝড় বৃষ্টি কোনো কিছুতেই কোনো কিছু হবেনা তাতে নিশ্চয়তা দেয়া যায়।
১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সাল নাগাদ আমার দাদা মরহুম জনাব মোকদ্দস আলী তৎকালীন সময়ে ভারতের আসামে নামকরা  একজন ব্যবসায়ি ছিলেন যিনি গ্রামে সবচেয়ে সুন্দর টিনের একটা ঘর বানান আমাদের জন্য। দাদা মরহুম মোকাদ্দস আলী অনেক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশদের হয়ে ভারতীয় সৈনিক হিসাবে ব্রিটিশদের পক্ষে উনি জাপানিদের বিপক্ষে মায়ানমারে যুদ্ধও করেছিলেন। বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী আমার দাদা মরহুম জনাব মোকাদ্দস আলীর ব্যবসার ব্যবহারের জন্য উনার নিজের প্রায় ৫০ টার মতো ট্রাক ছিল। অর্থনৈতিক ভাবে উনি খুবই সমৃদ্ধ ছিলেন , তাই তৎকালীন সময়ে উনি গ্রামের সবচেয়ে সুন্দর টিনের ঘর বানিয়েছিলেন যখন গ্রামের আর সবার ঘরই মাটির ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সব কিছু বদলায়। আজ যা সুন্দর কাল তা যোগ উপযুগী না হতে পারে। ১৯৮০ সাল নাগাদ কোনো এক বন্ধুর প্রতারণার শিকার হয়ে আমাদের প্রিয় দাদা মরহুম মোকাদ্দস আলী আসামে সব খুইয়ে দেশে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। আমরা গ্রামের বাড়িতে অনেক সুখেই ছিলাম। কিন্তু ২০০৫ সাল নাগাদ দাদার নির্মিত আমাদের ঘর খানি প্রায় বসবাস উপযুগি না হওয়ায় আমাদের তা ভেঙে ফেলতে হয়। দাদা মারা গেছেন ১৯৯২ সালে এবং আব্বা মারা যান ২০০২ সালে, তাই আমি ও আমার ভাইয়েরা অনেক কষ্টে, অনেক সময় ব্যায় করে নিজেদের সবটুকু দিয়ে ২০১০ নাগাদ আমাদের নতুন ঘর তৈরী করতে সক্ষম হই। এখন ঝড়, বৃষ্টি বাদল যাই হোক না কেন ঘরের সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন তাতে আমি নিশ্চিত। আমার আম্মা বৃষ্টির দিনে বারান্দায় বসে বর্ষার দিনগুলো ও বর্ষার অনিন্দ সুন্দর্যপূর্ণ মুহূর্তগুলো উপভোগ করেন। কিন্তু ২০১০ সালের আগে ব্যাপারটা আজকের মতো ছিলোনা। দাদার বানানো ঘর অনেক পুরোনো হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি ঝড় বাদলের দিনে আমরাই প্রায় ঘুমাতেই পারতাম না। ভয় হতো ঘরটা না ভেঙে পড়ে।

আজ নরওয়েতে আমার কোটি টাকার ব্যবসা আছে, প্রায় প্রতি মাসে আমি নিজেকে নতুন একটা স্যুট উপহার দেই, আমার ভাইয়েরা বাংলাদেশ ও আমেরিকায় মোটামোটি ভালোই আছে এবং আগামীতে বর্তমান সময়ের চেয়ে অনেক ভালো থাকবে বলেই মনে করি। কিন্তু ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সল্ পর্যন্ত ঝড় বৃষ্টির দিনে দাদার বানানো তৎকালীন সবচেয়ে সুন্দর টিনের ঘরটায় আমরা কেউই একদিনও ভালোভাবে ঘুমাতে পারি নাই। ঘুমাতে পারিনাই কেননা সবসময় মনে হতো ঝড় বৃষ্টিতে ঘরটাই না ভেঙ্গে আমাদের মাথার উপর পড়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে আমরা আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছি। নিজেকে বদলাতে চাইলে সময়ের সাথে সাথে সব বদলে যায়। আজ যে সব সুশিক্ষিত তরুণেরা কোনো কিছুতে সেটেল না হতে পেরে হিমশিম খাচ্ছেন, নিজেদের নিয়ে ও নিজেদের পরিবারের ভবিষৎ নিয়ে চরম হতাশাজনক অবস্থায় আছেন তারা আমি ও আমাদের ভাই বোনদের সংগ্রামী জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারেন। অনুপ্রাণিত হতে পারেন এ জন্য যে , আমরা জীবন পাল্টানোর এক বাস্তব উদাহরণ। চাইলেই আপনি ও আপনার পরিবারের আর সবার জীবন বদলাতে পারে , জীবন বদলায় , আর তা বদলায় যখন আমরা আমাদের জীবন বদলানোর জন্য সত্যিকার অর্থে সংগ্রাম করে যাই।
সবার জন্য শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকবেন।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন