আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে যেটা খেয়াল করলাম সেটা হল ফেসবুক এ আমার পোস্ট এ কতজন লাইক বা কমেন্ট করেছেন তা দেখা। এইটা এখন অনেকটা অভ্যাস এ পরিনত হয়েছে যে প্রতিদিন সকালে আমাকে চেক করতেই হবে কতগুলো লাইক ও কমেন্ট পেলাম। তবে হ্যাঁ সেটা কিন্তু আমার নিয়ন্ত্রের মধ্যে। যখন সময় থাকেনা তখন কিন্তু ঠিকই দূরে থাকতে পারি। আমি জানি অনেকের এইটা Addiction এর পর্যায়ে যেতে পারে যেটার জন্য আপনার সাহায্যের প্রয়োজন লাগতে পারে যদি দেখেন এটা আপনার পারিবারিক ,সামাজিক, বা কর্ম ক্ষেত্রে প্রবলেম সৃষ্টি করতেছে এবং দিন দিন বারতেছে। যাক আমার আলোচ্য বিষয় আসলে সেটা না।

আমি যে বিষয়টা খেয়া করলাম আর তা হল মানুষের রেসপন্স…। অনেকেই আমার পোস্ট টায় লাইক ও কমেন্ট করেছেন তবে বেশির ভাগই তারা যারা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয় টা নিয়ে ভাবেন। আমার বন্ধুদের অনেকেই বলতে শুনি মানুষ কেন তার মানসিক স্বাস্থ্য কে গুরুত্ব দেয় না, প্রশ্ন টা আমার ও। তবে উত্তর একটাই বলা যত সহজ কাজটা অত সহজ না। আমরা যারা বাইরে থাকি তাদের ক্ষেত্রে আর ও বেশি।

Healthy Immigrant Effect বলে একটা জিনিস এইখানে প্রথম শুনলাম যখন এইখানে লেখাপড়া করলাম Mental Health বিসয় টা নিয়ে। বিষয়টাকে সহজ ভাবে বললে এভাবে বলা যায় কোন অভিবাসী যখন অন্য কোন দেশে যান তখন তাদের স্বাস্থ্য এর অবস্থা সেদেশের মানুষের তুলনায় ভাল থাকে। যদিও সেটা সময়ের প্ররিক্রমায় কমতে থাকে। ওনেকে আমরা এইটাকে Immigrant দের Honeymoon Phase বলে থাকি। সময়ের প্ররিক্রমায় সমস্যা গুলো বাড়তে থাকে Social Determinants of Health কারনে, যেগুলো মূলত high rate of underemployment, unsafe work environments, income insecurity/poverty, social isolation, changes in family relationships, housing insecurity, and barriers to health and social services সহ আরও অনেক। প্রতিটি বিষয় এতটা ব্যাপক যে এগুলার প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা আলোচনা প্রয়োজন ।

মানুষ কেন তাহলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন, উত্তর খুবি সহজ হয়তোবা তারা বিষয়টাকে এতটা গুরুত্ব দেয় না যতটা না গুরুত্ব দেয় অন্য বিষয়গুলো । আর আরেকটা হল ভ্রান্ত বা বদ্ধমূল ধারনা। Cognitive Behavior Therapy (CBT)- মন বিজ্ঞানিদের একটি বহুল প্রচলিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি- একটা বিষয় আছে আর  তা হল- As you Think, As you Feel, and As you Feel, As you Behave. আমাদের প্রত্যেকটি আচরণ কোন একটা চিন্তার ফসল। আমি যদি আমার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয় টি নিয়ে লেখার এবং পোস্ট করার কথাটা বলি তাহলে বলা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য এর গুরুত্তের কথা জানি এবং সেই সম্পর্কে আমার ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা থাকার কারনে, আমার ছুটির দিনেও কষ্ট করে সময় নিয়ে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করতেছি। আবার অনেকে বলতে পারে হয়ত আমার স্বার্থ আছে এখানে। স্বার্থ তো অবশ্যই, স্বার্থ ছাড়া কেও কাজ করে নাকি, আমার স্বার্থ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। আর সচেতনটা সৃষ্টি হলে কি হবে, মানুষ বেশি বেশি করে সাহায্য নিবে, আর তাতে আমারও লাভ আর যে সাহায্য নিবে তারও লাভ। তবে আল্লাহর রহমতে দ্বিতীয় বিষয়টি প্রতি আমার স্বার্থ বেশি।

এবার আসি মানুষ কেন মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়গুলো অতটা গুরুত্ব দেয় না বা আমার পোস্ট টা গুরুত্ত পায়নি। হয়তোবা মানুষ সেভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবেনি, তাই সেভাবে অনুভব করেনি, আর যেহেতু সেভাবে অনুভব করেনি, তাই সেভাবে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করেন নাই। মনবিজ্ঞ্যানির চিন্তা আর কি। তবে আমি অন্যান্য বিষয়গুলো উড়িয়ে দিচ্ছি না। আমি জানি একজন immigrant কে কতটা struggle করতে হয়। আমি জানি অনেকেই সারা দিন রাত পরিশ্রম করে এইখানে প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য। আবার হয়তোবা আমি বিষয়টিকে যেভাবে উপস্থাপন করা দরকার সেভাবে করা সম্ভব হয়নি।

এবার আসি, আমি কে, কেনই বা মানুষিক স্বাস্থ্য বিষয় টি নিয়ে হটাত এতটা সিরিয়াস…আমি সাইফুল আলম, বাংলাদেশে Psychology এবং Clinical Psychology উপর ডিগ্রি নিয়ে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, এবং কমিউনিটি সেটিং এ মানুষিক স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে কাজ করেছি সমস্যা গ্রস্ত মানুষদের নিয়ে। কানাডা তে আসার পর সাড়ে ৫ বছর ধরে বিভিন্ন কমিউনিটি সেটিং এ voluntary and job purpose এ কাউন্সেলিং দিয়ে আসতেছি । বর্তমানে আমি Canadian Mental Health Association (CMHA) Durham এ Registered Social Worker/Therapist/Case Manger হিসাবে আছি। ও হ্যাঁ আমি এর মধ্যে আবার social work এর উপরে আরেকটা BSW ডিগ্রি নিয়েছি Ryerson University থেকে। কেন এখন আগ্রহী, সেটা মনে হয় আগেই আলোচনা করেছি…সবার মূল্যবান মতামত highly appreciated….

চলবে…

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন