ম্যান্ডাল, নরওয়ে –

২০০৭লন্ডনে পড়তে যাই , হীরাকে ফোন করে বললাম যে লন্ডন এসেছি , ও একথা শুনেই আমাকে ওর বাসায় নিতে আসলো। ২০০৪ সালে সিলেট শহরে বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়ন ছিলাম এবং হীরা ও আমি একই জিমনেসিয়ামে যেতাম সে হিসাবেই আর সবার মতো হীরার সাথে সম্পর্ক। অনেক ভালো ছেলে সে। তো এক সপ্তাহের মতো হীরার বাসায় থাকবার পর ফার্নহাম নামক শহরে পড়ালেখার সাথে সাথে একটা কাজে লেগে যাই। ওখানে সিলেটের ছাতকের ইসলাম ভাইয়ের রেস্টুরেন্টে একমাসের মতো রিসিপশনে কাজ করি, ইসলাম ভাই অনেক ইন্টারেস্টিং একজন মানুষ ছিলেন, উনি পড়ালেখা কম করলেও পড়ালেখা জানা মানুষদের প্রতি ওনার সম্মান ছিল। আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। উনি উনার মেয়ের সুশিক্ষার ব্যাপারে খুবই মনোযোগী ছিলেন , শেষ জানা মতে ওনার মেয়ে বর্তমানে ইংল্যান্ডের কোনো একটা কাউন্টিতে ব্যারিস্টার হিসাবে সরকারি বড়ো কোনো পদে কাজ করে। শিক্ষার প্রতি অনুরাগী ইসলাম ভাইয়ের প্রতি সেজন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা। এখনো মাঝে মাঝে উনার সাথে কথা হয়। সরকারি বড়ো চাকরি করা মেয়েকে নিয়ে উনি খুবই গর্বিত। যে বাবা মেয়েরে সুশিক্ষার জন্য জান প্রাণ দিয়ে দেয়, মেয়ের সাফল্যে সে বাবার গর্বিত হবারই তো কথা।

যাই হোক মাস খানেক পর হীরা ফোন করে বললো যে ভালো একটা কাজে অফার আছে যদি আমি দূরে গিয়ে কাজ করতে রাজি হই। পড়ালেখার পাশাপাশি টাকারও প্রয়োজন ছিল তাই রাজি হয়ে যাই। কিন্তু ইসলাম ভাই আমাকে ছাড়তে নারাজ। তো ২০০৭ সালের শেষ দিকে বাবু ভাইয়ের রেস্টুরেন্টে যোগ দেই। সুদর্শন, কম বয়সী এবং ব্যক্তিত্ববান অমায়িক বস পেয়ে সত্যি ভালো কাটছিলো আইলফমান দ্বীপের দিনগুলো। বাবু ভাই ও আমি একই এলাকার ছেলে এবং উনার আব্বা মরহুম জনাব হুমায়ুন চৌধুরী আমাদের গোলাপগঞ্জের সম্মানিত মুক্তিযুদ্ধা হওয়ায় ওনাদের সবার সাথে আইলফ ম্যান দ্বীপের দিনগুলো অন্য রকম ভালো ছিল। বাবু ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে , খুবই কম বয়সী বাবু ভাইয়ের খুই ব্যস্ত রেস্টুরেন্ট ছিল যা আইলফমান দ্বীপের টপ ৫ টা রেস্টুরেন্টের একটা ছিল। বাবু ভাইয়ের সুনামের কারণে রেস্টুরেন্ট এতো সফল ছিল যে শুক্র, শনি, রবি বারে কাজ করতে করতে মাথা ব্যাথা হয়ে যেত। কাস্টমাররা বাবু ভাইকে অনেক ভালোবাসতো এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধু মাত্র বাবু ভাইয়ের কারণে মানুষরা উনার রেস্টুরেন্টে খেতে আসতো। কাস্টমারদের সাথে কিভাবে সুসম্পর্ক করতে হয় , কিভাবে একটা রেস্তোরাঁকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় সে সম্পর্কে বাবু ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল। উনার সাথে যে কয়েকটা মাস কাজ করেছি, প্রত্যেকটা দিন কিছুনা কিছু শিখেছি , উনার বাবা হুমায়ুন চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রিয় যুবকদের একজন এবং উনি ছিলেন বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর প্রাইভেট সেক্রেটারি। প্রতি রাতে কাজ শেষ হলে মুক্তিযুদ্ধা মরহুম জনাব হুমায়ুন চাচার কাছ থেকে সময় পেলেই অন্নান্ন গল্পের ফাঁকে ফাঁকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতাম। উনি ছিলেন সেই বীর মুক্তিযুদ্ধা যিনি সর্ব প্রথম আমাদের গোলাপগঞ্জে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন যা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদজনক। উনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, কাজ ছেড়ে দিয়ে আগামীকাল সকালে লন্ডন ফিরে যাচ্ছি শুনে উনি খুবই আক্ষেপ করে বলেছিলেন, শরীফ যদি না গেলেই না হয় তবে যেওনা। উনার কথাগুলো এখনো কানে বাজে। মুক্তিযুদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ট সন্তান তাই উনার প্রতি সশ্রদ্দ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

বাবু ভাইয়ের মতো সৎ, কর্মঠ, নিষ্টাবান এবং সৃজনশীল মানুষেরা বৎসরের পর বৎসর দেশ বিদেশে সিলেটিদের এগিয়ে নিয়ে গেছেন। উনার কাছ থেকে ব্যবসা সম্পর্কিত অনেক অনেক শিখেছি এবং ভালোবাসা পেয়েছি। বর্তমানের কর্ম জীবনে নিজের ক্রিয়েটিভিটির সাথে সাথে বাবু ভাইয়ের করা অনেক কিছু এপ্লাই করবার চেষ্টা করি যা সত্যিকার অর্থে ব্যবসায়ীক সুফল বয়ে আনতে সক্ষম।
প্রিয় বাবু ভাই ও নতুন ভাবিকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন