নরওয়ে থেকে:-

নরওয়ে, ইউরোপের স্কান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের একটা দেশ, নরওয়ে সম্মন্ধে বাংলাদেশী মানুষ , বাংলাদেশী পত্র পত্রিকা,  টিভি মিডিয়া ও অন্নান্য মিডিয়ার অনেক ভুল ধারণা আছে। অনেক সুশিক্ষিত বাংলাদেশিও আছেন যারা নরওয়ে সম্মন্ধে কি, পৃথিবির মানচিত্রে নরওয়ের জিওগ্রাফিক অবস্থান কোথায় তাও জানেন না।
যেহেতু নরওয়ের পৃথিবির অন্যতম ধনী দেশগুলোর একটা তাই অন্নান্য ধনী দেশগুলোর মতো নরওয়েতে অনেক  ইমিগ্রান্টদের বসবাস। এখানে পাকিস্তানী, সুমালিয়ান, টার্কিশ, সার্বিয়ান, রোমানিয়ান,পোলিশ, থাই, ভিয়েতনামি, এবং ব্রাজিলিয়ান ইমিগ্রান্টদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। সাউথ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানিরা সংখ্যার দিকে অনেক অনেক বেশি এবং নরওয়ের রাজধানী অনেক অংশে পাকিস্তানিদের দখলে বললেই চলে।
মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে সামান্য সামান্য করে বাংলাদেশিরা স্কান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে আসতে থাকেন, এবং বেশির ভাগই হয়তোবা সুইডেন অথবা ডেনমার্কে বসবাস গড়ে তোলেন। তবে যে কোনো কারণেই হোক ওই সময়ে স্কেন্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে আসা বাংলাদেশিদের কাছে নরওয়ের চাইতে সুইডেন ও ডেনমার্ক অনেক বেশি আকর্ষণীয় ছিল।
১৯৭১ থেকে এখন পর্যন্ত নরওয়েতে বিভিন্ন কারণে যতই বাংলাদেশিরা আসেন নাই কেন, নরওয়েতে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী সর্বমোট বাংলাদেশিদের সংখ্যা কোনোদিনই ৮ হাজারের উপরে উঠেনি। এখন পর্যন্ত নরওয়েতে   স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি আছেন সর্বমোট ৫০০০। বাকি যারা ৩০০০ আছেন তারা হয় ইল্লিগ্যালি আছেন নয়তোবা পড়াশুনা করছেন বলে আছেন। নরওয়েতে ৪টা বড়ো শহরে সবচে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশিদের বসবাস আর শহরগুলো হচ্ছে অসলো, বের্গেন, স্টাভাঙ্গার এবং ট্রোমসো। নরওয়েতে বসবাসকারী ৯০ % বাংলাদেশীই মোটামোটি উচ্চ শিক্ষিত এবং তুলনা করলে অন্নান্য দেশীয় ইমিগ্রান্টদের থেকে বাংলাদেশীরা মোটামোটি ভালোই আছেন।
নরওয়েতে বসবাসকারী ইমিগ্রান্টদের একটা বিরাট অংশ বর্তমানে কাজহীন বেকার এবং সরকারের দেওয়া সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। তবে একটা ভালো জিনিস যে এখানে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের ৯০% ভাগ বাংলাদেশীই কাজ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত এবং নিজেদের গাড়ি বাড়ি নিয়ে ভালোই আছেন। আমাদের বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেক কিছু কমতি থাকলেও একটা খুব ভালো জিনিস আছে আর তা হচ্ছে কাজ করে করে উপরে উঠবার মন মানুষিকতা। যেখানে অন্নান্য দেশীয় ইমিগ্রান্টদের একটা নির্দিষ্ট পরিমান অর্জনেই খুশি ও ভোগ বিলাসে লিপ্ত সেখানে বাংলাদেশিরা নির্ভর কর্মময়। আমার ৮ বৎসরে নরওয়ের জীবনে খুব কম সংখ্যক বাংলাদেশিদের সাথে দেখা হয়েছে যারা অল্পতেই সন্তুষ্ট। আর এই জিনিসটার একটা পজেটিভ দিক আছে, আর সে কারণেই যেখানে অনন্যানোরা বেকার দিন কাটায় সেখানে আমরা বাংলাদেশিরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। খুশির ব্যাপার যে বর্তমানে নরওয়ে সম্মন্ধে বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রীরা অনেক বেশি জানেন এবং প্রতি বৎসর আগস্টে বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী নরওয়েতে আসছেন। তবে যেকোনো নতুন দেশে আসবার আগে ওই দেশ এবং সমাজ সম্মন্ধে জেনে আসাটাই ভালো। নরওয়ে যেহেতো অনেক অনেক ব্যায়বহুল একটা দেশ এবং নরওয়েজিয়ান জানা না থাকলে এবং পরিচিত কেউ না থাকলে এখানে যেকোনো কাজ পাওয়া দুস্কর তাই দেশে পারিবারিক ভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা মজবুত না থাকলে নরওয়েতে ছাত্র ভিসায় না আসাটাই ভালো।

নরওয়ের ম্যান্ডাল শহর থেকে সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো। সবাই ভালো থাকবেন, দেশ, জাতি ও পরিবার পরিজনদের প্রতি যত্নবান হবেন।

ছবি : শরীফ সাদর এবং মুজিব খান। আমরা দুজনই সিলেটের ছেলে এবং সাউথ নরওয়ের বাসিন্দা। পারিবারিক কারণেই আমাদের দুজনের নরওয়েতে আসা।

2 মন্তব্য

  1. সুন্দর একটা তাথ্য ভিত্তিক লেখা। আপনার লেখা সব সময় ভালো লাগে।
    আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।

  2. অনেক ধন্যবাদ শরীফ ভাই. সংক্ষিপ্ত হলেও নরওয়ে নিয়ে এটি একটি প্রয়োজনীয় লেখা. ভালো থাকুন. এই ব্লগের জন্য আরো লিখুন.

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন