পরাজয়ে ডরেনা বীর !


প্রকৃত বীর সে যেই হোক খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদ,কর্মজীবী, লেখক, অভিনেতা/অভিনেত্রী অথবা সাংবাদিক প্রত্যেকেই অহরহ লড়ে চলেছেন নিজ নিজ বলয় থেকে, প্রতিকূল পারিপার্শ্বিকতার বিরুদ্ধে, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে, সমাজের অসমবন্টনের বিরুদ্ধে, সকল ধরণের লোভ-লালসার বিরুদ্ধে। কখনো এই লড়াইয়ে জয়ের স্বাদ এনে দেয়, কিছু কিছু প্রাপ্তির মই বেয়ে পৌঁছে দেয় আমাদেরকে সাফল্যের শিখরে। আবার কিছু কিছু সাময়িক অপ্রাপ্তি আমাদেরকে হতাশাগ্রস্ত করে ফেলে, আর তাতেই বিপ্পত্তি ঘটে। আমরা আমাদের জীবন পথের লড়াই-এর বেসিক খেই হারিয়ে ফেলি। ফলস্বরূপ, সাফল্য থেকে যোজন যোজন আলোকবর্ষ দূরে নিক্ষিপ্ত হই। আমাদেরকে এই চিরাচরিত চরিত্র থেকে বের হতে হবে। লড়াই করতে হবে বীরের মতো, মাশরাফি-শাকিব-তামিমদের মতো আর সে প্রতিপক্ষ হোক না অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ অথবা ইন্ডিয়া। 
আমি এই লেখাটি যখন লিখছি তখন বিশ্ব কাপ ক্রিকেটের ২০ তম ম্যাচ চলছে। আগে বাট করে পরাক্রমশীল অস্ট্রেলিয়া ৩৩৫ রানের টার্গেট বেঁধে দিয়েছে শ্রীলংকাকে. বীরের মতো সমান তালে লড়ে চলেছে শ্রীলংকা। এখন পর্যন্ত ১৭.৫ ওভার বাকি রেখে ৩২.১ ওভারে মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে করতে পেরেছে ১৮৬ রান। এই লেখা যখন শেষ হবে ততক্ষনে ফলাফল আমরা সবাই জেনে যাবো। শ্রীলংকা আজ জিতুক বা হারুক সেটা আমার লেখার বিষয় না, কিন্তু ওদের লড়াকু মেজাজ আমাকে মুগ্ধ করেছে ।

আগামীকাল আমাদের স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটায় শুরুহবে পাক/ভারত ক্রিকেটীয় যুদ্ধ। মিডিয়াতে ইতিমধ্যে একে অপরকে বিদ্রূপকরে অনেক বিজ্ঞাপন তৈরী হয়েছে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বহু ক্রিকেটপ্রেমিক মানুষ, কিন্তু আমার মন পরে আছে সমবারের সকালের দিকে। এই সমবারে আমার প্রাণের বাংলাদেশ, আমার ভালোবাসার বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। শুনেছি যে মাঠে খেলাটি শুরু হবে সেটা অপেক্ষাকৃত সাইজে ছোট এবং উইকেট হবে পেসারদের পক্ষে. ওয়েস্ট ইন্ডিজের দীর্ঘদেহী ফাস্টবোলারদের বিপক্ষে তামিম/সৌম/সাকিবরা কেমন করে সেটা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি। গুগল করে দেখলাম একটি ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছে সমবারের খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেতার সম্ভাবনা ৬৭% এবং বাংলাদেশের জন্য ৩৩%। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যেতে হলে বাংলাদেশের জন্য যে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নিয়তি আমার পক্ষে কাজ করেছে। সোমবার আমার কাজ শুরুহবে বিকালথেকে। অর্থ্যাৎ, বাসায় বসে পুরো খেলা আরামে দেখতে পারবো এই আনন্দে আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছা করছে। শনি/রবি পুরা উইকেন্ড মনে হচ্ছে যেন অনেক অনেক লম্বা সময়। মনে মনে খেলার ছক তৈরী করে রেখেছি। টসে জিতে মাশরাফি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে। রুবেল সহ চার পেসার নিয়ে বাংলাদেশ পেস আক্রমণ সাজিয়েছে। মাশরাফি শুরু করেছে প্রথম ওভার। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে সীমানার কাছে ক্রিসগেইল ক্যাচ তুলে দিয়েছে। তামিম লাফিয়ে এক হাতে ক্যাচটি ধরে ফেলেছে. ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মুস্তাফিজের অফকাটারে কুপোকাত এভিন লুইস। অর্থাৎ দুই ওপেনার আউট। ইনিংসের সপ্তম ওভারে রুবেলের সাঁড়াশি আক্রমণ। প্রথম স্পেলের চতুর্থ বলে হপ বাবাজি পরিষ্কার বোল্ড আউট। প্রথম ১০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান দাঁড়িয়েছে দুই উইকেটে ৫২। ২০ ওভার শেষ হতে না হতেই সেটা দাঁড়ালো চার উইকেটে ৮৫ . ইনিংসের ২৮ তম ওভারে সাকিবের স্পিনের জাদুতে আরো দুই উইকেট নাই। ৩০ ওভার শেষে রানের সংখ্যা ১৭২। শেষ ১০ ওভারে এন্ড্রু রাসেলের মেরেকুটে খেলায় আরো ৮১ রান যোগ হলো। অর্থ্যাৎ ৫০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২৫৩। আধা ঘন্টার বিরুতি দিয়ে তামিম -সৌম শুরু করলো বাংলাদেশের ব্যাটিং। প্রথম দশ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৪৯ অর্থাৎ ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে । কারণ, তামিম /সৌম দেখে শুনে খেলছে। যেটা মারার বল শুধু সেটাই মারছে। উইকেটে কিছুটা থিতু হয়ে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ২২ বল বাকি রেখে ৭৮ রান করে তামিম আউট. আরো আগে ১৯ বলে ৩৫ রান করে সৌম আউট হয়েছে ১১ ওভারে। সাকিব-মুশফিক জুটি কল্যাণে ২০ ওভারে রানের সংখ্যা ১১৫ অর্থাৎ রানরেট ৬ এর নিচে। ৪০ ওভার শেষে রানের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৯৬, রান রেট ৪.৯. উইকেটই মোহাম্মদ উল্লাহ ও লিটন দাস। হাতে আছে আরো ৫ টি উইকেট। ৪৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান আট উইকেটে ২১৫। হাতে আছে মাত্র দুটি উইকেট। ৩০ বলে ৩৮ রান দরকার। ছেলে অর্ণবের দুপুর দুইটার উইনিভার্সিটির ক্লাস এটেন্ড করতে হলে বারো-টার বাস ধরতে হবে। ঘড়ির কাটা কখন সাড়ে বারোটা পেরিয়ে গেছে খেয়ালি করিনি। তবে কি অর্ণব আজ ক্লাসে গেলো না। না যাক, একটি ক্লাস মিস হলে কিবা যায় আসে। বলতে না বলতেই মোহাম্মদ উল্লাহ আউট। অল্প রানের টার্গেটের খেলায় এই এক অসুবিধা। অল্প রান তাড়া করতে যেয়ে টপাটপ উইকেট পরে যায়। শেষ ওভারে জিততে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে ৯ রান, উইকেটে আছে মাশরাফি আর রুবেল। বাকি আছে শুধু মুজতাফিজ। ভয়ের ব্যাপারটা এখানেই। শেষ ওভারের প্রথম বল করতে ধেয়ে আছে শেলডন কোটরেল। ব্যাটা আবার একেক উইকেট নেয় আর মিলাটারী কায়দায় স্যালুট করে। যাক ও স্যালুট করুক বা ডিগবাজি খাক সেটা ওর ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এই যা! ঘড়ে স্মোক ডিটেক্টর বেজে চলেছে। আরাম করে চা খেতে খেতে শেষ ওভার দেখব বলে চুলায় চা বসিয়ে ছিলাম, একেবারেই মনে নেই। চা পুড়ে যেয়ে সমগ্র কিচেন ধুঁয়ায় ছেয়ে গেছে । প্রথম দুই বল ডট। টান-টান উত্তেজনা ।অর্ণব রেগে মেগে সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে। দৌড়ে যেয়ে চুলা থেকে চা নামিয়ে রেখে ভেন্টিলেশনের জন্য বেড রুমের জানালা খুলে বসতেই মিতার ফোন। একেই বলে মরার উপর খরার ঘা. ” মিতার অবাক করা প্রশ্ন: কি ব্যাপার, অর্ণব ক্লাসে যায় নি? ও এতো চিৎকার করছে কেন?” কোনরকমে এটা ওটা বুঝিয়ে তড়িঘড়ি করে ফোন নামিয়ে রাখতেই দেখি মাশরাফি একটি বিশাল ছক্কা মেরেছে। অর্ণবের চিৎকারে কানে তালা লাগারমতো অবস্থা। শেষ তিন বলে তিন দরকার ৩ রান। বলা যায়না। একবার ১ রানে ভারতের কাছে একেবারে জয়ের তীরে থেকে হেরে বসেছিল বাংলাদেশ। আবারো টান টান উত্তেজনা. কেন যে বোকার মতো সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলাম, কোনো মানে হয়? এসব উত্তেজনার মূহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মস্ত টিভি রুমে সুখ টান আর টিভি দেখা (ধুম পান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর) আহা! কি আন্নন্দ!! পরের বলে দুই। হাতে মহামূল্যবান মুস্তাফিজের উইকেট হাতে রেখেই এক বল থাকতেই বাংলাদেশের জয়।

জাস্ট মজা করলাম। এটার নাম হচ্ছে স্বপ্ন স্বপ্ন খেলা। মাঝে মাঝে আমি স্বপ্ন দেখি। ভালো লাগে। স্বপ্ন স্বপ্ন খেলায় জীবনের অনেক না পাওয়ার বিষয়গুলিকে অনায়াসে নাগালের মধ্যে নিয়ে আসি। বেশ ইন্টারেস্টিং খেলা। যাহোক, আজকের এই স্বপ্ন খেলা যেন সত্যি হয় মনে প্রাণে এই দোয়া করছি। জয় পরাজয় খেলারই অংশ। জীবনের অংশ। ম্যাচে যদি হেরেও যাই ক্ষতি কি? এই পৃথিবীর ১৯৫ টি দেশের মধ্যে মাত্র ১০ টি দেশ বিশ্ব কাপ পর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছে। নিজের দেশ; জিতলেও সাথে আছি , হারলেও সাথে আছি। পরাজয়ে ডরেনা বীর।আসছে সোমবার বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র মেদিনী। আমাদের সঙ্গেই থাকুন !!

পূর্ববর্তী নিবন্ধডাক্তার রুগীকে ১ কেজি বিষ খেতে দিলেন। ওহ থুক্কু ১ কেজি বিষ নয় নাপা।
পরবর্তী নিবন্ধআমার বাবা
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন