বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যের এশিয়া কাপ ক্রিকেটের খেলা শেষ হয়েছে বেশ কয়েক ঘন্টা আগেই। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় চলছে সমালোচনার ঝড়। বিশেষত ফেসবুকে বেশি। আলোচনার মূল বিষয় লিটন দাসের বিতর্কিত অউটটি। উদ্ধার করা হচ্ছে থার্ড আম্পায়ারের চোদ্দ গুস্টি। খিস্তি দিচ্ছে ICC কে – বিতর্কিত আম্পয়ারিংয়ের জন্য। যদিও এইটা তার যোগ্য পাওনা। সেই সাথে সহানুভূতি Tiger দের জন্য।
শুরুতেই বলে রাখতে চাই , আমি কারো তোষামোদের জন্য আসিনি। শুধু মাত্র হয়ে যাওয়া খেলাটির ২/১টি বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। আর এইটা আমার নিজস্য মতামত। কারো সাথে যুক্তি তর্কে জড়াবার জন্য নয়।
বাংলাদেশ দলে শুধুমাত্র লিটন দাস একমাত্র খেলোয়াড় নন, খেলোয়াড় মোট ১১ জন। কিন্ত সবাই একজনের আউট নিয়ে কথা বলছেন। বাকী ১০ জন কি করলো সেই ব্যাপারে আমরা কিছু বলছিনা ! সন্দেহ নাই যে লিটন দাসের অউটটা পক্ষপাতিত্ব পূর্ণ। থার্ড আম্পয়ারের কুকর্ম। কিন্তু বাকি ১০জন ? লিটন (১২১) মেহিদি (৩২) আর সৌম্য (৩৩) ছাড়া বাকি ৮ জনতো দশকের ঘরেও পৌঁছাতে পারেন নাই !!! এদের কারো আউটতো বিতর্কিত ছিল না – তারা নিজেরাইতো ডাব্বা মেরেছেন – তাদের সমালোচনা করা হচ্ছে না। ম্যাচ হারার জন্য কি শুধু থার্ড আম্পায়ারই দায়ী , এর দায়ভার কি বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের উপর বর্তায় না ? আপনারা তাদের কথা কোনো বলছেন না ? ব্যার্থতার দায়ভার তাদেরও নিতে হবে। অন্যের ঘরের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে আসুন নিজের ঘরের দিকে তাকাই।
১১৯ রান বিনা উইকেটে – মেহেদী চলে যাবার পরে শুরু হলো সাজ ঘরের শোভাযাত্র। সব ব্যাটসম্যানই (লিটন, মেহিদি আর সৌম্য বাদে ) দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এখন তারা থার্ড আম্পায়ারকে দোষী বানিয়ে বাংলাদেশী সমর্থকদের সহানুভূতি কুড়াবার চেষ্টা করছেন।
২২২ রান ৫০ ওভারের খেলায় কোনো লড়াকু স্কোর নয় , বিশেষ করে প্রতিপক্ষ যখন ভারত ।লড়ার জন্য এই পিচে কমপক্ষে ২৮০+ রানের টার্গেট প্রয়োজন ছিল। হয়তো বলবেন এই ২২৩ রান করতেও ভারতের বেগ পেতে হয়েছে। তাদের শেষ বল পর্যন্ত খেলতে হয়েছে। মনে রাখবেন ২৮০+ রানের টার্গেট হলে ভারতের খেলার ধারাও অন্যরকম হতো।
বাংলাদেশ ১১৯/০ থাকে ২২২/১০ !!! ১০৩ রানে ১০ উইকেট , এইটাকে কি সফলতা বলবেন নাকি ব্যার্থতা বলবেন। ক্রিকেটের পরিভাষায় এটা ব্যার্থতা।
লিটন দলীয় ১৮৮/৬ তে আউট হন। তার ব্যাক্তিগত রান ১২১, যা এসেছিলো ১১৭ বল থেকে। ৪১ ওভারের শেষ বলে আউট হন লিটন। বাকি ছিলো ৯ ওভার, অর্থাৎ ৫৪ বল । আউট না হলে এই ৫৪টা বলের মধ্যে লিটন কয়টা বল স্ট্রাইক করতেন তা বলা মুসকিল , কারণ তখনো আরো চার জন ব্যাটসম্যান আসতে বাকি ছিলো। ওই সময় প্রজেক্টেড স্কোর ছিল ২৬০+ ( ৬ এর এভারেজ হিসাবে) , যেটা ভারতের জন্য কোনো কঠিন কাজ নয়। এইটা একটা সহজ পাটি গণিত – হারার জন্য শুধুমাত্র খারাপ আম্পায়ারিং দায়ী নয় – সমান ভাবে আমাদের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও দায়ী। এর দায়ভার তারা এড়াতে পারবেন না। ভারতের বিপক্ষে রুখে দাঁড়াবার কিছুটা কৃতিত্ব আমাদের বোলারদের।
ভালো খেলাও ভারতের কাছে আমাদের হার, আমাদের জন্য একটা ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানিনা এর উপর “ভগবানের ” কোনো হাত আছে কিনা ? আজ আবারো হেরে আমরা প্রমান করলাম ভারতের সাথে আমরা জিতবো না।
খেলাকে শুধু আবেগ দিয়ে নয় , আসুন বাস্তবতার আলোকে গঠনমূলক সমালোচনা করি , আর এই পরাজয়ের মূল কারণটা খোঁজার চেষ্টা করি। এই পরাজয় কি শুধু একটা নিছক পরাজয়?
উপসংহারে একটা কথাই বলবো – এই দেশ আমার/আপনার , হারুক জিতুক দলও আমাদেরই। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে ,হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার শেষ বিন্দুটুকু উৎসর্গ করে যখন একটা বিজয়ের আশায় অপেক্ষা করে থাকি, সেই ভালোবাসের সাথে যেন কোনো বেইমানী না হয়। খেলায় জয় পরাজয় থাকবে – কিন্তু তার মাঝে যেন সচ্ছতা থাকে। অতীতে অনেকবার এই ক্রিকেট স্বার্থদের কাছে বিক্রি হয়েছে , তার ছোয়া যেন আমাদের কখনো স্পর্শ না করে।
১৬কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত একটা দল – Tiger দের জন্য শুভ কামনা রইলো।