আমি ইতিমধ্যে আপনাদেরকে লিখেছি যে আসছে দিনগুলিতে আমি আপনাদের সামনে একের পর এক কানাডার সাধারণ ইম্মিগ্রান্টদের স্বপ্ন পূরণের বা তাদের পছন্দের চাকরি পাওয়ার বা উন্নতির (চাকরি না হয়ে সেটা বেবসার মাধ্যমেও হতে পারে ) কথা তুলে ধরবো। আজকের পর্বে থাকছে আমাদের জাকারিয়া অর্থ্যাৎ জুয়েল ভাইয়ের গল্প। জুয়েল ভাইকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন আমার ঘনিষ্ঠ বনধু রেজোয়ান অনিক। অনিক ভাইয়ের পরিচয় একটি মিটিঙে, তারপর ফ্রন্ট স্ট্রিটে Tim Hortonএ তার রেসুমে সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপের সময়ে। অনিক ভাই তারপর থেকে তার proactive approach, dedication, highly professional skills কে কাজে লাগিয়ে উঠে গেছেন অনেক ভালো পজিশনে। তার কথা লিখবো পরবর্তীতে।
আমি প্রায় লেখাতে লিখি, যারা ১০০% এফোর্ট দিতে পারে তাদের জন্য এখানে সুযোগ আছে। আমার এই গল্পগুলি তুলে ধরার মূল উদ্দেশ্য হলো আপনাদেরকে জানানো যে, অবস্থা যত কঠিনই হোক না কেন পথ এখনো খোলা আছে, এবং এই লোকগুলি আপনাদের থেকে খুব একটা আলাদা নয় তাছাড়া আপনাদের যোগ্যতা এদের থেকে কোনো অংশে কম নয়, তফাৎ শুধু সঠিক পথে আগানো। অনেকের পক্ষে বেক্তিগত, পারিবারিক, স্বাস্থগত বা বয়সের কারণে ইসছা থাকলেও ১০০% এফোর্ট দেওয়া সম্ভব হয় না, আমি তাদের কথা বলছি না। আমি বলছি তাদের কথা যাদের ওই সমস্যা নেই কিন্ত তেমন কিছু করতে পারছেন না। ১০০% এফোর্ট বলতে আমি কি বোঝাতে চাসছি তা জানতে হলে আপনারা উনাদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, উনারা আনন্দের সাথে আপনাদেরকে সেই কথা বলবেন।
অনিক ভাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন জাকারিয়া ভাইকে। জাকারিয়া ভাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মোস্তফা ভাই, সাইফুল ভাই এবং সাইফুলের পত্নী শারমিনকে। সাইফুল ভাই পরিচয় করিয়ে দেয়াছিলেন তার ভায়রা মাহবুব ভাই এবং পত্নী শার্লিনকে। অর্থনীতির ripple effect সম্মন্ধে যাদের ধারণা আছে তারা ভালো করে বুঝবেন, এটি হলো সেই ধরণের একটি উদাহরণ, কারণ এক অনিক ভাইয়ের কানেক্শনের কারণে ৬/৭টি লোকের ভালো চাকরি হলো। এভাবে আমরা সবাই যদি এগিয়ে আসি তাহলে এই ripple effect অনেককেই তাদের পছন্দের জায়গায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে। জাকারিয়া ভাইকে আমি শুধু একদিন ফুড কোর্টে বসে একটি স্ক্র্যাপ পেপারের উপরে কিছু কথা লিখে দিয়েছিলাম এবং রেসুমিটা কি ধরণের হতে পারে সে বিষয়ে আমার জানামতে ক্ষুদ্র কিছু ধারণা দিয়েছিলাম, এর থেকে বেশি কিছু না, যদিও উনি উনার kind heart এর কারণে বার বার আমার কথা লিখেছেন। মূল কাজ করেছেন উনি, যদি কারো বিস্তারিত জানতে ইসছা করে আমাকে জানাবেন, আমি উনার কন্টাক্ট information আপনাদেরকে দিবো, তারপর শুনবেন উনার amazing প্রচেষ্টার কথা। আমি নিজেই উনার এই প্রচেষ্টা থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
যাহোক আর কথা না বাড়িয়ে আসুন উনার মুখ থেকেই কিছু কথা শুনি। নিচের পুরাটাই উনাকে কোট করলাম।
ধন্যবাদ মুকুল।
” সমাজ বিজ্ঞানএর প্রতি একেবারে প্রাইমারি স্কুল জীবন থেকেই কেন জানি একটা বিশেষ আকর্ষণ বোধ করতাম । সেসময়ে পঞ্চম শ্রেণীর সমাজ পাঠ বইয়ে পৌরনীতি নাম একটা পার্ট ছিল । মন দিয়ে পড়তাম পরিবার, সমাজ, জাতিসংঘ ইত্যাদি বিষয়ে । পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ে ফার্স্ট ইয়ারে অল্প পরিসরে আবারো কিছুটা সমাজবিজ্ঞান শিখলাম । অতঃপর কৃষি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্ৰী নিয়ে চাকুরী জীবনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সমাজ উন্নয়নের স্বপ্ন নিয়ে । একেবারে গোড়ায় কৃষক পর্যায়ে তাদের কাঁধে কাঁধ মিলে প্রায় দশ বছর সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখলাম কখনো দেশীয় কখনোবা আন্তজার্তিক অর্গানাইজেশন-এর মাধ্যমে । এভাবেই শুরু হলো আমার সমাজ কর্মী হয়ে যাওয়ার একবারের শুরুর দিকের গল্প । ২০০৩, ১৯-এ আগষ্ট মাসে সপরিবারে কানাডা-র টরেন্ট শহরে আবির্ভুত হলাম পরিবার পরিজন নিয়ে কিছুটা ভালো থাকার অভিলাষে । আসে পাশে বাঙালি ভাইদের কল্যানে জানতে পারলাম; “এদেশে পড়াশুনা করেও কোনোই লাভ নেই , প্রফেশনাল চাকুরী পাওয়া সোনার হরিণ”। আর তাই, বীরদর্পে – বেঁচে থাকা-র তাগিদে এবং সারভাইভাল জব করলাম টানা প্রায় ৪ বছর। সারভাইভাল জব করেও একেবারে খারাপ করলামনা । গাড়ি কেনা হলো । দেশ থেকে আসার সময় ধার করে এখানে যে টাকা এনেছিলাম, তাও শোধ হলো । এমনকি বাড়ি কেনার জন্য কিছুটা পুঁজিও সঞ্চিত হলো । তবুও, সারভাইল কাজের ফাঁকে, ব্রেক-টাইমে বিড়ি ফুঁকে আকাশে দিকে তাকে করে কুন্ডলি পেকে ধোঁয়া ছেড়ে মাঝে মাঝে ফিলোসোফার হয়ে উঠতাম । সারাজীবনের সব সার্টিফিকেট, মার্কশিট গুলো চোখের সামনে জ্বল জ্বল করে নতুল করে আবারো ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করার তাগিদ অনুভব করলাম ।
আর সেই তাগিদ থেকেই সোস্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা করলাম । ডিপ্লোমাকে বেচেলর ডিগ্রীতে রূপান্তরিত করলাম । পড়া শেষে টরেন্টোতে চাকুরিও পেলাম একটি সেবামুলোক প্রতিষ্ঠানে । প্রথমে ” Outreach worker, পরবর্তীতে Bengali Settlement worker হিসাবে । কিন্তু, চাকুরীটা আশানুরূপ ছিলোনা । রাজ্যের হতাশা নিয়ে ছোট ভাই অনিক-এর মাধ্যমে পরিচিত হলাম ‘মুকুল ভাই’ এর সাথে । এখনো মনে পড়ে একটি ফুড-কোর্টে ঘন্টা খানিক-এর এক আলোচনায় মুকুল ভাইয়ের কাছে মন্ত্র মুগ্ধের মতো শুনলাম এক রাশ আশার কথা । মেন্টাল হেলথ সেক্টরে নতুন করে ক্যারিয়ার শুরুর কথা । সামনে টেবিলে রাখা কাগজে মুকুল ভাই অতিসহজেই লেখে ফেললেন আমার long term/short term goals । শুরু হলো এক নতুন অধ্যায় । মুকুল ভাইয়ের কথা মতো আবার ভর্তি হলাম জর্জ ব্রাউন কলেজে । Mental Health Case management বিষয়ে এক বছরের একটি সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম শেষ করলাম । মুকুল ভাই-এর কথামতো এই সেক্টরে ভলান্টিয়ার-এর জন্য যোগাযোগও শুরু করলাম । ভাগ্য ফিরে চাইলো । একটু প্রতিষ্ঠান থেকে “রিলিফ স্টাফ” এর অফার পেলাম. এভাবেই মেন্টাল হেলথ সেক্টরে আমার নতুন করে ক্যারিয়ার-এর বীজ বপিত হলো মুকুল ভাই-এর মাধ্যমে.
আজ ২০১৭, মেন্টাল হেলথ সেক্টরে ফুল-টাইম পার্মানেন্ট পজিশনে চাকুরীরত আছি প্রায় চার বছর ধরে । সেই সাথে একই সেক্টরে মাঝে মাঝে আরেকটি পার্ট-টাইম জব করছি উইকেন্ডে । এভাবেই চলছে আমার সমাজ কর্মী হিসাবে ক্যারিয়ার, বাংলাদেশ থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে এই ভিন দেশে । সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ, সৃষ্টিকর্তা অনেক ইমিগ্রান্টের চেয়ে একেবারে খারাপ রাখিনি । এই ভিনদেশে পরিবার পরিজন নিয়ে সফলতার মুখ শেষপর্যন্ত দেখতে পেয়েছি । কিন্তু, কৈশোরের সেই সমাজবিজ্ঞান বইয়ের পৌরনীতি আজও মনে পড়ে । বাংলাদেশের কৃষকের সাথে কাজ করার মহান অভিজ্ঞতার কথা আজও মনে পড়ে । আর সেই সাথে মনে পড়ে “আমাদের মুকুল ভাই”-এর কথা যিনি নতুন করে আমাকে ভাবতে শিখিয়ে ছিলেন, ” আর হতাশ না, এই ভিন দেশেও সহজেই পাওয়া যেতে পারে প্রফেশনাল জব, শুধু প্রয়জন আপনার potentialকে খুঁজে বের করা এবং সেই অনুযায়ী সেটাকে কাজে লাগানো ” । এর জন্য চাই সঠিক লোকের, সঠিক পরামর্শ, আর সে সাথে নিজের প্রচেষ্টা ।”
—
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন । (রেজিস্টার্ড সোস্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার , অন্টারিও, কানাডা)