______আপু আপু তাড়াতাড়ি উঠো তো ঘরে আগুন লেগেছে। ধাক্কা মেরে উঠতে বলেই আবার সব চুপ। এদিকে গভীর ঘুমে শুভ্রা আবার ঘুমের মধ্যে ডুবে যায়।
– ও শুভ্রা আপু এবার ওঠো মায়ের ঘরে আগুন লেগেছে।
ঘুমের গভীরতা তীব্র তারপরও কানে জেনো বিঁধলেো “মায়ের ঘরে আগুন লেগেছে “। ছুটে বেড়োতে গিয়ে মশারিতে টান পড়লো কিন্তু ও দেখার সময় কোথায় আমার। প্রচন্ড গরম। মাথার উপর কিছু একটা ঘুড়ছে। ওটা কে ইংরেজিতে ফ্যান এবং বাংলায় পাখা বলা হয়। অথচ কি যে ঘোড়ে ওই জানে সারাদিন ঘুড়ছে ওদিকে বাবার কথা সারাদিন যদি এমন ফ্যান ঘুরতে থাকে তবে কারেন্ট বিলটা কত উঠবে কোন ধরনের আইডিয়া আছে তোমার ?
আমিও চুপ করে মাথা নিচু করে পাশ কাটানোর চেষ্টায় থাকি। পাখার বাতাস আরাম করে গায়ে লাগে না। অথচ একটু বৃষ্টি হলো কি, হালকা দমকা বাতাস ওমনি দেখো পাখাটা বনবন বনবন করে ঘুরছে। আশ্চর্য !
মার ঘরে যেয়ে দেখি বিছানার পায়ের কাছের আলনায় সব কাপড় দাউদাউ করে জ্বলছে। আমার জামাগুলো, মার শাড়ি। আমি কেমন হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কাজের মেয়েটি বলছে আপু মা দরজা পাড় হয়ে আসবে কি করে আগুন তো বালিশ, তোষক ওইদিকেও …
ঘটনাটার যেখানে শুরু তার আগে একটু ভূমিকা দরকার। চারপাশের হিন্দুবাড়ির কাকা / কাকীমা সবাই হৈ হৈ করছে। যে বাড়ি মৃত্যু সে বাড়িতে নাকি আত্মা ঘোরে। আর অপমৃত্যু হলে তো কথাই নাই। তারা বলছে কিছু কিছু হয়েছে ? কিছু তো ঘটেছে…
নাহ্ এ বাড়িতে কোন অপমৃত্যু ঘটেনি।
স্বপ্না আমার ছোট বোন। কয়েক বছর ধরে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত। কেমোথেরাপি দেবার পর বেশ কিছু দিন কিছুটা বলা যেত ভালো থাকতো। আবার যেই সেই। রক্তে মিশে আছে ক্যান্সার। মাঝেমধ্যে মনে হয় এটা বাপ দাদার সম্পত্তি জেনো। গুষ্টি শুদ্ধো বিনাশ হয়ে যাবো এই ক্যান্সারে। সব শেষ হয়ে যাবে। দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। হঠাৎ বাবা এসে পিছে দাঁড়িয়ে। মাকে ডাকলাম। মা বললো এখনও ঠিক আছি, চিন্তা করিস না। আমি, বাবা আর কাজের মেয়েটি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি আগুন নিভানোর। হঠাৎই তাকিয়ে দেখি মার গায়ে জড়ানো কাঁথাটি পুড়ছে। বুকের অন্ধকারে কেমন মোচড় দিয়ে ওঠলো। চিৎকার করে ডাকলাম ; মা … মা … মা
অন্ধকার আর ধোঁয়ার কুণ্ডলীটা মিশে চোখে কোণে পানি না এসে বড্ড জ্বালা করছে। ঘরটা জুড়ে আগুন। আমি বললাম মা পানি ঢালি। বাবা বললেন না সারা ঘরে শর্ট সার্কিট হয়ে শক খাবো। আগে মেইন সুইচ বন্ধ করার চেষ্টা করি।
বাইরে রাত দেড়টায় লোকের আওয়াজে গমগম। কেউ ভিতরে আসছে না। আগুনটা জ্বলছে। বস্তা দিয়ে বাড়ি মেরে নেভানোর চেষ্টা কিন্তু আগুনের তীব্রতা আর পানির ঢেউ, টানে তাড়াতাড়ি। হঠাৎ কাজের মেয়ে টি পানি নিয়ে এসে পানি দিতে থাকলো। বললো খালু এবার পানি দিতে বলছে। সবাই মিলে চেষ্টা করছি।
একটা সময় ঐ ধোঁয়া ধোঁয়া দাবালনের লেলিহান কমে আসতে থাকলো। আমি আর মা দুজন দুজনে জড়িয়ে আশ্রয় খুঁজলাম আঁতিপাঁতি দুজনের মধ্যে। কিন্তু বাবা … !
বাবা কোথায় …. ?
সপেদা বাবা কোথায় ?
আমরা অন্ধকারের মধ্যে বাইরের সোডিয়াম আলোয় কোন মতে সিঁড়ি ঘরে যেয়ে দেখি বাবা আমার মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
বাবার শ্বাস নিতে সমস্যা হতো। কিন্তু ঐ মূহুর্তে আগুন নেভানোর কাজে এতোটাই ব্যতিব্যস্ত ছিলাম আমরা যে বাবা কে …
সেদিন রাতের পর থেকে মা কে আর একা থাকতে দেই না। আমি শুভ্রা আজ হয়ত বড় হয়ে গেছি। মা কে সামলাই। বাবা আর স্বপ্নার ছুটি। মাঝে মাঝে মনে হয় বাবা কি কিছু বলে যেতো যদি কাছে থাকতাম ? আমি বাবাকে খুঁজি …
আমার আর মায়ের আজও মনে হয় ঐ রাতটা কি ভয়ংকর ই না ছিলো। আজও মাঝ রাতে একা কেঁপে কেঁদে উঠি। হয়ত এটাই নিয়তি … ভয় পেয়েছিলাম মা কে হারানোর,আর হারিয়ে ফেললাম কাকে ….
________________________ সমাপ্তি …
জুম্মান এর সারা গায়ে দরদর করে ঘাম পড়ছে। খালি গায়ে লুঙ্গি পরা জোয়ান টাগড়া এক পুরুষ। দেখতে খুব একটা সুবিধার না হলেও আবার একেবারে ফেলনা নয় গায়ের রঙ বেশ সাদা বাদামি। মাথার চুলগুলো বেশ বড়। চাঁপার আবার খুব পছন্দ তার ঐ একটু বড় বড় চুল। প্রায়ই চাঁপা তার চুলগুলো নিয়ে একমনে খেলা করে। আর জুম্মানের চাঁপার ছেলেমানুষী ভালো লাগে বলে কিছু বলে না ।
– একটু আগে চাঁপা কে মোটামুটি আঁধমরা করে রেখে আসছে ঘরে। শুকনা লাউয়ের ডগার মত ল্যাকল্যাকা শরীর। মেরেও আরাম নাই। গায়ে তো কোন গোস্ ত নাই। হাত প্যাঁচিয়ে চুল ধরে হ্যাঁচকা টান দিলেই বিড়ালের মত ক্যাঁক করে ওঠে। শাঁক বাজছে একটু পরেই সূর্য দেবতার পূজা শুরু হবে। হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে কতদূর চলে গেলো জুম্মান। নদীর পাড়ে বসে রাস্তার ধারের পেয়ারা গাছের পেয়ারা ছিঁড়ে ছিলো এখন তাই চিবুচ্ছে।
– হঠাৎ চাঁপার কথা মনে উঠতেই আবার রাগে শূর্পনখা। কেনো রে ছেড়ি তুই জানিস না তুই অন্য কারো সাথে কথা বলিস আমি পছন্দ করি না। তুই শুধু আমার … যা করবি সব আমার সাথে করবি /
কেন কেন তুই পাশের ঘরের ঐ ডাঙ্গর পোলার লগে কথা বললি ? হু … আমি আসলেই তো বলতি পারতি ঘরে হারিকেন জ্বালানোর কেরোসিন লাগবো। আমি তখনই যাইতাম আনতে। কেন ঐ ছ্যাড়ার লগে কথা বললি ? ছ্যাড়ার চাহনি ভালা না তোরে কতবার বলছি। তুই সহজ মনে সবার সাথে কথা বলিস কিন্তু সবার মন তো সহজ না রে ছেড়ি।
সারা দিন আমি খাটি কার জন্যি হু, কার জন্যি … হঠাৎ মুখে এক অদ্ভুত আওয়াজ বের হইলো জুম্মান এর আচমকা। ফের যদি দেখি আমি বাদে কারো লগে হেসে হেসে কথা বলতি বা বাইরে কারো সাথে …
ঐ আমি তোরে জানে মেরে ফেলবো চ্যাঁপি। এই আমি কিড়ে কাটলাম।
জুম্মান খুব সাদাসিধা একজন মানুষ। তার দুনিয়ায় চ্যাঁপি অর্থাৎ চাঁপা ছাড়া কেউ নাই। মা টা ছিলো গত বছরে মারা গেছে। তাই জুম্মান এর কাছে চ্যাঁপি হলো তার চোখের মণি। কিন্তু তার প্রকাশটা চ্যাঁপি বুজতে পারে না তাই চ্যাঁপির উপর তার ভীষণ অভিমান। রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না মেয়েটার উপর। কেমন জেনো মায়া হয়। ঐ মায়ার জন্যে ই সব শেষ। মনে মনে বলে ওঠে জুম্মান।
চাঁপা দেখতে মোটেও সুন্দরী বলতে যা বলা হয় তার মধ্যে কিছু ই নাই। গায়ের রঙ কুঁচকুঁচে কালো। মুখের আকৃতি একটু গোল শরীরের গড়ন ছিপছিপে আর ছোটো খাটো। খাঁটো বলে সবাই খেপায় কত কথা বলে যে মানুষ। নানান ভাবে উপহাস করে চাঁপা জুম্মান এর কাছে এসে মন খারাপ করে বলে, সর্দার পাড়ায় শাপলা তুলতে গেছিলাম আজ ঐখানে সবাই আমারে নিয়া হাসে তামাশা করে। আমি দেখতে কালো, খাঁটো। সবাই হাসে জানো কত কত নামে ডেকে হাসি দিয়া গড়াগড়ি খায় আমার কষ্ট হয়।
কিন্তু জুম্মান তারে ভীষণ ভালোবাসে। বলে ঐ
তুই তো আমার চ্যাঁপি
কে কি বললো তাতে কি আমি কি তোরে কিছু বলি? তোর গায়ের রঙ টাই আমার কাছে সব না রে আমি তো তুই … বলেই কোলের মধ্যে জাপটাইয়ে ধরে ছোট্ট খাট্টাো চাঁপা কে।
হঠাৎ …
বুকের মধ্যে কেমন হাহাকার হয়ে উঠলো চ্যাঁপি রে ধাক্কা মাইরা ঘরে ফেলাইয়া আসছে একবারও পিছনে তাকায় নাই রাগ হয়ে। ও কি করতাছে ?
ভাবতেই উল্টো পথে এক কথায় দৌড়ানো শুরু করলো।
ঐ জুম্মান ঐ ব্যাটা হনহনাইয়া কই যাস ? মুরুব্বি গোছের একজন জিগাইলো… জুম্মানের কোন দিকে তাকানোর সময় নাই এখন। তার রাগ এখন মাটির সাথে মিশে গেছে। তার জানের টুকরার কাছে যাইতেছে।
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দেখে পূজা মন্ডপে লোক নাই। তার বাড়ি ঘিরে কত মানুষ। ভিড় ঠেলে আগাইতেছে জুম্মান উঠানে তার পরীর লাহান কলিজার টুকরার নিথর দেহ। কান দিয়ে নাক দিয়ে গলগলায় রক্ত কতক্ষণ পড়ছে কে জানে ? এখন রক্ত টা রক্তের লাল রঙে নাই কিছু টা শুখায় কালচে বর্ণের হয়ে আছে। কুচঁকুঁচে কালো জুম্মানের চ্যাঁপি কালোর মাঝেই কেমন নীলচে-কালোয় রূপ নিয়েছে।
জুম্মান আজও বেঁচেই আছে। নাহ্ সে পাগল হয়নি। তবে তার ভয় ছিলো চ্যাঁপি তাকে ছেড়ে যদি চলে যায় কখনও ? সবসময় চোখে চোখে রাখতো। ভীষণ ভালোবাসতো। আজ চ্যাঁপি নাই, চ্যাঁপি তাকে ছেড়ে চলে গেছে। যে ভয়টা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে সন্দেহের সৃষ্টি করেছিলো। তারই হাতের ধাক্কায় দরজার চাতালে মাথায় আঘাত পেয়ে চ্যাঁপি অতলে ডুবে গেলো।
রাতের অন্ধকারে আজও জুম্মান কেঁপে কেঁদে উঠে চ্যাঁপিরে তোরে আমি বড্ড ভালোবাসি গো। আয় না ফিরে বুকের মধ্যে জাপটায় রাখবোরে চ্যাঁপি। আর তো পারি নারে তোরে ছাড়া বাঁচতে।
আমার একা ভয় লাগেরে চ্যাঁপি।
আঁধারের সেই তীব্র আর্তনাদ শুধু আঁধার ই জানে কতটা বেদনাদায়ক।
_________________________ সমাপ্তি
ঝড়ের কি কোন গল্প হয়? গল্পের ও কি গল্প থাকে? না কি আরো নতুন কোন গল্পের শুরু হয়? নয়ত শেষটাই হয়ে যায় শেষ ? শুরুটাকে শুরু করতে গেলে মাঝে মাঝে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কাঠখড় পুড়াতে হয়। ঝড়ের রাত অনেকের কাছে ভীষণ রোমাঞ্চকর আর আমার কাছে এক অদ্ভুত অনুভূতি আর ভয়ংকর অসহায়তা।
গল্পের মাঝে কি কোন অনুভূতি লুকানো থাকে? কি জানি হয়ত ; আবার হয়ত না। বিড়বিড় করা ইদানীং কালে একটু বেশি হচ্ছে । আচ্ছা সব কিছু হয়ত মনে হচ্ছে কেনো? হয় হ্যা হবে নয়ত না হবে। যেকোনো একটা বেঁছে নিতে গিয়ে একাকিত্ব কে নিয়ে একটু জানালার পাশে তাকালাম । ঝড়ের রাত কি রোমান্টিক হয় নাকি তছনছ করার রাত হয় ?
পাশের খাটে শুয়ে ত্বন্বী বললো আজও? আজও সেই বিড়বিড় স্মৃতিচারণ ?
ঘুম আসছে না তো …
– মহিলা কলেজ এর সাথে কমার্স কলেজের বিতর্ক প্রতিযোগিতার জন্য উফ্ সে কি টেনশন ছিলো আমার।
নোটস তৈরি করা কোন টপিকটায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা যায় কতকিছু। বিষয় বস্তু
” সুন্দরবন মূলত উন্নয়ন পৌরুষের বলি হতে যাচ্ছে “। এর পক্ষে মহিলা কলেজ আর বিপক্ষে কমার্স কলেজ। বিশাল আয়োজন চলছে খুলনা ইউনাইটেড ক্লাবে।
ফাস্ট ইয়ার ডেম কেয়ার যে সময়টা সবাই এসব চিন্তা করে নতুন নতুন নতুনত্বের একটু হাওয়া লাগে। ভাবের মাত্রা ভিন্ন, ছেলেরা একটু আড় চোখে তাকায়, মেয়েরা একটু মুচকি হাসে। তারপর.. তারপরের গল্প হয় শুরু নয়ত ঐ মুচকি পর্যন্তই
আর আমি বলদ মার্কা বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রতিপক্ষের পরাস্ত করার জন্যে কোথায় না কোথায় পয়েন্ট করছি। রাতের বেলায় সুন্দরবনের বনেো সুন্দরী কে চাঁদের আলোয় হাতছানি দিয়ে ডাকছি..
রাত আড়াই টা বাজে দূর্বা কি হচ্ছে জানালার কাছে? কিরে ? আমি কিছু বললাম না, ওদের বাসাটা বেশ বড়। জানালাগুলো বেশ।
তোর দিনদিন এই বিড়বিড় করা কিন্তু বাড়ছে দূর্বা !
আমিও তো যাবো কিন্তু তোর মত এতো প্যানিক হওয়ার তো কিছু নাই।
– ত্বন্বী বাবা মায়ের একমাত্র উচ্ছন্নে যাওয়া কন্যা। মা এলাকার কমিশনার আর বাবা বিশাল ফার্নিচারের ব্যবসা। শখের বশে প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে। নাহ্ ঠিক শখেও না আমার ধারনা ভুলনা হলে ও রাফি ভাইয়ার জন্য এটা করছে। ধূর প্রেম কেউ করে নাকি দিন শেষে বিরহ … কাঁদতে হবেই হবে। এটা জেনো বাঁধা ধরা নিয়ম। সমাপ্তি = ” হয়ত মিলন নয় বিচ্ছেদ। ” সিনেমার মত নায়ক বা নায়িকা মৃত্যু আর তা না হলে জীবিত মৃত্যু অর্থাৎ নায়িকার অন্য কোথাও বিয়ে নায়ক চাকরি খুঁজছে নয়ত ছেলেটার পরিবার মেয়েটিকে নয়ত মেয়েটির পরিবার ছেলেটিকে পছন্দ করে নাই তাই অগ্যতা পরিবারের পছন্দ মেনে নেয় । এগুলোই প্রেম কতশত প্রেম… মন ভাঙার, মন কাঁদার, না পাওয়ার দূরে দূরে পেঁয়াজের রস এর ঝাঁঝ ছাড়াই কাঁদতে থাকো। যেখানে সারাটা জীবন বিরহ নিয়ে বেঁচে থাকা, অনেকের মতে এটাই বিশাল ভালোবাসা। যেখানে ভালোভাবে বাঁচার সব পথ বন্ধ হয়ে যায় …
ত্বন্বী ও ঐ দলে যুক্ত… জানি না ওর কি হবে /একটা বিষয় বস্তু দিয়ে দুদলের বিতর্ক। কে কাকে কথার জালে পরিচ্ছন্ন ভাষায় যুক্তি দিয়ে হারাতে পারে? বিচারকের ভূমিকায় যে থাকবেন তার কাছে যে দলের বা যাদের বক্তব্য যুক্তিসঙ্গত তাকেই জয়ী ঘোষণা করা হবে। সেটা স্কুল বা কলেজের সুনাম। মাঝখানে থেকে আমার লাভটা কি। মস্তিষ্কের উন্নতি ? চিন্তাধারার বিকাশ ..???. ধূর পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না। আমি গাধা প্রতিযোগিতার জন্য পয়েন্ট সেট করি আর কি …
ভীষণ ভয়ও লাগছে কেমন হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। তন্বী এই তন্বী ঘুমিয়ে গেছিস রে?
আমি কি তোর মত নিশাচর? অসহ্য ডাকিস কেনো?
আমার কেমন ভয় লাগছে কাল যদি না পারি। সবার সামনে আমি ফেলটু হয়ে যাবোরে.. আমার ভয় হচ্ছে।
এটা কি এস,এস,সি নাকি এইচএসসি চলে আসছে? তুই ভীষণ চিন্তা করছিস সব ব্যাপারে ? গতবারও সেম করেছিলি কিন্তু কৈ আমরাই তো জিতলাম। এটা সামন্যই তো একটা প্রতিযোগিতা। কেউ তো আর তোকে মেরে বেঁধে রাখবে না।
না জানি কিন্তু ভয় লাগছে যদি হেরে যাই ঐ সবার সামনে দিয়ে গেট পর্যন্ত যতক্ষণ না বের হবো ততক্ষণ সবাই আমার দিকে এক তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। স্কুলে স্কুলে করেছি। কিন্তু এবার তো ..
ছয়বারের একবারও হেরে যাইনি কিন্তু যাদের সাথে কঠিন হয়ে যাবে, কেনো যে নাম দিলাম কমার্স কলেজের সাথে কোন প্রতিযোতায় নাম দেবার আগে চিন্তা ভাবনা উচিত। এটা কি মডেল স্কুল যে হয়ে গেলো..
তন্বী ঘুমিয়ে গেছে। সকাল হতে আরো কিছু সময় ; ভয়টা আমার তীব্র থেকে তীব্রতর। গা টা কে গুলিয়ে আসছে। আমি কি জ্ঞান হারাবো ? কোন কারনে ভয় ভয় লাগলেই ঐ রাতের ভয়টা আমাকে চেপে ধরে।
আমার ভয় লাগছে যা এখন প্রায়ই হয় । সেই ঝড়ের রাত টা মনে আসতেই শরীরে কাঁপুনি শুরু করলো। ঘুম আসছে না বারান্দায় এসে বসেছি কেমন একটা গোঁঙানি শুনতেই তাকিয়ে খুঁজি হঠাৎ ই বাড়ির পিছে কিছু টা,ঝোপঝাড় এর মত টর্চ লাইটের হালকা আলোয় যার মুখ টা দেখেছিলাম ঐ রাতে। আমি একদিনের একটু সময়ে আমার মনের গভীরে গেঁথে গেছে। নাম না জানা একজন । যাকে সাত আটজন মিলে হাত-পা মুখে কাপড় বেঁধে বেধড়ক মারছে। এতো রাতে এভাবে মারছে মাকে ডাকবো? সবাইকে ডাকবো বোঝার আগেই আলোটা নাই। গোঁঙানির আওয়াজ টা কেমন করুন… সকাল হয়ে আসছে ভয়টা কমছে না বাড়ছে জ্বর টা বাড়ছে মনে হয়। ছেলেটার মুখ বাঁধা ছিলো ঐ টর্চের আলোয় শুধু চোখ দুটোর দেখা মিললো খুব স্পষ্ট ও নয় কিন্তু দেখেছি আমি, আমি পেয়েছি তার ঐ চোখ জোড়া । কি অসাধারণ বিশাল চোখ জোড়া। আর সকাল হতেই কি ভয়ংকর চোখ জোড়া নর্দমার কাছে ব্যাঁকা হয়ে পড়ে আছে। আজও আমি পারি না রাতে ঠিকমত ঘুমাতে। কি ছিলো ঐ চোখ জোড়ায় যা আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। আমার আর যাওয়া হলো না। কেউ হয়ত মাথায় পানি ঢালছে আর আমি চোখ বুজে সেই চোখ দুটো।সেই ঝড়ের রাতের চোখ জোড়া কে আমি … আমি কি ___ । তাড়া করে বেড়ায় সেই রাতের ভয় আর খুঁজে বেড়াই ঐ চোখ জোড়া…
________________________সমাপ্ত
বড় রাস্তায় উঠেই মনে হয় নদীতে নামলাম। অনেক দূরে কিছু আলো। তারাময় আকাশে বেশ বড় একটা চাঁদ। আকাশ থেকে জ্যোৎস্নার স্রোত বয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির গাঁ বেয়ে। দু’পাশে গাছ আর গাছ।
আহ্ কি বাতাস ঢালের শেষে একটা খাল চলে গেছে এঁকে-বেঁকে। ব্রীজের উপরে উঠতে মন চাইছে না। নীচে দিয়েই একটু হাঁটি।
অনেক পর পর গাড়ির শব্দ নির্জনতা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। আবার নির্জনতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে নিজে থেকেই। এ এক অদ্ভুত খেলা। আলোর
দিকে হাঁটতে থাকি ফুরফুরে মেজাজে। আজ কয়েকটা লাইন লিখতে হবে। সকাল থেকেই দিনটা ভালো যাচ্ছে আমার । গরম নেই, এমন বাতাস ঘাম জমে উঠতে পারছে না। ব্যস্ততার ভিড়টাও কম । পকেটটাও তাজা, মালিক বেতন দিয়েছে। বলেছে এখন কাজ শিখছো আট হাজার নাও পরে বাড়িয়ে দিবো। এ আট হাজারে কি হয়। তারপরও আটটা টাকাই বা কে দেয় আজকাল ?
হাঁটতে থাকি আর খেলতে থাকি নির্জনতা ভাঙা গড়ার খেলা আলো ছায়ার খেলা। ইচ্ছে করলো গলা ছেড়ে গান গাইতে আমার প্রিয় গান —-
” আমায় ভাসাইলিরে, আমায় ডুবাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে।।
কূল নাই কিনার নাই, নাইগো দরিয়ার পারে
আরে সাবধানে চালায়ো মাঝি
আমার ভাঙ্গা তরি রে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে।। ”
দূরে দুটো আলোর বিন্দু দেখা যায়। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে, সাথে সাথে শব্দও বড় হতে থাকে প্রচন্ডগতিতে। গাড়িটার চালক মাতাল অথবা দক্ষ। গাড়িটা কাছে চলে আসছে । হেডলাইটের আলোয় চোখ ঝলসে গেলো। শুধু একটা মাত্র শব্দ শুনি, ধুস!
এমনভাবে পড়লাম জেনো একটা বড় গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে বসে আছে কোনো লোক। কতটা ডিগবাজি দিলাম এবং এসে বসলাম বলতে পারিনা। ডানহাত উল্টে আছে পিঠের নীচে। চোয়ালের একপাশ ভেঙে ঝুলে আছে। গরম রক্তের স্রোত সারা শরীরে। প্রচন্ডশক্তিতে বলতে চাই ‘বাঁচাও’, কিন্তু শব্দ সরবরাহ হয়না। মস্তিষ্কের সমস্ত নির্দেশ উপেক্ষা করছে স্নায়ুতন্ত্র। নড়তে সাহায্য করেনা একটুও। নিঃস্পৃহ নীরব নিথর পাথরের মতো পড়ে থাকি অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে।
মাথার ভেতর একটানা ঝিমধরা শব্দ। হঠাৎ মনে হয় আমাকে এখন কেমন দেখাচ্ছে ? লোনা রক্ত ঠোঁটের কাছে জিহবা একটু বের করলেই ওমনি স্বাদ পাওয়া যাবে।
একপালকে তাকিয়ে থাকি সামনে। আমি বোধহয় মারা যাচ্ছি। আমি এখন মৃত্যুপথযাত্রী। এতবড় রাস্তা থাকতে গাড়িটা আমার উপরেই তুলে দিল। গাড়িটা, কি গাড়ি ছিল? গাড়িটা কি থেমেছে? থামবে না জানি। পুরা আজরাইল আমাকেই পছন্দ করলো ধাক্কা মারার জন্য। আমাকে কেউ যদি একটু হাসপাতালে নিয়ে যেত? বাঁচার তীব্রতায় চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে বারবার। দুটো লোক আসতে দেখা যায়। মোবাইলের আলোয় খুঁজতে থাকে আমাকে। অবয়ব বুঝতে পারিনা, এটুকু বুঝতে পারি মানুষ আসছে আমার বাঁচার আশা নিয়ে।
-এইতো এখানে। একেবারে থেঁতলে গেছে। দেখে চালাবিনা।
-বেঁচে আছে?
-না মনে হয়।
মোবাইলের আলোয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দ্যাখে, দেখে — নেয় বলে আমি মরে গেছি।
-কি করবি?
-মরে গেছে, চল চলে যাই। ঝামেলায় যাবার দরকার কি?
-কেউ দ্যাখেনিতো?
-না। চল পালাই।
পালাই মানে? আরে, নাড়িটা একবার পরীক্ষা করে দেখবিনা? এমনি দেখেই বুঝে ফেললি মরে গেছি। গাধা কোথাকার। কোনটা ড্রাইভার? বেয়াদব, গাড়ি চালাতে জানেনা। ছায়া সরে যায় দ্রুত। মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে গাড়িটাও চলে যায়। যন্ত্রণা ছাপিয়ে কষ্ট উঠে আসে বুকে। চলে গেল? আমি বেঁচে গেলে হাসপাতালে নেয়ার জন্যই তো তোদের ক্ষমা দিতাম। পালিয়ে গেলি কাপুরুষের মতো।
যন্ত্রণাবোধ আস্তে আস্তে ক্ষীণ হতে থাকে। আয়ু আর কতক্ষণ? কত মিনিট? কত সেকেন্ড? কষ্ট টা তীব্র থেকে তীব্রতর। চোখ গড়িয়ে পানি । বাসার সবাই আমার মৃত্যুর সংবাদে কাঁদবে। টাকা টা আছে তো পকেটে নাকি? ভেবেছিলাম প্রথম মাসের বেতনের টাকা মায়ের হাতে দিবো। ভয় লাগছে টাকাটা চুরি না হয়ে যায় ? শেষ অব্দি মায়ের হাতে পৌছোবে তো? আমার কিছু হলে মা কাকে নিয়ে কিভাবে বাঁচবে?
চোখের জল রক্তে মেশে গড়িয়ে গড়িয়ে। আজ কয়েকটা লাইন লিখতে চেয়েছিলাম সুপ্তীকে নিয়ে।
‘ইতিহাস আজও জানেনা বিলুপ্তের লুপ্ত হবার দুর্ঘটনা
কে কবে কেঁদেছে? সুপ্তী তোমার সাথেও আর কখনও দেখা হবে না।
কার কান্নার জল শুকিয়েছে আমার বুকে?
তার দাগ লেগে আছে বুকের ভিতর।’
হুঁস হুঁস করে বেরিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। কেউ থামেনা। প্রাণের আবছায়া নিয়ে ছুটে যাচ্ছে গাড়িগুলো। একটা গাড়ি থামে। মানুষ নামে। আশা নামে। আশার ঢাল বেয়ে প্রকৃতির ডাকে প্রকৃতির আড়ালে নেমে আসে। দুটি নরনারী। ছোট আলো জ্বেলে নিরাপদ জায়গা খোঁজে। বিধাতার ইশারায় আলো ফেলে আমার উপর। চমকে ওঠে অপ্রস্তুত দুটি মানুষ। আমাকেই প্রশ্ন করে নারী -কখন? কিভাবে? বামহাতের নাড়ি দ্যাখে নর বলে-
-বেঁচে আছে। হাসপাতালে নিতে হবে।
ভয়ের বিভীষিকা শব্দ তুলে টেনে নিয়ে যায় আশা। কথা হয়, কথা কাটাকাটি হয়। সত্তায় সত্তায় ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে দেবদূত। অনুভব করি মৃত্যুর আলিঙ্গন। চোখে অন্ধকার নামে। তলিয়ে যাই অন্ধকারের তলদেশে। শুধু শুনতে পাই একটাই শব্দ, ধুপ ধুপ ধুপ… … … ভয়টা ঘিরে ধরছে। ওরাও আমায় ফেলে চলে যাবে না তো … আমি কোথায় ? ভয় লাগছে শেষ বার মা আর সুপ্তির চেহারাটা যদি দেখতেপেতাম।
__________________ সমাপ্ত
২/০৮/২০২০
#নীলিকানীলাচল