(পর্ব – ২৪)
দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখাসমূহ তারিখের ক্রমানুসারে পাঠকের নিকট তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সাথে সাথে কিছু আলোচনাও করেছি। এর আগে, ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর পর্বে, ক্রমিক নম্বর ০১ থেকে ২২ পর্যন্ত মোট ২২ টি লেখা উপস্থাপন করেছি। এখন, এ পর্বে, ক্রমিক নম্বর ২৩ থেকে শুরু করে ২৮ নম্বর পর্যন্ত, তারিখের ক্রমানুসারে, উপস্থাপন করছি।
২৩. ‘সাহিত্যিকদের জীবনে প্রেম ও নারী’ শিরোনামে আমার একটি দীর্ঘ নিবন্ধ দৈনিক সমাচার পত্রিকায় ২ কিস্তিতে ২ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এটি কবি ও সাহিত্যিক আ.শ.ম বাবর আলীর প্রেম কাহিনিবিষয়ক গ্রন্থ ‘সাহিত্যিকদের জীবনে প্রেম ও নারী’র ওপর একটি পর্যালোচনা। প্রকাশের তারিখ ০৬ এপ্রিল ১৯৯৬ এবং ১৩ এপ্রিল ১৯৯৬ । দীর্ঘ নিবন্ধের কিছু অংশ তুলে ধরছি –
আ.শ.ম বাবর আলী রচিত ‘সাহিত্যিকদের জীবনে প্রেম ও নারী’ একটি ব্যতিক্রমী প্রকাশনা। এদেশে এধরণের বইয়ের সংখ্যা অত্যন্ত কম। এ দুঃসাহসি ও ব্যতীক্রমী কাজটি করে তিনি আমাদের সাহিত্যের একটি অবহেলিত দিককেই তুলে ধরেছেন।
এ গ্রন্হে মোট ৮ জন বরেণ্য সাহিত্যিকের প্রেম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এদের সাথে আলোচিত হয়েছে ৩৪ জন প্রেমিকার জীবন। অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছে লেখক-সাহিত্যিক মহা মনিষীদের পূর্বপুরুষদের প্রেমকাহিনী!ও। যে ৮ জনের প্রেমকাহিনী বইটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তারা হলেন – রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শেক্সপিয়র, বার্নাডশ, শেলী, মোপাসাঁ, বায়রন এবং গোর্কি। তন্মধ্যে নজরুল ও বার্নাডশ’র স্হান সর্বোচ্চ। এদের উভয়ের জীবনে এসেছে ৭ জন করে প্রেমিকা। আর মোপাসাঁ’র জীবনে মাত্র ১ জন। প্রেমিকা ছাড়াও এদের মধ্যে অনেকেই পতিতালয়ে গমন করতেন। ফলে এদের জীবনে এসেছে শতশত নারী।
আ.শ. ম বাবর আলী একজন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক। বিরামহীন লেখক তিনি। পরিশ্রমী এবং বিনয়ী। পত্রিকার পাতা খুললে তার কোনো না কোনো লেখা আমাদের চোখে পড়ে। ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, সমালোচনা, কলাম – এক কথায়, সাহিত্যের সকল শাখায় অবাধ বিচরণ তার। এর সাথে প্রেম-সাহিত্য আরও একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন । ৩৭ জন বিশ্ববিখ্যাত ‘সাহিত্যিকদের জীবনে প্রেম ও নারী’ শিরোনামে লেখা বাবর আলীর সমৃদ্ধশালী নিবন্ধগুলো বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। আলোচিত বইটি মাত্র ৮ জন সাহিত্যিকের রোমান্টিক ঘটনাবলী নিয়ে লেখা। এটি এ ধরনের প্রকাশনার প্রথম খন্ড। আরও ২৯ জনের প্রেমকাহিনী এখনো বই আকারে বের হয়নি। আমরা আশা করবো, পর্যায়ক্রমে সেগুলোও বই আকারে বাজারে আসবে।
‘সাহিত্যেিকদের জীবনে প্রেম ও নারী’ গ্রন্থটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন আবিদ – এ – আজাদ। বহুরঙ্গা প্রচ্ছদটি চমৎকার। বাঁধাই ও লেমিনেশন সুন্দর। বইটিতে কিছু মুদ্রণ প্রমাদ রয়েছে। চমৎকার অফসেট কাগজে ছাপা বলেই বোধ হয় বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১০০ টাকা। মূল্যটা একটু বেশি বলেই মনে হয়। উৎস প্রকাশনী বইটি প্রকাশ করে একটি ভালো কাজ করলেন। পাঠক মাত্রই বইটি হাতে তুলে নেবেন বলে বিশ্বাস করি।
২৪. ‘যে যাবার’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ১৪ এপ্রিল ১৯৯৬। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৯ । কবিতার অংশ বিশেষ উদ্বৃত্ত করছি।
যে যাবার সে তো চলেই গিয়েছে।
তুমি না চাইলেও সে যাবে।
তুমি চাওনা জানি, তবু
যে যাবার সে তো চলে যাবেই।
প্রশ্ন করো না ক্ষতবিক্ষত হবে
এটাই নিয়ম, এভাবেই যায়।
যে যাবার সে তো চলেই গিয়েছে।
২৫. ‘জীবনকে ভালবাসি বলে’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২৭ এপ্রিল ১৯৯৬। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৮ । ‘জীবনকে ভালোবাসি বলে’ কবিতাটি এখানে তুলে ধরছি।
জীবনকে ভালোবাসি, বড় ভালোবাসি / জীবনকে ভালোবাসতে গিয়ে /দাসত্ব-শৃঙ্খল ভাঙতে / যারা প্রাণ দিল, ভালোবাসি তাদের। / শান্তির জন্যে সামন্তবাদের / পাঁজর ভেঙেছে যারা, ভালোবাসি তাদেরও। /সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে / স্বাধীনতার জন্যে যারা দিয়ে গেলো প্রাণ / যাদের রক্তের কাছে আজীবন ঋৃণী / তাদের জানাই সালাম, লও সালাম।
এখনও সংগ্রামরত যারা / আগুনের হল্কা যাদের চোখে, / অন্তহীন স্নিগ্ধ ভালোবাসায় / করমর্দন করছি তাদের / জানাচ্ছি উষ্ণ অভিনন্দন।
পরে যারা আসবেন, আমাদেরও পরে / সেই সকল অনাগত বীরদের প্রতি / প্রত্যয়ে, দৃঢ় প্রত্যয়ে / বাড়িয়ে দিলাম হাত, / কেননা, আমরা সবাই ভালোবাসি / স্রোতস্বিনী নদী, রোদ্দুর আর হাওয়া / স্বপ্নময় পৃথিবীর সুক্ষ্ণ কারুকাজ / বৈষম্যহীন আকাশ আর মাটি। / জীবনকে ভালোবাসি বলে / তাই আজও স্বপ্ন দেখি, / সোনালী শস্যের স্বপ্ন দেখি / স্বপ্ন দেখি মুক্ত পৃথিবীর।
২৬. ‘আমি থাকবো না কি চলে যাবো’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২৮ এপ্রিল ১৯৯৬। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। কবিতাটি এরকম –
যাবার কথা বলেছো? / ক্যামন করে যাই বলো / মোহনীয় রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে? / যে মঞ্চে দেহবল্লরীর সাথে হৃদয় নাচে /সেই রোমাঞ্চকর মঞ্চ থেকে চলে যেতে বলেছো, / যাওয়া কী এতোই সহজ? / যাই বললেই কী যাওয়া যায়? / কী সুন্দর নিষ্ঠুর তুমি! / বেরসিক না- ই বা বললাম / হিংসুকও কি বলতে পারি না? / না, কিছুই বলবো না তোমায়। / শুধু অনুমতি চাই, / আমি থাকবো না কি চলে যাবো?
২৭. ‘সুকান্তর মৃত্যুদিনে’ শিরোণামে আমার লেখা একটি নিবন্ধ দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ শনিবার ১১ মে ১৯৯৬, ২৮ বৈশাখ ১৪০৩ বঙ্গাব্দ।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য ১৩৫৪ সালের ২৯ বৈশাখ মাত্র একুশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। প্রথমে ম্যালেরিয়া, পরে টাইফয়েড ও অবশেষে যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করতে করতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
শেষপর্যন্তও সুকান্তর বিশ্বাস ছিলো, সে ভালো হয়ে উঠবে । আবার সে কাজ করবে লক্ষ-কোটি জনতার মাঝে। আবার কবিতা লিখবে। তার স্বপ্নের স্বদেশ দেখে যাবে সে নিজের চোখে। তা আর হয়ে ওঠেনি। যা হয়েছে তা হলো কবিতার আশ্বাস –
‘তবুও তোমায় আমি হাতছানি দেবো বারে বারে,
ফল দেবো, ফুল দেবো, দেবো আমি পাখিরও কূজন
একই মাটিতে পুষ্ট আপনার জন৷’
২৮. ‘জীবনের বাঁকে’, ‘লাগছে ভালো’,এবং ‘হতাশ কেন’ আমার লেখা তিনটি ছড়া ‘সামাদ সিকদারের ৩ টি ছড়া’ শিরোনামে দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ সোমবার ১৩ মে ১৯৯৬, ৩০ বৈশাখ ১৪০৩ বঙ্গাব্দ।
প্রথম ছড়াটি ছাড়া বাকি ২ টি পরবর্তী সময়ে আমার ‘তিড়িং বিড়িং ভোঁদড় নাচে’ ছড়ার বইয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘লাগছে ভালো’ পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৭ -এর অন্তর্ভুক্ত। ‘হতাশ কেন’ ছড়াটি ‘সামনে চলো’ শিরোনামে ছড়ার বইয়ের ১৬ পৃষ্ঠায় স্হান লাভ করে। প্রথমে ‘জীবনের বাঁকে’ ছড়াটি তুলে ধরছি ।
চলনে বলনে তিনি
ডার্ক জাস্টিস
শাহরুখ খান তিনি
খান কিশমিশ।
নায়ক নায়ক ভাব
জেদী অতিশয়
বয়স কতই হবে
আট কি বা নয়।
নাহিন মাহমুদ নাম
চাটগাঁয়ে থাকে
যাত্রা করেছে শুরু
জীবনের বাঁকে।
‘লাগছে ভালো’ ছড়াটি ঢাকা থেকে চাটগাঁ যাবার পথে রেলগাড়ীতে বসে লেখা। ছড়াটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি।
লাগছে ভালো চলতে পথে
খেলার সাথী পাশে
দূর-দূরান্তে যাই চলে যাই
হেসে হেসে হেসে।
লাগছে ভালো চলতে পথে
কু’ ঝিক ঝিক ঝিক
আকাশে আজ চাঁদের আলো
করছে ঝিক মিক।
লাগছে ভালো চলতে পথে
তুমি আছো বলে
মান-অভিমান সবই করো
গল্প বলার ছলে।
লাগছে ভালো চলতে পথে
নেই পিছুটান আর
এইতো সময় উপভোগের
আনন্দ হাজার।
‘সামনে চলো’ ছড়াটি মাত্র ১২ পংক্তির। এটি একটি ভিন্নধর্মী ছড়া। ছড়াটি এখানে তুলে ধরছি।
সামনে চলো খানিকটা পথ
একটু পরেই আলো পাবে
আঁধার রাতের গ্লানি যতো
এক তুড়িতে কেটে যাবে।
হতাশ কেন মৌন তুমি
জীবনটা তো ছোট্ট নয়
সুখে দুঃখে জীবনটা হোক
আদর্শ আর কর্মময়।
মানুষই তো মানুষ হয়ে
মানুষ ভালো বাসে গো
দুঃখী মানুষ দুঃখ ভুলে
তাই তো ওরা হাসে গো!
(চলবে)