আমি আগেই বলেছি, সকল পত্রিকার চেয়ে দৈনিক সমাচার পত্রিকায় আমার লেখা বেশি ছাপা হয়েছে। অনেক ধরনের লেখা লিখেছি। মূলতঃ সাংবাদিক- সাহিত্যিক আমিনুল আহসান ভাইয়ের প্রেরণায়ই এতো বেশি লিখেছি। সকল প্রকাশিত লেখা আমার সংগ্রহে নেই। আমার সংগ্রহে ৭৫ টি প্রকাশিত লেখা খুঁজে পেয়েছি। দৈনিক সমাচার পত্রিকার সেই সকল লেখার একটি তালিকা সন-তারিখের ক্রমানুসারে নিচে দেয়া হলো। সাথে সাথে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
০১. ‘সামাদ সিকদারের বই মুক্তিযুদ্ধ এবং আমি’ শিরোণামে আমার ও বইটির প্রচ্ছদের ছবিসহ একটি পুস্তক পর্যালোচনা প্রকাশিত হয়। পুস্তক পর্যালোচনা করেছেন কবি-সাহিত্যিক আ.শ.ম বাবরআলী। এটি প্রকাশের তারিখ ছিলো ২২ জানুয়ারি ১৯৯৪।
দীর্ঘ পুস্তক পর্যালোচনায় কবি আ.শ.ম বাবর আলী লিখেছেন,
‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তপ্ত দিনগুলোতে মুক্তিযোদ্ধা সামাদ সিকদারের কার্যক্রম দিনলিপি আকারে তিনি সুগ্রথিত করেছেন এ গ্রন্থে। এর সাথে আনুষঙ্গিকভাবে এসেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ঐতিহ্য আর ইতিহাসের কথা এবং বর্ণনা।…
সামাদ সিকদার ৭১-এর মার্চ থেকে শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের উন্মাতাল দিনগুলোর সুনিপুণ চিত্র এঁকেছেন দিনানুক্রমিকভাবে এ গ্রন্থে। তাই আলোচ্য গ্রন্থখানি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি অন্যতম দলিল হিসেবে অবশ্যই বিচার্য। আগামী প্রজন্মের জন্য এ গ্রন্থটি বিশেষ মূল্যবান। গ্রন্থটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক ইতিহাস রচনার অন্যতম সহায়ক গ্রন্থ হতে পারে।’
০২. ‘সাহিত্যের নিভৃত কর্মী সামাদ সিকদার’ শিরোণামে আমার ছবিসহ একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এটি আমার সাহিত্যকর্মের একটি সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ণ। এটি লিখেছেন কবি ও ছড়াকার আ.শ.ম বাবরআলী। প্রকাশের তারিখ শনিবার ০৪ জুন ১৯৯৪, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪০১ বঙ্গাব্দ।
আ.শ.ম বাবর আলী দৈনিক সমাচার পত্রপত্রিকার প্রায় পৃষ্ঠাব্যাপী নিবন্ধের শুরু করেছেন এভাবে,
‘সামাদ সিকদার লেখেন খুব কম, কিন্তু যা লেখেন তা মাষ্টার পিস। তার প্রায় সব লেখাই বক্তব্যধর্মী। বর্ণনার ঘনঘটার চেয়ে বক্তব্যের প্রাধান্যই বেশি।… এপর্যন্ত কবিতা, গবেষণা, ছড়াসহ তার মোট ১০ টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।…সামাদ সিকদার লেখেন মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য। নিজের জন্য যতটুকু ভাবেন, তার চেয়ে বেশি ভাবেন দেশ আর দেশের মানুষের জন্য। এজন্যই তার সাহিত্যে গণমুখী চেতনার প্রকাশই বেশি। সামাদ সিকদার তাই এমন একজন সাহিত্যসেবী, যিনি নিজের জন্য যতটুকু, তার চেয়ে অনেক বেশি অন্যের জন্য।’
০৩. ‘একুশ তুমি’ শিরোনামে আমার লেখা একটি ছড়া দৈনিক সমাচার পত্রিকার একুশে ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪০১ বঙ্গাব্দ। ছড়াটি এরকম,
‘একুশ তুমি কুমড়ো লতা / কৃষ্ণচূড়ার আবীর লাল / একুশ তুমি অশান্ত ঢেউ / কোকিল ডাকা সেই সকাল। /
একুশ তুমি অতি আপন /হৃদয় মনের একটি জ্বালা / একুশ তুমি মায়ের সিঁথি / নীল সাগরের উর্মিমালা।
০৪. ‘গোঁধুলি’ শিরোনামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ২২ এপ্রিল ১৯৯৫। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘যদি দেখা হয়’-এর ৪৮ পৃষ্ঠায় অন্তর্ভুক্ত হয়। কবিতাটির উদ্ধৃতি দিচ্ছি,
‘আমি কী বড় হই / নাকি ক্রমান্বয়ে ছোট হয় আমার জীবন? /মৌমাছির মতো আমি কী সাজাই সংসার / সাজাই জীবন?/ আমি কি জমা করি সুখ / ইঁদুরের ধান লুকানোর মতো। / আমি কি গুছাই জীবন / নাকি জীবন পালিয়ে বেড়ায় / করোটির ভেতর থেকে / জীবন আর আমি বুঝি / এভাবেই লুকোচুরি খেলি / চোর আর পুলিশের মতো। / জীবন-মৃত্যুর গোধুলীটা / বড়ই গোলমেলে ঠেকে আজ / চেয়ে দেখি /জীবনের কোনো সত্যই জানিনা আমি /হবেও না জানা কোনো দিন /জানি শুধু – / জীবন আজ যথার্থ জীবীতের।/ জানি আরও -/ ক্লান্তিতে কীসের ভয়? /জীবন মৃত্যুর এ গোধূলিই স্বচ্ছতা পাক।’
০৫. কবি আ.শ. ম বাবর আলীর প্রেমের কাব্য ‘বেলা অবেলায়’ শিরোনামে আমার একটি দীর্ঘ নিবন্ধ দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এটি কবি ও সাহিত্যিক আ.শ.ম বাবর আলীর কাব্যগ্রন্থ ‘বেলা অবেলায়’-এর ওপর একটি পুস্তক পর্যালোচনা। প্রকাশের তারিখ শনিবার ২২ জুলাই ১৯৯৫, ০৭ শ্রাবণ ১৪০২ বঙ্গাব্দ।
এটি আ.শ.ম বাবর আলীর প্রেমের কাব্য ‘বেলা অবেলায়’-এর ওপর আমার লেখা প্রায় ২ পৃষ্ঠাব্যাপী পুস্তক পর্যালোচনা। এর অংশ বিশেষ পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি।
মোট ৩০ টি কবিতা নিয়ে কবি আ.শ.ম বাবর আলীর কাব্যগ্রন্থ। মূলতঃ প্রেমই এই কাব্যের মূল সুর।… কবির সুখের অন্ত নেই। যুগান্তরের প্রিয়ে তার বুক ভরিয়ে দিয়েছে। তাই কবির উচ্চারণ,
‘হৃদয়টা আজ খুলে দিয়ে বলছি আমি তাই,
তোমায় পেয়ে প্রিয়া যে আর চাওয়ার কিছুই নেই।’
(তোমায় পেয়ে, পৃষ্ঠা- ১০)।
ভালবাসার দেশে এসে জীবনটাকে মধুর বলে ভাবতে শিখেছেন কবি। প্রেমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ নেই বলেও তিনি জেনেছেন। স্বর্গেতেও কবির আর কোনো লালসা নেই। বিশ্বখ্যাত কবি ওমর খৈয়ামের মতোই যেন বাবর আলী উচ্চারণ করেন –
‘কোথায় স্বর্গ-ঠিকানা তা জানিনা তো আমি,
তোমার আমার ভালোবাসা স্বর্গ থেকে দামী।’
(ভালোবাসার দেশে, পৃষ্ঠা -১৫)।
জীবনান্দ, জসিম উদ্দিন আর নজরুলের ভাবের ও শব্দমালার এক অপুর্ব সন্মেলন ঘটেছে বাবর আলীর কবিতায়।… বাবর আলী যখন বলেন, ‘কতদিন তোমা দেখি নাই প্রিয়া / বুকে তাই বড় জ্বালা’ – তখন কবি বুঝি বা নজরুলের দ্বারস্থ হন।
বাবর আলী যখন উচ্চারণ করেন, ‘ব্যথার শব্দ গাঁথিয়া গাঁথিয়া করেছি বুকের মালা’ কিংবা, ‘কত কথা আমি রেখেছি লুকায়ে শুন্য বুকের মাঝে’ তখন কিন্তু আমরা কবি জসিম উদ্দিনকেই স্মরণ করি। কবি যখন লিখেন, ‘রাতের বাতাসে দিয়েছি মিশায়ে আমার দীর্ঘশ্বাস। / আমার অশ্রু-শিশির লইয়া জেগেছে ভোরের ঘাস।’ তখন তো কবি জীবনানন্দ দাশই ভেসে ওঠে চোখের সামনে।
০৬. ‘বেনামী’ শিরোণামে আমার লেখা একটি কবিতা দৈনিক সমাচার পত্রিকার ‘সমাচার সাহিত্য’ বিভাগের পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশের তারিখ ৩০ আগষ্ট ১৯৯৫। এই কবিতাটি পরবর্তী সময়ে আমার কাব্যগ্রন্থ ‘অপেক্ষায় আছি’-এর ৪৬ পৃষ্ঠায় অন্তর্ভুক্ত হয়। ‘বেনামী’ কবিতাটির কয়েকটি পংক্তি তুলে ধরছি।
‘যেখানে শুয়ে আছে আমার মা / চির নিদ্রায় শায়িত আব্বাজান /… ধ্যান আর বাস্তবের খেয়া পারে / যেখানে শেকড় আমার। /…সেখানেই কোমল চোখ দুটি মেলে / প্রথমদেখেছি পৃথিবীর রূপ /…সেখানেই সীমান্ত আমার / সেই গোমতীর তীরে। /যেখানে শুরু আমার/ তার কাছে আজীবন ঋণী। / লেনদেন ফুরিয়ে গেলে / ফিরবো সেখানে।’
০৭. দৈনিক সমাচার পত্রিকায়
‘গন্ধমের চারা’র ওপর একটি পুস্তক পর্যালোচনা প্রকাশিত হয়। পর্যালোচক সামাদ সিকদার। প্রকাশের তারিখ ০২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫।
দৈনিক সমাচার পত্রিকার পুরো পৃষ্ঠাব্যাপী ছিল এই কাব্যগ্রন্থের পর্যালোচনা। একেবারে সংক্ষিপ্ত রূপে ঐ লেখার কিছু উপস্থাপন করছি ৷ ‘গন্ধমের চারা’ কাব্যগ্রন্থের পর্যালোচনা শুরু করেছি এভাবে –
বাংলাদেশের এখানে সেখানে লেখা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের কবিতা নিয়ে সৈয়দ আশরাফুল হকের কাব্যগ্রন্থ ‘গন্ধমের চারা’। ২৮ টি কবিতা নিয়ে ৫৬ পৃষ্ঠার কাব্যগ্রন্থে নানা বর্ণের নানা স্বাদের কবিতা রয়েছে। কবিতার আকারেও রয়েছে তারতম্য। কোনোটা বিরাট, কোনোটি ক্ষুদ্র।
‘এ বড় দুঃসময়’ কবিতা দিয়ে ‘গন্ধমের চারা’ কাব্যগ্রন্থের শুরু। কবির মতে, এখন বড় দুঃসময়। পৃথিবীটা অনুর্বর হয়ে গেছে। সমস্ত সবুজ রং তামাটে বর্ণ ধারণ করেছে। উদ্যান ফাঁকা হয়ে গেছে। চারদিকে আকাল, অভাব অনটন। সত্যিকার অর্থেই কবির নিকট আজ বড় দুঃসময়। তাই’আবার বর্ষা নামুক।’ গায়ত্রী ফিরে আসুক। পৃথিবী সুফলা হোক। বর্ষা নামুক ।
‘অঝরে বরষা নামুক;
একবুক পানি নিয়ে বুকে ফসল ফলুক।’ ( আবার বর্ষা নামুক, পৃষ্ঠা – ৪)।
এখনও কালিগাঙ্গের চিহ্ন মুছে যায়নি। আছে মাছরাঙা বিল। সে বিলের অগাধজলে এখনও কলসি দোলে। এখনও আকাশে সোনা-ডানা চিল উড়ে। অশথ গাছটাই নেই। গাছটা শিকদারের বিশাল অট্টালিকার ইট পোড়াবার ইন্ধন জুগিয়েছিল। গাছটাকে কবির বড় বেশি মনে পড়ে। এ গাছের তলায় কবিকে ফুলতোলা রুমাল দিয়েছিল সাদিকা। সাদিকার কথা মনে হলেই নষ্টালজিয়া ভর করে তার সমগ্র সত্বায়। কবি যেন কেমন হয়ে যান!
‘সাদিকা, এখন তুমি কোথায়?
গতায়ু চৈত্রের এই উদোম বাতাসে
এ কীসের ঘ্রাণ! এ কীসের ঘ্রাণ!
তছনছ হয়ে গেলো সাজানো বাগান।’ (এ কীসের ঘ্রাণ, পৃষ্ঠা -৯)।
সৈয়দ আশরাফুল হকের কবিতা একাধারে সরল, অন্যদিকে জটিল ও দ্বান্দ্বিক। এজন্যই সৈয়দ আশরাফুল হকের কবিতায় মিছিলের কথা এসেছে। এসেছে খোকার কাঁচা রক্তধারারা কথা। জলোচ্ছাস, মধুমতী, বালেশ্বর ও পানগোছি নদী দিয়ে তিনি সাজিয়েছেন কবিতার শরীর। তাই অনাদরে বেড়ে ওঠা বাবলার কথা তার মনে পড়ে। তার কবিতা থেকে বাদ পড়েনি গন্ধম আর গন্ধমের চারা। গ্রীক পুরান মহাভারত রামায়ণ একালের পার্বত্য রাজা দেবাশীষ রায় পর্যন্ত তিনি টেনে নিয়ে এসেছেন তার কবিতায়।
‘আমি রাজা দুস্মন্ত, রামেসিস, দেবাশীষ রায়।
আমি যে ক্রমেই সরে যাচ্ছি তনুজা। ‘
(ক্রমেই সরে যাচ্ছি তনুজা, পৃষ্ঠা -৪৯)।
(চলবে)
রূপায়ণ টাউন, ভূঁইগড়, নারায়নগঞ্জ, বাংলাদেশ।