Developmental Services Ontario (DSO) – অন্টারিওর প্রতিবন্দ্বিতাজনিত সমস্যাপীড়িত মানুষের সহায়ক সেবা প্রদানের জন্য নিবেদিত একটি সংস্থা। অন্টারিওতে বসবাসরত আটারো বছর বা তদূর্ধ্ব কারো যদি ‘developmental disability’ থাকে তাহলে সেই ব্যক্তি এখানে আবেদন করে Ministry of Children, Community and Social Services প্রদত্ত বেশ কিছু সেবা কার্যক্রমের সুবিধা নিতে পারেন। Developmental Disability এর অনেক শাখা প্রশাখার মধ্যে Intellectual Disability, Cerebral Palsy এবং Autism Spectrum Disorder বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এখানে আবেদন করার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগ্য বিবেচিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ‘Passport Funding’ নামে বাৎসরিক একটি অনুদান, বাসস্থান বিষয়ক সহায়তা, প্রতিবন্ধিতার ধরণের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিশেষায়িত সেবা পেয়ে থাকেন। আমার নিজের কর্মক্ষত্র মানসিক স্বাস্থ্য সেবা হলেও সময়ে সময়ে অনেক মানুষকে DSO এর সেবা পাওয়ার জন্য কাজ করতে হয়। নিয়ম হচ্ছে কাউকে DSO তে রেফার করার পর যিনি রেফার করেছেন তার কাছেই প্রথম জানতে চাওয়া হয় রেফার করার যৌক্তিকতা। তারপর সংশ্লিষ্ট ক্লায়েন্টকে ফোন করে ইনটেক ইন্টারভিউ নেয়া হয়। যোগ্য বিবেচিত না হলে আবেদন প্রক্রিয়ার এখানেই সমাপ্তি। উপযুক্ততা প্রমাণিত হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয় । বলা বাহুল্য এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই পর্যায়ে প্রার্থীকে দুই ঘন্টার একটি Psychological Assessment এ অংশ নিতে হয় যা পরিচালনা করেন একজন মনোবিজ্ঞানী। একই সময়ে যিনি রেফার করেছেন তাকেও প্রায় দেড়শত প্রশ্ন সম্বলিত একটি রিভিউ সম্পন্ন করতে হয় প্রার্থীর বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে। চাইলে রেফারির কাছে এই প্রশ্নমালা আগেও পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এই assessment শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরে প্রার্থী DSO এর সেবা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন কিনা তা জানিয়ে দেয়া হয় একটি Feedback Session এর মাধ্যমে।
যথারীতি সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে এডওয়ার্ড (ছদ্মনাম) নামের এক ক্লায়েন্টকে নিয়ে DSO এর টরন্টো অফিস Surrey Place এ বসে আছি। উদ্দেশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা। যার সাথে আমি আছি তার উদ্বিগ্নতা ভয়াবহ পর্যায়ের। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আজ সেবার আবেদন গ্রহণ হওয়া না হওয়ার অনিশ্চয়তা। দ্রুতপায়ে পায়চারী করা দেখে তার মনের অবস্থা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছিলাম। মনোযোগ অন্যদিকে নিবিষ্ট করার জন্য জানতে চাইলাম পরিবার, আত্মীয় পরিজনদের কথা। কেন জানিনা এই প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে অনেকটা আক্ষেপের সুরে বললো, “ “I did not want to go through any of these hassles of intake, assessment and so on. You kept pushing and now iam here waiting for someone to determine my ability” । সবিনয়ে বললাম, “You are the change maker. All Iam doing is facilitating the process so that you get what you are entitled for”। এসব মানুষদের অনেকেই নিজে উদ্যোগী হয়ে কোনো কিছু করতে চান না, এমনকি নিজের প্রাপ্যটুকুও আদায়ের ব্যাপারেও তাদের অনীহা । যাহোক এই আলাপচারিতার মধ্যেই ফিডব্যাক সেশনের ডাক পড়লো। মনোবিজ্ঞানী জানালেন উপযুক্ততা নির্ধারণের বেশিরভাগ মাপকাঠিতেই এডওয়ার্ডকে তার “functional” মনে হয়েছে শুধু একটি বিষয় ছাড়া। সেটি হচ্ছে Information Processing। এই ক্ষেত্রে সে অনেক পিছিয়ে। যাহোক সার্বিক বিবেচনায় তার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। এখন থেকে এডওয়ার্ড DSO এর নির্ধারিত সব সেবা পাবে। এর মধ্যে থাকবে পাঁচ হাজার ডলারের বাৎসরিক পাসপোর্ট ফান্ডিং, বাসস্থান সহায়তা, হোম কেয়ার সাপোর্ট, একজন Adult Protective Support Worker এর সাথে কাজ করার সুযোগ এবং অন্যান্য সুবিধা। এক সপ্তাহের মধ্যে এডওয়ার্ডের কাছে রিপোর্টসহ সেবা বিষয়ক সব কাগজপত্র ডাকযোগে পাঠানো হবে। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ফলাফল অনুকূলে হওয়ায় এডওয়ার্ডের চেহারায় স্বস্তি ও প্রশান্তির আভাস। মনোবিজ্ঞানীকে তার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে অফিসের বাইরে পা বাড়াতেই এডওয়ার্ডের মন্তব্য, “ “You wanted to know about my family. Listen, nothing exists as such in my life. Life is a big zero. But when we come across people like you, it radiates our pathways. Life begins to unfold its new chapter”।
বলা নিস্প্রয়োজন যে এসব মানুষদের অনেকেরই কোনো আত্মীয় স্বজন নেই, নেই অন্য কোনো অবলম্বন। নেই ঘর, নেই সংসার। খ্রীষ্টমাস বা থ্যাংকস গিভিং ডে তে এরা কারো প্রতীক্ষায় প্রহর গুনে না। আশাহীন, লক্ষ্যহীন এসব মানুষ যখন নুতন করে পথের দিশা খুঁজে পায়, সেই প্রাপ্তির আনন্দকে কোনো কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায়না। বুঝতে পারছি আনন্দে, আবেগে, কৃতজ্ঞতায় ধরে আসছে এডওয়ার্ডের গলা। ভিজে আসছে আমারও দুচোঁখের পাতা। পথ হারানো মানুষের জীবনের কোনো অর্জনের অভিযাত্রায় ন্যূনতম অংশীদার হবার এই আনন্দ অশ্রু লুকাই কি করে?
সৈয়দ মসিউল হাসান
টরোন্টো থেকে