বাংলাদেশে ক্রিকেট প্রেমিকেরা গতকাল একই দিনে আশা নিরাশার এক রজনী পার করলেন।
গতকাল রাতেই শোবার আগেই , টিভিতে মুমিনুলের সেঞ্চুরি ও মুশফিকের অর্ধশত ইনিংস দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। মাঝে মাঝে গভীর রাতে সেল ফোনে স্কোরবোর্ড দেখেছি, কিন্তু মন পোরে ছিল মহিলাদের বিশ্বকাপের দিকে, কাকভোরে বাংলাদেশের মহিলাদের প্রথম খেলাশুরু হবে, তাও আবার প্রথম খেলা ভারতের সাথে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশকে চালকের আসনে দেখলেও অবশেষে, কিছু ঘন্টার ব্যাবধানে বাংলাদেশের মহিলাদের করুন হার দেখতে হলো ।
প্রথমে শোনা যাক, জিম্বাবুয়ে সিরিজের কথা । শনিবার ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে বাংলাদেশের সকালে যখন খেলা শুরুহলো, টরেন্টোতে তখন ২১ সে ফেব্রুয়ারির রাত প্রায় সাড়ে দশটা। শুরুটা একটু দেখেই ঘুমুতে যেতেহলো, কারণ শনিবারে আবার ভোর সাতটায় কাজ। শনিবারে ঘুম থেকে উঠে স্কোরবোর্ড দেখে ভালোই লাগলো।প্রথম দিন শেষে জিম্বাবুয়ের রান ছয় উইকেট হারিয়ে ২২৮ ; পরের দিন অর্থাৎ, ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে মাত্র ১৬.৩ ওভার পর্যন্ত টিকিয়ে থাকলো ওঁরা বাংলাদেশের দাপুটে বোলিংয়ের বিপক্ষে। পেসার আবু জায়েদ ও অফ স্পিনার নাঈম হাসান এর মারাত্মক বোলিংয়ের তোপে ২৬৫ রানে ১০৬.৩ ওভারে ২৬৫ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে । আবু জায়েদ ও নাঈম হাসান দুজনেই ৪ টি করে উইকেট নেন । একই দিনে, বাংলাদেশ ব্যাটিংএ নেমে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে অধিনায়ক মোমিনুল ও অভিজ্ঞ মুশফিকের ব্যাটিং দৃঢতায় ২৪০ রান করে দিন শেষ করে । গতরাতে অর্থ্যাৎ ম্যাচের তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনেই মোমিনুল পেয়ে যান সেঞ্চুরির দেখা, মুশফিক পূর্ণ করেন অর্ধ শত। পরবর্তীতে, এই জুটির অপূর্ব ব্যাটিং নৈপুণ্যে বাংলাদেশের রানের চাকা দ্রুত বাড়তে থাকে । মুমিনুল ১৩২ রানে আউট হলেও মুশফিক দ্বিশত রান পূর্ণ করে অপরাজিত থাকেন। অবশেষে ছয় উইকেট হারিয়ে ৫৬০ রানে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ইনিংস ঘোষণা করলে জিম্বাবুয়ের জন্য টার্গেট দাঁড়ায় ২৯৫ । ভাগ্যের চাকা বুঝি সফরকারী দলের দিকে ছিল না । দিনের শেষে ব্যাট করতে নেমেই দ্রুত দুইটি উইকেট খুয়ে বসে জিম্বাবুয়ে । বৃষ্টি বাগাড় না দিলে নিঃসন্দেহেই এই মুহূর্তে এই ম্যাচের ভাগ্যে ফলাফল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে । জিম্বাবুয়েকে জিততে হলে করতে হবে আরো ২৮৬ রান আর বাংলাদেশের জন্য মাত্র সাত টি উইকেট, হাতে আছে দুই দিন ।
এবার শোনা হক এক নিরাশার গল্প । আমরা অনেকে হয়তো জানি বা জানি না, গত ২১ এ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মহিলাদের টি ২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট । উদ্বোধনী প্রথম ম্যাচে ভারত ১৭ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে শুভ সূচনা করে। সেই ভারতের কাছে গত রাতে বাংলাদেশের মহিলারা তাঁদের প্রথম খেলায় ভারতের কাছে ১৮ রানের পরাজয় স্বীকার করে নেয় । প্রথমে বটে করতে নেমে ভারতের মহিলারা ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রান তুলতে সক্ষম হয় । শেফালী ভার্মা মাত্র ১৭ বল খেলে ৩৯ রান করে জয়ের বিশেষ ভূমিকা রাখেন । ভারতের মহিলারা যেখানে প্রথম ৬ ওভারে পাওয়ার-প্লে তে ৫৪ রান তোলে, সেখানে, বাংলাদেশকে মহিলারা একই সময়ে মাত্র ৩৩ রান করে। এই খানেই মূলত নির্ধারিত হয় ম্যাচের ফলাফল । বাংলাদেশের পক্ষে সালমা ও পান্না প্রত্যেকে ২৫ রান খরচ করে ভারতের দুইটি করে উইকেট নেন। বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পরে। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে যখন শামীমার উইকেটের পতন হয় তখন দলের রান মাত্র ৫; পরে, আরেক ওপেনার মোর্শেদা ৭ ওভার পর্যন্ত খেলা চালিয়ে নিয়ে যান এবং ব্যাক্তিগত ৩০ রানে আউট হলে মিডল-অর্ডারের আসা যাওয়া খেলায় ১২৪ রানেই বাংলাদেশের ইনিনসের পরিসমাপ্তি ঘটে ও ভারত জয়ের ধার অব্যাহত রেখে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও অনায়াসে জিতে যায় ।
সেই সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিক দর্শকেরা আসা নিরাশার এক রাত পার করতে থাকে। আর, টরেন্ট প্রবাসী বাংলাদেশিরা অধীর আগ্রহে অনেক বছর পরে বাংলাদেশের টেস্ট জয়ের স্বপ্ন নিয়ে দিনের কাজের ব্যাস্ততায় দিন পার করতে থাকে।