হতভাগা এই জাতির একমাত্র বিনেদন ক্রিকেট আবারও হুমকির মুখে। এমনকি প্রবাসে বসেও আমরা বাংলাদেশিরা প্রবাসের হাজারো ব্যাস্ততার মাঝেও নিয়মিত বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা হলেই টিভি /কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার চেষ্টা করি অথবা কমপক্ষে স্কোর দেখার চেষ্টা করি, সাকিবের দুই বছরের নিষিদ্ধের খবরে সেই আমরা আজ হতবাক, বাকরুদ্ধ।
গত ২১ অক্টোবর থেকে প্রায় সপ্তাহ ব্যাপী বাংলাদেশের ক্রিকেট এর উপর দিয়ে এক প্রচন্ড ঝড় বয়ে যায়। একদা এই ধর্মঘট মুখর জাতি প্রথমবারের মতো ক্রিকের ধর্মঘট প্রত্যক্ষ করে। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ১১ দফা দাবিদাওয়া নিয়ে সাকিবের নের্তৃত্বে অনির্দির্ষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেন জাতীয় ক্রিকেটারবৃন্দ। এক পর্যায়ে এম পি মাশরাফিও তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে ধর্মঘটের সাথে নিজের সমর্থন জানান। পরের দিন, অর্থাৎ ২২ অক্টোবরে বিকালে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ক্রিকেটের এই ধর্মঘট-কে ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে আখ্যা দেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিতভাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। ওরা এখন চায় ভারত সফরে যদি না যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। এটা ষড়যন্ত্রের অংশ(প্রথম আলো, অক্ট.২৯ )। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে প্রায় সমস্ত দাবিদাওয়া মেনে নিয়ে মাত্র দুই দিন স্থায়ী এই ধর্মঘটের অবসান ঘটে। জয়ী হন শাকিব, কিন্তু এই জয় দিয়ে শুরু হয় সাকিবের হেরে যাওয়ার প্রথম ধাপ।
মাত্র তিন দিনের মাথায় অক্টোবরের ২৬ তারিখে একটি কোম্পানির সঙ্গে সাকিবের ব্যাক্তিগত এক চুক্তি নিয়ে আপত্তি জানায় বিসিসিবি. সাকিব-পাপন সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। ২৮ অক্টোবর বিসিসিবি সভাপতি পাপন আবারো সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ খোলেন। আরেক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন , “ভারত সফরের এখনো আপনারা কিছুই দেখেননি। দেখেন না কী হয়। আমি যখন বলেছি, এটার মধ্যে একটা ষড়যন্ত্র আছে…। আপনারা আমাকে এত বছর ধরে চেনেন, কখনো ভুল বা মিথ্যা বলেছি? ” (প্রথম আলো, অক্ট.২৯ )। ফেসবুকে ভাইরাল হয় পাপনের সাক্ষাৎকার। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ মাত্র কিছুক্ষন আগে প্রকাশিত হয় সব ধরণের ক্রিকেট থেকে সাকিবের দুই বছরের নিষিদ্ধের খবর।
কাকতালীয়ভাবে একই দিনে একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, জাতীয় লিগে বরিশাল বিভাগের হয়ে আশরাফুলের অপরাজিত সেঞ্চুরির খবর। সাকিব অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। এর আগে আশরাফুলও জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ছিলেন। তবে এই দুই ক্ষমার পার্থক্য বিশাল। সাকিব জুয়াড়ির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেলিন কিন্তু সে খবর চেপে যাওয়ায় অন্যায় করেছেন। তাই সাজা হয়েছে, কিন্তু আশরাফুলের ক্ষেত্রে ছিল অন্যরকম যেটা আমরা সবাই জানি।
এখন, আমার প্রশ্ন হলো, সাকিবরা ভুল করে ক্ষমা চান, আশরাফুলরা ভুল করে ক্ষমা চান। জেলার অভিবাবক ডিসি সাহেবরা ভুল করে ক্ষমা চান. জাতি কি কেবল ক্ষমাই করে যাবে? একজন সাকিব, একজন আশরাফুল, একজন বি সি এস অফিসার এমনি এমনি তৈরী হয়না. এর পিছনে ব্যাক্তিগত প্রতিভা, পরিশ্রমের পাশাপাশি জাতির কি কোনো ভূমিকা নেই?
কিছুদিন আগে, এই ফেসবুকে মূল্যবোধ নিয়ে আমি একটি লেখা লিখেছিলাম। আজ সাকিবের ইস্যু নিয়ে মন বেশ খারাপ,তাই আজ ওসব কথা অরলিখতে চাচ্ছিনা. তবে, কানে কাছে বার বার পরলোকগত আমার প্রিয় বাবার একটি উপদেশ কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে ” IF MONEY IS LOST, NOTHING IS LOST; IF HEALTH IS LOST SOMETHING IS LOST; IF CHARACTER IS LOST EVERYTHING IS LOST