মাসকাট ওমান থেকে:-
মাসকাট ওমানের রাজধানী এবং বৃহত্তম নগরী। ওমান আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব চতুর্থাংশে অবস্থিত। পাহাড়ে-মরভূমিতে চারিদিক ঘেরা দেশ, যেখানে সুউচ্চ পর্বতমালা আবার ঠিক পাশেই রয়েছে উজ্জ্বল শুভ্র বালুর সমুদ্র সৈকত। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশী বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, কৃষ্টি , নান্দনিক ঐতিহ্য ও বিশ্বস্বীকৃত মসজিদ, স্থাপনা, কীর্তি, জনজীবন ও পরিবেশের অধিকারী দেশ। ওমানের সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি নতুন প্রজন্ম তথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা এবং পর্যটক আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর মাসকাট ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে থাকে।
পুরো ফেস্টিভ্যালের সবকিছু সুনিপুণ ভাবে তুলে ধরা যেমন কঠিন তেমনি আমার সাধ্যেরও অতীত। তবুও আপনাদের মানসকুঠির কাছাকাছি পৌঁছার প্রাণান্তর চেষ্টা …. 🙂 এটা অনেকটা আমাদের দেশের মেলার মতো। মাস ব্যাপী (জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি) পর্যন্ত ফেস্টিভ্যাল ওপেন থাকে। এই সময়ে এখানকার আবহাওয়া সবচেয়ে মনোরম থাকে।
প্রতি বছর বিশ্বখ্যাত মাসকাট ফেস্টিভাল দেখতে এখানে ভীড় জমায় হাজার হাজার পর্যটক। ওমানের নানা জাতির সংস্কৃতি, জীবনযাপনের গল্প, তাদের সুখ-দুঃখের সাতকাহন বিভিন্ন উপস্থাপনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় এই উৎসবে। থাকে তাদের পূরণ দিনের বাড়ি ঘরের প্রমাণাকৃতির মডেল । সর্বদাই চমকপ্রদ,। তাদের পুরোনো দিনের বসবাস পদ্ধতি, খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি অনেক কিছুই তুলে ধরা হয় এখানে।
হিমহিম শীতে ঝিরঝিরে হিমেল হাওয়ায় হেঁটে চলেছি মেলার একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত। ঘুরে ঘুরে হৃদয়ের মানসপটে এঁকে যাই মরুভূমিপ্রবণ প্রতিকূল পরিবেশে ওমানি-পূর্বপুরুষদের জীবনাচরনের ছবি। -সব কিছুতেই কত না ইতিহাসের গন্ধ!!
[দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত আরেকটি প্রবেশপথ। যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে দূরদূরান্তের দর্শনার্থীদের।]
[দুপাশে দুই দল হাতে কাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে … মাঝের দল গান তুলছে তখন দুপাশের ওরা কাঠি নাড়িয়ে নাড়িয়ে কোরাস গাইছে। দুঃখিত গানের ছবি তুলতে পারলাম না ]
[কুয়ার উপরে কাঠের চাক্কাগুলি ঘুরছে এবং তাতে করে এক ধরণের শব্দ সৃষ্টি হচ্ছে..বেদুঈনরা তাদের তৃষ্ণার্ত মেষ এবং উটগুলিকে পানি খাওয়ানোর জন্য কুয়ার চারপাশে জটলা পাকাতো। চামড়ার বড় থলেতে করে পানি সংগ্রহ করে রাখতো।]
[এরা আরব বেদুঈন সম্প্রদায়ের ওমানী, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেচে গেয়ে আনন্দমুখর করে রাখছে মেলা প্রাঙ্গন।]
[বাচ্চাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ……..]
[খেজুরের ডাল দিয়ে বানানো আরাম কেদারা (সোফা জাতীয় চেয়ার) এবং গোলাকার টেবিল। আমার স্বাস্থবান বন্ধু আমাকেই লোড টেস্ট করতে পাঠালো। আমার জন্য ঠিক আছে কিন্তু মোটুরা ভুলেও বসতে যাইয়েন না *blum* ]
[দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত আরেকটি প্রবেশপথ। যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে দূরদূরান্তের দর্শনার্থীদের।]
[নিষ্প্রাণ মরু-পাহাড়ে বাবলাজাতীয় কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের মতো ডাল পালা দিয়ে বানানো বসবাসের জন্য ছোট্ট ঘর। এইধরণের কুঁড়ে ঘরেই ওমানীরা কাটিয়েছে বছরের পর বছর। ]
[আমাদের একটা ছবি নিবেন প্লিজ বলেই ওমানি চার তরুণ দাঁড়িয়ে গেলো। ওদের মধ্যে থেকে একজন নাম্বার দিয়ে বললো প্লিজ ছবি গুলো হোয়াটসএপ এ পাঠিয়ে দিয়েন।]
[আগে তেল কূপ থেকে তেল উত্তোলনের জন্য গরু বা গাধা এইভাবেই ব্যবহার করতো। গরু যখন নিচের দিকে আসছে তখন চামড়ার থলে ভর্তি তেল উপরের দিকে নিয়ে আসছে। গরু যখন উপরে উঠছে তখন চামড়ার থলে কূপের নিচে যাচ্ছে তেল ভর্তির জন্য। ]
[বালিতে ছোট ছোট গর্ত করে কড়ি নিয়ে খেলা। এটা অনেকটা আমাদের দেশের গ্রামঞ্চলের মাটিতে দাগ কেটে বাঘ-পাতি খেলার মতো। দুদিকে দুজন থাকেন এবং একে অপরের কড়ি কাটতে থাকেন।]
[স্টেজ প্রোগ্রাম …….]
[ভিতরের আলোকসজ্জা নিঃসন্দেহে মুগ্ধকর। দেখতে বেশ অপূর্ব মনোহারী ! যা পর্যটকদের মন কাড়বেই।]
[স্টেজের একপাশে মেয়েদের দল অন্যপাশে ছেলেদের দল। ওদের গানের কথা বুঝি না কিন্তু মনে হচ্ছে একদল থেকে ২ জন করে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের ভালোবাসার কথা জানাতে বাকিরা তাদের সুরে গান গেয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।]
[কোথায় যেন অতৃপ্ত তৃষনার এক করুন সুর বেজে ওঠছে।এইটা অনেকটা আমাদের দেশের জারি সারি গান গাওয়ার মতো। বয়স্করা একটা গানের কিছু অংশ বলছেন বাকিরা হাত চাপড়ে, শরীর বাকিয়ে কোরাস গাইছেন।]
[লম্বা লাইন ধরে ওমানি ঐতিহ্যবাহী পিঠা জাতীয় খাবার বানাচ্ছে। সাধারণত পিঠা শীতকালের রসনা জাতীয় খাবার হিসেবে পরিচিত।এবং মুখরোচক খাদ্য হিসেবেও ওমানি সমাজে বিশেষ আদরণীয়।]
[গরম তেল থেকে পিঠাগুলি তোলা হচ্ছে এরপর হালকা মিষ্টিরসের সাথে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।]
[অদ্ভুদ মায়াময় চাহনী ……. উটকে বলা হয় মরুভূমির জাহাজ। আরব মরুভুমির আদি বাহন উট। ]
[এইখানে সবাই যোদ্ধোদেহী পোশাকে আছেন। মনে হচ্ছে গানের মধ্যে দিয়ে তাদের অতীত বীরত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা বর্ণনা করছেন।]
[একধরণের ভাঁজা পিঠা … বেশ নরম, হালকা মিষ্টির পিঠা খেতে বেশ সুস্বাদু….]
(চলবে) … নেক্সট পর্ব “মাসকাট” এর পথে পথে …….